মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান ‘একটি পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক অস্ত্রবিরতি’তে সম্মত হয়েছে। গতকাল শনিবার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন। এর আগে শুক্রবার রাতভর দু’পক্ষ পরস্পরের সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। 

তবে ট্রাম্পের ঘোষণার পরও জম্মু-কাশ্মীরে অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করে গোলাগুলি হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগরের বাসিন্দারা জানান, তারা আকাশে আলোর ঝলকানি ও বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন। গতকাল গভীর রাতে দিল্লিতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি অভিযোগ করেন, অস্ত্রবিরতির যে সমঝোতা হয়েছে, তা গত কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তান বারবার লঙ্ঘন করেছে। তবে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে অস্ত্রবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের প্রশ্নই আসে না। পাকিস্তানের জনগণ ভারতের বিরুদ্ধে তাদের বিজয় উদযাপন করছে। 

পাকিস্তানের দাবি, তারা ভারতের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন বুনিয়ান উন মারসুস’ পরিচালনা করে বেশ কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানতে সক্ষম হয়। ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ ধ্বংস করারও দাবি করা হয়েছে। অন্যদিকে ভারত আকাশ প্রতিরক্ষা ধ্বংস হওয়ার কথা অস্বীকার করলেও বলেছে পাকিস্তানের হামলায় তাদের সীমিত ক্ষতি হয়েছে। পাকিস্তানের তিনটি বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লি।

চলমান উত্তেজনার মধ্যে ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে ঘোষণা দেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাতভর আলোচনার পর আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছে। বিবেচনা বোধ ও দুর্দান্ত বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের জন্য উভয় দেশকে অভিনন্দন।’

বিবিসি জানায়, পাকিস্তান ও ভারতের সরকার সম্মতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার জানান, দুই দেশ তাৎক্ষণিক অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছে। পাকিস্তানের বেসরকারি টিভি চ্যানেল জিও নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইসহাক দার বলেন, যুদ্ধ কোনো কিছুর জন্যই সমাধান নয়। পাকিস্তান সময় শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়।

অন্যদিকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই ‘স্থল, আকাশ ও সমুদ্রে সব ধরনের গুলিবর্ষণ ও সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ করবে।’ ভারতীয় সময় বিকেল ৫টা থেকে এ অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়। পরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও অস্ত্রবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক্স পোস্টে জানান, ভারত ও পাকিস্তান তাৎক্ষণিক অস্ত্রবিরতি ও একটি নিরপেক্ষ স্থানে বিস্তারিত বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে। তিনি জানান, তিনি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গত ৪৮ ঘণ্টা মোদি-শাহবাজসহ ভারত ও পাকিস্তানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাটিয়েছেন। 

পাকিস্তানের সাফল্য ইতিহাস মনে রাখবে
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অন্যায্য যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার জন্য ভারতের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, বিশ্ব পাকিস্তানি জাতির আত্মমর্যাদা ও ঐক্য প্রত্যক্ষ করেছে। সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আমাদের সশস্ত্র বাহিনী শত্রুর বন্দুক এমনভাবে নীরব করে দেয়, যা ইতিহাস মনে রাখবে। ভারতীয় বিমানঘাঁটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার দৃশ্য পাকিস্তানের দৃঢ় প্রতিশোধের প্রমাণ।

এর আগে ভারতকে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন শাহবাজ শরিফ। তিনি বলেন, ‘ভারত পাকিস্তানের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। কিন্তু এ আক্রমণ সত্ত্বেও পাকিস্তান চরম সংযম দেখায়। ভারতকে আজ (শনিবার) আমরা উপযুক্ত জবাব দিয়েছি; নিরীহ প্রাণের রক্তের বদলা নিয়েছি।’ 

যেসব সামরিক স্থাপনায় পাকিস্তানের হামলা
গত মঙ্গলবার পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে বিমান হামলা চালানোর পর পাকিস্তান পাল্টা হামলার ঘোষণা দেয়। এর পর বৃহস্পতিবার রাতে ভারতের বেশ কয়েকটি শহরে বিদ্যুতের আলো বন্ধ করে ব্ল্যাকআউট ঘোষণা করা হয়। ভারত জানায়, পাকিস্তান থেকে শত শত ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। পরদিন শুক্রবার রাতে ইসলামাবাদ অপারেশন ‘বুনিয়ান উন মারসুস’ চালায়। আলজাজিরা জানায়, এ অভিযানে ইসলামাবাদ কমপক্ষে ছয়টি ভারতীয় সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। এজন্য পাকিস্তানকে ‘আগ্রাসনকারী’ বলেছে ভারত। 

তবে জিও টিভি অনলাইন বলছে, অন্তত ২০টি স্থানে হামলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উত্তর ভারতের উধমপুর বিমানঘাঁটি। সেখানে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। হামলা হয়েছে পাঞ্জাব রাজ্যের জালন্ধরে। একই রাজ্যে আদমপুরে ভারতের প্রধান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ ধ্বংসের দাবি করেছে পাকিস্তান। ভারত এ দাবি অস্বীকার করেছে। হামলা হয়েছে হালওয়ারা ও পাঠানকোটের বিমানঘাঁটি ও অস্ত্রাগারে। হরিয়ানা রাজ্যের চণ্ডীগড়ে প্রধান অস্ত্রভান্ডার ধ্বংস হয়েছে।

পাকিস্তানের সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে দেশটির এ গণমাধ্যমের দাবি, জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরের বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। এতে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন। এ বিষয়ে ভারত কিছু নিশ্চিত করেনি। হামলা হয়েছে ভারতের পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের গুজরাট ও রাজস্থানে। বাথিন্ডা ও সিরসায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করে। এ ছাড়া পাঞ্জাবের বিয়াসে ব্রাহমোস ক্ষেপণাস্ত্রের গোপন সংরক্ষণাগার সম্পূর্ণ ধ্বংস করার দাবি করেছে ইসলামাবাদ। জম্মু-কাশ্মীরের উরি, রাজৌরি ও দেহরংগাড়িতে হামলা হয়েছে। 

ভারত যেসব স্থানে হামলা চালাল
পাকিস্তানের তিনটি বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ভারত। গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল সোফিয়া কুরেশি জানান, পাকিস্তান ইচ্ছাকৃতভাবে ভারতের সামরিক স্থাপনা টার্গেট করার পর ভারতের সশস্ত্র বাহিনী পাল্টা প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানের কারিগরি স্থাপনা, কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, রাডার সাইট ও অস্ত্র ডিপোগুলো বেছে বেছে টার্গেট করা হয়েছে। তিনি জানান, রফিকি, মুরিদ, চাকলালা, রহিমইয়ার খান, সুক্কুর ও চুনিয়ায় পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটিগুলোতে যুদ্ধবিমান ও অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। কর্নেল কুরেশি জানান, পাকিস্তানের পসরুরে অবস্থিত রাডার সাইট ও শিয়ালকোটের বিমানঘাঁটিতে ভারত হামলা চালিয়েছে।

আজাদ কাশ্মীরে ভারতের হামলায় নিহত ১১
পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে (আজাদ কাশ্মীর) ভারতীয় হামলায় ১১ জন নিহত ও ৫৬ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সেখানকার তথ্যমন্ত্রী পীর মাজহার শাহ। তিনি জানান, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারতীয় গোলাগুলিতে গত রাতে তারা হতাহত হন। গোলায় ২৩৫টি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র

এছাড়াও পড়ুন:

ফেব্রুয়ারির নির্বাচন কী আদৌ হবে, হাওলাদারের প্রশ্ন

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চরম অনৈক্য এর কারণে নির্বাচন নিয়ে রয়েছে সংশয় দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।

তিনি বলেন, “দেশের সাধারণ মানুষ এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না, আগামী ফেব্রুয়ারিতে আদৌ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কিনা। সরকারকে দায়িত্ব নিয়ে এই সংশয় ও অনিশ্চয়তা দূর করতে হবে।”

আরো পড়ুন:

কিশোরগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের দাবি

ব্যালট ছাপাতে কেপিএম থেকে ৯১৪ মেট্রিক টন কাগজ কিনছে ইসি

সোমবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, “নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক। কোনো কারণে যদি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হয়, তাহলে নির্বাচনের পর দেশ আরও গভীর সংকটে নিমজ্জিত হবে।”

অতীতের রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের কারণে দেশে আজ সর্বক্ষেত্রে অনৈক্য বিরাজমান মন্তব্য করে রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, “আমাদের ওই ধরনের আচরণ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে; না হলে বিশ্ব দরবারে জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না।”

তিনি বলেন, “রাজনীতিতে মতের পার্থক্য থাকতে পারে, অবস্থানগত দূরত্ব থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিহিংসা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জাতীয় পার্টি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। আমরা বিশ্বাস করি গণতান্ত্রিক চর্চায় ও নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায়।”

উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় যুব সংহতির আহ্বায়ক ফকরুল আহসান শাহজাদা, ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হাওলাদার, নাসির উদ্দিন সরকার, কেন্দ্রীয় নেতা সিরাজুল আরেফিন মাসুম, আব্দুস সাত্তার, আলমগীর হোসেন, জিয়াউর রহমান বিপুল, অ্যাডভোকেট আল মামুন প্রমুখ।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