সাইকেল কিনতে এসে টাকা চুরি, দেখে ফেলায় দুই খালাকে খুন: ডিবি
Published: 12th, May 2025 GMT
রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় দুই বোনকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় রাব্বানী খাঁন তাজ (১৪) নামে এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, এই কিশোর সম্পর্কে নিহত ওই দুই বোনের ভাগিনা। টাকা চুরি দেখে ফেলায় সে তার দুই খালাকে কুপিয়ে হত্যা করে।
পুলিশ বলছে, তাজ মূলত তার খালায় বাসায় বেড়াতে এসেছিল। তার শখ ছিল একটি সাইকেল কিনবে। এজন্য তার খালার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে তিন হাজার টাকা চুরি করে। আর এ দৃশ্য দেখতে পান তার বড় খালা। তিনি বিষয়টি কিশোরের মাকে কল করে বিষয়টি জানাতে গেলে ফলকাটা ছুরি দিয়ে তাকে আঘাত করে সে। এ দৃশ্য তার আরেক খালা দেখে ফেলায় তিনি এগিয়ে আসেন। তাকেও সে ছুরিকাঘাতে আহত করে। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাদের মৃত্যু হয়।
সোমবার (১২ মে) বিকেলে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম।
আরো পড়ুন:
চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে পিটিয়ে হত্যা
গাজীপুরে হত্যা মামলার পলাতক আসামিদের ঘরে আগুন
এর আগে রবিবার (১১ মে) বিকেলে তাজকে ঝালকাঠি সদরে থাকা তার নানার বাড়ি আশিয়ার গগন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনায় নিহত দুই বোন হলেন-বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সাবেক কর্মকর্তা মরিয়ম বেগম ও তার ছোট বোন সুফিয়া বেগম।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার বলেন, “গত শুক্রবার দুপুর ১২টায় তাজ তাদের যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া ভাড়া বাসা থেকে প্রাইভেট পড়ার জন্য পাঞ্জাবি পরে বের হয়। কিন্তু সে বাসা থেকে বের হয়ে প্রাইভেট পড়তে না গিয়ে তার বড় খালামনির (মরিয়ম বেগম) শেওড়াপাড়ার বাসায় যায়। সিএনজির ভেতরেই সে পাঞ্জাবি চেঞ্জ করে নীল রং এর টি-শার্ট পরিধান করে। তারপর শেওড়াপাড়া মেট্রোরেলের নিচে নেমে একটি লাল রঙের ক্যাপ মাথায় ও মুখে মাস্ক পরে আনুমানিক ১২টা ৫০ মিনিটে বড় খালার বাসায় পৌঁছায়। গেটে তালা না থাকায় সে গেট খুলে দ্বিতীয় তলায় তার বড় খালার রুমে নক করলে বড় খালা চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেয়।”
খালার বাসার সামনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধীকে শনাক্ত করে পুলিশ
তিনি বলেন, “বাসায় প্রবেশের পর বড় খালা তাকে জিজ্ঞাসা করে তুমি একা আসছ নাকি তোমার মা আসছে? তখন সে বলে ‘মা আসতেছে আমি আগে চলে আসছি।’ তখন তার বড় খালা তাকে আপ্যায়নের জন্য শরবত বানানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন এবং সেজো খালা (সুফিয়া বেগম) প্লেটবাটি ধোয়া মোছা করে বারান্দার দিকে যান। এই সুযোগে সে বড় খালার রুমে টিভির পাশে রাখা মানিব্যাগ থেকে একটি পুরাতন সাইকেল কেনার জন্য তিন হাজার টাকা চুরি করে।”
তিনি বলেন, “বিষয়টি বড় খালা দেখে ফেলে তাজকে গালাগালি ও বকাবকি করে বলে ‘শুয়রের বাচ্চা তোর স্বভাব ভালো হবে না, তুই চুরি করার জন্য আমার বাসায় আসছিস তোর মাকে এখনই জানাচ্ছি।’ তখন তার খালা তার মাকে ফোন দেওয়ার জন্য মোবাইল খুঁজতে থাকে। সেই মুহূর্তে ডাইনিং টেবিলে থাকা লেবু কাটা ছুরি দিয়ে প্রথমে বড় খালার পেটে আঘাত করে তাজ। তখন বড় খালা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে মারতে উদ্যত হলে সে পুনরায় আঘাত করে। তার বড় খালার বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকারের শব্দ শুনে সেজো খালা (সুফিয়া) পেছনের অন্য একটি রুম হতে এসে তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তারপর সে ওই একই চাকু দিয়ে সেজো খালার পেটে একবার আঘাত করে উনি মেঝেতে পড়ে যায় এবং বড় খালা তখনো প্রাণ বাঁচানোর জন্য চিৎকার করছিলো। তারপর তাজ রান্নাঘরের চুলার পাশ থেকে শীল-পাটার পিষুনি এনে বড় খালার মাথায় একাধিক বার আঘাত করে। পরে সেজো খালাকেও আঘাত করে। তারপর সে বাথরুমে গিয়ে তার হাতে-ও মুখে লেগে থাকা রক্ত পানি দিয়ে পরিষ্কার করে। পাশের রুমে গিয়ে তার টি-শার্ট ও জিন্স প্যান্ট এ রক্ত লেগে থাকায় চেঞ্জ করে খালাতো বোন মিষ্টি'র ব্যবহৃত একটি জিন্স প্যান্ট ও তার ব্যাগে থাকা আরেকটি রঙিন টি-শার্ট ও ক্যাপ পরে। সে দরজা বাইরে থেকে তালা মেরে চাবি নিয়ে বের হয়ে শনির আখড়া যাওয়ার জন্য রাস্তায় এসে সিএনজিতে ওঠে।”
তিনি আরো বলেন, “কিছুদুর যাওয়ার পর নিহতের বাসার চাবিগুলো ও তার পরিহিত ক্যাপ মেইন রোড এ রাস্তার পাশে ফেলে দেয় তাজ। শনির আখড়া পৌঁছার পর চুরি করা তিন হাজার টাকার মধ্যে ৪৫০ টাকা সিএনজি ভাড়া দেয় এবং বাকি টাকায় রক্ত লেগে থাকার কারনে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। তারপর শনির আখড়া সিএনজি থেকে নেমে আয়শা মশার মার্কেটের (স্টার্ন শপিং সেন্টার) তৃতীয় তলার মসজিদের ওয়াসরুমে ঢুকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে তার ব্যাগে থাকা সকালে পরিহিত গোলাপী রং এর পাঞ্জাবি পুনরায় পরিধান করে। তার সঙ্গে থাকা ব্যাগের ভেতর হতে রক্তমাখা কাপড়গুলো ভ্যান্টিলেটর দিয়ে ফেলে দেয়। তারপর বাসার সামনে এসে ময়লা একটা বাড়ি যে খানে কেউ থাকে না সেখানে তার জুতা জোড়া ছুড়ে মারে। তারপর বাসায় চলে যায়। পরদিন ১০ মে বিকালে তার সেজো খালাকে দাফন করার জন্য তার নানুর বাড়ি কালকাঠির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে।”
ডিবির যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম বলেন, “গ্রেপ্তার তাজ শুরু থেকেই পুলিশের কার্যক্রমের ওপর নজর রাখছিল। ফলে সে আত্মগোপনে চলে যায়। পুলিশ এ কদিন যেখানে গেছে সেখানে গিয়ে পুলিশের কথা শুনছিল। এভাবে সে নিজেকে রক্ষার জন্য চেষ্টা করেছে। তবে সে মাদকাসক্ত ছিল কি না এবং এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে আর কেউ ছিল কি না তা যাচাই করা হচ্ছে।”
তিনি জানান, সেই বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নানুর বাড়ি থেকে তাজকে আটক করা হয়। পরে তার দেখানো মতে স্টার্ন শপিং সেন্টার এর পাশের সুয়ারেজ লাইনের ওপর থেকে নীল রং এর রক্ত মাখা টি-শার্ট ও ব্লু কালারের রক্ত মাখা দুটি জিন্স প্যান্ট উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে একটি তার ও একটি তার খালাত বোন মিস্টির জিন্স প্যান্ট ছিল। তার বাসার সামনে নির্জন বিল্ডিং এর ওপর তার ফেলে দেওয়া জুতা জোড়াও উদ্ধার করা হয়।
ঢাকা/এমআর/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য ত র বড় খ ল বড় খ ল র ন র জন র জন য স এনজ ত রপর
