আইসিসির ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবনমন হওয়ার খবর শুনে আঁতকে ওঠেন সাবেক প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না বাংলাদেশ ১০ নম্বরে নেমে গেছে। জাতীয় দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলটও অবাক হয়েছেন। বিসিবি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন ফাহিমের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ র‍্যাঙ্কিংয়ে অবনমনের বার্তা। র‍্যাঙ্কিংয়ে অবনমনে ক্রিকেট-সংশ্লিষ্টদের এ রকম প্রতিক্রিয়ার কারণ আছে। 

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের প্রিয় সংস্করণ এটি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত যা সাফল্য, তা ওয়ানডে সংস্করণ থেকে পাওয়া। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা, ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনালে উন্নীত হওয়া এবং এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ ৫০ ওভারের গেমে। ২০১৯ সালে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টে যে শিরোপা জিতেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজারা, তাও ওয়ানডে ক্রিকেটে। এরই ধারাবাহিকতায় ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে সেরা চারে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন ছিল। সেই দলের ১০ এ নেমে যাওয়া যেন সেই স্বপ্নের মৃত্যু ঘটা। তবে বিসিবি-সংশ্লিষ্টরা মনে করেন ওয়ানডে ক্রিকেটে শিগগিরই পুনরুত্থান হবে। ২০২৭ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে র‍্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটে থেকে সরাসরি বিশ্বকাপও খেলবে। 

২০২৩ সালের বিশ্বকাপ দিয়ে পতন শুরু বাংলাদেশের। বিশ্বকাপ-পরবর্তী দল গোছাতে না পারায় মাঠের পারফরম্যান্স খারাপ হয়েছে বলে মনে করা হয়। আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা শেষ আট ওয়ানডের সাতটিতে হেরেছেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ফলে র‍্যাঙ্কিংয়ের এ অবনমনকে হতাশার বলে মনে করছেন নাজমুল আবেদীন, ‘র‍্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়া দুশ্চিন্তার বিষয়। আমাদের সব থেকে শক্তির জায়গায় ছিল ওয়ানডে সংস্করণ। ২০১৫ সাল থেকে যে উত্থান ছিল, খুবই দুঃখজনক তা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ঘরোয়া ক্রিকেটের অস্বচ্ছতার কারণে যে ক্রমাগত অবনতি হয়েছে, আমরা কেউ তা অস্বীকার করতে পারব না। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমাদের হাতে যে সময় আছে এবং সামনে যে সংখ্যক ওয়ানডে ম্যাচ খেলব, আমাদের সুযোগ থাকবে এটাকে অতিক্রম করার। বিশ্বকাপে সরাসরি কোয়ালিফাই করা সম্ভব হবে।’

জাতীয় দলের সাফল্য-ব্যর্থতার সঙ্গে নির্বাচক প্যানেল অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক বাস্তবতা মেনে নিয়ে উত্তরণের পথ খোঁজার কথা বলছেন, ‘ফল ভালো না হলে তো র‍্যাঙ্কিং পেছাবেই। তবে ২০২৭ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে সেরা আট দলে থাকা সম্ভব। সামনে অনেক খেলা আছে, এই দলটিকেই গড়ে তুলতে হবে। পুরোনো যারা ছিলেন, তারা থাকাতে অনেক ম্যাচ জিতেছি। এখন যারা এসেছে, তারাও জিতবে। আমরা ২০২৭ সালের বিশ্বকাপ সরাসরি খেলব।’

সাবেক প্রধান নির্বাচক নান্নুর মতে, ‘আমরা সাতে রেখে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ১০ নম্বরে অবনমিত হওয়া দুঃখজনক। যেভাবেই হোক এখান থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে। কী কারণে পিছিয়ে যাচ্ছি, তা খতিয়ে দেখে উত্তরণের পথ বের করতে হবে। বাংলাদেশের মান খারাপ হয়ে গেছে। ৫০ ওভারের ম্যাচে যে মানের ক্রিকেট আমরা খেলছি, তা গ্রহণযোগ্য না।’ 

আরেক সাবেক অধিনায়ক পাইলট বলছেন, ‘র‍্যাঙ্কিং এক ম্যাচ দিয়ে হয় না। ছয় মাস থেকে এক বছরের ম্যাচের গড় করা হয়। সেই মূল্যায়নে পিছিয়ে পড়ার অর্থ হলো আমরা মান হারিয়েছি।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইস স র য ঙ ক ব শ বক প

এছাড়াও পড়ুন:

