শেওড়াপাড়ায় দুই বোন খুন: সিসি ক্যামেরায় দেখা যুবককে ঘিরে সন্দেহ
Published: 10th, May 2025 GMT
মাথায় ক্যাপ ও মুখে মাস্ক পরা দীর্ঘদেহী এক ব্যক্তি শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ৬৪৯ নম্বর বাড়িতে ঢোকেন। মুখ দেখা না গেলেও শারীরিক গড়ন থেকে পুলিশের ধারণা, তিনি ২৫-৩০ বছরের যুবক। তাঁর পিঠে ব্যাকপ্যাক (এক ধরনের ব্যাগ) ছিল। বাসায় প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় তাঁকে আলাদা পোশাকে দেখা যায়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা এই যুবককে শেওড়াপাড়ার বাসায় দুই বোন হত্যায় সন্দেহভাজন বলছে পুলিশ। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত এবং জড়িত যুবক নিহতদের পরিচিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
শুক্রবার রাতে পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ছয় তলা ভবন ‘নার্গিস’-এর দোতলার বি-১ ফ্ল্যাট থেকে দুই নারীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তারা হলেন– বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) অবসরপ্রাপ্ত সহকারী সমন্বয় কর্মকর্তা মরিয়ম বেগম ও তাঁর ছোট বোন সুফিয়া বেগম। তাদের শরীরে ধারালো অস্ত্র ও ভারী কোনো বস্তুর আঘাতের চিহ্ন ছিল। তারা যে ভবনে থাকতেন সেটির মালিক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহানের বাবা। ঘটনাস্থল থেকে কিছুই খোয়া যায়নি। হত্যার ঘটনায় শনিবার মিরপুর থানায় অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নিহত মরিয়ম বেগমের স্বামী বন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত রেঞ্জার কাজী আলাউদ্দিন।
নিহত দু’জনের ভগ্নিপতি বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা শাহা কামাল খান জানান, কাজী আলাউদ্দিন ঘটনার সময় বরিশালে গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। বাসায় ছিলেন শুধু দুই বোন। শুক্রবার সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে যান মরিয়মের মেয়ে কম্পিউটার প্রকৌশলী নুসরাত জাহান মিষ্টি। রাত পৌনে ৯টার দিকে তিনি বাসায় ফিরে ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ পান। ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে বিকল্প চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখেন, খাবার ঘরের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন তাঁর মা, পাশের ঘরে খালা। দু’জনকেই ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মসলা বাটার জন্য ব্যবহৃত পাটা দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে। রক্তাক্ত পাটা ও ছুরি ঘটনাস্থলেই পেয়েছে পুলিশ।
তদন্ত সূত্র বলছে, শুক্রবার দুপুর ১টার আগে সন্দেহভাজন যুবক ওই বাসায় ঢোকেন। এক ঘণ্টার বেশি সেখানে অবস্থানের পর তিনি বেরিয়ে যান। তবে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় খুব সতর্কভাবে ক্যাপের আড়ালে মুখ লুকান, যাতে সিসি ক্যামেরায় মুখাবয়ব দেখা না যায়। সঙ্গে থাকা ব্যাকপ্যাকে বাড়তি জামা এনেছিলেন তিনি, যা বের হওয়ার সময় পরেন। এসব প্রস্তুতি থেকে ধারণা করা হচ্ছে, পরিকল্পনা করেই তিনি আসেন। যাওয়ার সময় দরজা তালাবদ্ধ করে যান। আবার নির্বিঘ্নে তিনি ওই বাসায় ঢোকেন। পরিবারটির পরিচিত না হলে সেটা সম্ভব ছিল না। ঘটনাস্থলে একটি মগে লেবুর শরবত পাওয়া গেছে। আগন্তুককে আপ্যায়নের উদ্দেশ্যে তা বানানো হয়ে থাকতে পারে। মরিয়ম ও তাঁর মেয়ে মিষ্টির মোবাইল ফোনের কলরেকর্ড পর্যালোচনা করছে পুলিশ। বিশেষ করে হত্যাকাণ্ডের আগে কার কার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়েছে, তা জানার চেষ্টা চলছে।
