আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধে জাহাঙ্গীরনগরে আনন্দ মিছিল
Published: 11th, May 2025 GMT
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে মিষ্টি বিতরণ করেন। পরে সেখান থেকে একটি মিছিল বের করেন তাঁরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক ঘুরে আবার একই স্থানে এসে শেষ হয়।
মিছিল চলাকালে শিক্ষার্থীদের, এই মুহূর্তে খবর এল, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলো; একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর; আওয়ামী লীগের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা যায়।
মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রজনতা আজ উচ্ছ্বাসিত। আমরা মনে করি দীর্ঘদিন ধরে এই দলের শাসনকালে দেশে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি, শিক্ষাক্ষেত্রে দলীয়করণ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আওয়ামী লীগের অধীনে ক্যাম্পাসে সহিংসতা, ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে দলীয় দখলদারি এবং মুক্তচিন্তার জায়গাগুলোর সংকোচন বেড়ে গিয়েছিল। এই নিষেধাজ্ঞা শিক্ষাঙ্গনকে আবারও শান্তিপূর্ণ, গঠনমূলক এবং পাঠভিত্তিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।’
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘আমরা সাময়িক খুশি, তবে চূড়ান্ত খুশি নই। বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে যখন নিষিদ্ধ করা হবে তখন সেটা আমাদের চূড়ান্ত বিজয় হবে। যদিও ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এ দেশের জন্যগণ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের রায় দিয়েছে। পাশাপাশি জুলাই ঘোষণা পত্রের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এ জন্য আমরা ইন্টেরিমকে ধন্যবাদ জানাই।’
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ‘সাময়িকভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়েছে এতে আমরা আপাতত খুশি। তবে এই সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে সন্ত্রাসী আওয়ামী ও তার অঙ্গসংগঠন কোনোভাবেই যাতে বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক মিছিল, মিটিং না করতে পারে। আওয়ামী লীগের বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে সরকারকে।’
আরও পড়ুনবিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ৪ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এবার জাহাঙ্গীরনগরে বিক্ষোভ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন একদল শিক্ষার্থী।
আজ শনিবার রাত পৌনে নয়টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসানের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তাঁরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ নিয়ে উপাচার্যের আলোচনার আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা ফিরে যান।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মিছিল নিয়ে বিভিন্ন হলের সামনে গিয়ে মাইকিং করে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে যোগদানের জন্য আহ্বান জানান একদল বিক্ষোভকারী। পরে তাঁরা মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে যান। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাঁর কাছে ছয় দফা দাবি জানান।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ, ভবিষ্যতে হলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থী এবং গণরুম ও গেস্টরুমে ‘র্যাগিং’ সংস্কৃতিতে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক শাস্তির সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রণয়ন, অতি দ্রুত হল সংসদ গঠন করে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার ব্যবস্থা, রাজনৈতিক সংগঠনের যেকোনো উপহারসামগ্রী একমাত্র হল প্রশাসনের মাধ্যমে প্রদান এবং এতে ওই সংগঠনের নাম বা কোনো চিহ্ন ব্যবহার না করা, হলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বহিরাগতদের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ, হলের মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্রদের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, গতকাল শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হলে ছাত্রদলের কমিটি দেওয়া হয়েছে। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হলভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে আজ বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তাঁরা।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলের শিক্ষার্থী শরিফুল আলম বলেন, ‘আমরা আমাদের হলগুলোতে কোনো রকমের ছাত্ররাজনীতি চাচ্ছি না। ক্যাম্পাসে রাজনীতি থাকুক, ক্যাম্পাসে আমাদের সুন্দর একটি সহাবস্থান তৈরি হোক, সে ক্ষেত্রে আমাদের কোনো দ্বিধা নেই। আমরা হলে হলে র্যাগিং কালচার, গেস্টরুম কালচার, রাতের পর রাত অত্যাচার দেখেছি। কেউ যেন পুনরায় এসব র্যাগিং কালচার, গেস্টরুম কালচার চালু করতে না পারে, সে জন্য আমরা বিক্ষোভে নেমেছি।’ তিনি বলেন, কোনো হলে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু করা যাবে না, এটা নিশ্চিত করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, আগামীকাল রোববার তিনি প্রশাসনিক সভা করবেন। ওই সভায় তিনি শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করবেন।
উপাচার্যের এই আশ্বাসের পর শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান।