সুদানে কারাগারে আধা-সামরিক বাহিনীর হামলায় ২১ জন নিহত
Published: 11th, May 2025 GMT
দক্ষিণ সুদানের উত্তর কর্দোফান রাজ্যের রাজধানী এল-ওবাইদের একটি কারাগারে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর ড্রোন হামলায় কমপক্ষে ২১ জন নিহত এবং ৪৭ জন আহত হয়েছে।
শনিবার (১০ মে) সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্ক এ তথ্য জানিয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
বেসরকারি নেটওয়ার্কটি এক বিবৃতিতে বলেছে, “একটি বেসামরিক স্থাপনার উপর ইচ্ছাকৃতভাবে এই হামলা এই অঞ্চলে চলমান সহিংসতার তীব্র বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।”
সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্ক আরো জানিয়েছে, কারাগারটিতে প্রায় ৫ হাজার বন্দী রয়েছে।
এদিকে, সরকারের মুখপাত্র তথ্যমন্ত্রী খালিদ আল-আইসার বলেছেন, “শনিবার এল-ওবাইদে কারাগারে যা ঘটেছে তা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধাপরাধ, যা সুদানের বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে মিলিশিয়া ও তাদের সমর্থকদের মাধ্যমে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের দীর্ঘ রেকর্ডকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে।”
দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় অস্থায়ী প্রশাসনিক রাজধানী পোর্ট সুদানে টানা সপ্তম দিনের মতো চলমান ড্রোন হামলার মধ্যে এই ঘটনাটি ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আনাদোলুকে জানিয়েছেন, শনিবার ভোরে আধাসামরিক বাহিনীর ড্রোনগুলো পোর্ট সুদানে হামলা করেছিল, তবে সেনাবাহিনীর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সেগুলোকে প্রতিহত করে।
গত রবিবার থেকে, সুদানের অস্থায়ী রাজধানী পোর্ট সুদানে বেসামরিক ও সামরিক উভয় স্থান লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চলছে, যার ফলে তেল ডিপো এবং একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন লেগেছে।
মঙ্গলবার, সুদান কর্তৃপক্ষ দক্ষিণ বন্দর, পোর্ট সুদান বিমানবন্দর এবং একটি স্থানীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি ডিপোতে ড্রোন হামলার পিছনে আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে (আরএসএফ) দায়ী করেছে। আরএসএফ এই অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ক্ষমতার দখল ঘিরে সুদানের সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী মধ্যে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে লড়াই চলছে। জাতিসংঘ এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, সুদানে সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ২০ হাজারেও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং দেড় কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তবে মার্কিন বিশেষজ্ঞদের গবেষণায়, মোট নিহতের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার বলে অনুমান করা হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
হলে রাজনীতির ‘রূপ’ কেমন হবে, আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত হয়নি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের একটি অংশের উদ্যোগে গঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে প্রকাশ্য ও গুপ্ত—দুই ধরনের রাজনীতিই বন্ধ চায়। অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বিভিন্ন হলে সুস্থধারার রাজনীতি চালু রাখার পক্ষে। তবে গুপ্ত রাজনীতির বিরোধী তারা। হলে রাজনীতির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছে ইসলামী ছাত্রশিবির।
হল ও ক্যাম্পাসে রাজনীতির ‘রূপ’ কেমন হবে, এ বিষয়ে গতকাল রোববার বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্রশিবিরের নেতারা অংশ নেওয়ায় বৈঠকের শুরুতেই ‘ওয়াকআউট’ করেন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ–বিসিএলের নেতারা। গতকাল বিকেল থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চ্যুয়াল শ্রেণিকক্ষে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উপাচার্য, সহ–উপাচার্য, প্রক্টরসহ প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা শিক্ষকেরা অংশ নেন।
বৈঠক শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান সাংবাদিকদের বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের আগে গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি ছিল। সে কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরনের ভয়, আশঙ্কা ও ট্রমা রয়েছে। হল ও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীবান্ধব রাজনীতির রূপ কেমন হওয়া উচিত, এ বিষয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনা করেছেন তাঁরা। কারণ, সামনে ডাকসু নির্বাচন রয়েছে। এই নির্বাচনে সব ছাত্রসংগঠনের পূর্ণ ভূমিকা প্রয়োজন এবং তাঁরা চান সবাই অংশ নিক।
এই বৈঠকের আগে গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলে কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রদল। এর প্রতিবাদে সেদিন রাতে হলে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে মিছিল হয়, কয়েক শ শিক্ষার্থী প্রথমে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন, পরে তাঁরা ভিসি চত্বরে যান। সেখানে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান শিক্ষার্থীদের বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেটি বহাল থাকবে। অর্থাৎ, হলে ছাত্ররাজনীতি থাকবে না।
কিন্তু উপাচার্যের এই বক্তব্যে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৈঠকের পর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুপ্ত রাজনীতি বন্ধ করতে তাঁরা অনুরোধ করেছেন। এ ছাড়া ছাত্রদলের রাজনীতি করার কারণে কেউ যাতে ‘মব’–এর মাধ্যমে হেনস্তার শিকার না হন, প্রশাসনের কাছে এই দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।
অবশ্য প্রশাসনের সঙ্গে ছাত্রসংগঠনগুলোর বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বৈঠকের বিষয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আবদুল কাদের বলেন, তাঁরা হল ও একাডেমিক এরিয়ায় (যেখানে শ্রেণি কার্যক্রম চলে) প্রকাশ্য ও গুপ্ত—দুই ধরনের রাজনীতিই বন্ধের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। তিনি বলেন, আলোচনায় ছাত্র অধিকার পরিষদও হলে ছাত্ররাজনীতি না থাকার বিষয়ে মত দিয়েছে। অবশ্য কিছু সংগঠন হলে রাজনীতি থাকার বিষয়ে মত দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ছাত্রশিবির কৌশলগত অবস্থান নিয়েছে। তারা শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে।
বৈঠক শেষে ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ সাংবাদিকদের বলেন, হলে রাজনীতির ধরন কেমন হবে, সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ই–মেইলের মাধ্যমে মতামত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতে যাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের নেতারা নিজেদের বক্তব্য দেওয়ার পর বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান। এই নেতাদের মধ্যে ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ’৯০–এর ‘সামাজিক চুক্তির’ (তখন ক্যাম্পাসে সক্রিয় সংগঠনগুলোর সম্মিলিত সিদ্ধান্ত) মাধ্যমে শিবিরকে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু গণ–অভ্যুত্থানের পর কোনো রকম প্রক্রিয়া অনুসরণ করা ছাড়াই তাদেরকে আবার কীভাবে নর্মালাইজ (স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়া) করা হলো, এ বিষয়ে আমরা আপত্তি জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রশিবিরকে নর্মালাইজ করার রাজনীতি করছে প্রতিবার। যারা গুপ্ত রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে, তাদেরকে পলিটিক্যাল স্পেস দেওয়া যাবে না।’