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরে যেসব বিষয় গুরুত্ব পাবে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ মঙ্গলবার চার দিনের মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশ সফরে যাচ্ছেন। এই সফরে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে একাধিক বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি। ট্রাম্প এমন সময় এই সফর করছেন, যখন মধ্যপ্রাচ্যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই সফরে গাজায় যুদ্ধবিরতি, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ, বাণিজ্য ও তেলের দাম কমানো নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে উপসাগরীয় আরব দেশগুলো, বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। এসব দেশে তাঁর সন্তানদের একাধিক ব্যবসা ও আবাসন প্রকল্প আছে। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছেন। তাঁর এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে দুটি দেশ সৌদি আরবে বৈঠকে বসেছে। এ কারণে সৌদি আরব ওয়াশিংটনের কাছে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় সংক্রান্ত আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে কাতার।
ট্রাম্পের সফরের প্রথম দিনেই সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ ফোরাম অনুষ্ঠিত হবে। চলতি সপ্তাহেই এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এতে অতিথি হিসেবে থাকার কথা রয়েছে ব্ল্যাকরকের সিইও ল্যারি ফিঙ্ক, প্যালান্টিয়রের সিইও অ্যালেক্স কার্প এবং সিটি গ্রুপ, আইবিএম, কোয়ালকম, অ্যালফাবেট ও ফ্রাঙ্কলিন টেম্পলটনের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীরা। এ ছাড়া হোয়াইট হাউসের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ক্রিপ্টোবিষয়ক উপদেষ্টা ডেভিড স্যাকসও এই ফোরামে অংশ নেবেন।
সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিকে ঘিরে বৈশ্বিক কেন্দ্র হতে চাইছে। এ জন্য তারা এআই অবকাঠামোতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। এ কারণে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সেমিকন্ডাক্টর কিনতে চাইছে। বাইডেনের আমলে এ বিষয়ে আইনি জটিলতা থাকলও ট্রাম্প প্রশাসন সে বিষয়টি সহজ করতে চাইছে।
পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব। অন্যদিকে সৌদি আরব নিজস্ব বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালু করতে চায়। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন ও সহায়তা চেয়েছে দেশটি।
ইসরায়েল-গাজা আলোচনাট্রাম্পের সফরের আরেকটি প্রধান আলোচ্য বিষয় হলো গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ। তিনি এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে গাজা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যও করেছেন তিনি। সম্প্রতি বলেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তা-ই নয়, তিনি গাজাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ আবাসন প্রকল্প’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।’
তেলের দাম এবং অর্থনীতিসিরিয়ার নতুন সরকারের ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয় নিয়েও এই সফরে আলোচনা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ব্রাঞ্চ। এ ছাড়া ট্রাম্প প্রশাসন পারস্য উপসাগরের নাম পাল্টে ‘আরব উপসাগর’ হিসেবে ঘোষণা দিতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে। আরব দেশগুলো নতুন নাম উত্সাহের সঙ্গে গ্রহণ করলেও ইরান কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।
তেলের দাম নিয়ে আলোচনাও গুরুত্ব পাবে। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোকে (ওপেক) তেলের উৎপাদন বাড়াতে চাপ দিয়ে আসছিলেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তাদের জন্য দাম কমানো যায়। তাই এই সফরে তেলের উৎপাদন বাড়ানো নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে।