সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে হামলা ও ভাঙচুর
Published: 3rd, May 2025 GMT
সাতক্ষীরা জেলার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে হামলা চালিয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত। আজ শনিবার সকাল ১০টা থেকে প্রায় ১১টা পর্যন্ত জেলা সদরের খুলনা রোডে অবস্থিত সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এমন তাণ্ডব চলে। পার্শবর্তী গ্রামের মাগুরা গ্রামে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত শাহিন নামের এক তরুণের চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে হাসপাতালে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি সোহেল আহমেদ মানিক নেতৃত্বে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের একজন চিকিৎসকসহ ঢাকা থেকে আগত অপর এক চিকিৎসক আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জেলা সদরের লাবসা ইউনিয়নের মাগুরা গ্রামে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় প্রতিপক্ষের ইছহাক আলীর ধারালো কুড়ালের আঘাতে একই গ্রামের আক্কেল আলীর ছেলে শাহিন গুরুতর আহত হয়। এ সময় স্থানীয়দের সহায়তায় শাহিনের স্বজনরা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। একপর্যায়ে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। কিছুক্ষণ বাদে শাহিনের খিচুনি শুরু হলে রোগীর স্বজনদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় সেখানে উপস্থিত সাতক্ষীরা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি সোহেল আহমেদ মানিকের নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধরা চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে জরুরি বিভাগে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় ঢাকার আইসিডিডিআরবি থেকে আগত ডা.
এদিকে জরুরি বিভাগে হামলা ও ভাঙচুরের সময় গোটা হাসপাতালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জরুরি বিভাগে আগত রোগীরা এসময় দ্রুত হাসপাতাল ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় কিছু আসবাবপত্রসহ জরুরি বিভাগের কাগজপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফয়সাল আহমেদ জানান, শাহিন নামের রোগীকে জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। রোগীর স্বজনরা হামলায় জড়িত দাবি করলেও তিনি কারও নাম জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
তিনি আরও বলেন, হামলার ঘটনার ঢাকা থেকে আগত তাদের একজন অতিথি চিকিৎসকের নাক ভেঙে গেছে এবং তাদের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আক্তার মারফু মারাত্বকভাবে আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় তারা জড়িতদের বিরুদ্ধে তারা লিখিত অভিযোগ জমা দেবেন।
হামলার নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে সোহেল আহমেদ মানিক জানান, তিনি হামলার সময় রোগীকে নিয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছিলেন। সেখান থেকে সদর হাসপাতালে ফিরে জরুরি বিভাগে হামলায় জড়িতদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। এসময় ঢাকা থেকে আগত ডা. তানভীর হোসেনকে রক্ষা করতে যেয়ে তিনি নিজে আহত হওয়ারও দাবি করেন।
তিনি আরও বলেন, রক্তাক্ত অবস্থায় শাহিনকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও সেই সময়ে জরুরি বিভাগে চিকিৎসক ছিলেন না। স্বেচ্ছাসেবকরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে রোগীকে ওয়ার্ডে পাঠানোর পর খিচুনি শুরু হলে তারা জরুরি বিভাগে হামলা করেছে বলে তিনি শুনেছেন।
সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শামিনুল হক জানান, দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল আহম দ এ সময় র ঘটন ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