গরমে ঘর ও ঘরের বাইরের পশুপাখির জন্যও ভাবছেন তো
Published: 12th, May 2025 GMT
‘তীব্র গরম সবার জন্যই ভীষণ কষ্টের। আমাদের মাথার ওপর ছাদ আছে, ঘরে ফ্যান আছে, হাতের নাগালে পানি আছে। পথে এসব নেই। অনেক এলাকায়ই পানির তেমন উৎস নেই, ছায়া দেওয়ার মতো গাছের অভাবও প্রকট। এ সময় বাড়ির ছোট্ট সদস্য কিংবা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির যেমন বাড়তি যত্ন প্রয়োজন, তেমনি পথশিশু, রিকশাচালক বা দিনমজুরেরাও যে কষ্টে আছেন, তা ভুলে যাই কী করে? তাঁদের প্রতিও আমাদের দায়িত্ব আছে। একইভাবে পথের প্রাণীদের জন্যও কিছু করতে হবে আমাদেরই। পৃথিবী তো কেবল মানুষেরই নয়।’ এমনটাই বলছিলেন শিক্ষক, প্রশিক্ষক এবং প্রাণী অধিকারকর্মী ড.
ফারজানা শম্পা।
বাড়ির নিচে পথচারীর জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা যেতে পারে এ সময়। একটা পাশে পথের প্রাণীর জন্যও পানি এবং সামান্য কিছু খাবার রাখা যেতে পারে। তবে প্রাণীদের জন্য রেখে দেওয়া পাত্রের পানি বদলে দেওয়া উচিত রোজই। পরিষ্কার করে দেওয়া উচিত পাত্রটা। তাতে পানিও খাওয়ার উপযোগী থাকে আর মশা জন্মানোর ভয়ও থাকে না। খাবার দেওয়ার পরও একইভাবে জায়গাটা পরিষ্কার করে নেওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব দিলেন ড. ফারজানা শম্পা। বারান্দা বা ছাদেও পাখিদের জন্য পানি রেখে দেওয়া যেতে পারে। একটু ছায়ার খোঁজে আসা প্রাণীরা ভয় বা আঘাত পায়, এমন কিছু করা উচিত নয় কারও।
আরও পড়ুনকীভাবে বুঝবেন আপনার পোষা বিড়াল বা কুকুরটির ওজন বেশি?১৩ নভেম্বর ২০২৪যে দায়িত্ব এড়ানো যাবে নাবাড়িতে অনেকেই প্রাণী পোষেন। তাঁদের দায়িত্ব কিন্তু অনেক বেশি। এই প্রাণীরা পুরোপুরি আমাদের ওপর নির্ভরশীল। ওদের যত্ন–আত্তি প্রসঙ্গে জানালেন ফারমিলিয়ন ভেটেরিনারি ক্লিনিকের প্রাণিচিকিৎসক ডা. ফাতিহা ইমনূর।
পোষা প্রাণীর জন্য পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা রাখুন তার নাগালের মধ্যেই। দু-তিন বেলা পানি বদলে দেওয়াও জরুরি। তা ছাড়া পানিতে ময়লার হালকা স্তর পড়লেও সঙ্গে সঙ্গে পানি বদলে দিন। পাত্রটি পরিষ্কার করুন রোজ। ওরস্যালাইন বা গ্লুকোজ-পানি দেবেন না। কেবল বমি বা পাতলা পায়খানা হলে সামান্য ওরস্যালাইন দেওয়া যায়। কোন প্রাণীকে কতটুকু স্যালাইন দেওয়া যায়, তা জেনে নিন চিকিৎসকের কাছে।
বিড়াল-কুকুরদের শুকনা খাবার কম দিতে চেষ্টা করুন। এক বেলার বেশি শুকনা খাবার না দেওয়াই ভালো। সেদ্ধ ঝোলজাতীয় খাবার সবচেয়ে ভালো। সামান্য লবণ দিতে পারেন সেদ্ধ করার সময়। অন্য কোনো মসলা দেবেন না। কখনো কখনো প্যাকেটজাত বা টিনজাত খাবার দিলে ভেজা খাবার (ওয়েট ফুড) বেছে নিন।
ওয়েট ফুড এবং রান্না করা খাবার নষ্ট হয় গরমে। তাই ফ্রিজে রাখুন। তবে ওয়েট ফুড গরম করা যায় না। তাই খাওয়ানোর খানিকক্ষণ আগে বের করে নিন।
গরমের সময় মাঝেমধ্যে প্রাণীদের মাথায় ভেজা হাত বুলিয়ে দিন, শরীর আর থাবা মুছে দিন নরম ভেজা কাপড় দিয়ে। খরগোশের ক্ষেত্রে অন্তত তিন-চারবার অবশ্যই এমনটা করুন। যেকোনো প্রাণীর শরীর গরম হলেও এই পদ্ধতিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিন। তবে ঠান্ডা পানি নয়, স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করবেন সব সময়। কখনোই যেন কানে পানি না ঢোকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
গরমে সব পশুপাখিকে তিন-চার দিন অন্তর গোসল করিয়ে দিন। শ্যাম্পু করাতে হলে ওদের উপযোগী শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন। ওরা যদি এসির হাওয়ায় থাকার সুবিধা পায়, তাহলে পাঁচ-সাত দিন অন্তর গোসল করানোই যথেষ্ট। সে ক্ষেত্রে রোজ একাধিকবার গা-মাথা ভেজানোর প্রয়োজনও নেই।
কিছু বিদেশি প্রাণীর লম্বা লোম থাকে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে লোম ছাঁটানো যেতে পারে।
যেসব প্রাণী মেঝেতে বসে থাকে, তাদের বসার জায়গাগুলো রোজ দু-তিনবার পানি দিয়ে মুছে দেওয়া ভালো।
খেয়াল রাখুন, প্রাণী যেন কোনো ফ্যানের নাগাল না পায়।
প্রাণীদের বাইরে নিতে হলে এমন সময় বেছে নিন, যখন তাপমাত্রা তুলনামূলক কম।
প্রাণীকে গাড়িতে একা রেখে কোথাও যাবেন না।
