চকরিয়ার হারবাং রেলস্টেশনের পশ্চিম পাশে পাহাড়, পূর্ব পাশে সমতল এলাকা। আশপাশে তেমন কোনো জনবসতি নেই। স্টেশনের সঙ্গে লাগোয়া দক্ষিণে বিশাল হারবাং বিল। বিলের ঠিক মাঝখান দিয়ে চলে গেছে দুই লেনের সুদৃশ্য বরইতলী একতাবাজার-মগনামা বানৌজা সড়ক। রেলস্টেশনে আসা-যাওয়ার জন্য পূর্ব দিকে একমাত্র যে সড়কটি রয়েছে সেটি কাঁচা ও সরু। সড়কটি হারবাং বাজার হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে মিশেছে। রেলস্টেশন থেকে হারবাংছড়া পর্যন্ত  সড়কটি এতই সরু যে দুটি রিকশা পাশাপাশি চলতে পারে না। যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের হারবাং স্টেশনটি একটি মরা স্টেশনে পরিণত হয়েছে। 
এ স্টেশনে সকাল, বিকাল ও রাতে দুই জোড়া ট্রেন থামলেও দিনে সর্বোচ্চ ৪০-৫০ জন যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে আসা-যাওয়া করেন। অথচ স্টেশনটি যদি দেড় কিলোমিটার দূরে বরইতলী একতাবাজার-মগনামা বানৌজা সড়কের মছনিয়াকাটা অংশে স্থাপন করা হতো তাহলে যাত্রীর কোনো অভাব হতো না। কারণ বানৌজা সড়ক দিয়ে চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও বাঁশখালীর মানুষ চলাচল করেন। হারবাংয়ে স্টেশন না করে যদি মছনিয়াকাটায় করা হতো তাহলে ৪ উপজেলার মানুষের যাতায়াতে দারুণ উপকৃত হতো। 
কর্তৃপক্ষের ভুল সিদ্ধান্তে হারবাংয়ে স্টেশন করায় চার উপজেলার মানুষ ট্রেনে যাতায়াতের সুবিধা পাচ্ছেন না। ভুল জায়গায় স্টেশন হওয়ায় যাত্রীদের প্রায় ৩ কিলোমিটার দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে স্টেশনে যেতে হচ্ছে। এতে ট্রেনের প্রতি বিমুখ যাত্রীরা।   
তবে হারবাং স্টেশন থেকে মছনিয়া কাটা পর্যন্ত রেললাইনের পাশ দিয়ে একটি সড়ক নির্মাণ করা হলে যাত্রীরা সহজে স্টেশনে যাতায়াত করতে পারবেন এবং স্টেশনটি জমজমাট হবে বলে সংশ্লিষ্টদের মত।
পহরচাঁদা গ্রামের সন্তান অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন হয়েছে, এটি যুগান্তকারী উন্নয়ন। রেলস্টেশনগুলো করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। পাহাড়ের খোপে, হারবাংয়ে যেখানে যাত্রীদের যাতায়াতের কোনো সুব্যবস্থা নেই সেখানে কেন স্টেশন করা হলো সেটি রহস্যজনক। হারবাং থেকে মাত্র এক-দেড় কিলোমিটার দূরে বরইতলী একতাবাজার-মগনামা বানৌজা সড়ক। সেই সড়কের পাশে স্টেশনটি করা হলে চকরিয়া ছাড়াও পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও বাঁশখালীর মানুষও উপকার পেতেন। কর্তৃপক্ষের হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে হারবাং স্টেশনের সুবিধা মানুষ পাচ্ছেন না।’
গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা প্রবল এক্সপ্রেস হারবাং স্টেশন পার হয়। সরেজমিন দেখা যায়, মাত্র দু’জন যাত্রী ট্রেন থেকে নেমেছেন, পাঁচজন ট্রেনে ওঠেন। ট্রেন থেকে নেমে হারবাংয়ের কালা সিকদার পাড়ায় যাওয়ার জন্য গাড়ি খুঁজছিলেন যাত্রী স্কুল শিক্ষক আবদুর রহিম। প্রায় ১০ মিনিট অপেক্ষার পরও তিনি কোনো গাড়ি পাননি। অবশেষে হেঁটে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলেন। তিনি বলেন, ‘বাড়ি যেহেতু হারবাংয়ে, সে কারণে এই স্টেশনে নেমেছি। স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যাওয়া যায়। তবে প্রায় এক কিলোমিটার অংশ কাঁচা আর সড়কের প্রস্থ মাত্র ৫/৬ ফুট। সে কারণে এদিকে তেমন গাড়ি আসে না।’  
চকরিয়া উপজেলায় তিনটি রেলস্টেশন আছে। মালুমঘাটে ডুলহাজারা ও রামপুরে চকরিয়া স্টেশনে মোটামুটি যাত্রী দেখা গেলেও হারবাং রেলস্টেশনে একেকটি ট্রেনে ১০/১২ জনের বেশি যাত্রী যাতায়াত করেন না। স্টেশনে যাত্রী সুবিধাও এখনও নিশ্চিত হয়নি। শৌচাগার, বিশ্রামাগার, এমনকি যানবাহন রাখার স্ট্যান্ডও পূর্ণাঙ্গ হয়নি।
হারবাং স্টেশনমাস্টার আব্দুস সালাম বলেন, ‘মাত্র ৬ জন জনবল নিয়ে স্টেশনটি পরিচালনা করা হচ্ছে। স্টেশনে আসা-যাওয়ার জন্য ভালো কোনো সংযোগ সড়ক নেই। ফলে চকরিয়ার বরইতলী, হারবাং, পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার যাত্রীরা ট্রেনে যাতায়াতের ব্যাপারে তেমন আগ্রহী নন।’
হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন আহমদ বাবর বলেন, ‘হারবাং বাজার থেকে রেলস্টেশনে যাওয়ার সড়কটি প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী। এক সময়ে উপকূলীয় পেকুয়ার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হারবাং-বারবাকিয়া সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অথচ সড়কটি আবার চালু করা হলে পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার যাত্রীদের রেলস্টেশনে আসতে কিছুটা সুবিধা হতো।’ 
ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রুবেল সিকদার বলেন, ‘রেলস্টেশনটির জন্য উপযুক্ত স্থান ছিল বরইতলী একতাবাজার-মগনামা বানৌজা সড়কের মছনিয়াকাটা। কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থের কথা চিন্তা না করে কারও প্ররোচনায় এই রেলস্টেশনটি হারবাংয়ে স্থাপন করেছে বলে মনে হচ্ছে। ফলে চার উপজেলার সিংহভাগ মানুষের রেলপথের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এখনও হারবাং স্টেশন থেকে মছনিয়াকাটা পর্যন্ত রেললাইনের পাশ দিয়ে একটি সড়ক নির্মাণ করা হলে যাত্রীরা সহজে স্টেশনে যাতায়াত করতে পারেতন। ’  
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল র স ট শনট র জন য চকর য় সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

