গরমের সময় প্রচণ্ড গরম, শীতের সময় হাড়কাঁপানো শীত। এ বৈশিষ্ট্য দেশের যে কয়েকটি জেলার আছে, তার মধ্যে চুয়াডাঙ্গার নামটি আসে আগে। শীতের কথা বাদ থাক, এই প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে গরমের প্রসঙ্গেই আসি।
দেশে গত বুধবার (৭ মে) থেকে টানা তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। গতকাল শনিবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এ জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি বছরে এ তাপমাত্রা সর্বোচ্চ। গত বছর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তা ছিল যশোরে। আর চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ছিল ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদেরা এই সামান্য পরিমাণ তাপের হেরফেরকে গণ্য করেন না। সে বিচারে গত বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল এ জেলায়।
কেন চুয়াডাঙ্গায় এত গরম হয়? কারণ কি ভৌগোলিক, জলবায়ুগত? স্থানীয় এমন কোনো বিষয় আছে, যার সঙ্গে গরমের সম্পর্ক আছে? গরমের এ প্রবণতা কী সাম্প্রতিক, না অতীতেরও রেকর্ড আছে?
প্রশ্নগুলো নিয়ে কথা হয় আবহাওয়াবিদ, জলবায়ুবিশেষজ্ঞ, ভূতত্ত্ববিদদের সঙ্গে। তাঁরা বলছেন, চুয়াডাঙ্গার এই অতি তাপের নেপথ্যে জেলাটির অবস্থান, উপমহাদেশীয় বায়ুপ্রবাহ, কর্কটক্রান্তি রেখার গতিপ্রকৃতি, স্থানীয় ভূমির বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি নানা কারণ আছে।
তাপপ্রবাহের প্রবেশমুখে অবস্থানবাংলাদেশে তাপ মোটামুটি বাড়তে শুরু করে মার্চ মাস থেকেই। এপ্রিলে দেশের সবচেয়ে উষ্ণ মাস। এর পরেই আছে মে মাস। দেখা গেছে, এই দুই মাসে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে ধারাবাহিকভাবে।
বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা থাকে উপমহাদেশীয় বায়ুপ্রবাহের। একে পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহও বলা যায়। ভারতের উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে এই বায়ুর প্রবেশ ঘটে বাংলাদেশে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের চুয়াডাঙ্গা, যশোর, সাতক্ষীরা—এসব জেলা মূলত এই গরম হাওয়ার প্রবেশদ্বার। এর কাছাকাছি এলাকাগুলোতেও তাপ বেশি থাকে। যেমন দক্ষিণের জনপদ না হলেও এ বায়ুর প্রবাহ রাজশাহী অঞ্চলে গিয়ে ঠেকে। দেখা যায়, দক্ষিণ–পশ্চিমের এলাকাগুলোর তুলনায় দেশের অন্যত্র তাপ ধীরে ধীরে কমে যায়।’
ভারতের মধ্যপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ উপমহাদেশীয় উষ্ণ বায়ুপ্রবাহের এলাকা। এই মে মাসে ঢাকার গড় তাপমাত্রা থাকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে কলকাতার গড় তাপমাত্রা থাকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ সমরেন্দ্র কর্মকার বলেন, ‘গরম বায়ুপ্রবাহ তার পথপরিক্রমায় ধীরে ধীরে তাপ কমিয়ে ফেলে। এটাই স্বাভাবিক। ভারতের মধ্যপ্রদেশ, বিহার বা পশ্চিমবঙ্গে যতটা তাপ, তা বাংলাদেশে প্রবেশের সময় থাকে না। আবার বাংলাদেশের প্রবেশের দ্বার যেমন চুয়াডাঙ্গা বা যশোরের দিকে তাপ যতটা থাকে, ততটা ঢাকায় পাওয়া যায় না। চুয়াডাঙ্গা একদম মুখে পড়ে। তাই এ এলাকা এবং এর কাছাকাছি এলাকাগুলো এত তপ্ত।’
গ্রাফিকস: মাহফুজুর রহমান.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব য় প রব হ প রব হ র র প রব শ স লস য় স র কর ড গরম র
