সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বাংলাদেশ সময় গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে এই বৈঠক হয়।

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে টানা দুবারের বিজয়ী সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ (মহানগর ও সদর) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। তবে দলের একটা অংশ চাইছে, তিনি যেন সিটি নির্বাচনেই অংশ নেন।

তারেক রহমানের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে আরিফুল সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েছেন বলে তাঁর অনুসারীরা দাবি করছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তারেক ও আরিফুলের বৈঠকের ছবিসহ ‘শুভ কিছু হচ্ছে’ লিখে স্ট্যাটাসও দেন।

হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করলে আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘লিডারের (তারেক রহমান) সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন, দলকে কীভাবে আরও সুসংগঠিত করা যায়, এসব বিষয়সহ সিলেট অঞ্চলের রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন কথাবার্তা হয়েছে। একপর্যায়ে তিনি আমাকে প্রার্থিতার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দেন। তবে এখনই এসব নিয়ে কথা বলতে চাইছি না। সময় এলেই সব খোলাসা হবে।’

স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল আরিফুল হক চৌধুরী হঠাৎ লন্ডন সফরে যান। এরপরই তাঁর লন্ডন সফর নিয়ে নগরে দুটি বিষয় চাউর হয়। একটি পক্ষ জানায়, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রশাসক পদে নিয়োগ পাওয়ার একটি প্রস্তাব আরিফুল পেয়েছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ‘সিগন্যাল’ পেলে তিনি এ দায়িত্ব নিতে পারেন।

আরেকটি পক্ষ বলছে, তিনি মূলত আগামী সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী। তারেক রহমানকে তাঁর আগ্রহের বিষয়টি জানাতেই আরিফুল যুক্তরাজ্য গেছেন।

আরও পড়ুনহঠাৎ লন্ডন সফরে সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল, নানা আলোচনা০১ মে ২০২৫

আরিফুলের ঘনিষ্ঠ এক নেতা দাবি করেন, তারেক রহমানের সঙ্গে আরিফুলের ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। সেখানে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছেন। সিলেট-১ আসনে তারেক রহমান কিংবা তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা আছে। এমনটা হলে আরিফুল সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন। অন্যদিকে জিয়া পরিবারের কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলে আরিফুলের এ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

তবে স্থানীয় বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, আরিফুলের ব্যাপক জনসমর্থন থাকলেও স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে তাঁর মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব ও বিরোধ আছে। এ ছাড়া জাতীয় নাকি স্থানীয়, কোন নির্বাচনে তাঁকে দলীয় প্রার্থী করা হতে পারে, সেটাও আরিফুল নিশ্চিত ছিলেন না। এ জন্য আরিফুলের মধ্যে একটা দোলাচাল ছিল। এ সংশয় দূর করতেই তিনি লন্ডনে যান।

গত ২৭ এপ্রিল আরিফুল হক চৌধুরী হঠাৎ লন্ডন সফরে যান। এরপরই তাঁর লন্ডন সফর নিয়ে নগরে দুটি বিষয় চাউর হয়। একটি পক্ষ জানায়, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রশাসক পদে নিয়োগ পাওয়ার একটি প্রস্তাব আরিফুল পেয়েছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ‘সিগন্যাল’ পেলে তিনি এ দায়িত্ব নিতে পারেন।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আরিফুল মূলত সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান। তাঁর প্রথম পছন্দ সিলেট-১ আসন। তবে এখানে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর। বিএনপির প্রভাবশালী এই নেতা আগামী নির্বাচনেও এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক। ফলে মুক্তাদীরকে ডিঙিয়ে আরিফুলের এখানে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম। এ ক্ষেত্রে আরিফুলকে সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর) আসনে প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলের ভেতরে আলোচনা আছে।

অন্যদিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে আরিফুল হক চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন বলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাউর আছে। যদিও এখানে দলের ভেতরে তাঁর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন। তাঁরা হচ্ছেন সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী।
আরিফুল হক বর্তমানে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন। এর আগে তিনি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া তিনি সিলেট জেলা বিএনপির সদস্য। এর আগে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন একসময়ের ছাত্রদলের প্রভাবশালী এই নেতা।

আরিফুল ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রয়াত মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে হারিয়ে প্রথমবার মেয়র হন। ২০১৮ সালের পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চারটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। একমাত্র সিলেটে বিএনপি থেকে আরিফুল হক মেয়র নির্বাচিত হন। তবে সর্বশেষ ২০২৩ সালে বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় তিনিও প্রার্থী হননি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ব এনপ র স আর ফ ল র রহম ন র য় ব এনপ দল র ভ র একট

এছাড়াও পড়ুন:

এ ঘটনা অধ্যাপক ইউনূসের জন্য লজ্জার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ক্ষমা চাইতে হবে