লক্ষ্মীপুরে যাতায়াতের দুর্ভোগ নিরসন হবে কবে

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা লক্ষ্মীপুর। প্রাকৃতিক সম্পদ, মানবসম্পদ এবং ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে এটি একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল। প্রতিবছর এখান থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করেন—চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা ও চাকরির উদ্দেশ্যে। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, আজও লক্ষ্মীপুর-ঢাকা সরাসরি রুটে কোনো উন্নত মানের এসি বাস সার্ভিস নেই। এমনকি নির্ভরযোগ্য নন-এসি পরিবহন ব্যবস্থাও একেবারে সীমিত। এটি কেবল দুঃখজনক নয়, বরং দীর্ঘদিনের পরিকল্পনাহীনতা এবং নীতিগত অবহেলার একটি বড় উদাহরণ।

বর্তমানে এই রুটে যে বাসগুলো চলাচল করছে, সেগুলোর অধিকাংশই পুরোনো ও অপ্রতিসম যানবাহন। এসব বাসে যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক ভ্রমণের ন্যূনতম সুযোগও নেই। আসনবিন্যাসের দুরবস্থা, গরমে হাঁসফাঁস পরিবেশ, যাত্রাপথে দীর্ঘ সময় ধরে থেমে থেমে যাত্রী তোলা কিংবা দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছানো—এসবই যেন এই রুটের যাত্রীদের নিত্য সঙ্গী। নারী, শিশু কিংবা অসুস্থ যাত্রীর জন্য এই যাত্রা একধরনের কষ্টকর অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ায়।

লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত প্রায় ১৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি মূলত পাকা এবং বেশির ভাগ অংশে চার লেনে সম্প্রসারিত। কুমিল্লা হয়ে ঢাকা পৌঁছানো যায় তুলনামূলকভাবে কম সময়ে। এমন সড়কপথে উন্নত মানের বাস সার্ভিস চালু না হওয়া নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর। আশপাশের জেলা যেমন—ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কিংবা ময়মনসিংহে শ্যামলী, হানিফ, সোহাগ, গ্রিনলাইনসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় পরিবহন কোম্পানিগুলোর এসি ও আধুনিক বাস চলাচল করে। অথচ লক্ষ্মীপুর এখনো এই সেবার বাইরে রয়ে গেছে।

প্রশ্ন জাগে—এই রুটে কি যাত্রী কম? বাস্তবতা হলো, লক্ষ্মীপুর একটি প্রবাসীপ্রধান জেলা। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মরত। তাঁরা ছুটি কাটাতে দেশে ফিরে ঢাকায় নামেন এবং সেখান থেকে লক্ষ্মীপুরে যাতায়াত করেন। এ ছাড়া ঢাকায় লক্ষ্মীপুর জেলার হাজারো শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী রয়েছেন, যাঁরা নিয়মিত যাতায়াত করেন। অর্থাৎ, যাত্রীস্রোত আছে, চাহিদাও প্রবল। অভাব শুধু আধুনিক পরিকল্পনা ও কার্যকর উদ্যোগের।

বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির প্রতিনিধিদের ভাষ্যমতে, তারা এই রুটে উন্নত বাস সার্ভিস চালুর আগ্রহ প্রকাশ করলেও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহল ও পরিবহন–সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর অসহযোগিতার কারণে উদ্যোগগুলো বারবার আটকে যাচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত লোকাল বাস মালিকদের একটি চক্র নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতেই নতুন ও উন্নত সার্ভিসকে প্রতিযোগিতার বাইরে রাখতে চায়।

আরও দুঃখজনক হলো, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকেও এখনো দৃশ্যমান কোনো কার্যকর উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। অথচ স্বস্তিদায়ক ও নিরাপদ যাতায়াত নাগরিকদের অন্যতম মৌলিক চাহিদা। শুধু সড়ক নির্মাণই নয়, তা কতটা জনবান্ধবভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেটাও উন্নয়নের একটি বড় সূচক।

লক্ষ্মীপুরবাসী আর কত দিন এই অব্যবস্থার সঙ্গে আপস করে চলবে? সম্ভাবনাময় একটি জেলার মানুষকে দিনের পর দিন কেন কষ্টকর ভ্রমণের মুখোমুখি হতে হবে? এখনই সময়—এই রুটে উন্নত ও আরামদায়ক পরিবহন ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে লক্ষ্মীপুরবাসীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করার। দেরি হলে শুধু জনগণ নয়, পিছিয়ে পড়বে পুরো একটি অঞ্চল—তার সম্ভাবনা, অর্থনীতি ও উন্নয়নের স্বপ্ন।

মো. শিহাব উদ্দিন
চর লরেন্স, কমলনগর, লক্ষ্মীপুর

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিটিং ওনার্স এসোসিয়েশনের ভুয়া ভোটার বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
  • লক্ষ্মীপুরে যাতায়াতের দুর্ভোগ নিরসন হবে কবে