পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে নগরে এবার অস্থায়ী ১৬টি পশুর হাট বসাতে চায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এসব হাট বসানোর অনুমতি চেয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত হাট বসানোর অনুমোদন মেলেনি। পহেলা জিলহজ্ব থেকে ১০ দিনের জন্য অস্থায়ী হাটগুলো বসবে। অনুমতি না পাওয়ায় নগরে পশুর হাটের ইজারা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি চসিক। এদিকে নগরে এতগুলো অস্থায়ী হাট বসানো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হাটগুলোতে গরু-ছাগল বেচাকেনা নিয়ে বিপুল বাণিজ্য হয়। হাট ইজারা থেকে হাসিল আদায় পর্যন্ত অবৈধ অর্থের লেনদেনেরও অভিযোগ আছে। পকেট ভর্তি হয় ইজারাদার ও সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর। ফলে হাটগুলো ইজারা প্রত্যাশী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের তদবিরে হাট বেশি বসানোর অনুমোদন চাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে তা অস্বীকার করেছেন চসিকের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরে এতগুলো অস্থায়ী হাট প্রয়োজনের তুলনায় বেশি। এতগুলো অস্থায়ী হাট বসালে যানজটের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।  

পবিত্র ঈদুল আজহার সময় নগরে কোরবানির পশুর হাটের ইজারাদার নিয়োগ দেয় সিটি করপোরেশন। তবে হাট বসানোর অনুমতি নিতে হয় জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে। অনুমতি দেওয়ার আগে পুলিশের বিশেষ শাখার কাছ থেকে মতামত নেয় জেলা প্রশাসন। তার ভিত্তিতে অনুমতি দেওয়া হয়। নগরে বর্তমানে স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে তিনটি। এগুলো হলো- সাগরিকা গরু বাজার, বিবিরহাট পশুর হাট ও পোস্তার পাড় ছাগল বাজার। গতবার ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে নগরে অস্থায়ী পশুর হাট বসেছিল সাতটি। এগুলো হলো-কর্ণফুলী পশুর হাট, হালিশহরের বড়পোল সংলগ্ন গোডাউন মাঠ, ওয়াজেদিয়া মোড়, আউটার রিং রোডে সিডিএ বালুর মাঠ, বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের মাঠ, হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ এবং মুসলিমাবাদ সড়কের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ। এগুলো ইজারা দিয়ে সিটি করপোরেশনের আয় হয়েছিল ৫ কোটি ৬ লাখ টাকা।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, গত ১৫ এপ্রিল জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এবার নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ১৬টি অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডেই রয়েছে তিনটি। এগুলো হলো-পতেঙ্গা স্টিল মিল বাজার, পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ ও মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ। এছাড়া বাকি হাট বসানোর প্রস্তাবিত স্থানগুলো হলো- ৬নং ওয়ার্ডে কর্ণফুলী পশু বাজার, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে বড়পোল সংলগ্ন মহেশ খালের দুই পাড়ের খালি জায়গা, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড়, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোডে সিডিএ বালুর মাঠ, ০৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডের জানালী রেল স্টেশন সংলগ্ন রেলওয়ের পরিত্যক্ত খালি জায়গা, মধ্যম হালিশহর মুনির নগর আনন্দবাজার সংলগ্ন রিং রোডের পাশে খালি জায়গা, সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন খালি জায়গা, ১ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরী হাট, হালিশহর পুলিশ লাইনের সামনে রাস্তার পাশ, মাদারবাড়ী পোর্ট সিটি হাউজিংয়ের খালি জায়গা, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর হালিশহর গলিচিপা পাড়া বারুনিঘাটা মাঠ ও অলংকার গরুর হাট।

