তথ্য গোপন করে নিজ উপজেলায় ৪ বছর খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা
Published: 9th, May 2025 GMT
হোমনা উপজেলার মোহাম্মদ ওয়াসিম তথ্য গোপন করে নিজ উপজেলায় প্রায় চার বছর ধরে খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা পদে চাকরি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি হোমনা উপজেলার ভাষানিয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের মৃত মতি মিয়ার ছেলে।
জানা গেছে, ২০১০ সালে ঢাকার ঠিকানা ব্যবহার করে খাদ্য পরিদর্শক পদে চাকরিতে যোগদান করেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। পদোন্নতি পেয়ে ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর হোমনা উপজেলায় খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। অভিযোগ রয়েছে, বদলির সময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে স্থায়ী ঠিকানা গোপন করেন এবং জোরালো তদবিরের মাধ্যমে নিজ উপজেলায় পদায়ন নিশ্চিত করেন। খাদ্য অধিদপ্তরের নীতিমালা-২০১৯ অনুযায়ী দুই থেকে তিন বছরের অধিক কার্যকাল একই উপজেলায় কোনো কর্মকর্তাকে নিয়োজিত রাখা যাবে না। অথচ মোহাম্মদ ওয়াসিম হোমনা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা পদে রয়েছেন প্রায় চার বছর।
খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি ও পদায়ন নীতিমালা-২০১৯ অনুযায়ী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বা সমমানের পদ, নবম গ্রেডভুক্ত ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদ, সিএসডির সহকারী ব্যবস্থাপক বা ব্যবস্থাপক এবং এলএসডির সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা বা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদে নিজ জেলায় নিয়োগ বা পদায়ন করা যাবে না। আরও বলা হয়েছে, ১০ম থেকে ১৬তম গ্রেডভুক্ত কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীকেও নিজ জেলায় নিয়োগ বা বদলি করা যাবে না। অথচ খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াসিম নিজের উপজেলা হোমনাতেই নিয়োজিত রয়েছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে হোমনা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াসিম সমকালকে বলেন, ‘আমি ঢাকায় সেটেল, ঢাকার ঠিকানায় আমার চাকরি হয়েছে। হোমনায় আমার পৈতৃক বাড়ি। ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর বদলি হয়ে এসেছি।’
ভাষানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন সরকার জানান, মোহাম্মদ ওয়াসিম ঢাকায় সেটেল। তাঁর বাড়ি ইসলামপুর গ্রামে। তিনি বাড়িতে মাঝে মাঝে আসা-যাওয়া করেন। তাঁর মা-বাবা ও ভাইদের মধ্যে বেশির ভাগই ভাষানিয়া ইউনিয়নে আছেন। ওয়াসিমের ঠিকানা ঢাকা দেওয়া এটা কনফার্ম।
কুমিল্লা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা নিত্যানন্দ কুন্ডুকে ফোন করলে তিনি সমকালকে জানান, হোমনা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াসিম ঢাকার দক্ষিণ খানের ঠিকানায় চাকরি নিয়েছেন। খাদ্য অধিদপ্তর সেই ঠিকানা অনুযায়ী তাঁকে হোমনায় পদায়ন করেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের অধিদপ্তরের নীতিমালায় বলা আছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কোনো কর্মকর্তা নিজ উপজেলায় পদায়ন পাবেন না। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কোনো কর্মকর্তাকে শুধু নিজ উপজেলা নয়, জেলায়ও পদায়ন করার সুযোগ নেই। আসলে আমরা তো জানি না তাঁর পৈতৃক বাড়ি হোমনাতে কিনা? আমাদের সব পদায়ন খাদ্য অধিদপ্তর থেকে হয়। আপনি যদি আরও বিস্তারিত জানতে চান অধিদপ্তরের প্রশাসনিক শাখায় একটু যোগাযোগ করেন।’
এ বিষয়ে জানতে খাদ্য অধিদপ্তরের প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তা ডি এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সমকালকে তিনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আমি ওই কর্তৃপক্ষ না, যিনি এটার দায়িত্বে আছেন– তিনি আজকে ছুটিতে। তিনি সোমবার অফিসে এলে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারব। এই বিষয়ের নিয়মটি অ্যাডমিন কর্মকর্তা নীতিমালা দেখে জানাবেন।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন জ উপজ ল য়
এছাড়াও পড়ুন:
পাক-ভারত হামলা নিয়ে যা বলছেন বিশ্লেষকরা
