Prothomalo:
2025-11-02@18:44:51 GMT

এখনো উদাস করে বাবার স্মৃতি

Published: 3rd, August 2025 GMT

ফেরদৌসী রহমান বাংলাদেশের সংস্কৃতিজগতের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তিনি গান গেয়েছেন। চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন। আবার বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘এসো গান শিখি’ নামের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কয়েক প্রজন্মের মানুষকে সংগীতে প্রথম হাতেখড়ি দিয়েছেন। বহু শিল্পীর প্রথম গুরু তিনি।

এ বছরের ৪ জুন যখন ফেরদৌসী রহমানের ভিডিও সাক্ষাৎকার ‘ক্রাউন সিমেন্ট অভিজ্ঞতার আলো’র জন্য তাঁর কাছে যাই, তাঁর বিনয়সুন্দর কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে গেছি। ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠান তিনি করতে চাননি। যখন তিনি ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠান করছেন, তখনো তিনি নিজেকে মনে করছেন ছাত্রী, এখনো তিনি নিজেকে মনে করেন ছাত্রী। ১৯৪১ সাল থেকে ২০২৫। ৮৪ পেরিয়ে গেল এই ২৮ জুনে।

এতটা বছরের সফল শিল্পীজীবন। কোচবিহারে জন্ম, ঢাকার সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্সের ছাত্রী ছিলেন। বাংলাবাজার স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়ে মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেন।

দুই–আড়াই বছরে মায়ের কোলে বসে গান গাইতেন, সেই স্মৃতি তিনি ভোলেননি। বললেন, দুই বছর কি আড়াই বছর হবে আমার। ঘুম পেলে আমি মায়ের কাছে গিয়ে ‘আঁখি পাতা ঘুমে জড়ায়ে আসে’ গানটা গাইতাম।

তাঁর পিতা বাংলা গানের কিংবদন্তি আব্বাসউদ্দীন আহমদ। তাঁর কাছে গান শেখা শুরু করেন একেবারে ছোটবেলায়। সেই সব স্মৃতি মনে করতে পারেন ফেরদৌসী রহমান, ‘তখন আব্বার কোলে বসতাম, আর “তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে”, তারপর “ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ”—এসব গান তিন ভাইবোনকে নিয়ে আব্বা গাইতেন। আর পাশে মা বসে থাকতেন। তারপর এসব গান যখন শেষ হতো, তখন মাকে আব্বা বলতেন, “আলেয়া, তুমি গান করো।” তখন মা শুরু করতেন, “রাতের ময়ূর ছড়াল যে পাখনা”—এসব গান।’

ছয় বছর বয়সে প্রথম মঞ্চে গান করেন ফেরদৌসী রহমান। তাঁর মুখে সেদিনের কথা: ‘সেটা ছিল কলকাতায় মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে। সেখানে বিরাট বড় অনুষ্ঠান, আব্বাকে গান গাইতে হবে। সেই সময় যেহেতু একটু একটু করে আমি গাইতাম, তাই কোথাও গান হলে আব্বা আমাকে বগলদাবা করে নিয়ে যেতেন। কিছুটা গর্ব হতো, মজা লাগত বোধ হয়! মেয়েকে দিয়েও গাওয়াবেন আরকি। তখন আব্বা আমাকে ও রকম একটা অনুষ্ঠানে নিয়ে গেলেন। আমি গিয়ে দেখি হলভর্তি লোকে লোকারণ্য। তার মধ্যে আব্বা বলছেন, “মাগো, তোমাকে একটা গান গাইতে হবে।” আমি বলি, “না”, আব্বা বলেন, “হ্যাঁ, চলো।” মজা করতে করতে নিয়ে এলেন স্টেজে। তারপর এল মাইক্রোফোন। তারপর দেখা গেল যে আব্বা পাশে টেবিলে হারমোনিয়াম নিয়ে বাজাবেন আর আমি গাইব। তো আমি গাইব কোনটা? খুব একটা রোমান্টিক গান, “শুধু কাঙালের মতো চেয়েছিল তার মালাখানি”। আমি এতটুকুন, মাইক্রোফোন অনেক ওপরে। তখন আরেকটা লোক পাশ থেকে টেবিল নিয়ে এল, এসে আমাকে টেবিলের ওপর দাঁড় করিয়ে দিল। তারপর গাইলাম, “শুধু কাঙালের মতো চেয়েছিল।” গানের পরে তালি থামেই না.