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রয়োজনের তুলনায় বাড়তি হাট বসানোর তৎপরতা এবার নতুন নয়। আওয়ামী লীগ আমলেও ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও দলীয় নেতাদের চাপে বাড়তি হাট বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হতো। এর আগে ২০২৪ সালে ১২টি হাট বসানোর প্রস্তাব দেয় সিটি করপোরেশন। সাতটি হাট বসানোর অনুমোদন দেয় প্রশাসন। ২০২৩ সালে ২৩টি ও ২০২২ সালে ১২টি হাট বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। যাচাই-বাছাই শেষে যথাক্রমে নয়টি ও সাতটি অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমতি পেয়েছিল সিটি করপোরেশন। হাটগুলো ইজারা নিতেন স্থানীয় কাউন্সিলরদের লোকজন ও দলীয় নেতাকর্মীরা। এবারও বাড়তি হাট বসানোর প্রস্তাব দেওয়ায় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এস এম সরওয়ার কামাল বলেন, ‘প্রতি বছর নগরে অনেক অবৈধ হাট বসে। এতে সিটি করপোরেশন রাজস্ব বঞ্চিত হয়। যেখানে এসব অবৈধ হাট বসে সেখানে বৈধ হাট বসানোর অনুমোদন চাওয়া হয়েছে।’ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের চাপে বেশি হাট বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হাট ইজারার ক্ষেত্রে কারো রাজনৈতিক পরিচয় দেখা হবে না। যারা বেশি দর দেবেন তাদের হাট ইজারা দেওয়া হবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাগরিক সমাজের এক প্রতিনিধি বলেন, ‘প্রথমত নগরীর জনসংখ্যা কত, সেই হিসাবে কী পরিমাণ পশু এখানে প্রয়োজন হবে, আবার সেই পশুগুলো বেচাকেনার জন্য কতগুলো হাট প্রয়োজন-তা নিয়ে সিটি করপোরেশনের কোনো জরিপ নেই। এরপরও ১৬টি হাটের জায়গার বিষয়ে অনুমোদন চাওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হতে পারে বিপুল অর্থের লেনদেন। হাট ইজারা থেকে শুরু করে হাসিল আদায় পর্যন্ত ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নেন স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা। মূলত তাদের স্বার্থেই এতগুলো গরু-ছাগলের বাজার বসানোর পরিকল্পনা।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর মকর ত হ ট ইজ র র জন ত ক হ ল শহর এতগ ল

এছাড়াও পড়ুন:

খালেদা জিয়া ‘ফিরোজা’য় পৌঁছেছেন

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁর গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় পৌঁছেছেন।

যুক্তরাজ্যে উন্নত চিকিৎসা শেষে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দেশে ফেরেন খালেদা জিয়া। তাঁর সঙ্গে দেশে ফেরেন দুই পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শামিলা রহমান।

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়া সরাসরি তাঁর গুলশান-২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের বাসভবন ফিরোজায় যান। বিমানবন্দর থেকে ফিরোজায় যাওয়ার সময় পথে পথে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান দলের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী।

খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে সকাল থেকে ফিরোজাসংলগ্ন এলাকায় ভিড় করেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। তাঁদের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা। এ ছাড়া তাঁরা নানা ব্যানার-ফেস্টুন বহন করেন। তাঁরা স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তোলেন পুরো এলাকা।

ফিরোজা ও এর আশপাশের এলাকায় আগেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ফিরোজার প্রবেশপথ গুলশান-২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের সামনে ব্যারিকেড দেওয়া হয়। সড়কটির দুই পাশে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়।

ফিরোজার সামনে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশের সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়; পাশাপাশি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ‘চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)’–এর সদস্যরা।

খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে তাঁর গুলশানে বাসভবন ‘ফিরোজা’ ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঈদুল আজহায় ছুটি ১০ দিন: প্রেস সচিব
  • খালেদা জিয়া ‘ফিরোজা’য় পৌঁছেছেন
  • মা দিবস উপলক্ষে ‘শ্রদ্ধা’ ও ‘বিশ্বরঙ’-এ মূল্যছাড়
  • নাসির উদ্দিন পিন্টুর মৃত্যুবার্ষিকীতে মহানগর বিএনপির স্মরণ সভা
  • গণ আকারে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী: মাহ্‌ফুজ আনাম