ভুল জায়গায় স্টেশন চার উপজেলার পাঁচ লাখ মানুষের কষ্ট
Published: 10th, May 2025 GMT
চকরিয়ার হারবাং রেলস্টেশনের পশ্চিম পাশে পাহাড়, পূর্ব পাশে সমতল এলাকা। আশপাশে তেমন কোনো জনবসতি নেই। স্টেশনের সঙ্গে লাগোয়া দক্ষিণে বিশাল হারবাং বিল। বিলের ঠিক মাঝখান দিয়ে চলে গেছে দুই লেনের সুদৃশ্য বরইতলী একতাবাজার-মগনামা বানৌজা সড়ক। রেলস্টেশনে আসা-যাওয়ার জন্য পূর্ব দিকে একমাত্র যে সড়কটি রয়েছে সেটি কাঁচা ও সরু। সড়কটি হারবাং বাজার হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে মিশেছে। রেলস্টেশন থেকে হারবাংছড়া পর্যন্ত সড়কটি এতই সরু যে দুটি রিকশা পাশাপাশি চলতে পারে না। যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের হারবাং স্টেশনটি একটি মরা স্টেশনে পরিণত হয়েছে।
এ স্টেশনে সকাল, বিকাল ও রাতে দুই জোড়া ট্রেন থামলেও দিনে সর্বোচ্চ ৪০-৫০ জন যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে আসা-যাওয়া করেন। অথচ স্টেশনটি যদি দেড় কিলোমিটার দূরে বরইতলী একতাবাজার-মগনামা বানৌজা সড়কের মছনিয়াকাটা অংশে স্থাপন করা হতো তাহলে যাত্রীর কোনো অভাব হতো না। কারণ বানৌজা সড়ক দিয়ে চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও বাঁশখালীর মানুষ চলাচল করেন। হারবাংয়ে স্টেশন না করে যদি মছনিয়াকাটায় করা হতো তাহলে ৪ উপজেলার মানুষের যাতায়াতে দারুণ উপকৃত হতো।
কর্তৃপক্ষের ভুল সিদ্ধান্তে হারবাংয়ে স্টেশন করায় চার উপজেলার মানুষ ট্রেনে যাতায়াতের সুবিধা পাচ্ছেন না। ভুল জায়গায় স্টেশন হওয়ায় যাত্রীদের প্রায় ৩ কিলোমিটার দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে স্টেশনে যেতে হচ্ছে। এতে ট্রেনের প্রতি বিমুখ যাত্রীরা।
তবে হারবাং স্টেশন থেকে মছনিয়া কাটা পর্যন্ত রেললাইনের পাশ দিয়ে একটি সড়ক নির্মাণ করা হলে যাত্রীরা সহজে স্টেশনে যাতায়াত করতে পারবেন এবং স্টেশনটি জমজমাট হবে বলে সংশ্লিষ্টদের মত।
পহরচাঁদা গ্রামের সন্তান অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন হয়েছে, এটি যুগান্তকারী উন্নয়ন। রেলস্টেশনগুলো করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। পাহাড়ের খোপে, হারবাংয়ে যেখানে যাত্রীদের যাতায়াতের কোনো সুব্যবস্থা নেই সেখানে কেন স্টেশন করা হলো সেটি রহস্যজনক। হারবাং থেকে মাত্র এক-দেড় কিলোমিটার দূরে বরইতলী একতাবাজার-মগনামা বানৌজা সড়ক। সেই সড়কের পাশে স্টেশনটি করা হলে চকরিয়া ছাড়াও পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও বাঁশখালীর মানুষও উপকার পেতেন। কর্তৃপক্ষের হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে হারবাং স্টেশনের সুবিধা মানুষ পাচ্ছেন না।’
গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা প্রবল এক্সপ্রেস হারবাং স্টেশন পার হয়। সরেজমিন দেখা যায়, মাত্র দু’জন যাত্রী ট্রেন থেকে নেমেছেন, পাঁচজন ট্রেনে ওঠেন। ট্রেন থেকে নেমে হারবাংয়ের কালা সিকদার পাড়ায় যাওয়ার জন্য গাড়ি খুঁজছিলেন যাত্রী স্কুল শিক্ষক আবদুর রহিম। প্রায় ১০ মিনিট অপেক্ষার পরও তিনি কোনো গাড়ি পাননি। অবশেষে হেঁটে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলেন। তিনি বলেন, ‘বাড়ি যেহেতু হারবাংয়ে, সে কারণে এই স্টেশনে নেমেছি। স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যাওয়া যায়। তবে প্রায় এক কিলোমিটার অংশ কাঁচা আর সড়কের প্রস্থ মাত্র ৫/৬ ফুট। সে কারণে এদিকে তেমন গাড়ি আসে না।’
