প্রয়োজনের বেশি হাটের অনুমোদন চাওয়া নিয়ে প্রশ্ন
Published: 6th, May 2025 GMT
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে নগরে এবার অস্থায়ী ১৬টি পশুর হাট বসাতে চায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এসব হাট বসানোর অনুমতি চেয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত হাট বসানোর অনুমোদন মেলেনি। পহেলা জিলহজ্ব থেকে ১০ দিনের জন্য অস্থায়ী হাটগুলো বসবে। অনুমতি না পাওয়ায় নগরে পশুর হাটের ইজারা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি চসিক। এদিকে নগরে এতগুলো অস্থায়ী হাট বসানো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হাটগুলোতে গরু-ছাগল বেচাকেনা নিয়ে বিপুল বাণিজ্য হয়। হাট ইজারা থেকে হাসিল আদায় পর্যন্ত অবৈধ অর্থের লেনদেনেরও অভিযোগ আছে। পকেট ভর্তি হয় ইজারাদার ও সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর। ফলে হাটগুলো ইজারা প্রত্যাশী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের তদবিরে হাট বেশি বসানোর অনুমোদন চাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে তা অস্বীকার করেছেন চসিকের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরে এতগুলো অস্থায়ী হাট প্রয়োজনের তুলনায় বেশি। এতগুলো অস্থায়ী হাট বসালে যানজটের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।
পবিত্র ঈদুল আজহার সময় নগরে কোরবানির পশুর হাটের ইজারাদার নিয়োগ দেয় সিটি করপোরেশন। তবে হাট বসানোর অনুমতি নিতে হয় জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে। অনুমতি দেওয়ার আগে পুলিশের বিশেষ শাখার কাছ থেকে মতামত নেয় জেলা প্রশাসন। তার ভিত্তিতে অনুমতি দেওয়া হয়। নগরে বর্তমানে স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে তিনটি। এগুলো হলো- সাগরিকা গরু বাজার, বিবিরহাট পশুর হাট ও পোস্তার পাড় ছাগল বাজার। গতবার ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে নগরে অস্থায়ী পশুর হাট বসেছিল সাতটি। এগুলো হলো-কর্ণফুলী পশুর হাট, হালিশহরের বড়পোল সংলগ্ন গোডাউন মাঠ, ওয়াজেদিয়া মোড়, আউটার রিং রোডে সিডিএ বালুর মাঠ, বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের মাঠ, হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ এবং মুসলিমাবাদ সড়কের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ। এগুলো ইজারা দিয়ে সিটি করপোরেশনের আয় হয়েছিল ৫ কোটি ৬ লাখ টাকা।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, গত ১৫ এপ্রিল জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এবার নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ১৬টি অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডেই রয়েছে তিনটি। এগুলো হলো-পতেঙ্গা স্টিল মিল বাজার, পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ ও মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ। এছাড়া বাকি হাট বসানোর প্রস্তাবিত স্থানগুলো হলো- ৬নং ওয়ার্ডে কর্ণফুলী পশু বাজার, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে বড়পোল সংলগ্ন মহেশ খালের দুই পাড়ের খালি জায়গা, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড়, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোডে সিডিএ বালুর মাঠ, ০৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডের জানালী রেল স্টেশন সংলগ্ন রেলওয়ের পরিত্যক্ত খালি জায়গা, মধ্যম হালিশহর মুনির নগর আনন্দবাজার সংলগ্ন রিং রোডের পাশে খালি জায়গা, সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন খালি জায়গা, ১ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরী হাট, হালিশহর পুলিশ লাইনের সামনে রাস্তার পাশ, মাদারবাড়ী পোর্ট সিটি হাউজিংয়ের খালি জায়গা, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর হালিশহর গলিচিপা পাড়া বারুনিঘাটা মাঠ ও অলংকার গরুর হাট।