আলফাডাঙ্গায় কর্দমাক্ত কাঁচা সড়কে বিছানো হলো ইট, ৪০০ বৃক্ষরোপণ

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার বানা ইউনিয়নের বেলবানা রাস্তাটির দৈর্ঘ্য ১০৫০ মিটার। কাঁচা এ সড়কটি বছরের প্রায় ছয় মাস পানিতে ডুবে থাকতো। কয়েকটি গ্রামের কৃষকের ফসল আনা-নেওয়া হয় এই সড়ক দিয়ে। কর্দমাক্ত এ রাস্তায় চলাচলে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন অনেকেই। রাস্তাটি উঁচু করে সারাবছর মানুষের যাতায়াতের উপযোগী করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল এলাকাবাসী। এ দাবি অবশেষে পূরণ হয়েছে। রাস্তাটি উঁচু করে ইট বিছানো হয়েছে। 

বুধবার সকালে স্থানীয় বানা এম এ মজিদ মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সড়কটিতে রোপণ করা হয়েছে ৪০০ শত ফলজ ও বনজ গাছ। উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সড়কের দুই পাশে এসব চারা রোপণ করা হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল, উপজেলা কৃষি অফিসার তুষার সাহা, উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা সাগর হোসেন সৈকত, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোজাম্মেল হক ও বন কর্মকর্তা শেখ লিটন প্রমুখ।

স্থানীয় বাসিন্দা লিয়াকত বিশ্বাস ও মফিজুল ইসলাম জানান, রাস্তাটি অনেক নিচু ছিল। এখন আমাদের নতুন একটি রাস্তা হয়েছে। সেই রাস্তায় আবার গাছ লাগানো হচ্ছে। বিষয়টি অনেক ভালো লাগছে। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাসেল ইকবাল বলেন, এলাকাবাসীর দাবি ছিল, রাস্তাটি উঁচু ও পাকা করার। আমাদের সাধ্যমতো উঁচু করার চেষ্টা করেছি। এইচবিবি প্রকল্পের মধ্যেমে ইট বিছানো হয়েছে। এলজিইডি অন্তর্ভুক্ত সড়ক হলে কার্পেটিং করা যেত। আগামীতে সড়কটি এলজিইডিতে অন্তর্ভুক্ত করে কার্পেটিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। সড়কটি সংস্কার করার সময় এলাকাবাসী অনেক সহযোগী করেছে। সকলের প্রচেষ্টায় রাস্তাটি ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি। এখন সে রাস্তায় বৃক্ষরোপণ করছি। 

সূত্র জানায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়িত গ্রামীণ মাটির রাস্তা টেকসইকরণের লক্ষ্যে হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) প্রকল্পের মাধ্যমে ১০০০ মিটার রাস্তা নির্মাণ ব্যয় হয় ৮১ লাখ টাকা। অবশিষ্ট ৫০ মিটার রাস্তা কাবিটা প্রকল্পের মাধ্যমে রিটেইনিং ওয়াল, মাটি ভরাট ও এইচবিবিকরণ করা হয় যার নির্মাণ ব্যয় ৫ লাখ টাকা। ১০৫০ মিটার সড়কে ব্যয় হয়েছে সর্বমোট ৮৬ লাখ টাকা।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দফায় দফায় সময় বাড়লেও শেষ হয়নি সড়কের কাজ
  • আলফাডাঙ্গায় কর্দমাক্ত কাঁচা সড়কে বিছানো হলো ইট, ৪০০ বৃক্ষরোপণ
  • চট্টগ্রামে বর্ষার শুরুতে ক্ষতবিক্ষত সড়ক