রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় দুই বোনকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় রাব্বানী খাঁন তাজ (১৪) নামে এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, এই কিশোর সম্পর্কে নিহত ওই দুই বোনের ভাগিনা। টাকা চুরি দেখে ফেলায় সে তার দুই খালাকে কুপিয়ে হত্যা করে।

পুলিশ বলছে, তাজ মূলত তার খালায় বাসায় বেড়াতে এসেছিল। তার শখ ছিল একটি সাইকেল কিনবে। এজন্য তার খালার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে তিন হাজার টাকা চুরি করে। আর এ দৃশ্য দেখতে পান তার বড় খালা। তিনি বিষয়টি কিশোরের মাকে কল করে বিষয়টি জানাতে গেলে ফলকাটা ছুরি দিয়ে তাকে আঘাত করে সে। এ দৃশ্য তার আরেক খালা দেখে ফেলায় তিনি এগিয়ে আসেন। তাকেও সে ছুরিকাঘাতে আহত করে। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাদের মৃত্যু হয়।

সোমবার (১২ মে) বিকেলে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম।

আরো পড়ুন:

চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে পিটিয়ে হত্যা

গাজীপুরে হত্যা মামলার পলাতক আসামিদের ঘরে আগুন

এর আগে রবিবার (১১ মে) বিকেলে তাজকে ঝালকাঠি সদরে থাকা তার নানার বাড়ি আশিয়ার গগন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ঘটনায় নিহত দুই বোন হলেন-বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সাবেক কর্মকর্তা মরিয়ম বেগম ও তার ছোট বোন সুফিয়া বেগম।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার বলেন, “গত শুক্রবার দুপুর ১২টায় তাজ তাদের যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া ভাড়া বাসা থেকে প্রাইভেট পড়ার জন্য পাঞ্জাবি পরে বের হয়। কিন্তু সে বাসা থেকে বের হয়ে প্রাইভেট পড়তে না গিয়ে তার বড় খালামনির (মরিয়ম বেগম) শেওড়াপাড়ার বাসায় যায়। সিএনজির ভেতরেই সে পাঞ্জাবি চেঞ্জ করে নীল রং এর টি-শার্ট পরিধান করে। তারপর শেওড়াপাড়া মেট্রোরেলের নিচে নেমে একটি লাল রঙের ক্যাপ মাথায় ও মুখে মাস্ক পরে আনুমানিক ১২টা ৫০ মিনিটে বড় খালার বাসায় পৌঁছায়। গেটে তালা না থাকায় সে গেট খুলে দ্বিতীয় তলায় তার বড় খালার রুমে নক করলে বড় খালা চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেয়।”

খালার বাসার সামনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধীকে শনাক্ত করে পুলিশ

তিনি বলেন, “বাসায় প্রবেশের পর বড় খালা তাকে জিজ্ঞাসা করে তুমি একা আসছ নাকি তোমার মা আসছে? তখন সে বলে ‘মা আসতেছে আমি আগে চলে আসছি।’ তখন তার বড় খালা তাকে আপ্যায়নের জন্য শরবত বানানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন এবং সেজো খালা (সুফিয়া বেগম) প্লেটবাটি ধোয়া মোছা করে বারান্দার দিকে যান। এই সুযোগে সে বড় খালার রুমে টিভির পাশে রাখা মানিব্যাগ থেকে একটি পুরাতন সাইকেল কেনার জন্য তিন হাজার টাকা চুরি করে।”

