Prothomalo:
2025-09-17@22:34:20 GMT

এই অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে

Published: 3rd, August 2025 GMT

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা আলোচনা শেষে মৌলিক সংস্কারের ১৯টি বিষয়ে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত এসেছে। এর মধ্যে ৭টি বিষয়ে সব দল একমত হয়েছে আর ১২টি বিষয়ে বিভিন্ন দলের ভিন্নমত ও মন্তব্যসহ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় অগ্রগতি, যা আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে দীর্ঘ হতাশার মাঝে কিছুটা হলেও আশাবাদের জায়গা তৈরি করে।

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান যে বৃহৎ জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো বাংলাদেশের নাগরিকেরা আর পুরোনো ব্যবস্থায় ফিরতে চান না। অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা যাতে কোনোভাবে ফিরতে না পারে, তার জন্য রাষ্ট্র, সরকার ও শাসনকাঠামোয় মৌলিক সংস্কার প্রত্যাশা করেছেন তাঁরা।

জন-আকাঙ্ক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার প্রথম পর্যায়ে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রশাসন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে। এরপর আরও পাঁচটি কমিশন গঠন করা হয়। এসব কমিশন তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার পর প্রধান ছয়টি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথম দফায় ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩২টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৪টি এবং ২ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৩০টি দলের সঙ্গে ২৩টি বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অতীতে এত সময় ধরে এতগুলো রাজনৈতিক দল মিলে এমন রাজনৈতিক ঐক্যপ্রচেষ্টা আর কখনোই হয়নি।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই দফা আলোচনার পর যেসব বিষয়ে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা নিয়ে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি ও এর আইনি ভিত্তি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকাটা স্বাভাবিক। আর সেই মতপার্থক্য নিরসনের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পথ হলো আলাপ-আলোচনা ও সংলাপ। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক দলগুলো খুব শিগগির এ ব্যাপারে একটা যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছাতে পারবে বলে আমরা আশা করি।

গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের আমলে পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়নি। ফলে দেশের সিংহভাগ নাগরিকই দীর্ঘদিন ধরে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত আছেন। এ অবস্থায় দেশের নাগরিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা হলো একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন, যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আবার গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করবে। ইতিমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ঘোষণা করেছেন। আমরা মনে করি, তাঁর ঘোষিত সময়সীমা, অর্থাৎ আগামী ফেব্রুয়ারি-এপ্রিলের মধ্যেই দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।

একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের। নির্বাচন কমিশন সে ব্যাপারে তাদের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোরও ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে অগ্রগতি দেখাতে পেরেছে, তা ধরে রাখার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। এ ক্ষেত্রে দলগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়ন করছে, তার ওপর দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের অনেকটাই নির্ভর করে। এই প্রচেষ্টা একটা অগ্রগতির জায়গায় নিয়ে আসার জন্য ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজসহ কমিশনের অন্য সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তাঁদের সবাইকে আমরা সাধুবাদ জানাই। 

এটা ঠিক যে একটি ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বড় একটা বাধা দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। ৫ আগস্টের পর পুলিশের মনোবল ও শৃঙ্খলা অনেকটাই ভেঙে পড়েছিল। সেখান থেকে অনেকটা উত্তরণ হলেও এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেনি পুলিশ। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীরও অধিক সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ রহণয গ য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ ফের এক মাস বাড়ল

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আরো এক মাস বাড়িয়ে ১৫ অক্টোবর করেছে অন্তর্বর্তী সরকার ।

সোমবার  (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরো গভীর বাণিজ্য সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ

সংস্কার বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐকমত্য এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ: আলী রীয়াজ

ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছিল ১২ ফেব্রুয়ারি, যার নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। শুরুতে ছয় মাস মেয়াদে গঠিত সাত সদস্যের এই কমিশনের মেয়াদ ১৫ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা ছিল। তখন প্রথম ধাপে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এবার দ্বিতীয় ধাপে বাড়ানো হলো ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত।

কমিশনের কাজ হলো ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা।

নির্বাচন পদ্ধতি, সংবিধান, সরকার ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জুলাই সনদ, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা করেছে ঐকমত্য কমিশন। বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হলেও তা চূড়ান্ত করে সরকারিভাবে প্রকাশ করা হয়নি। 

তবে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, জরুরি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছে আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন আয়োজন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। 

পূর্বাপর

রাষ্ট্র সংস্কার উদ্যোগ এগিয়ে নিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের ছাপানো কপি সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়।

এরপর ৫ মার্চ পুলিশ সংস্কার কমিশন বাদে পাঁচটি কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়।

এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার বিষয়ক ৭০টি, নির্বাচন সংস্কার বিষয়ক ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি ও দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়ক ২৭টি সুপারিশ ছিল।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো সরাসরি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে বাস্তবায়নযোগ্য হওয়ায় সেগুলো স্প্রেডশিটে রাখা হয়নি।

সংবিধান সংস্কার কমিশন ছাড়া অন্য পাঁচটি কমিশনের দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলোর তালিকা সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মোট ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোট তাদের মতামত কমিশনের কাছে পাঠায়, অনেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণও দেয়।

মতামত গ্রহণের পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩২টি দল ও জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মোট ৪৪টি বৈঠক হয়। কিছু দলের সঙ্গে হয় একাধিক বৈঠক।

প্রথম পর্বের আলোচনায় ৬২টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়।

কোরবানির ঈদের আগে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা সংসদ ভবনের এলডি হলে শেষ হয়। এরপর ২ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা উদ্বোধন করে কমিশন।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ করে কমিশন অগ্রাধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মোট ২০টি বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনা হয়।

আলোচনার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে। ৩ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ২৩ দিন চলে এ আলোচনা।

সবশেষ জুলাই সনদের চূড়ান্ত সমন্বিত খসড়া মতামতের জন্য ২২ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়।

পরে দল গুলোর সাথে আরেক দফা অনানুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত সনদের কপি রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হয়।

কিছুক্ষেত্রে ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্টসহ) মোট ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য হওয়ার কথা বলা হয়েছে এই চূড়ান্ত খসড়ায়। কিন্তু সেসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের কোনো রূপরেখা সেখানে দেওয়া হয়নি।

এখন বাস্তবায়নের পথ খুঁজতেই দলগুলোর সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করছে ঐকমত্য কমিশন।

ঢাকা/এএএম/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘সংবিধান আদেশ’ জারির সুপারিশ করতে পারে কমিশন: আলী রীয়াজ
  • সংগীতশিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বাতিলের দাবি গ্রহণযোগ্য নয়: আসক
  • কমিটি গঠন, প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত 
  • রাকসু নির্বাচন: ৬ দফা দাবিতে ছাত্রদলের স্মারকলিপি
  • বর্ধিত মেয়াদের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন: আলী রীয়াজ
  • বিএনপি নির্বাচনমুখী কর্মসূচিতে যাবে
  • দলগুলোর সঙ্গে বুধবার আবার আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন
  • ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হতে হবে
  • জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ ফের এক মাস বাড়ল
  • অন্তর্বর্তী সরকার না চাইলে ‘মব সন্ত্রাসের’ ঘটনাগুলো ঘটতে পারত না: বাম গণতান্ত্রিক জোট