মরিয়মের বড় মেয়ে ইশরাত জাহান খুশবু স্বামীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। ছোট মেয়ে নুসরাত জাহান মিষ্টি ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ান একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি জানান, কারও সঙ্গে তাঁর বা পরিবারের সদস্যদের কোনো বিরোধ নেই। তাই কে বা কারা কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা তিনি ধারণা করতে পারছেন না।
মরিয়ম বেগম পাঁচ বোনের মধ্যে বড়। বোনদের মধ্যে তৃতীয় সুফিয়া ছিলেন অবিবাহিত। তিনি কিছু করতেন না। দুই মাস ধরে তিনি বড় বোনের বাসায় থাকতেন। ছোট বোন নুরুন নাহার জানান, শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে মোবাইল ফোনে বড় বোনের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। তখন তেমন কিছু বলেননি তিনি।
ঘটনাস্থল থেকে আজ দুপুরে বেশ কিছু নথিপত্র জব্দ করে নিয়ে যায় পুলিশ। সেই সঙ্গে এক যুবকের ছবি দেখিয়ে স্বজনের কাছে পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। তাদের একজন জানান, ওই যুবক মিষ্টির বান্ধবীর ছোট ভাই। তারা একসময় এই ফ্ল্যাটেই থাকতেন। তখন মিষ্টিদের পরিবার নিচতলায় থাকত।
ভবনের নিরাপত্তাকর্মী রাজু মিয়া জানান, হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য সময়ে তিনি ছাদে নিজের ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সন্দেহভাজন যুবককে তিনি ঢুকতে দেখেননি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মিজানুর রহমান সমকালকে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে শুরু করে শামীম সরণি হয়ে শেওড়াপাড়া মেট্রোরেল স্টেশন পর্যন্ত সব সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেসব বিশ্লেষণ করে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড, তা এখনও জানা যায়নি। ফলে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিরোধসহ সম্ভাব্য সব কারণ ধরেই তদন্ত করা হচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হত য শ ক রব র র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
কুরাইশদের আল্লাহ নিরাপত্তা কেন দিলেন
সুরা কুরাইশ পবিত্র কোরআনের ১০৬তম সুরা। এ সুরায় বলা হয়েছে, মক্কার কুরাইশরা শীত ও গ্রীষ্মকালে বাণিজ্য উপলক্ষে দেশ ভ্রমণ করতেন। তাদের আল্লাহ ক্ষুধায় খাদ্য ও ভয়ভীতি থেকে নিরাপত্তা দান করেছেন। তাই তাদের উচিত কাবাগৃহের প্রতিপালকের উপাসনা করা।
সুরা কুরাইশের অর্থ আবার দেখে নিই:
পরম করুণাময় পরম দয়াময় আল্লাহর নামে। ১. কুরাইশদের সংহতির জন্য, ২. শীত ও গ্রীষ্মের সফরে তাদের সংহতির জন্য, ৩. তাদের উপাসনা করা উচিত এই কাবাগৃহের প্রতিপালকের, ৪. যিনি তাদের ক্ষুধায় খাদ্য দান করেছেন এবং নিরাপত্তা দান করেছেন ভয়ভীতি থেকে।
সুরা কুরাইশের মূল কথা:
প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে যে কুরাইশরা যাতে বিচ্ছিন্ন না হয়, তাদের ঐক্য ও সংহতি যেন বজায় থাকে।
দ্বিতীয় আয়াতে শীত ও গ্রীষ্মের সফরেও তাদের সংহতির কথা বলেছেন। ‘রিহলাহ’ শব্দ ব্যবহার করেছেন আল্লাহ। এর অর্থ এমন ভ্রমণ, যাতে বাণিজ্য পণ্য, মালপত্র বহন করা হয়। কুরাইশরা শীতের ও গ্রীষ্ম উভয় সময়েই বাণিজ্য সফর করত। গ্রীষ্মকালে তারা সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের দিকে বাণিজ্য সফর করত। কারণ, এ দুটি শীতপ্রধান দেশ। আর শীতকালে সফর করত দক্ষিণ আরব তথা ইয়েমেনের দিকে। কারণ, সেটি গ্রীষ্মপ্রধান এলাকা।
