সংস্কার কমিশনের সুপারিশ কি বাস্তবায়িত হবে
Published: 3rd, May 2025 GMT
প্রথমেই স্বীকার করতে হবে, সর্বশেষ তিনটি নির্বাচন কমিশন জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা করতে পারেনি বলে সংস্কার কমিশনের প্রয়োজন হয়েছে। এই কমিশনের প্রধান করা হয়েছে এমন একজন ব্যক্তিকে, যিনি বহু বছর ধরে নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনতে কাজ করেছেন। সে ক্ষেত্রে সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার দাবি রাখে। তবে বিবেচনা মানে চোখ বুজে গ্রহণ করা নয়।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কাজ চলাকালে সরকার পুরোনো আইনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে, যা নিয়ে তাদের আপত্তি ছিল। সরকারের পক্ষে যুক্তি হলো, নির্বাচন তো দীর্ঘ প্রক্রিয়া ও প্রস্তুতির বিষয়। সে ক্ষেত্রে আগের কমিশন পদত্যাগের পর নতুন কমিশন গঠন অপরিহার্য ছিল।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের বেশ কিছু সুপারিশ আশু বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করে গত ১৯ মার্চ ইসিকে পাঠিয়েছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। জবাবে ১০-১২টি সুপারিশের ক্ষেত্রে আশু বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে একমত হয়েছে ইসি, অন্যগুলোর বিষয়ে একমত হয়নি।
ইসি যেসব সুপারিশে আপত্তি জানিয়েছে, তার একটি হলো নতুন করে নির্বাচনের যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ছিল, যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে কিংবা যেসব ব্যক্তি পলাতক থাকবেন, তাঁদের প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা থাকবে না।
ইসি বলেছে, প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণের বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিলেই আইনিভাবে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করা যায় কি না। অভিযোগপত্র দেওয়া মানে অপরাধী সাব্যস্ত করা নয়। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আদালত। প্রচলিত আইনের বাইরে গিয়ে সংস্কার কমিশন কোনো সুপারিশ করলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কমিশনের ভেতরেও এ নিয়ে মতভেদ ছিল। ইসি যে বলেছে এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে, তার যথেষ্ট যৌক্তিকতা আছে। অতীতে জেলে থাকা অবস্থায় নির্বাচন করে জিতে আসার একাধিক উদাহরণ আছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন সংশোধনের সঙ্গে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা আছে বলে এটা আশু বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে যে যুক্তি ইসি দেখিয়েছে, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়।
আরপিওতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশের সঙ্গে ইসি একমত হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীকে নির্বাচনী দায়িত্ব দিতে আলাদা কোনো আদেশের প্রয়োজন হবে না। এখন ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হয়।
অতীতে নির্বাচনী কাজে সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে স্ববিরোধী অবস্থান নিতে দেখা গেছে। বিরোধী দলে থাকতে তারা সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে জোর আওয়াজ তুলেছে। আবার ক্ষমতায় গিয়ে বিরোধিতা করেছে। এই ক্ষেত্রে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব যৌক্তিক বলে মনে করি। এ ক্ষেত্রে ইসির স্বাধীনতা থাকতে হবে। এখানে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কিংবা কারও মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার সুযোগ নেই।
এ ছাড়া সংস্কার কমিশন সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের জবাবদিহি আদায় করার যে প্রস্তাব করেছিল, তার বিরোধিতা করেছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠান। তারা বলেছে, এতে তাদের স্বাধীনতা খর্ব হবে। ইসিকে মনে রাখা দরকার, ক্ষমতাসীনদের অঙ্গুলি হেলনে চলা স্বাধীনতা নয়। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের কারও না কারও কাছে জবাবদিহি করতেই হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য গ যত
এছাড়াও পড়ুন:
অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘসময় থাকলে নানা সমস্যা তৈরি হয়: এনপিপি
অনিবার্চিত সরকার বেশিদিন থাকলে দেশে নানা সমস্যা তৈরি হয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। তিনি বলেন, একটা অনির্বাচিত সরকার যদি দীর্ঘসময় থাকে এটা বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা ওনার কাছে এটাই আশা করি যে, আপনি এমন একটা ভোটের ব্যবস্থা করে দেন যাতে মানুষ বলতে পারে দীর্ঘ ১৫ বছর পর আমরা এমন একটা ভোট দেখতে পেরেছি। আমার ভোটের প্রতি কেউ জোর করতে পারেনি, আমার ভোট কেউ টাকা দিয়ে কিনতে পারেনি, আমি আমার ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে সরকার গঠন করতে পেরেছি। এটাও সাথে সাথে ঠিক, একটা অনির্বাচিত সরকার যদি দীর্ঘ সময় থাকে এটা বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে।
জাতীয় সংসদের এলডি হলে শনিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনপিপির সংলাপে তিনি এ কথা বলেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় এই বৈঠক উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফররাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান। এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে জোটের ১১ জন নেতা এই সংলাপে অংশ নিয়েছেন।
সংলাপের সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা আপনাদের ডাকে সাড়া দিয়েছি, মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে, যার ভোট সে যেন নিজে দিতে পারে এবং জনগণের ভোটের মাধ্যমে একটা প্রতিষ্ঠিত সরকার গঠন করতে পারে তার জন্য আমরা সব সময় চেষ্টা করছি।
ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬ প্রস্তাবের মধ্যে এনপিপি ১১২টিতে একমত পোষণ করেছে। এছাড়া ২৬টিতে একমত নয় এবং ২৮ টায় আংশিক একমত হয়েছে।
সংলাপে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, গণতন্ত্র পূর্ণ প্রতিষ্ঠায় আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সুনির্দিষ্ট, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করার মাধ্যমে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন রকম আদর্শিক অবস্থান থেকে তাদের মতামত দিয়েছেন। আমরা আশা করি, জাতীয় স্বার্থে, রাষ্ট্র পুনর্গঠনের প্রশ্নে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রত্যেকটা দল ও জোট কিছুটা ছাড় দিতে প্রস্তুত থাকবেন। কারণ আমরা সকলে মিলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পুনর্গঠন, বিনির্মাণের জন্য সকলেই সমবেত হয়েছি। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাতি ও রাষ্ট্র হিসেবে অগ্রসর হওয়ার জন্য তা অত্যন্ত প্রয়োজন। আমাদের এক জায়গায় আসতে হবে। এর অর্থ এ নয় যে, সব বিষয়ে আমরা একমত হতে পারব। কিন্তু যেগুলো রাষ্ট্র বিনির্মাণে, পুনর্গঠনের প্রয়োজন, গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহি ব্যবস্থা তৈরির জন্য প্রয়োজন সেখানে আশা করি একমত হতে পারব। সেটা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেষ্টা।