হোমনা উপজেলার মোহাম্মদ ওয়াসিম তথ্য গোপন করে নিজ উপজেলায় প্রায় চার বছর ধরে খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা পদে চাকরি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি হোমনা উপজেলার ভাষানিয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের মৃত মতি মিয়ার ছেলে।

জানা গেছে, ২০১০ সালে ঢাকার ঠিকানা ব্যবহার করে খাদ্য পরিদর্শক পদে চাকরিতে যোগদান করেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। পদোন্নতি পেয়ে ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর হোমনা উপজেলায় খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। অভিযোগ রয়েছে, বদলির সময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে স্থায়ী ঠিকানা গোপন করেন এবং জোরালো তদবিরের মাধ্যমে নিজ উপজেলায় পদায়ন নিশ্চিত করেন। খাদ্য অধিদপ্তরের নীতিমালা-২০১৯ অনুযায়ী দুই থেকে তিন বছরের অধিক কার্যকাল একই উপজেলায় কোনো কর্মকর্তাকে নিয়োজিত রাখা যাবে না। অথচ মোহাম্মদ ওয়াসিম হোমনা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা পদে রয়েছেন প্রায় চার বছর।

খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি ও পদায়ন নীতিমালা-২০১৯ অনুযায়ী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বা সমমানের পদ, নবম গ্রেডভুক্ত ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদ, সিএসডির সহকারী ব্যবস্থাপক বা ব্যবস্থাপক এবং এলএসডির সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা বা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদে নিজ জেলায় নিয়োগ বা পদায়ন করা যাবে না। আরও বলা হয়েছে, ১০ম থেকে ১৬তম গ্রেডভুক্ত কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীকেও নিজ জেলায় নিয়োগ বা বদলি করা যাবে না। অথচ খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াসিম নিজের উপজেলা হোমনাতেই নিয়োজিত রয়েছেন।

অভিযোগের ব্যাপারে হোমনা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াসিম সমকালকে বলেন, ‘আমি ঢাকায় সেটেল, ঢাকার ঠিকানায় আমার চাকরি হয়েছে। হোমনায় আমার পৈতৃক বাড়ি। ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর বদলি হয়ে এসেছি।’

ভাষানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন সরকার জানান, মোহাম্মদ ওয়াসিম ঢাকায় সেটেল। তাঁর বাড়ি ইসলামপুর গ্রামে। তিনি বাড়িতে মাঝে মাঝে আসা-যাওয়া করেন। তাঁর মা-বাবা ও ভাইদের মধ্যে বেশির ভাগই ভাষানিয়া ইউনিয়নে আছেন। ওয়াসিমের ঠিকানা ঢাকা দেওয়া এটা কনফার্ম।

কুমিল্লা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা নিত্যানন্দ কুন্ডুকে ফোন করলে তিনি সমকালকে জানান, হোমনা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াসিম ঢাকার দক্ষিণ খানের ঠিকানায় চাকরি নিয়েছেন। খাদ্য অধিদপ্তর সেই ঠিকানা অনুযায়ী তাঁকে হোমনায় পদায়ন করেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের অধিদপ্তরের নীতিমালায় বলা আছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কোনো কর্মকর্তা নিজ উপজেলায় পদায়ন পাবেন না। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কোনো কর্মকর্তাকে শুধু নিজ উপজেলা নয়, জেলায়ও পদায়ন করার সুযোগ নেই। আসলে আমরা তো জানি না তাঁর পৈতৃক বাড়ি হোমনাতে কিনা? আমাদের সব পদায়ন খাদ্য অধিদপ্তর থেকে হয়। আপনি যদি আরও বিস্তারিত জানতে চান অধিদপ্তরের প্রশাসনিক শাখায় একটু যোগাযোগ করেন।’

এ বিষয়ে জানতে খাদ্য অধিদপ্তরের প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তা ডি এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সমকালকে তিনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আমি ওই কর্তৃপক্ষ না, যিনি এটার দায়িত্বে আছেন– তিনি আজকে ছুটিতে। তিনি সোমবার অফিসে এলে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারব। এই বিষয়ের নিয়মটি অ্যাডমিন কর্মকর্তা নীতিমালা দেখে জানাবেন।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন জ উপজ ল য়

এছাড়াও পড়ুন:

চিম্বুকে ভালুকের আক্রমণে একজন আহত, ৫ বছরে ১০ জন হামলার শিকার

বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি সড়কের পোড়াবাংলা পটোসিংপাড়ায় আজ শুক্রবার সকালে ভালুকের আক্রমণে একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁকে উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।

বন বিভাগ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০২১ সাল থেকে ভালুকের আক্রমণ বেড়েছে। গত পাঁচ বছরে ১০ জন আক্রমণের শিকার হয়েছেন। আক্রমণের শিকার ব্যক্তিদের অধিকাংশ ম্রো জনগোষ্ঠীর। ভালুকের কারণে আহত হওয়ার ঘটনায় আবেদন না করায় এই পর্যন্ত কেউ ক্ষতিপূরণ পায়নি বলে বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পোড়াবাংলা পটোসিংপাড়ার কাইনপ্রে ম্রো (৩৫) পাড়া থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে জুমখেতে কাজ করতে যান। সেখানে জুমের পাশে কলাবাগানে কাজ করার সময় হঠাৎ কালো রঙের একটি ভালুক তাঁর ওপর আক্রমণ করে। ভালুকটি তাঁর পেটে ও মুখে আঘাত করতে থাকে। তাঁর চিৎকারে আশপাশে জুমের লোকজন এগিয়ে আসেন।

আহত কাইনপ্রে ম্রোর ভাই তনরুই ম্রো জানিয়েছেন, আশপাশের লোকজনের এগিয়ে আসা দেখে ভালুকটি কাইনপ্রে ম্রোকে ছেড়ে দিয়ে বনে পালিয়ে যায়। তাঁরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে কাইনপ্রে ম্রোকে উদ্ধার করে দুপুরে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পোড়াবাংলা পটোসিংপাড়া জেলা শহর থেকে ৩১ কিলোমিটার দূরে। পাড়াটি রুমা উপজেলার গালেংগ্যা ইউনিয়নে পড়েছে।

বান্দরবান সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আহত কাইনপ্রে ম্রোর পেটে ও মাথায় গভীর ক্ষত আছে। এ জন্য তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

জানা যায়, থানচি তিন্দু ইউনিয়নে মেনপই ম্রো নামের একজন ২০২০ সালের ২৮ এপ্রিল প্রথম ভালুকের আক্রমণের শিকার হন। ওই একজনসহ ২০২১ সাল থেকে এই পর্যন্ত ৫ বছরে ১০ জন ভালুকের আক্রমণে আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে থানচিতে দুজন, রুমাতে তিনজন, আলীকদমে একজন ও বান্দরবান সদর উপজেলা চিম্বুক পাহাড়ে চারজন রয়েছেন। কারও মৃত্যু না হলেও তাঁদের মধ্যে কেউ চোখ হারিয়েছেন, কারও হাত–পা পঙ্গু হয়েছে। আহত ব্যক্তিরা একজন মারমা ও একজন খুমি ছাড়া অন্যরা সবাই ম্রো।

বন বিভাগের বান্দরবানের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আবদুর রহমান জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক বনাঞ্চল কেটে উদ্যান বাগান ও জুমচাষ করা এলাকাগুলোতে ভালুকের আক্রমণ বেড়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, বাগানের কারণে ভালুক ও অন্যান্য বন্য প্রাণীরা আবাসস্থল ও বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যসংস্থান হারাচ্ছে। জীবনের তাগিদে তারা মানুষের সঙ্গে মুখোমুখি হতে বাধ্য হচ্ছে। বন নির্ভর মানুষকে অন্যভাবে আয়ের সংস্থানের মাধ্যমে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল সংরক্ষণ না হলে বন্য প্রাণীর সঙ্গে সহাবস্থান গড়ে উঠবে না। এভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা না হলে বন্য প্রাণী ও মানুষ কারও জন্য মঙ্গলজনক হবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট, তরুণেরা কেন আগাম ভোট দিচ্ছেন
  • ‘হুক্কা’ প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরে পেল জাগপা
  • জুলাই বিরোধিতা: ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী ও ৩৩ ছাত্রলীগ নেতার ‘শাস্তি’
  • চিম্বুকে ভালুকের আক্রমণে একজন আহত, ৫ বছরে ১০ জন হামলার শিকার
  • এককালের প্রেম যখন উপেক্ষিত