ট্রাকগুলো তৈরি করা হয় স্থানীয়ভাবে, কৃষিকাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টরকে বিশেষভাবে পরিবর্তন করে। এগুলোকে স্থানীয়রা বলেন, ‘আজগুবি ট্রাক’। এগুলো দিয়ে প্রধানত মাটি পরিবহন করা হয়। এসবের নেই নিবন্ধন। চালকদেরও নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। সন্দ্বীপের সড়কে ‘যমদূত’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে এসব ট্রাক। গত চার মাসে ট্রাক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন।
সন্দ্বীপ ট্রাক মালিক সমিতি ও ট্রাক চালক-শ্রমিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে সন্দ্বীপে ট্রাকের সংখ্যা ৪০০। এসব ট্রাকের মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে চলাচল সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু অবাধে চলছে। নিহত ও আহতদের আত্মীয়স্বজনদের অভিযোগ, এসব ট্রাকের মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় দুর্ঘটনার পর ন্যায়বিচার পাওয়া যায় না। অবৈধ মাটি পরিবহনের সময় মাঝেমধ্যে দু’একটি গাড়ি পুলিশ আটক করলেও অদৃশ্য কারণে আবার ছেড়ে দেয়।
সন্দ্বীপ থানার তথ্যমতে, গত চার মাসে ট্রাক দুর্ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে মাত্র দুটি। ২৮ এপ্রিল নিহত শিশু মুন্নার হত্যাকারী ট্রাকচালককে পুলিশ আটক করলেও দু’দিনের মধ্যেই ছাড়া পেয়েছেন। পরদিন ২৯ এপ্রিল উপজেলা প্রশাসন ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় ৬ জন মোটরসাইকেল চালককে জরিমানা করলেও, ঘাতক ট্রাকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
গত ৪ এপ্রিল সন্দ্বীপে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ট্রাকচালকদের অতিরিক্ত গতিরোধসহ আট দফা দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে স্মারকলিপি দিয়েছিল চাইল্ড ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। ৯ এপ্রিল বেপোরোয়া মাটি বহনকারী ট্রাক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মুছাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম সফিকুল আলম চৌধুরী এ ব্যাপারে বলেন, ‘দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি থানায় এলে মামলা নেওয়া হয়। আমরা ফৌজদারি অপরাধ নিয়ে কাজ করি। তারপরও দুর্ঘটনা রোধে সন্দ্বীপে ট্রাফিক পুলিশ আনার চেষ্টা করছি।’
তবে গত ২৮ এপ্রিল গুপ্তছড়া সড়কের সেনেরহাটে ট্রাকচাপায় পাঁচ বছরের শিশু মো.
স্থানীয়রা বলছেন, এসব উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসন তা কতটা বাস্তবায়ন
করতে পারবে সেটা দেখার বিষয়। কারণ, এর আগে গত ২০ নভেম্বর যানজট নিরসনে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত সন্দ্বীপ পৌরসভার মূল সড়কে ট্রাক, ট্রলি ও ভারী যানবাহন প্রবেশ, সড়কে পার্কিং ও চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ দেয় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে পারনি পৌর কর্তৃপক্ষ। ১৮ ফেব্রুয়ারি যানজট নিরসনে গুপ্তছড়া সড়কের এনাম নাহার মোড় থেকে ঘাট পর্যন্ত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে একদিনের জন্যও তা কার্যকর করতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন। তাছাড়া, সড়কে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী নিয়ন্ত্রণহীন অটোরিকশার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ‘আজগুবি ট্রাক’ দাপিয়ে বেড়ায় সন্দ্বীপের প্রধান দুটি সড়ক গুপ্তছড়া ও দেলোয়ার খাঁ সড়কে। অবৈধভাবে কৃষিজমি, সরকারি খাস জমি ও সরকারি খালের মাটি পরিবহনের পাশাপাশি ইট, বালু ও মালামাল পরিবহন করে এসব ট্রাক।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, আগে রাতের অন্ধকারে এসব ট্রাকের মাধ্যমে মাটি চুরি করে বিক্রি করা হতো। এখন প্রকাশ্যে দিনের বেলায় মাটি পরিবহন করা হয়। বেশি ট্রিপ পাওয়ার আশায় বেপোরোয়া গতিতে চালানো হয় ট্রাক। স্থানীয়ভাবে তৈরি করা এসব ট্রাকের পেছনের চাকায় ব্রেকিং সিস্টেম না থাকায় প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানী।
গত ২৬ জানুয়ারি মাইটভাঙা ইউনিয়নে অবৈধভাবে মাটি বহনকারী ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে মারা যান প্রবাসী মো. রিপন। ৬ ফেব্রুয়ারি গাছুয়া ইউনিয়নে মাটিভর্তি ট্রাক ও নসিমনের সংঘর্ষে নিহন হন নসিমন চালক সাইফুল ইসলাম। ৩ এপ্রিল মুছাপুর ইউনিয়নে ট্রাকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিহত হন চালকের সহকারী মো. পারভেজ। ৮ এপ্রিল বাউরিয়া ইউনিয়নে মাটিভর্তি ট্রাকের চাপায় প্রাণ যায় ষোল বছরের কিশোর অনীকের। সর্বশেষ, ২৮ এপ্রিল গুপ্তছড়া সড়কের সেনেরহাটে ট্রাক চাপায় মারা যায় পাঁচ বছরের শিশু মো. মুন্না।
এর আগে ২০২৪ সালের ২৫ এপ্রিল মাটিভর্তি ট্রাক উল্টে নিহত হন ট্রাকচালক ফসিউল আলম। ২০২৩ সালপর ১৭ আগস্ট হারামিয়া ইউনিয়নে ট্রাকের চাকা ফেটে নিহত হন পথচারী সফিউল্লাহ। ৮ জুন ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মারা যান তরিকুল ইসলাম নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিগ্যান চাকমা বলেন, ‘সন্দ্বীপের বেশিরভাগ যানবাহনের নিবন্ধন ও চালকদের লাইসেন্স নেই। প্রত্যেকের লাইসেন্স থাকতে হবে, এটলিস্ট লার্নার লাইসেন্স। ধাপে ধাপে পার্মানেন্ট লাইসেন্সও চেক করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক এসব ট র ক র কর মকর ত দ র ঘটন চ লকদ র র ঘটন য় গ প তছড় পর বহন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটির সায়েন্টিফিক কনফারেন্স অনুষ্ঠিত
দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্তরত প্রায় এক হাজার ৫০০ হৃদরোগ চিকিৎসকের অংশ গ্রহণে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে, ‘ফেলিসিটেশন সিরিমনি এন্ড ন্যাশনাল সায়েন্টিফিক কনফারেন্স ২০২৫’। প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁও-এর বল রুমে গত বুধবার বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটি দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটির আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সফিউদ্দীন। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ডা. মোহাম্মদ উল্লাহ এবং উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব প্রফেসর ডা. এ এফ খবির উদ্দিন আহমেদ।
কনফারেন্সে দেশের বরেণ্য কার্ডিওভাস্কুলার চিকিৎসক, দেশের হৃদরোগের কারণ, ধরণ, প্রতিরোধ ব্যবস্থা, সচেতনতা ও আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন ও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ উপস্থাপন করেন।
নতুন কার্ডিওভাস্কুলার চিকিৎসকদের সংবর্ধনা ও দেশবরেণ্য সিনিয়র কার্ডিওভাস্কুলার চিকিৎসকদের সম্মাননা দেয়া হয়।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে সন্ধ্যার আয়োজনে হৃদরোগ চিকিৎসায় অসামান্য অবদান রাখায় পাঁচ জন প্রবীণ চিকিৎসককে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়।
সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটি সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. কেএমএইচ এস সিরাজুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য চিকিৎসা শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও সমাপনী বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটির আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সফিউদ্দীন।