আরও পড়ুনআপনার পোষা বিড়ালকে কি শুকনা খাবার দিচ্ছেন?৩১ অক্টোবর ২০২৪অসুস্থতা যখন ভাবনার বিষয়তাপপ্রবাহে প্রাণীদেরও হিটস্ট্রোক হতে পারে বলে জানালেন ডা. ফাতিহা ইমনূর। বাড়িতে বা এলাকায় কোনো প্রাণী খাওয়াদাওয়ায় আগ্রহ হারালে কিংবা অসুস্থতার অন্য কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এলাকাভিত্তিক উদ্যোগে পথের প্রাণীদেরও টিকা দিয়ে রাখা ভালো। তাতে প্রাণী এবং মানুষ সবাই নিরাপদ থাকবে। তবে গরমে কোনো প্রাণীর টিকা দেওয়ার আগে প্রাণিচিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করে নেওয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুনঅতিরিক্ত গরমে পেট ঠান্ডা রাখবেন যেভাবে২৮ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক র র জন য আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
হামাগুড়ি দিয়ে চলতে হবে না মনার, স্নাতকে ভর্তি নিয়েও দুশ্চিন্তা কেটেছে
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার কলেজছাত্রী মনা বেগমকে (১৮) আর হামাগুড়ি দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হবে না। প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশের পর রাজধানীর দুজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের সহযোগিতায় তাঁকে একটি তিন চাকার বৈদ্যুতিক সাইকেল তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি ও শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে তাঁকে আর্থিকভাবে সহায়তাও করা হয়েছে।
গতকাল রোববার বিকেলে শাহ নিমাত্রা সাগরনাল-ফুলতলা কলেজের অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন ও কয়েকজন শিক্ষক এলাপুর ফাঁড়ি চা-বাগানে মনার বাড়িতে গিয়ে বিশেষ যানটি তুলে দিয়েছেন।
মনাকে সহায়তাকারী দুই শিক্ষক হলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এস এস এম সাদরুল হুদা ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আফসানা আক্তার।
আরও পড়ুনহামাগুড়ি দিয়ে কলেজে যেতেন মনা, এখন অর্থাভাবে স্নাতকে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তা২৮ অক্টোবর ২০২৫জহির উদ্দিন বলেন, কীভাবে সাইকেলটি চালাতে হবে, চার্জ দিতে হবে—এসব মনাকে শিখিয়েছেন মিস্ত্রি। কিছুদিন বাড়িতে চেষ্টা করতে হবে। প্রতিবন্ধিতাকে হার মানিয়ে এত দূর আসতে পেরেছে ওই ছাত্রী। সাইকেল চালানোও তাঁর পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়।
জহির উদ্দিন আরও বলেন, প্রথম আলোয় সংবাদ পড়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মনার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর (মন) স্নাতকে ভর্তিসহ লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহনের কথা জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া সম্প্রতি ঢাকার এক ব্যবসায়ীও মনার পাশে দাঁড়াতে তাঁকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। এসব সহায়তা পেয়ে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মনা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার পাশে যাঁরা দাঁড়িয়েছেন সবাইকে কৃতজ্ঞতা। আমি স্নাতকে ভর্তি হব, লেখাপড়া বন্ধ করব না।’
মনা এলাপুর বাগানের বাসিন্দা দিন মজুর হারিছ মিয়া ও আমিনা বেগম দম্পতির মেয়ে। মনা এবার স্থানীয় শাহ নিমাত্রা সাগরনাল-ফুলতলা কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ–২ দশমিক ৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। জন্মের পর থেকে বাঁ হাত, বাঁ পা, কোমরে জোর না পাওয়ায় সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন মনা বেগম। ডান হাত আর ডান পায়ের শক্তিতে হামাগুড়ি দিয়ে চলাচল করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার সময় হামাগুড়ি দিয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা অতিক্রম করে বাসে উঠতেন। চড়াই-উতরাই পেরিয়ে তিনি এবার শাহ নিমাত্রা সাগরনাল-ফুলতলা কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ভবিষ্যতে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখে মনা।