তৃতীয় আয়াতে বলা হয়েছে, কাবাঘরের চাবি ও কর্তৃত্ব কুরাইশদের হাতে থাকার কারণেই তারা এত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। কুরাইশরা কাবার তত্ত্বাবধায়ক ছিল। তাদের ওপর আল্লাহ যে নিয়ামত দিয়ে রেখেছেন তার প্রতিদানস্বরূপ এই ঘরের রবের ইবাদত তাদের করা উচিত বলে আল্লাহ বলেছেন। অথচ তারা আল্লাহর ঘর কাবার তত্ত্বাবধায়ক থাকলেও আল্লাহর পরিপূর্ণ ইবাদত করত না।
ইবাদত আসলে দুটি কাজের সংমিশ্রণ। উপাসনা ও দাসত্ব। যেকোনো একটি অনুপস্থিত থাকলে ইবাদত পরিপূর্ণ হয় না।
আরও পড়ুনসুরা কাওসারে তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫দুই নামাজের মাঝখানের সময়ে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলা হলো দাসত্ব। আনুষ্ঠানিকভাবে আল্লাহর উপাসনা করা ও উপাসনা বাদে অন্য সব সময়ে আল্লাহর দাসত্ব করাই হলো আল্লাহর ইবাদত করা। তৎকালীন কুরাইশরা উপাসনা ও দাসত্ব দুটিই লঙ্ঘন করেছিল। তারা এক আল্লাহর উপাসনা না করে আরও অনেক কিছুর উপাসনা করত, আল্লাহর দাসত্ব না করে অন্য কিছুর দাসত্ব করত।
কাবার তত্ত্বাবধায়ক হওয়ায়, নিরাপত্তাসহ সফর ও ব্যবসা করার কারণে তাদের ক্ষুধা বা খাদ্যের সমস্যা বা চিন্তা ছিল না। তার সঙ্গে আল্লাহ বিশেষভাবে তাদের ও আল্লাহর ঘরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন আগের সুরা আল ফিলে। সুরা আল ফিলে আল্লাহ কাবা ধ্বংস করার পরিকল্পনাকে নস্যাৎ করে দেওয়ার বর্ণনা দেন। তার একটি কারণ কুরাইশদের নিরাপত্তা।
আল্লাহ কুরাইশদের প্রতি তার বিশেষ দুটি নেয়ামতের কথা এখানে স্মরণ করিয়েছেন চতুর্থ ও শেষ আয়াতে। আরবে শীতকালে খাদ্যের তেমন উৎপাদন না থাকায় ক্ষুধার প্রকোপ ছিল। অন্যদিকে গ্রীষ্মকালে খাদ্য থাকায় আর্থিক সংগতিতে বাণিজ্য কাফেলায় চলাচল বৃদ্ধি পেত। তাই তখন ডাকাতির ভয় থাকত।
আরও পড়ুন‘বাকারা’ পবিত্র কোরআনের দ্বিতীয় সুরা০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫মক্কায় আসার আগে কুরাইশরা যখন আরবের চারদিকে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে ছিল, তখন তারা অনাহারে মরতে বসেছিল। এখানে আসার পর তাদের জন্য রিজিকের দরজাগুলো খুলে যেতে থাকে। তাদের সপক্ষে ইবরাহিম (আ.) এই বলে দোয়া করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার মর্যাদাশালী ঘরের কাছে একটি পানি ও শস্যহীন উপত্যকায় আমার সন্তানদের একটি অংশের বসতি স্থাপন করিয়েছি, যাতে তারা সালাত কায়েম করতে পারে। কাজেই আপনি লোকদের হৃদয়কে তাদের অনুরাগী করে দিন, তাদের খাবার জন্য ফলমূল দান করুন।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৩৭)
তাঁর এই প্রার্থনা অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ হয়।
মোটকথা, আরবের অন্যান্য গোত্রের মতো তারাও একটি বংশধারার বিক্ষিপ্ত দল ছিল মাত্র। কিন্তু মক্কায় এই ঘরের চারদিকে একত্র হওয়ার এবং এর সেবকের দায়িত্ব পালন করতে থাকার পর সমগ্র আরবে তারা মর্যাদাশালী হয়ে উঠেছে। সব দিকে তাদের বাণিজ্য কাফেলা নিয়ে যাওয়া–আসা করছে। তারা যা কিছুই লাভ করেছে, এ ঘরের রবের বদৌলতেই লাভ করেছে। কাজেই তাদের একমাত্র সেই রবেরই ইবাদত করা উচিত।
আরও পড়ুনসুরা ফাতিহার অর্থ ও ফজিলত০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