এছাড়াও পড়ুন:
রুনা লায়লার জন্মদিন: সংগীতজীবনের বর্ণময় ৬ দশকের উদ্যাপন
উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। সোমবার (১৭ নভেম্বর) ৭৩ বছর পূর্ণ করলেন। একইসঙ্গে পূর্ণ করলেন তার গৌরবময় সংগীত-জীবনের ৬০ বছর। উপমহাদেশের তিন দেশ—বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে সমানতালে গান গেয়ে কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন রুনা লায়লা। ১৮টি ভাষায় তার গাওয়া গানের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। ফলে তিনি যে উপমহাদেশের শীর্ষ সংগীতশিল্পীদের একজন—এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাংলাদেশের বাংলা গানকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেওয়ার পেছনে তার অবদান অনন্য। দেশ-বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অগণিত স্বীকৃতির মাঝে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ তার অর্জনকে আরো মহিমান্বিত করেছে।
আরো পড়ুন:
কনসার্টে গায়ক একনের পরনের প্যান্ট নিয়ে টানাটানি
চতুর্থ সন্তানের মা হলেন কার্ডি বি
ভক্তদের কাছে রুনা লায়লার এবারের জন্মদিনটি বিশেষ। কোক স্টুডিও বাংলার তৃতীয় মৌসুমের শেষ গানটি প্রকাশ পেয়েছে তার গাওয়া জনপ্রিয় সুফি কাওয়ালি ‘দামা দম মাস্ত কালান্দার’ দিয়ে—যে গানটি বহু বছর আগে তাকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দিয়েছিল।
তবে জন্মদিন নিয়ে শিল্পীর বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি জানান, পরিবারকে সময় দিয়েই কাটাবেন দিনটি। ঘরোয়া পরিবেশেই উদ্যাপিত হবে জন্মদিন।
১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন রুনা লায়লা। সংগীতজীবনের শুরু ষাটের দশকের শেষ দিকে পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্পে। শিল্পী আহমেদ রুশদির গায়কিতে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগীতাঙ্গনে পথচলা শুরু করা এই কণ্ঠশিল্পী দ্রুতই উর্দুভাষী শ্রোতাদের মন জয় করে নেন। ‘উনকি নজরোঁ সে মোহাব্বত কা জো পয়গাম মিলা’—এর মতো গান তাকে এনে দেয় ব্যাপক জনপ্রিয়তা।
এরপর ভারতেও ছড়িয়ে পড়ে তার কণ্ঠের জাদু। ‘ও মেরা বাবু ছৈল ছাবিলা’ তাকে পরিচিত করে তোলে সাদাকালো যুগেই। পরে সংগীত পরিচালক বাপ্পি লাহিড়ীর সঙ্গে ‘ডিস্কো দিওয়ানে’ (১৯৮২) অ্যালবাম তাকে বিশ্বব্যাপী নতুন আরেক পরিচিতির শিখরে পৌঁছে দেয়।
যদিও তিন দেশে সাফল্য পেয়েছেন, রুনা লায়লার সংগীতজীবনের মূল ভিত্তি ছিল বাংলাদেশ। ‘দ্য রেইন’ (১৯৭৬), ‘জাদুর বাঁশি’ (১৯৭৭), ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ (১৯৮৯), ‘অন্তরে অন্তরে’ (১৯৯৪)—সহ মোট সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ গায়িকা নির্বাচিত হয়েছেন। ‘সাধের লাউ বানাইলা মোরে বৈরাগী’, ‘বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িতে গেলাম’—এর মতো বাংলা লোকগান তার কণ্ঠে নতুন প্রাণ পেয়েছে।
দীর্ঘ ও সফল এই যাত্রায় মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি—এ কথা প্রায়ই উল্লেখ করেন রুনা লায়লা। তিনি বলেন, “মা আমাকে প্রচণ্ড সহযোগিতা করেছেন। ছোটবেলায় গান গাইতে গেলে মা সবসময় সঙ্গে যেতেন।”
ঢাকা/রাহাত/শান্ত