চকরিয়া উপজেলায় তিনটি রেলস্টেশন আছে। মালুমঘাটে ডুলহাজারা ও রামপুরে চকরিয়া স্টেশনে মোটামুটি যাত্রী দেখা গেলেও হারবাং রেলস্টেশনে একেকটি ট্রেনে ১০/১২ জনের বেশি যাত্রী যাতায়াত করেন না। স্টেশনে যাত্রী সুবিধাও এখনও নিশ্চিত হয়নি। শৌচাগার, বিশ্রামাগার, এমনকি যানবাহন রাখার স্ট্যান্ডও পূর্ণাঙ্গ হয়নি।
হারবাং স্টেশনমাস্টার আব্দুস সালাম বলেন, ‘মাত্র ৬ জন জনবল নিয়ে স্টেশনটি পরিচালনা করা হচ্ছে। স্টেশনে আসা-যাওয়ার জন্য ভালো কোনো সংযোগ সড়ক নেই। ফলে চকরিয়ার বরইতলী, হারবাং, পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার যাত্রীরা ট্রেনে যাতায়াতের ব্যাপারে তেমন আগ্রহী নন।’
হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন আহমদ বাবর বলেন, ‘হারবাং বাজার থেকে রেলস্টেশনে যাওয়ার সড়কটি প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী। এক সময়ে উপকূলীয় পেকুয়ার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হারবাং-বারবাকিয়া সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অথচ সড়কটি আবার চালু করা হলে পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার যাত্রীদের রেলস্টেশনে আসতে কিছুটা সুবিধা হতো।’
ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রুবেল সিকদার বলেন, ‘রেলস্টেশনটির জন্য উপযুক্ত স্থান ছিল বরইতলী একতাবাজার-মগনামা বানৌজা সড়কের মছনিয়াকাটা। কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থের কথা চিন্তা না করে কারও প্ররোচনায় এই রেলস্টেশনটি হারবাংয়ে স্থাপন করেছে বলে মনে হচ্ছে। ফলে চার উপজেলার সিংহভাগ মানুষের রেলপথের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এখনও হারবাং স্টেশন থেকে মছনিয়াকাটা পর্যন্ত রেললাইনের পাশ দিয়ে একটি সড়ক নির্মাণ করা হলে যাত্রীরা সহজে স্টেশনে যাতায়াত করতে পারেতন। ’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপজ ল র স ট শনট র জন য চকর য় সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
শাহজাদপুরে নির্মাণের এক মাসের মাথায় সড়কে ধস
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে নির্মাণের এক মাসের মাথায় একটি সড়ক ধসে পড়েছে। ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সড়কের দুরবস্থার কারণে বিপাকে পড়েছেন চার ইউনিয়নের ১৪ গ্রামের মানুষ। তাদের অভিযোগ, নিম্নমানের কাজ করার ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি দ্রুত মেরামতের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন তারা।
শাহজাদপুর উপজেলার পাঁচিল-কৈজুরি আঞ্চলিক সড়কের জয়পুর ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন খালের ওপর নবনির্মিত সেতুর দুই পাশে এ সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছিল।
আরো পড়ুন:
বেইলি ব্রিজের পাটাতন খুলে নদীতে, দুর্ভোগে হাজারো মানুষ
দূরপাল্লার বাস বন্ধে ভোগান্তিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের যাত্রীরা
