প্রথমেই স্বীকার করতে হবে, সর্বশেষ তিনটি নির্বাচন কমিশন জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা করতে পারেনি বলে সংস্কার কমিশনের প্রয়োজন হয়েছে। এই কমিশনের প্রধান করা হয়েছে এমন একজন ব্যক্তিকে, যিনি বহু বছর ধরে নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনতে কাজ করেছেন। সে ক্ষেত্রে সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার দাবি রাখে। তবে বিবেচনা মানে চোখ বুজে গ্রহণ করা নয়।

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কাজ চলাকালে সরকার পুরোনো আইনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে, যা নিয়ে তাদের আপত্তি ছিল। সরকারের পক্ষে যুক্তি হলো, নির্বাচন তো দীর্ঘ প্রক্রিয়া ও প্রস্তুতির বিষয়। সে ক্ষেত্রে আগের কমিশন পদত্যাগের পর নতুন কমিশন গঠন অপরিহার্য ছিল। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের বেশ কিছু সুপারিশ আশু বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করে গত ১৯ মার্চ ইসিকে পাঠিয়েছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। জবাবে ১০-১২টি সুপারিশের ক্ষেত্রে আশু বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে একমত হয়েছে ইসি, অন্যগুলোর বিষয়ে একমত হয়নি।

ইসি যেসব সুপারিশে আপত্তি জানিয়েছে, তার একটি হলো নতুন করে নির্বাচনের যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ছিল, যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে কিংবা যেসব ব্যক্তি পলাতক থাকবেন, তাঁদের প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা থাকবে না। 

ইসি বলেছে, প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণের বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিলেই আইনিভাবে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করা যায় কি না। অভিযোগপত্র দেওয়া মানে অপরাধী সাব্যস্ত করা নয়। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আদালত। প্রচলিত আইনের বাইরে গিয়ে সংস্কার কমিশন কোনো সুপারিশ করলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কমিশনের ভেতরেও এ নিয়ে মতভেদ ছিল। ইসি যে বলেছে এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে, তার যথেষ্ট যৌক্তিকতা আছে। অতীতে জেলে থাকা অবস্থায় নির্বাচন করে জিতে আসার একাধিক উদাহরণ আছে। 

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন সংশোধনের সঙ্গে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা আছে বলে এটা আশু বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে যে যুক্তি ইসি দেখিয়েছে, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়।

আরপিওতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশের সঙ্গে ইসি একমত হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীকে নির্বাচনী দায়িত্ব দিতে আলাদা কোনো আদেশের প্রয়োজন হবে না। এখন ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হয়।

অতীতে নির্বাচনী কাজে সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে স্ববিরোধী অবস্থান নিতে দেখা গেছে। বিরোধী দলে থাকতে তারা সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে জোর আওয়াজ তুলেছে। আবার ক্ষমতায় গিয়ে বিরোধিতা করেছে। এই ক্ষেত্রে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব যৌক্তিক বলে মনে করি। এ ক্ষেত্রে ইসির স্বাধীনতা থাকতে হবে। এখানে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কিংবা কারও মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার সুযোগ নেই।

এ ছাড়া সংস্কার কমিশন সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের জবাবদিহি আদায় করার যে প্রস্তাব করেছিল, তার বিরোধিতা করেছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠান। তারা বলেছে, এতে তাদের স্বাধীনতা খর্ব হবে।  ইসিকে মনে রাখা দরকার, ক্ষমতাসীনদের অঙ্গুলি হেলনে চলা স্বাধীনতা নয়। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের কারও না কারও কাছে জবাবদিহি করতেই হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য গ যত

এছাড়াও পড়ুন:

ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ‘অশ্বডিম্ব’ বললেন সিপিবি সভাপতি

আট মাস আলোচনার পর জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ দিয়েছে, তাকে ‘অশ্বডিম্ব’ বলেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন।

‘জগাখিচুড়ি মার্কা’ কমিশনের সুপারিশের পর পরিস্থিতি জটিলতার দিকে মোড় নেওয়ার দিকটি নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আট মাস আলোচনার পর একটা অশ্বডিম্বের মতো একটা অবস্থা।’

আজ শনিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংলাপে ‘পলিটিকস ল্যাব: পাবলিক ডায়ালগ’ শীর্ষক সংলাপে এ কথা বলেন সাজ্জাদ জহির। এ সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।

তরুণ রাজনীতিকদের মধ্যে মতাদর্শভিত্তিক সংলাপ ও গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে জার্মান ফাউন্ডেশন ফ্রেডরিখ এবার্ট স্টিফটুং (এফইএস)-এর সহযোগিতায় ‘পলিটিকস ল্যাব’ শিরোনামে চারটি ধারাবাহিক কর্মশালা করেছে সিজিএস। তার সমাপনী অনুষ্ঠান হিসেবে আজকের সংলাপ হয়।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তরের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে তা নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়। নানা প্রশ্নে বিভিন্ন দলের আপত্তির বিষয়গুলো সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ার তফসিলে না থাকা নিয়ে যেমন সমালোচনা হচ্ছে, আবার গণভোটের সময় নিয়েও দলগুলোর মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে।

এই সংকট তৈরির জন্য ঐকমত্য কমিশনকে দায়ী করে সাজ্জাদ জহির বলেন, ‘এটার সমাধানটা কী? এই গণভোটের সমাধানটা কী? জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে? সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা কিন্তু নেই। মানে একধরনের হাওয়ার ওপরে সবকিছু চলছে। এখানে ৮৪টা পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০টাতে একমত হয়েছে, বাকিগুলোতে একমত হয়নি। তাহলে কোন বিষয়ে ভোটটা হবে।’

জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করা সিপিবি সভাপতি বলেন, ‘আমরা দেখলাম জুলাই সনদে স্বাক্ষর হলো। এরপর সর্বশেষ সংস্কার কমিশন তারা আবার আরেকটা খেলা খেলল এখানে। দেখেন কী অবস্থা! তারা বলছে যে নোট অব ডিসেন্ট কিছুই থাকবে না। ভিন্ন মত থাকবে না। আমার তো ভিন্নমত আছে, কেন থাকবে না?’

গণভোট নিয়ে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে কোথাও গণভোটের কোনো বিধান নেই। একটা আছে যেটা ১৪২ ধারা। যেটা নির্বাচিত সংসদে যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মতভেদ তীব্রতর হয়, তাহলে সেই বিষয়ের ওপরে নির্বাচিত সংসদ জনগণের আহ্বান করতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে গণভোট সংবিধানসম্মত নয়।’

সিপিবির সভাপতি বলেন, এসব জটিলতা এড়াতে প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে গত বছরের অক্টোবর মাসে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছিলেন। তবে ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে’ সরকার সেটি শোনেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশের মানুষ ১৭ বছর ধরে নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে: সাইফুল হক
  • জুলাই সনদে সই না করা অংশের দায় নেব না: মির্জা ফখরুল
  • ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ‘অশ্বডিম্ব’ বললেন সিপিবি সভাপতি
  • যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে সম্মত হয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান: তুরস্ক