লন্ডনে তারেক-আরিফুলের বৈঠক, সংসদ নির্বাচনের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পাওয়ার দাবি
Published: 9th, May 2025 GMT
সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বাংলাদেশ সময় গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে এই বৈঠক হয়।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে টানা দুবারের বিজয়ী সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ (মহানগর ও সদর) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। তবে দলের একটা অংশ চাইছে, তিনি যেন সিটি নির্বাচনেই অংশ নেন।
তারেক রহমানের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে আরিফুল সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েছেন বলে তাঁর অনুসারীরা দাবি করছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তারেক ও আরিফুলের বৈঠকের ছবিসহ ‘শুভ কিছু হচ্ছে’ লিখে স্ট্যাটাসও দেন।
হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করলে আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘লিডারের (তারেক রহমান) সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন, দলকে কীভাবে আরও সুসংগঠিত করা যায়, এসব বিষয়সহ সিলেট অঞ্চলের রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন কথাবার্তা হয়েছে। একপর্যায়ে তিনি আমাকে প্রার্থিতার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দেন। তবে এখনই এসব নিয়ে কথা বলতে চাইছি না। সময় এলেই সব খোলাসা হবে।’
স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল আরিফুল হক চৌধুরী হঠাৎ লন্ডন সফরে যান। এরপরই তাঁর লন্ডন সফর নিয়ে নগরে দুটি বিষয় চাউর হয়। একটি পক্ষ জানায়, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রশাসক পদে নিয়োগ পাওয়ার একটি প্রস্তাব আরিফুল পেয়েছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ‘সিগন্যাল’ পেলে তিনি এ দায়িত্ব নিতে পারেন।
আরেকটি পক্ষ বলছে, তিনি মূলত আগামী সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী। তারেক রহমানকে তাঁর আগ্রহের বিষয়টি জানাতেই আরিফুল যুক্তরাজ্য গেছেন।
আরও পড়ুনহঠাৎ লন্ডন সফরে সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল, নানা আলোচনা০১ মে ২০২৫আরিফুলের ঘনিষ্ঠ এক নেতা দাবি করেন, তারেক রহমানের সঙ্গে আরিফুলের ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। সেখানে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছেন। সিলেট-১ আসনে তারেক রহমান কিংবা তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা আছে। এমনটা হলে আরিফুল সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন। অন্যদিকে জিয়া পরিবারের কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলে আরিফুলের এ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
তবে স্থানীয় বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, আরিফুলের ব্যাপক জনসমর্থন থাকলেও স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে তাঁর মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব ও বিরোধ আছে। এ ছাড়া জাতীয় নাকি স্থানীয়, কোন নির্বাচনে তাঁকে দলীয় প্রার্থী করা হতে পারে, সেটাও আরিফুল নিশ্চিত ছিলেন না। এ জন্য আরিফুলের মধ্যে একটা দোলাচাল ছিল। এ সংশয় দূর করতেই তিনি লন্ডনে যান।
গত ২৭ এপ্রিল আরিফুল হক চৌধুরী হঠাৎ লন্ডন সফরে যান। এরপরই তাঁর লন্ডন সফর নিয়ে নগরে দুটি বিষয় চাউর হয়। একটি পক্ষ জানায়, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রশাসক পদে নিয়োগ পাওয়ার একটি প্রস্তাব আরিফুল পেয়েছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ‘সিগন্যাল’ পেলে তিনি এ দায়িত্ব নিতে পারেন।বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আরিফুল মূলত সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান। তাঁর প্রথম পছন্দ সিলেট-১ আসন। তবে এখানে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর। বিএনপির প্রভাবশালী এই নেতা আগামী নির্বাচনেও এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক। ফলে মুক্তাদীরকে ডিঙিয়ে আরিফুলের এখানে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম। এ ক্ষেত্রে আরিফুলকে সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর) আসনে প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলের ভেতরে আলোচনা আছে।
অন্যদিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে আরিফুল হক চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন বলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাউর আছে। যদিও এখানে দলের ভেতরে তাঁর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন। তাঁরা হচ্ছেন সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী।
আরিফুল হক বর্তমানে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন। এর আগে তিনি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া তিনি সিলেট জেলা বিএনপির সদস্য। এর আগে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন একসময়ের ছাত্রদলের প্রভাবশালী এই নেতা।
আরিফুল ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রয়াত মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে হারিয়ে প্রথমবার মেয়র হন। ২০১৮ সালের পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চারটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। একমাত্র সিলেটে বিএনপি থেকে আরিফুল হক মেয়র নির্বাচিত হন। তবে সর্বশেষ ২০২৩ সালে বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় তিনিও প্রার্থী হননি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ব এনপ র স আর ফ ল র রহম ন র য় ব এনপ দল র ভ র একট
এছাড়াও পড়ুন:
এনসিসির প্রস্তাব থেকে সরে এসেছে ঐকমত্য কমিশন
জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) নাম সংশোধন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এনসিসির পরিবর্তে সংস্থাটির নাম সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ নিয়োগ কমিটি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার সময় এ কথা জানান আলী রীয়াজ।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এনসিসির প্রস্তাব থেকে সরে এসেছে। নতুন এই কমিটির কাঠামোতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। তিনি বলেন, এনসিসিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি থাকার যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, নতুন প্রস্তাবিত কমিটিতে তাঁরা থাকবেন না। একই সঙ্গে উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের স্পিকারও এই কমিটিতে অন্তভুর্ক্ত থাকবেন না।
সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ নিয়োগ কমিটি শুধু সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করবে। অ্যাটর্নি জেনারেল এবং তিন বাহিনীর প্রধানের নিয়োগ এই কমিটির অন্তভুর্ক্ত হবে না।
অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, এই কমিটি হবে সাত সদস্যবিশিষ্ট। যেখানে সভাপতি থাকবেন সংসদের নিম্নকক্ষের স্পিকার।
ঐকমত্য কমিশনের নতুন এই প্রস্তাব নিয়ে আজকের বৈঠকে আলোচনা চলছে।