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৮ মাস আগে ১ কোটি ৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ব্যয়ে মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডাস নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১৫ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করে। এরপর ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা ও কাবিটা) প্রকল্পের আওতায় ৬ লাখ ৩০ হাজার ৯১৬ টাকা ব্যয়ে সেতুর সংযোগ (সিসিকরণ) সড়ক নির্মাণ করা হয়। গত সপ্তাহে পাঁচিল-কৈজুরি আঞ্চলিক সংযোগ সড়কটি ধসে পড়ে।
সড়কে চলাচলকারীদের অভিযোগ, নিম্নমানের কাজ এবং নিয়ম অনুযায়ী রড ছাড়াই নিম্নমানের পুরনো ইট ও লোকাল বালু ব্যবহার করে নামমাত্র গাইড ওয়াল দিয়ে সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে নির্মাণের এক মাস না যেতেই বৃষ্টিতে সড়কটি ভেঙে মানুষ ও যানবাহনের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবিতে গত শুক্রবার মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ উপস্থিত ছিলেন।
জয়পুরা গ্রামের নাসির উদ্দিন, কল্পনা বেগম ও আবু তাহের জানান, শিডিউল অনুযায়ী সংযোগ সড়কের পাইলিং ঠিকভাবে করা হয়নি। পুকুরে পানি থাকা সত্ত্বেও দায়সারাভাবে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মাত্র এক মাস আগে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করায় কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তা ভেঙে পড়েছে। এই সড়ক দিয়ে এখন যানবাহন তো দূরের কথা, পথচারীরাও চলাচল করতে পারছেন না।
স্থানীয় শিক্ষার্থী রাসেল মাহমুদ, নীরব হোসেন ও আখিঁ খাতুন বলেন, অনেক কষ্ট করে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয় তাদের। রাস্তা নির্মাণ হওয়ায় সবাই খুশি হয়েছিল। সংযোগ সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় স্কুল-কলেজে যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আমিন শেখ ও আব্দুল আলিম জানান, সেতুটি নির্মাণের সময় ঠিকাদারকে শিডিউল অনুযায়ী কাজ করতে বলা হয়েছি। ঠিকাদার সঠিক নিয়মে কাজ করেনি। পানির মধ্যে ৫০ ফুট পাইলিং না করে ২০ ফুটের কম পাইলিং করে সেতু নির্মাণ করেন তিনি। নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে সংযোগ সড়ক তৈরি করায় তা এক মাসের মাথায় ধসে পড়েছে। সঠিক তদারকি না থাকায় (পিআইও) অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে এসব অনিয়ম হয়েছে।
এক মাসের মাথায় সড়কটি ধসে পড়ার কারণ জানতে চাইলে প্রকল্পের সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহজাহান আলী বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। বিলও উত্তোলন হয়েছে। বৃষ্টির কারণে সংযোগ সড়কটি ভেঙে গেছে। এতে আমার কিছু করার নেই।”
শাহজাদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল কালাম আজাদ বলেন, “আগের পিআইওর সময় সেতুটি নির্মাণ হয়েছে। এ সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। আমার সময়ে নির্মাণ করা সংযোগ সড়কটি বৃষ্টির কারণে ভেঙে গেছে। নতুন বরাদ্দ পেলে সংস্কার করা হবে।”
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, “কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টির কারণে গাইড ওয়ালের পাশ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় সংযোগ সড়কটি ধসে পড়েছে। ঠিকাদারকে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি সংস্কার করে দেওয়া হবে।”
ঢাকা/অদিত্য/মাসুদ