তিনি বলেন, “বিষয়টি বড় খালা দেখে ফেলে তাজকে গালাগালি ও বকাবকি করে বলে ‘শুয়রের বাচ্চা তোর স্বভাব ভালো হবে না, তুই চুরি করার জন্য আমার বাসায় আসছিস তোর মাকে এখনই জানাচ্ছি।’ তখন তার খালা তার মাকে ফোন দেওয়ার জন্য মোবাইল খুঁজতে থাকে। সেই মুহূর্তে ডাইনিং টেবিলে থাকা লেবু কাটা ছুরি দিয়ে প্রথমে বড় খালার পেটে আঘাত করে তাজ। তখন বড় খালা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে মারতে উদ্যত হলে সে পুনরায় আঘাত করে। তার বড় খালার বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকারের শব্দ শুনে সেজো খালা (সুফিয়া) পেছনের অন্য একটি রুম হতে এসে তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তারপর সে ওই একই চাকু দিয়ে সেজো খালার পেটে একবার আঘাত করে উনি মেঝেতে পড়ে যায় এবং বড় খালা তখনো প্রাণ বাঁচানোর জন্য চিৎকার করছিলো। তারপর তাজ রান্নাঘরের চুলার পাশ থেকে শীল-পাটার পিষুনি এনে বড় খালার মাথায় একাধিক বার আঘাত করে। পরে সেজো খালাকেও আঘাত করে। তারপর সে বাথরুমে গিয়ে তার হাতে-ও মুখে লেগে থাকা রক্ত পানি দিয়ে পরিষ্কার করে। পাশের রুমে গিয়ে তার টি-শার্ট ও জিন্স প্যান্ট এ রক্ত লেগে থাকায় চেঞ্জ করে খালাতো বোন মিষ্টি'র ব্যবহৃত একটি জিন্স প্যান্ট ও তার ব্যাগে থাকা আরেকটি রঙিন টি-শার্ট ও ক্যাপ পরে। সে দরজা বাইরে থেকে তালা মেরে চাবি নিয়ে বের হয়ে শনির আখড়া যাওয়ার জন্য রাস্তায় এসে সিএনজিতে ওঠে।”

তিনি আরো বলেন, “কিছুদুর যাওয়ার পর নিহতের বাসার চাবিগুলো ও তার পরিহিত ক্যাপ মেইন রোড এ রাস্তার পাশে ফেলে দেয় তাজ। শনির আখড়া পৌঁছার পর চুরি করা তিন হাজার টাকার মধ্যে ৪৫০ টাকা সিএনজি ভাড়া দেয় এবং বাকি টাকায় রক্ত লেগে থাকার কারনে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। তারপর শনির আখড়া সিএনজি থেকে নেমে আয়শা মশার মার্কেটের (স্টার্ন শপিং সেন্টার) তৃতীয় তলার মসজিদের ওয়াসরুমে ঢুকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে তার ব্যাগে থাকা সকালে পরিহিত গোলাপী রং এর পাঞ্জাবি পুনরায় পরিধান করে। তার সঙ্গে থাকা ব্যাগের ভেতর হতে রক্তমাখা কাপড়গুলো ভ্যান্টিলেটর দিয়ে ফেলে দেয়। তারপর বাসার সামনে এসে ময়লা একটা বাড়ি যে খানে কেউ থাকে না সেখানে তার জুতা জোড়া ছুড়ে মারে। তারপর বাসায় চলে যায়। পরদিন ১০ মে বিকালে তার সেজো খালাকে দাফন করার জন্য তার নানুর বাড়ি কালকাঠির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে।”

ডিবির যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম বলেন, “গ্রেপ্তার তাজ শুরু থেকেই পুলিশের কার্যক্রমের ওপর নজর রাখছিল। ফলে সে আত্মগোপনে চলে যায়। পুলিশ এ কদিন যেখানে গেছে সেখানে গিয়ে পুলিশের কথা শুনছিল। এভাবে সে নিজেকে রক্ষার জন্য চেষ্টা করেছে। তবে সে মাদকাসক্ত ছিল কি না এবং এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে আর কেউ ছিল কি না তা যাচাই করা হচ্ছে।”