পাকিস্তানের পাঞ্জাব এবং আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরের ছয়টি স্থানে বুধবার ভারত গভীর রাতে বিমান হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা ‘ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার ঝুঁকি’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এই হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪০ জনেরও বেশি আহত হন। ইসলামাবাদ পাঁচটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করেছে। সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরীর মতে, জবাবে বেশ কয়েকটি ভারতীয় চেকপোস্ট ধ্বংস করা হয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান এই উত্তেজনাকর পরিস্থতি নিয়ে পাকিস্তানের কূটনীতিকমালিহা লোধি বলেছেন, “এটি ভারতীয় আগ্রাসনের ফলে সৃষ্ট অত্যন্ত গুরুতর সংকট। পাকিস্তান পাঁচটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করে এবং নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারতীয় পোস্ট ধ্বংস করে ভারতীয় আক্রমণের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। পাকিস্তান বলেছে, তারা এখন ভারতীয় আক্রমণের জবাব দেবে। তারা প্রতিরোধ ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায়। কারণ কয়েক বছর অন্তর ভারত বিমান বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর জন্য সীমান্ত বিধি লঙ্ঘন করে। পাকিস্তান চায় না যে এটি নতুন স্বাভাবিক হয়ে উঠুক, যার ফলে কৌশলগতভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়।”
লোধি আরো বলেন, “পারমাণবিক পরিবেশে আরো উত্তেজনা গুরুতর ঝুঁকিতে পরিপূর্ণ। বড় উত্তেজনা এড়ানো সম্ভব কিনা তা স্পষ্ট নয়, তবে আমরা এটি প্রতিরোধে মার্কিন হস্তক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি। কারণ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অতীতের সংকটগুলো সবসময় ওয়াশিংটনের মাধ্যমে প্রশমিত করা হয়েছে।”
পাকিস্তানের সিনিয়র বিশ্লেষক মাজহার আব্বাস বলেছেন, “৭ মে, দিনটি পাকিস্তানের জন্য আশাব্যঞ্জক কারণ আমরা কেবল যুদ্ধক্ষেত্রেই নয়, কূটনৈতিক ফ্রন্টেও ভারতকে পরাজিত করেছি।
ভারত একটি চলচ্চিত্র চালিয়েছে, আমরা একটি ট্রেলার চালিয়েছে, যদি তারা যুদ্ধে এগিয়ে যেতে চায়, আমরা প্রস্তুত।...পাকিস্তান তাদের তিনটি ফ্রন্টে পরাজিত করেছে: যুদ্ধ, মিডিয়া এবং কূটনীতি। যদি আমরা এই সমন্বিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই, তাহলে আমরা সফল হব।”
পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, “পাকিস্তানে ভারতের হামলা ২০১৯ সালের চেয়ে অনেক বড় আকারের। অনেক রিপোর্ট অনুসারে, পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে বেশ কয়েকটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করা অন্তর্ভুক্ত ছিল, তা ২০১৯ সালেরও মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে, তারা ইতিমধ্যেই ২০১৯ সংকটের যেকোনো সময়ের তুলনায় ক্রমবর্ধমান সিঁড়িতে উপরের দিকে উঠে গেছে। এই দুটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী, এমনকি প্রতিরোধক হিসেবে পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়াই, একে অপরের বিরুদ্ধে ... প্রচলিত সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে ভয় পায় না। ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি বাস্তব। এবং এটি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।”
আইনজীবী জিবরান নাসির বলেছেন, “ভারত দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রের মতো আচরণ করে, বেসামরিক নাগরিক এবং মসজিদগুলোতে হামলা চালিয়ে একাধিক আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করেছে। পহেলগামে পাকিস্তানের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ না দিয়ে, মোদি সরকার জেনেভা কনভেনশন , জেনেভা প্রোটোকল, হেগ কনভেনশন, হেগ কনভেনশন ১৯৫৪, আইসিসির ১৯৯৮ সালের রোম স্ট্যাচুর ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ এবং আইসিআরসির সংশোধিত কাস্টমারি আইএইচএল-এর বিধান লঙ্ঘন করে যুদ্ধাপরাধের আশ্রয় নিয়েছে। ভারতের প্রতি পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বিমান ভূপাতিত করা এবং সামরিক স্থাপনাগুলোতে বোমা হামলা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এটি পরিমিত ছিল এবং আত্মরক্ষার অধিকার রক্ষায় করা হয়েছিল।”
ঢাকা/শাহেদ