মাথায় ক্যাপ ও মুখে মাস্ক পরা দীর্ঘদেহী এক ব্যক্তি শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ৬৪৯ নম্বর বাড়িতে ঢোকেন। মুখ দেখা না গেলেও শারীরিক গড়ন থেকে পুলিশের ধারণা, তিনি ২৫-৩০ বছরের যুবক। তাঁর পিঠে ব্যাকপ্যাক (এক ধরনের ব্যাগ) ছিল। বাসায় প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় তাঁকে আলাদা পোশাকে দেখা যায়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা এই যুবককে শেওড়াপাড়ার বাসায় দুই বোন হত্যায় সন্দেহভাজন বলছে পুলিশ। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত এবং জড়িত যুবক নিহতদের পরিচিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

শুক্রবার রাতে পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ছয় তলা ভবন ‘নার্গিস’-এর দোতলার বি-১ ফ্ল্যাট থেকে দুই নারীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তারা হলেন– বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) অবসরপ্রাপ্ত সহকারী সমন্বয় কর্মকর্তা মরিয়ম বেগম ও তাঁর ছোট বোন সুফিয়া বেগম। তাদের শরীরে ধারালো অস্ত্র ও ভারী কোনো বস্তুর আঘাতের চিহ্ন ছিল। তারা যে ভবনে থাকতেন সেটির মালিক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহানের বাবা। ঘটনাস্থল থেকে কিছুই খোয়া যায়নি। হত্যার ঘটনায় শনিবার মিরপুর থানায় অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নিহত মরিয়ম বেগমের স্বামী বন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত রেঞ্জার কাজী আলাউদ্দিন।

নিহত দু’জনের ভগ্নিপতি বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা শাহা কামাল খান জানান, কাজী আলাউদ্দিন ঘটনার সময় বরিশালে গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। বাসায় ছিলেন শুধু দুই বোন। শুক্রবার সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে যান মরিয়মের মেয়ে কম্পিউটার প্রকৌশলী নুসরাত জাহান মিষ্টি। রাত পৌনে ৯টার দিকে তিনি বাসায় ফিরে ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ পান। ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে বিকল্প চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখেন, খাবার ঘরের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন তাঁর মা, পাশের ঘরে খালা। দু’জনকেই ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মসলা বাটার জন্য ব্যবহৃত পাটা দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে। রক্তাক্ত পাটা ও ছুরি ঘটনাস্থলেই পেয়েছে পুলিশ।

তদন্ত সূত্র বলছে, শুক্রবার দুপুর ১টার আগে সন্দেহভাজন যুবক ওই বাসায় ঢোকেন। এক ঘণ্টার বেশি সেখানে অবস্থানের পর তিনি বেরিয়ে যান। তবে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় খুব সতর্কভাবে ক্যাপের আড়ালে মুখ লুকান, যাতে সিসি ক্যামেরায় মুখাবয়ব দেখা না যায়। সঙ্গে থাকা ব্যাকপ্যাকে বাড়তি জামা এনেছিলেন তিনি, যা বের হওয়ার সময় পরেন। এসব প্রস্তুতি থেকে ধারণা করা হচ্ছে, পরিকল্পনা করেই তিনি আসেন। যাওয়ার সময় দরজা তালাবদ্ধ করে যান। আবার নির্বিঘ্নে তিনি ওই বাসায় ঢোকেন। পরিবারটির পরিচিত না হলে সেটা সম্ভব ছিল না। ঘটনাস্থলে একটি মগে লেবুর শরবত পাওয়া গেছে। আগন্তুককে আপ্যায়নের উদ্দেশ্যে তা বানানো হয়ে থাকতে পারে। মরিয়ম ও তাঁর মেয়ে মিষ্টির মোবাইল ফোনের কলরেকর্ড পর্যালোচনা করছে পুলিশ। বিশেষ করে হত্যাকাণ্ডের আগে কার কার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়েছে, তা জানার চেষ্টা চলছে।

মরিয়মের বড় মেয়ে ইশরাত জাহান খুশবু স্বামীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। ছোট মেয়ে নুসরাত জাহান মিষ্টি ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ান একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি জানান, কারও সঙ্গে তাঁর বা পরিবারের সদস্যদের কোনো বিরোধ নেই। তাই কে বা কারা কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা তিনি ধারণা করতে পারছেন না।

মরিয়ম বেগম পাঁচ বোনের মধ্যে বড়। বোনদের মধ্যে তৃতীয় সুফিয়া ছিলেন অবিবাহিত। তিনি কিছু করতেন না। দুই মাস ধরে তিনি বড় বোনের বাসায় থাকতেন। ছোট বোন নুরুন নাহার জানান, শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে মোবাইল ফোনে বড় বোনের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। তখন তেমন কিছু বলেননি তিনি। 
ঘটনাস্থল থেকে আজ দুপুরে বেশ কিছু নথিপত্র জব্দ করে নিয়ে যায় পুলিশ। সেই সঙ্গে এক যুবকের ছবি দেখিয়ে স্বজনের কাছে পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। তাদের একজন জানান, ওই যুবক মিষ্টির বান্ধবীর ছোট ভাই। তারা একসময় এই ফ্ল্যাটেই থাকতেন। তখন মিষ্টিদের পরিবার নিচতলায় থাকত।
ভবনের নিরাপত্তাকর্মী রাজু মিয়া জানান, হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য সময়ে তিনি ছাদে নিজের ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সন্দেহভাজন যুবককে তিনি ঢুকতে দেখেননি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মিজানুর রহমান সমকালকে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে শুরু করে শামীম সরণি হয়ে শেওড়াপাড়া মেট্রোরেল স্টেশন পর্যন্ত সব সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেসব বিশ্লেষণ করে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড, তা এখনও জানা যায়নি। ফলে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিরোধসহ সম্ভাব্য সব কারণ ধরেই তদন্ত করা হচ্ছে। 

  
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হত য শ ক রব র র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে চাষাঢ়ায় এনসিপি’র মিষ্টি বিতরণ

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ফাঁসির রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সোমবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উদ্যোগে শহরের চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় এ মিষ্টি বিতরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। রায় ঘোষণার পর নেতাকর্মীরা উল্লাস প্রকাশ করেন এবং পথচারীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন।

এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক (দক্ষিণ অঞ্চল) শওকত আলী বলেন, আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাই। খুনি হাসিনার নির্দেশে ও আসাদুজ্জামান খান কামালের ভূমিকার কারণে প্রায় ১৪০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছে। আজ আদালত ন্যায়বিচার করেছে।

শওকত আলী আরও বলেন, আগামী দিনে যারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন, তাদের জন্যও এটি শিক্ষা হওয়া উচিত—জনগণের বিপক্ষে গেলে জনগণই প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ইতিহাস যেন আর কখনো পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

মিষ্টি বিতরণ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির জেলা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী আহমেদুর রহমান তনু, জেলা সংগঠক সোনিয়া আক্তার (লুবনা), ফজলে রাব্বি, রাইসুল ইসলাম, ফারদিন শেখ ও আবুল খায়ের প্রমুখ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