..।’

আরও পড়ুনআব্বা নায়ক হতে চেয়েছিলেন: ফেরদৌসী রহমান৩ ঘণ্টা আগে

টেলিভিশনে প্রথম গাইলেন ১৯৬৪ সালে। গান শিখেছেন আবদুল আহাদসহ বড় শিল্পীদের কাছে। ১৯৬৩ সালে তিনি সংগীতে ইউনেসকো ফেলোশিপ লাভ করেন এবং লন্ডনের ট্রিনিটি কলেজ অব মিউজিকে ছয় মাস ধরে স্টাফ নোটেশন শেখেন। ১৯৬৬ সালে বিয়ে হলো প্রকৌশলী রেজাউর রহমানের সঙ্গে।

এরপর আরও কত গান করেছেন। আধুনিক গান। সিনেমার গান। প্রথম সিনেমার গান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রথম ছবি আসিয়া এখানে তৈরি হয়। এর পরিচালক ও প্রযোজক ছিলেন নাজির আহমেদ। একটা ডুয়েট গান ছিল, “দেওয়ায় করছে মেঘ–মেঘালি...”। আমি আর আব্বাসী ভাই সেটা করলাম। ওই গানই প্রথম। তারপর “ও মোর কালারে কালা”।’ নোলক ছবিতে তাঁর গাওয়া ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ রেডিওতে অবিরাম বাজত আর ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের আনাচকানাচে। স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন, একুশে পদক পেয়েছেন, পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার, পেয়েছেন মানুষের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা। তারপরও তিনি বলেন, তিনি এখনো শিখছেন। এখনো ছাত্রী।

২০২৪-এ হারিয়েছেন জীবনসঙ্গীকে। দুই ছেলে প্রবাসী।

কিন্তু এখনো ফেরদৌসী রহমান সবচেয়ে বেশি মনে করেন তাঁর বাবাকে। যে বাবাকে তিনি হারিয়েছেন ১৮ বছর বয়সে, ১৯৫৯ সালে। পরে যখনই তিনি পুরস্কার পেয়েছেন, বড় অনুষ্ঠানে গেয়েছেন, প্রথমেই তাঁর মনে পড়ত তাঁর বাবার কথা। এখনো, এই ৮৪ বছর বয়সে তিনি সবচেয়ে বেশি মনে করেন বাবার কথা। ৬৬ বছর আগে যে পিতা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন, তাঁর কথা স্মরণ করে ফেরদৌসী রহমান উদাস হয়ে পড়েন।

আর তাঁর মন চলে যায় কোচবিহারে। যতবারই বলুন কোথায় যাবেন, ‘কোচবিহারে যাব। বলরামপুর যাব, আমার দাদার বাড়িতে ওই পুকুরে মাছ ধরব। সেই যে বর্ষাকালে জল কেটে দেওয়া হতো আর সব মাঠে মাছ চলে আসত। ওগুলো খুব ছোটবেলার স্মৃতি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন প রস ক র রহম ন ত রপর প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে অমোচনীয় কালি সরবরাহ না করলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতারা। এ ছাড়া এমফিল কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্রদলকে ভোট প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর আচরণবিধিবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় ছাত্রদলের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘নির্বাচনে যদি কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা একচুল ছাড় দেব না। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, যদি কোনো ধরনের অনিয়ম হয়— কোনো ছাড় হবে না। নির্বাচনের সময় অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে হবে। যদি নির্বাচন কমিশন অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে।’

ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ‘ম্যানুয়ালি’ ভোট গণনার দাবি জানিয়ে শামসুল আরেফিন বলেন, ‘কত ব্যালট ছাপানো হলো, কত ভোট গণনা হলো, কত ব্যালট নষ্ট হলো—এসব তথ্য স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে। কারণ, আমরা ডাকসুতে ব্যালট কেলেঙ্কারির অভিযোগ সম্পর্কে জানি।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ বিধিমালায় এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ছাত্রদলকে ‘মাইনাস’ করার একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জকসু গঠন ও পরিচালনা বিধিমালায় বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর নিয়মিত শিক্ষার্থী ভোটার কিংবা প্রার্থী ছাড়া কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অন্যদিকে এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থীর যোগ্যতা না দিয়ে আমাদের মাইনাস করা ছিল মাস্টারপ্ল্যান—আর সেই মাস্টারপ্ল্যান সফল হয়েছে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, প্রক্টর, সিন্ডিকেটের সদস্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর নির্বাচন কমিশনার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