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেনের ওপর আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের ডিম নিক্ষেপের প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন দলটির নেতা–কর্মীরা। তাঁরা বলেছেন, এ ঘটনা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য লজ্জার। নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ হওয়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বাংলামোটরে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

নিউইয়র্কে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ রাজনীতিবিদদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারের চরম গাফিলতির প্রতিবাদ এবং দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে এই বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা।

মিছিলে এনসিপি নেতা–কর্মীদের ‘ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর/ আওয়ামী লীগ নো মোর’; ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ/ শেষ হয়নি যুদ্ধ’; ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ/ মুজিববাদ মুর্দাবাদ’; ‘দিল্লি না ঢাকা/ ঢাকা ঢাকা’; ‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা/ এই বাংলায় হবে না’; ‘আখতারের ওপর হামলা করে/ ইন্টারিম কি করে?’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে শোনা যায়।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বক্তব্য দেন।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারাকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে তাঁদেরকে আওয়ামী লীগের সামনে ছেড়ে দিয়েছেন। এটা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য লজ্জার। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্য লজ্জার। এ ঘটনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ব্যর্থতার দায় নিয়ে অতিসত্বর বাংলাদেশের মানুষের সামনে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।’

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে এখনো আওয়ামী লীগের সাঙ্গপাঙ্গরা রয়েছে। অতিদ্রুত সিভিল সার্ভিস থেকে, সেনাবাহিনী থেকে, রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান থেকে আওয়ামী লীগের গুন্ডা বাহিনীদের অপসারণ করতে হবে। যদি অপসারণ করতে না পারেন, তাহলে ইউনূস সরকার বর্তমান যে অবস্থায় রয়েছে, তারা কত দিন ক্ষমতায় টিকবে সেই নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারি না।’

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আজকে আমাদের বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাহেবের একটি বক্তব্য দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টিকে নিয়ে আসতে চায়। এ বক্তব্য জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জার।...আমরা এখনো বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের শহীদ জিয়ার সৈনিকেরা মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করবেন।’

জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীকে যখন রাজাকার বলে, পাকিস্তানি ট্যাগ দিয়ে অলিগলিতে পেটানো হয়েছে, তখন আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু আজকে যখন গণ–অভ্যুত্থানের নেতাদের ওপর হামলা হচ্ছে, বাংলাদেশের অলিগলিতে আওয়ামী লীগ ঘোরাফেরা করছে, তখন তারা মুখে কুলুপ বসিয়েছে।’

দলীয় প্রতীক হিসেবে শাপলা পাওয়া নিয়ে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘আমরা যখন নিবন্ধন কর্মসূচির সব কাজ সম্পন্ন করেছি, নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে আমরা বলেছিলাম, শাপলা প্রতীক পেতে আইনি কোনো বাধা আছে? তারা আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে, আইনি কোনো বাধা নেই। কিন্তু কেন প্রতীক পাব না, সেই প্রশ্নে তারাও মুখে কুলুপ এঁটেছে। আমরা সব জায়গায় ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি।’

আরও পড়ুননিউইয়র্কে এনসিপি নেতা আখতারকে হেনস্তা করলেন আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীরা, ডিম নিক্ষেপ১৩ ঘণ্টা আগে

তাসনিম জারাকে কটূক্তির প্রতিবাদ জানিয়ে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, ‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল আমাদের বোনেরা। রাজপথে সামনে সারিতে দাঁড়িয়ে তাঁরা আওয়ামী লীগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছিল। রক্ত দিয়ে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছিলেন। এখন সেই আওয়ামী লীগ দেশছাড়া হয়ে আমাদের বোনদের আক্রমণ করা শুরু করেছে। কারণ তারা জানে, আমাদের বোনেরা যদি তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান, আমাদের বোনেরা যদি তাঁদের কণ্ঠস্বর সোচ্চার রাখেন, তাহলে এই বাংলাদেশে ওই খুনিদের আর জায়গা হবে না।’

বাংলাদেশে কোনো ‘রিফাইন্ড’ আওয়ামী লীগের জায়গা হবে না মন্তব্য করে সারজিস আলম বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশে যেকোনো ফরম্যাটে রিফাইন্ড আওয়ামী লীগকে আমরা আশ্রয় পেতে দেব না। আমরা আগামীর বাংলাদেশকে রিফাইন্ড বাংলাদেশের দিকে নিয়ে যাব, যেই বাংলাদেশে কোনো ফ্যাসিস্ট কিংবা ফ্যাসিস্টের দোসরের জায়গা হবে না।’

আরও পড়ুনআখতারকে ডিম নিক্ষেপ: নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তি চায় এনসিপি৬ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