যে ওয়ার্ডে ভোটার মাত্র ৮২ জন, ইউপি সদস্য নারী
Published: 3rd, May 2025 GMT
কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের সাগরতীরের কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত ৯ নম্বর খুদিয়ারটেক ওয়ার্ড, যেখানে লোকসংখ্যা মাত্র ১৯৭ জন। তাঁরাও আবার থাকেন না খুদিয়ারটেকে। বসবাস করেন প্রায় এক কিলোমিটার দূরের তাবেলরচর এলাকায়। ওয়ার্ডটিতে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য হিসেবে কাজ করছেন আনোয়ারা বেগম (৬৭) নামের একজন নারী। দুই দফায় নির্বাচিত হয়ে প্রায় ৯ বছর ধরে ইউপি সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি।
সর্বশেষ ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আলী আকবর ডেইল ইউনিয়ন পরিষদের এই ওয়ার্ডের নির্বাচন হয়। ভোটার ছিলেন ৮২ জন। এর মধ্যে ৪১ জন নারী, ৪১ জন পুরুষ। নির্বাচনে ৩৯ ভোট পেয়ে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন আনোয়ারা বেগম। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাফর আলম পান ৩০ ভোট। ৮২ ভোটারের মধ্যে প্রয়োগ হয় ৭৬ ভোট। এর আগে ২০১৬ সালের নির্বাচনেও ৩৭ ভোট পেয়ে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন আনোয়ারা বেগম।
আনোয়ারা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী আহম্মদ খলিল ৯ নম্বর ওয়ার্ডে তিনবারের (১৫ বছর) ইউপি সদস্য ছিলেন। সারা জীবন তিনি মানুষের জন্য কাজ করেছেন। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৪ বছর আগে তিনি মারা গেছেন। পরে ভোটারদের অনুরোধে তিনি প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
আনোয়ারার পাঁচ ছেলে। তিন ছেলে কুতুবদিয়ার বাইরে ব্যবসা ও চাকরি করেন। বাকি দুজন সৌদি আরবে থাকেন। কুতুবদিয়াতে একাকী সবকিছু সামলান বৃদ্ধা এই নারী। তিনি বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে হয় এই অঞ্চলের মানুষকে। জীবনে ৩০টির বেশি ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করেছি, চোখের সামনে শত শত মানুষকে মরতে দেখেছি। যত দিন বেঁচে থাকি, মানুষের সেবা করেই বাঁচতে চাই।’
জনশূন্য খুদিয়ারটেকের বাস্তুহারা কয়েকটি পরিবার ঘরবাড়ি নির্মাণ করে থাকছে এক কিলোমিটার দূরে তাবলেরচর বেড়িবাঁধের পাশে। সম্প্রতি তোলা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
রাউজানে দখলদারি ও নির্বাচন ঘিরে বিএনপির সংঘাত থামছে না
দখলদারি ও নির্বাচনী মনোনয়ন ঘিরে চট্টগ্রামের রাউজানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ, গোলাগুলি, পাল্টাপাল্টি খুন থামছেই না। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বিকেলে রাউজানের সত্তারহাট এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনার পর স্থানীয় বিএনপির শক্ত দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে আছে। কমিটি ও পদ স্থগিত করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
বর্তমানে রাউজান বিএনপির নেতা-কর্মীরা দুই নেতার অনুসারী। এই দুই নেতার একজন হলেন দলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী; অন্যজন উত্তর জেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার। সংঘর্ষের সর্বশেষ ঘটনাটিও ঘটেছে এই দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। গোলাম আকবর খন্দকার নিজেও ছররা গুলিতে আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় দুই পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করেছে। গোলাম আকবর খন্দকারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন বিরোধীপক্ষের নেতা-কর্মীরা। গত বুধবার এ নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছে। আবার একই দিন সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার জন্য গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দায়ী করা হয়েছে।
সংঘর্ষের পর রাউজানের পরিস্থিতি নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা, স্কুল ও কলেজশিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁরা হেনস্তা হওয়ার ভয়ে কেউ নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে এই প্রতিবেদককে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, সংঘর্ষের ঘটনার পর থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যেকোনো সময় আবার সহিংস ঘটনা ঘটতে পারে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ায় দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরাই ‘শক্তি’ প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। পাশাপাশি রাউজানের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখতেই একের পর এক সংঘর্ষ ও খুনোখুনির ঘটনা ঘটছে। যাঁর হাতে ক্ষমতা, তাঁরাই নদীকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য, বালুমহাল ও ইটভাটা, ইট-বালু সরবরাহের ব্যবসা, বিল ভরাটের কাজে মাটি-বালু সরবরাহের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করেন। পাহাড়ি সীমান্ত এলাকা হওয়ায় রাউজানের ওপর দিয়ে কাঠ ও মদ চোরাচালান হয়। অনেক সময় অস্ত্র পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয় রাউজান। এসবের নিয়ন্ত্রণ নিতেই স্থানীয় পর্যায়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। এখন নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় উভয় পক্ষের দখলদারি রয়েছে।
দুই পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করেছে। গোলাম আকবর খন্দকারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন বিরোধীপক্ষের নেতা-কর্মীরা। গত বুধবার এ নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছে। আবার একই দিন সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার জন্য গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দায়ী করা হয়েছে।গত মঙ্গলবার বিকেলে দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর সেদিন রাতেই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া স্থগিত করা হয় কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পদও। রাউজানের ঘটনা তদন্ত করতে গত বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর। কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালকে। সাত দিনের মধ্যে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান আজীজুল বারী হেলাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাউজানে দুই প্রার্থী আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। সেখানে ইতিমধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। আগামী রোববার সরেজমিনে গিয়ে নেতা-কর্মী, ভুক্তভোগীসহ সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’
আরও পড়ুনরাউজানে খুন, পাল্টা খুন চার দশক ধরে ০৪ মে ২০২৫গত মঙ্গলবার সংঘর্ষের সময় পুড়িয়ে দেওয়া মোটরসাইকেল