জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বারবার হুমকি পেয়ে পরিবারটি ঢাকার বাসা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে এসে উঠেছে। আজ রোববার নোয়াখালী জেলা পরিষদের উদ্যোগে শহীদ পরিবারের মধ্যে অনুদানের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এমন অভিযোগ করেন ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে নিহত শাহদাত হোসেনের (১৪) বড় ভাই মো.

হানিফ। এ সময় তিনি পরিবারের নিরাপত্তার জন্য জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।

জেলা পরিষদ আয়োজিত ওই চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ুন রশিদ। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা শাখার আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আখিনূর জাহান, বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে সেনবাগ উপজেলার কেশারপাড় ইউনিয়নের বাসিন্দা ও শহীদ শাহদাত হোসেনের বড় ভাই মো. হানিফ বলেন, ৫ আগস্ট দুপুরের দিকে তাঁর ছোট ভাই যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে। এরপর তাঁরা বিনা ময়নাতদন্তে ভাইয়ের লাশ গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করেন। তাঁর বাবা ফ্লাইওভার এলাকায় ফুটপাতে হালিম বিক্রি করতেন। তাঁরা পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকতেন।

মো. হানিফ উল্লেখ করেন, তাঁর ভাইয়ের হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা বাদী হয়ে আদালতে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে পৃথক দুটি মামলা করেন। দুটি মামলায় ৪৭ জনকে আসামি করা হয়। ওই মামলা দায়েরের পর কিছু লোক প্রতিদিন তাঁদের বাসায় গিয়ে নানা রকম কথা বলে ভয় দেখাচ্ছেন। তা ছাড়া দুটি মুঠোফোন থেকে তাঁর বাবাকে ফোন করেও মামলা প্রত্যাহারের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা বিষয়টি যাত্রাবাড়ী থানার ওসি এবং তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন।

হানিফ অভিযোগ করেন, মামলা প্রত্যাহারের অব্যাহত হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ এপ্রিল পুরো পরিবার ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে আসে। আসামিদের হুমকির কারণে তাঁরা এখন নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন। তাই এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন মো. হানিফ।

শহীদ পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানার পর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, শহীদ পরিবারকে সরকারের নির্দেশনা অনুসারে সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে এবং সেটি অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি শহীদ পরিবারের সদ্যদের নিরাপত্তা প্রদানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ সচেষ্ট আছেন। শহীদ পরিবারের কেউ যদি কারও কাছ থেকে কোনো ধরনের হুমকি পান সেটি যেন তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসনকে অবহিত করা হয়।

অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত নোয়াখালীর বাসিন্দা ১০টি পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে অনুদান প্রদান করা হয়। এ ছাড়া নিহত বাকি পরিবারগুলোকেও পর্যায়ক্রমে অনুদান প্রদান করা হবে বলে জানানো হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত অন ষ ঠ ন

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশের উপস্থিতিতে অপহরণের অভিযোগ, দুইদিনেও উদ্ধার হয়নি পল্লী চিকিৎসক

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে পুলিশের উপস্থিতিতে তরিকুল ইসলাম (৩৫) নামে এক পল্লী চিকিৎসককে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের হাতি চামটার ব্রিজ এলাকা থেকে তাকে অপহরণ করেন দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। 

ভিডিওতে দেখা যায়, মাথায় হেলমেট এবং পুলিশের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তার সামনেই কয়েকজন ব্যক্তি তরিকুল ইসলামকে টেনে-হিঁচড়ে একটি অটোভ্যানে তুলছেন। এ সময় আশপাশের কয়েকজন তাকিয়ে দেখেন। তরিকুল তাদের সাহায্য চাইলেও সবাই দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় দুর্বৃত্তদের একজনকে বলতে শোনা যায়, 'এ এখানে প্রশাসনের লোক আছে।' 

অপহরণের শিকার তরিকুল ইসলাম ভাতগ্রাম ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর কুটিপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। ভাতগ্রাম বাজারে পল্লি চিকিৎসক হিসেবে তার চেম্বার ও ওষুধের দোকান রয়েছে। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালন করতেন।

এদিকে অপহরণের দুইদিন পার হলেও পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে না পারায় উদ্বেগ জানিয়েছেন স্বজনরা। তবে অপহরণকারীরা এ পর্যন্ত ৪ থেকে ৫ বার ফোন দিয়ে অপহৃত তরিকুলের ছোটভাই হিরুর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। 

এ ঘটনায় গত শনিবার রাতে পল্লী চিকিৎসকের ছোটভাই হিরু মিয়া সাদুল্লাপুর থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও সাত-আটজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, তরিকুল ইসলামের ঔষধের দোকানে সুমন নামে এক ব্যক্তি ৬ মাস কাজ করেছেন। পরে তাকে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হলে বিভিন্ন অজুহাতে তিনি  টাকা দাবি করে আসছিলেন দোকান মালিক তরিকুলের কাছে। এ নিয়ে কয়েকবার স্থানীয়ভাবে শালিসি বৈঠকও হয়। গত শুক্রবার বিকেলে তরিকুল বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে ভাতগ্রাম বাজারে তার দোকানে যাচ্ছিলেন। পথে সুমনসহ স্থানীয় কয়েকজন দুর্বৃত্ত তার পথরোধ করে মারধর করেন এবং জোরপূর্বক তাকে অটোরিকশা ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়।

পল্লি চিকিৎসকের ছোটভাই হিরু মিয়া বলেন, অভিযোগ দেওয়ার দুইদিন হয়ে গেল, এখনো আমার ভাইকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। অথচ সেখানে সাদুল্লাপুর থানার একজন এএসআই উপস্থিত ছিলেন। অপহরণকারীরা সবার পরিচিত। দিনে দুপুরে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর কারণে ভাইকে নিয়ে খুব দুঃশ্চিন্তায় আছি আমরা। তার দুই মেয়ে শুধু কাঁদছে। 

তিনি আরও বলেন, সবশেষ রোববার দুপুরে অপহৃত তরিকুলের কাছে থাকা মোবাইল ফোন থেকে দুর্বৃত্তরা ফোন করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছেন। প্রশাসনের কাছে তার বড়ভাইকে দ্রুত উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। 

রোববার রাত ৯টায় সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজউদ্দিন খন্দকার সমকালকে বলেন, ‘অপহরণের সময় পুলিশের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তির উপস্থিতির কথা শুনেছি। কিন্তু স্পষ্ট নয়। অপহরণের শিকার তরিকুল ইসলামকে উদ্ধারে পুলিশের অভিযান চলামান রয়েছে।’ 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