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রয়োজনের তুলনায় বাড়তি হাট বসানোর তৎপরতা এবার নতুন নয়। আওয়ামী লীগ আমলেও ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও দলীয় নেতাদের চাপে বাড়তি হাট বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হতো। এর আগে ২০২৪ সালে ১২টি হাট বসানোর প্রস্তাব দেয় সিটি করপোরেশন। সাতটি হাট বসানোর অনুমোদন দেয় প্রশাসন। ২০২৩ সালে ২৩টি ও ২০২২ সালে ১২টি হাট বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। যাচাই-বাছাই শেষে যথাক্রমে নয়টি ও সাতটি অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমতি পেয়েছিল সিটি করপোরেশন। হাটগুলো ইজারা নিতেন স্থানীয় কাউন্সিলরদের লোকজন ও দলীয় নেতাকর্মীরা। এবারও বাড়তি হাট বসানোর প্রস্তাব দেওয়ায় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এস এম সরওয়ার কামাল বলেন, ‘প্রতি বছর নগরে অনেক অবৈধ হাট বসে। এতে সিটি করপোরেশন রাজস্ব বঞ্চিত হয়। যেখানে এসব অবৈধ হাট বসে সেখানে বৈধ হাট বসানোর অনুমোদন চাওয়া হয়েছে।’ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের চাপে বেশি হাট বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হাট ইজারার ক্ষেত্রে কারো রাজনৈতিক পরিচয় দেখা হবে না। যারা বেশি দর দেবেন তাদের হাট ইজারা দেওয়া হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাগরিক সমাজের এক প্রতিনিধি বলেন, ‘প্রথমত নগরীর জনসংখ্যা কত, সেই হিসাবে কী পরিমাণ পশু এখানে প্রয়োজন হবে, আবার সেই পশুগুলো বেচাকেনার জন্য কতগুলো হাট প্রয়োজন-তা নিয়ে সিটি করপোরেশনের কোনো জরিপ নেই। এরপরও ১৬টি হাটের জায়গার বিষয়ে অনুমোদন চাওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হতে পারে বিপুল অর্থের লেনদেন। হাট ইজারা থেকে শুরু করে হাসিল আদায় পর্যন্ত ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নেন স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা। মূলত তাদের স্বার্থেই এতগুলো গরু-ছাগলের বাজার বসানোর পরিকল্পনা।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত হ ট ইজ র র জন ত ক হ ল শহর এতগ ল
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রীসের বিখ্যাত চিকিৎসক ও গবেষক জর্জ ভিথুলকাস
গ্রিসের একজন বিখ্যাত চিকিৎসক ও গবেষক প্রফেসর ড. জর্জ ভিথুলকাস (Prof. Dr. George Vithulkas) - ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথির পথপ্রদর্শকদের একজন।
তিনি একজন বিশ্বখ্যাত ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক-ই নন ; তিনি একজন শিক্ষাবিদও। তিনি আধুনিক হোমিওপ্যাথির বিকাশে যেসব অবদান রেখেছেন, তা বিশ্বব্যাপী চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনস্বীকার্য ।
প্রফেসর ড. জর্জ ভিথুলকাসের লিখিত বইগুলোর ভাষা অত্যন্ত সুন্দর, সাবলীল ও সহজবোধ্য; যা পাঠ করলে সহজে-ই আয়ত্ত করা যায়।
তাঁর লিখিত বই পড়ার পরে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ থেকে তার সংক্ষিপ্ত জীবনী জানা; অতঃপর লিখতে উৎসাহিত হলাম।
তার সংক্ষিপ্ত জীবনী:
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:
প্রফেসর ডক্টর জর্জ ভিথুলকাস ১৯৩২ সালের ২৫ জুলাই গ্রীসের এথেন্সে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই চিকিৎসা ও মানুষের সেবা করার আগ্রহ ছিল তার জীবনের মূল লক্ষ্য।
শিক্ষা:
তিনি একজন প্রকৌশলী ছিলেন এবং হোমিওপ্যাথির সাথে পরিচিত হন যখন তিনি একবার ফার্মেসির একটি বই হাতে পান। এর পরে তিনি হোমিওপ্যাথি পড়ার আগ্রহ থেকে ১৯৬০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় হোমিওপ্যাথি শিক্ষার যাত্রা শুরু করেন, পরবর্তীতে ভারতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করেন এবং ১৯৬৬ সালে Indian Institute of Homeopathy থেকে ডিপ্লোমা (বর্তমানে DHMS কোর্স নামে পরিচিত) অর্জন করেন। ১৯৬৭ সালে গ্রিসে ফিরে আসার পর ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথি শেখানো ও অনুশীলন শুরু করেন। এছাড়াও তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অন্যান্য দেশে হোমিওপ্যাথির বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি শুধু হোমিওপ্যাথি অধ্যয়ন করেই থেমে জাননি, বরং তা প্রয়োগ করেন এবং পরে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৬৭ সাল থেকে তিনি ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথি পড়িয়ে আসছেন।
কর্মজীবন:
শিক্ষা শেষে ১৯৬৭ সালে তিনি গ্রীসে ফিরে এসে ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথি শিক্ষাদান, অনুশীলন ও গবেষণায় নিয়োজিত হন। তিনি নিজে এথেন্সে ১৯৭০ সালে “Athenian School of Homeopathic Medicine” প্রতিষ্ঠা করেন, যা এখন “Center of Homeopathic Medicine” নামে পরিচিত এবং এটি বিশেষভাবে মেডিকেল ডক্টরদের জন্য প্রশিক্ষণের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। ১৯৯৫ সালে গ্রীসের আলোনিসোস দ্বীপে প্রতিষ্ঠা করেন International Academy of Classical Homeopathy (IACH), যা বিশ্বব্যাপী শ্রেষ্ঠ হোমিওপ্যাথি শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি।
গ্রন্থসমূহ:
The Science of Homeopathy
Homeopathy: Medicine of the New Man
Materia Medica Viva (বহু খণ্ডে প্রকাশিত আধুনিক হোমিওপ্যাথি রেফারেন্স বই)
Essence of Materia Medica
GV Keynotes with Remedy Relations
এই বইগুলো ২৩টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী হোমিওপ্যাথির গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
সম্মাননা ও পুরস্কার:
১৯৯৬ সালে পেয়েছেন Right Livelihood Award, যা বিকল্প নোবেল পুরস্কার নামে খ্যাত।
মস্কো মেডিকেল একাডেমি এবং University of the Aegean থেকে সম্মানসূচক প্রফেসর পদক লাভ।
ভারত, রাশিয়া, হাঙ্গেরি, ইউক্রেনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সম্মান ও পুরস্কার প্রাপ্ত।
জীবনের দর্শন:
“রোগের মূলে গিয়ে তার প্রকৃত কারণ বুঝে চিকিৎসা করতে হবে, যাতে শরীর নিজেই সুস্থ হয়ে ওঠে।”
প্রফেসর ড. জর্জ ভিথুলকাসের জীবন ও কর্ম আমাদের শেখায়—
আসল চিকিৎসা হলো মানুষের স্বাভাবিক রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সক্রিয় করা ও রাখা এবং তাকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করা।
তাঁর অবদান ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথির ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে।
লেখক : ডা. গাজী খায়রুজ্জামান
(একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলামিস্ট)
মোবাইল : 01743834816
[email protected]
আরো পড়ুন
নারায়ণগঞ্জে টাইফয়েড টিকাদান বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
সদরে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পইন উপলক্ষে ওরিয়েন্টেশন সভা
নারায়ণগঞ্জে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন উপলক্ষে এডভোকেসী সভা
এলএমএইচআই ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস-২০২৫-এ হোমিওপ্যাথিক দুই চিকিৎসকের প্রতিনিধিত্ব
নিতাইগঞ্জে এমপি প্রার্থী সিরাজুল মামুনের গণসংযোগ
৩০০ শয্যা হাসপাতালে ডেঙ্গুর কিট দিল নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন
নারায়ণগঞ্জে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতি গ্রহন
ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নবজাতকদের জন্য আইসিইউ ইউনিটের উদ্বোধন
২৩১/১ বঙ্গবন্ধু সড়ক (৬ষ্ঠ তলা, লিফটের ৫)
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবন, নারায়ণগঞ্জ
নির্বাহী সম্পাদক: মোশতাক আহমেদ (শাওন)
ফোন:+৮৮০১৯৩৩-৩৭৭৭২৪
ইমেইল : [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ বা ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
© ২০২৫ | সকল স্বত্ব নারায়ণগঞ্জ টাইমস কর্তৃক সংরক্ষিত | উন্নয়নে ইমিথমেকারস.কম