তিনি জানান, সেই বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নানুর বাড়ি থেকে তাজকে আটক করা হয়। পরে তার দেখানো মতে স্টার্ন শপিং সেন্টার এর পাশের সুয়ারেজ লাইনের ওপর থেকে নীল রং এর রক্ত মাখা টি-শার্ট ও ব্লু কালারের রক্ত মাখা দুটি জিন্স প্যান্ট উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে একটি তার ও একটি তার খালাত বোন মিস্টির জিন্স প্যান্ট ছিল। তার বাসার সামনে নির্জন বিল্ডিং এর ওপর তার ফেলে দেওয়া জুতা জোড়াও উদ্ধার করা হয়।

ঢাকা/এমআর/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য ত র বড় খ ল বড় খ ল র ন র জন র জন য স এনজ ত রপর

এছাড়াও পড়ুন:

৩০ ঘণ্টা পরও খোলা হয়নি শাহ আমানত হল প্রাধ্যক্ষের কক্ষের তালা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের প্রাধ্যক্ষের কক্ষে আবাসিক শিক্ষার্থীরা তালা দেওয়ার ৩০ ঘণ্টা পর আজ সোমবার দুপুরেও তা খোলা হয়নি। উল্টো আজ শিক্ষার্থীরা প্রধ্যক্ষের কক্ষের নামফলকও সরিয়ে ফেলেন। গতকাল রোববার সকালে আর্থিক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা প্রাধ্যক্ষের কক্ষে তালা দেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান আলোচনার প্রস্তাবও দিলেও শিক্ষার্থীরা তা ফিরিয়ে দিয়েছেন। নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ ও অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া আলোচনায় বসবেন না বলে হল সংসদের নেতারা জানিয়েছেন।

আজ দুপুর ১২টার দিকে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক চৌ ধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান হলের গৃহশিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে হলে যান। তিনি হল সংসদের প্রাকর্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে আবাসিক শিক্ষার্থী ও হল সংসদের নেতারা সেখানে উপস্থিত হননি।

প্রাধ্যক্ষ দেখা করতে চাইলেও হল সংসদের সদস্যরা তাতে রাজি হননি বলে জানান শাহ আমানত হল সংসদের ভিপি জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, অভিযোগগুলো তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত আগের মতো সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব নয়। তিনি আরও জানান, দাপ্তরিক কাজ যাতে ব্যাহত না হয়—এ জন্য হলের আরেকটি অফিস কক্ষ খোলা রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মনিরুল হাসান বলেন, ‘আমি গৃহশিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে হলে গিয়েছিলাম আলোচনায় বসতে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আসেননি। পরে সহউপাচার্যের (একাডেমিক) সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি আমাকে দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যেতে বলেন এবং উপাচার্য চীন সফর শেষে দেশে ফিরলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান বলেন, গতকাল হল সংসদের প্রতিনিধিরা তাঁর কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। তিনি সময় চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আজ প্রাধ্যক্ষ এসে জানিয়েছেন, তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করেছেন এবং ভবিষ্যতেও করতে চান। কিন্তু উপাচার্য ও সহউপাচার্য (প্রশাসনিক) অনুপস্থিত থাকায় আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। উপাচার্য দেশে ফিরলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

গতকাল আবাসিক শিক্ষার্থীদের সম্মতিতে হল সংসদের প্রতিনিধিরা প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দায়িত্বে অবহেলা, অসৌজন্যমূলক আচরণ, অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাঁর কক্ষে তালা দেন। অভিযোগে বলা হয়—হল স্টোরের মালামাল নিয়মবহির্ভূতভাবে বিক্রি করা হয়েছে, দরজা-জানালার মেরামত হয়নি, দ্বিতীয় ডাইনিং চালু হয়নি এবং সাইকেল স্ট্যান্ডসহ মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়নি। এসব অভিযোগ তাঁরা সহ–উপাচার্যের কাছে লিখিতভাবে জমা দিয়েছেন। তবে প্রাধ্যক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অনেক কাজই বাজেট ও প্রশাসনিক অনুমোদনের ওপর নির্ভরশীল এবং তিনি নিয়মিতভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