কারারক্ষী নিয়োগের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে এ পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়ে ঝালকাঠিতে বিক্ষোভ করেছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। তারা মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর এ বিষয়ে অভিযোগও করেছেন।

বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় কারারক্ষী পদে স্বাস্থ্য পরীক্ষার স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ঝালকাঠি জেলা কারাগার প্রাঙ্গণ। কিন্তু পরীক্ষায় অনিয়মের বিষয়টি টের পেয়ে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এসে গতকাল দুপুরে পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন।
অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে ঝালকাঠি জেল সুপার বলছেন, এ পরীক্ষার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই। ঝালকাঠি জেলাকে ভেনু হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র।
পরীক্ষা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পদের দু’জন, পিএসসি, কারা অধিদপ্তর, একজন জেল সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ মোট ১৫/২০ জনের একটি প্রতিনিধি দল ছিল। এক দিনের জন্য এ সিলেকশন পরীক্ষায় যারা নির্বাচিত হবেন, তাদেরই লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা।

পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিভাগের ছয় জেলা বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ঝালকাঠি থেকে কারারক্ষী পদে মোট ৬০ জনকে নিয়োগ দেওয়ার কথা রয়েছে। ছয় জেলার প্রায় ২ হাজার প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে ঝালকাঠিতে আসেন। সকাল ১০টা থেকে তারা জেলা কারাগারের প্রধান ফটকের বাইরে লাইনে দাঁড়ান। কিন্তু ফটক থেকে অনেককে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়। এমনকি তাদের শিক্ষা সনদ ছিঁড়ে ফেলা ও শারীরিকভাবে নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে। ঢাকা থেকে আগত প্রতিনিধি দলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত কারারক্ষীরা প্রধান ফটকের সামনে এসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটান। 
খবর শুনে সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তাদেরও বাধা দেওয়া হয়। কথা বা দেখা করতে দেওয়া হয়নি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে। ফলে জানা যায়নি এ পরীক্ষায় মোট আবেদনকারীর সংখ্যা কত। কতজন চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন।
যমুনা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি মুক্তিযোদ্ধা দুলাল সাহা বলেন, তিনি ভেতরে যেতে চাইলে তাঁকে বাধা দেন জেইলর পদমর্যাদার মো.

ফরহাদ। তিনি তাঁর ভিডিও ক্যামেরার স্ক্রিন ভেঙে ফেলেন। এরপর ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের জন্য পাঠানো লিখিত অভিযোগে সই করেছেন পটুয়াখালীর পরীক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান, ভোলার মো. শাওন, বরগুনার মো. ফাহিম, পিরোজপুরের আবরি কাজী, বরিশালের মো. ছাব্বির ও ঝালকাঠির মো. রাহাত।
পটুয়াখালীর পরীক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান অভিযোগ করেন, ১০ জন করে ৬ জেলার ৬০ জন প্রার্থীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের বাণিজ্য হয়েছে। যারা ফিট, তাদের আনফিট দেখিয়ে বাদ দেওয়া হয়েছে। বরগুনার মো. ফাহিমের অভিযোগ, শারীরিক উচ্চতায় উত্তীর্ণ হলেও অনেককে নেওয়া হয়নি। অথচ যারা আনফিট তাদের বাছাই করা হয়েছে। অনেকের শিক্ষা সনদ ছুড়ে ফেলা হয়েছে।
পিরোজপুরের প্রার্থী আবির কাজি বলেন, ভেতরে এমন অনিয়ম দেখে প্রতিবাদ করলে তাদের বের করে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বাইরে অপেক্ষমাণ অনেকে আর পরীক্ষা দিতে যাননি। ভোলার পরীক্ষার্থী শাওন বলেন, তাদের অনেকেই ছিলেন পুলিশ, সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীতে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ফিট; কিন্তু তাদেরই আনফিট দেখানো হয়। 
এ বিষয়ে ঝালকাঠি জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. আব্দুল্লাহ ইবনে তোফাজ্জেল হোসেন খান বলেন, এ পরীক্ষার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই। ঝালকাঠি জেলাকে ভেনু হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র। ঢাকা থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মকর্তারা এসে পরীক্ষা নিয়েছেন। এর বেশি তিনি কিছু জানেন না। তিনি বাসায় ছিলেন। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ক ষ র স দ ধ ন ত পর ক ষ র থ পর ক ষ য় এ পর ক ষ র পর ক ষ ঝ লক ঠ

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় নাগরিক পার্টির গঠনতন্ত্র অনুমোদন

প্রতিষ্ঠার চার মাসের মাথায় গঠনতন্ত্র তৈরি করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।  শুক্রবার রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ষষ্ঠ সাধারণ সভায় গঠনতন্ত্র অনুমোদন করা হয়। পরে এর বিভিন্ন দিক সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন।

আখতার হোসেন বলেন, কিছু সংশোধনীসহ সভায় এনসিপির ‘খসড়া গঠনতন্ত্র’ অনুমোদিত হয়েছে। আগামী কাউন্সিলের আগে প্রয়োজন সাপেক্ষে বর্তমান প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক কমিটি এতে সংশোধনী আনতে পারবে।

গঠনতন্ত্রের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে আখতার বলেন, এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সারা দেশের কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। একজন সদস্য জীবনে সর্বোচ্চ দুইবার সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন এবং সর্বোচ্চ দুইবার সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দলের রাজনৈতিক পরিষদের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন।

এনসিপির রাজনৈতিক পরিষদ ন্যাশনাল কাউন্সিলের (জাতীয় পরিষদ) সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হবে। ‘রাজনৈতিক পরিষদ’ সর্বনিম্ন ১১ জন থেকে সর্বোচ্চ ১৫ জন সদস্যের হবে। ১১ জন সদস্য ন্যাশনাল কাউন্সিলের সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হবেন। তার মধ্যে ন্যূনতম তিনজন নারী সদস্য থাকতে হবে। পদাধিকারবলে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রাজনৈতিক পরিষদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। এই পরিষদের বাকি দুজন সদস্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বারা মনোনীত হবেন।

এনসিপির একটি ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল’ থাকবে। এই ফোরাম ‘রাজনৈতিক পরিষদ’ নির্বাচন, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন এবং জরুরি সময়ে কিছু কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার দায়িত্ব পালন করবে। কেন্দ্রীয় কমিটি, অঙ্গসংগঠনের নির্বাহী কমিটি, জেলা পদমর্যাদার কমিটি থেকে পাঁচজন এবং উপজেলা পদমর্যাদার কমিটি থেকে দুজন সদস্যের সমন্বয়ে ন্যাশনাল কাউন্সিল গঠিত হবে।

এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটি দলের সভাপতি, সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলী, অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাধারণ সদস্য এবং ক্ষেত্রবিশেষে জেলা সভাপতিদের সমন্বয়ে গঠিত হবে। কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ হবে তিন বছর। মেয়াদের শেষ ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।

এনসিপির এই গঠনতন্ত্র দলীয় ফোরামে অনুমোদিত হলো নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের আবেদন সময়সীমা শেষ হওয়া সামনে রেখে। আগামী রোববার এই সময়সীমা শেষ হচ্ছে।

এনসিপির নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন দাখিলের বিষয়ে সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সামগ্রিক যোগাযোগের জন্য মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ ও যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদীব, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন, যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাতীয় নাগরিক পার্টির গঠনতন্ত্র অনুমোদন