ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) প্রাক্তন অধ্যাপক মুহাম্মদ নাজমুল হক টিচার ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের (টিডিআই) পরিচালক। তিনি মনোবিজ্ঞান, শিক্ষা ও গবেষণা পদ্ধতির ওপর যথাক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাজ্যের এক্সেটার ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন। ১৯৮৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআরের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন; ২০০৪ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান এবং ২০১৬ সালে অবসর গ্রহণ করেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সমকালের জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মাহফুজুর রহমান মানিক।

সমকাল: কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা অচলাবস্থা দেখছি। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদত্যাগের আন্দোলন চলছে। কুয়েটে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন পদত্যাগের দাবি পর্যন্ত গড়ায় কেন? 

নাজমুল হক: আমার কাছে মনে হয়, সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসব আন্দোলনের সঙ্গে খুব একটা জড়িত না। এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে। হঠাৎ আন্দোলন এমন পর্যায়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। উপাচার্যের পদত্যাগ আন্দোলন, তাঁর বাসভবনে তালা দেওয়া ইত্যাদি সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে সম্ভব নয়। এর পেছনে রাজনৈতিক মোটিভ থাকে বলেই এমনটা সম্ভব হয়। মানুষ মনে করে, আমাদের দেশে শিক্ষাকে সবচেয়ে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। রাজনৈতিক নেতারাও যদি সত্যিকার অর্থে শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতেন; তারা যদি সত্যিই মনে করতেন– শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড; দেশের সত্যিকার উন্নয়ন শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব, তাহলে শিক্ষার হাল এমন হতো না। তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজেদের মতো চলতে দিতেন। একই সঙ্গে শিক্ষা আমলাতান্ত্রিক জটিলতারও শিকার।

সমকাল: আপনি বলতে চাইছেন, রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক সংকটে পড়েছে শিক্ষা?

নাজমুল হক: শিক্ষাটা প্রধানত এ দুই শ্রেণির হাতে। রাজনীতিবিদ ও আমলাদের পাশাপাশি আরেকটি শ্রেণি আছে, তারা হলেন ব্যবসায়ী। রাজনীতিকদের প্রাধান্য বিস্তারের বিষয় আছে। ব্যবসায়ীরা শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করেন, আর আমলারা নিজেদের ছকে শিক্ষাকে দেখছেন অথবা তারা বিষয়টিকে আদৌ গুরুত্ব দেন না। এসব কারণে শিক্ষা ব্যবস্থায় ধস নামছে। উন্নত বিশ্বে কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থায় কেউ হাত দেয় না। শিক্ষার অংশীজনই এটি নিয়ন্ত্রণ করেন। অর্থাৎ এ জগৎ হলো শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, পণ্ডিত ও শিক্ষার্থীদের। বাংলাদেশে শিক্ষা তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই বলেই এ সংকট।    
সমকাল: অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন, সেখানে একটা ব্যাকআপ বা পৃষ্ঠপোষকতা পায় বলেই এমন পদত্যাগ পর্যন্ত তারা অনড় থাকে?
নাজমুল হক: বাস্তবতা আসলে এমনই। তাদের সেভাবে উস্কানি দেওয়া হয়। খেয়াল করে দেখবেন, এদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। 

সমকাল: চব্বিশের অভ্যুত্থানের পর শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি বন্ধের আলোচনা হচ্ছিল। এ বিষয়ে আপনার মত কী?

নাজমুল হক: শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি থাকতে হবে। ছাত্র সংসদ, ছাত্র রাজনীতি না থাকলে এরা শিখবে কোত্থেকে? কারণ এরাই তো এক সময় দেশের নেতা-নেত্রী হবে। দেশের দায়িত্বভার তারাই গ্রহণ করবে। সুতরাং ছাত্র সংসদের মাধ্যমে তাদের শেখার দরকার আছে। কিন্তু লেজড়বৃত্তির ছাত্র রাজনীতি ক্ষতিকর। কোনো দল যখন ছাত্রদের ব্যবহার করে; তাদের অর্থ ইত্যাদি দিয়ে সহায়তা দেয় তখন সেটা সমর্থনযোগ্য নয়। এর ফলে কোনো কোনো ছাত্রনেতা, যারা পড়াশোনা করে না, এটাই তাদের এক ধরনের পেশা হয়ে যায়। অথচ তাদের একেবারে একাডেমিক বিষয় নিয়ে রাজনীতি করা দরকার; শিক্ষাঙ্গনে পড়াশোনার পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য শিক্ষার্থীদের পক্ষ হয়ে দেনদরবার করা। বাস্তবে যখন ছাত্র রাজনীতি লেজুড়বৃত্তির হয়ে গেছে, তখন রাজনীতিবিদরাও বেশি করে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে চান। ফলে দেখা যায়, শিক্ষাঙ্গনে যে দলের প্রভাব বেশি, তারা নির্বাচনেও সেই প্রভাব খাটাতে চেষ্টা করে।

সমকাল: কুয়েটের ঘটনা আপনি কীভাবে দেখছেন? সেখানে উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে–

নাজমুল হক: এটা ভালো নজির নয়। শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলে শিক্ষকদের চলে যেতে হবে কেন? শিক্ষকদের জন্য এমন বিদায় সম্মানজনক নয়। শিক্ষকদের সম্ভবত এ ব্যাপারে একমত হওয়া দরকার– আমরা শিক্ষার্থীদের অন্যায় অবদারের কাছে মাথা নত করব না। শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া থাকলে সে ব্যাপারে কথা থাকতে পারে। কিন্তু পদত্যাগের আন্দোলন এবং সে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পদত্যাগ করানো যথাযথ মনে করি না।

সমকাল: কুয়েটে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা হয়েছে কিংবা তাদের বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত হয়েছে। তার ব্যাখ্যা কী?

নাজমুল হক: এটিও এক ধরনের বাড়াবাড়ি। এখানে শিক্ষকদেরও রাজনীতি আছে। প্রশ্ন হলো– কেন বহিষ্কার কিংবা মামলা পর্যন্ত যেতে হবে। শিক্ষার্থীরা যে দাবিতে আন্দোলন করছিল, তার সুরাহা দ্রুত করলেই হয়তো সংকট এতদূর গড়াত না। 

সমকাল: ঢাকা পলিটেকনিকসহ কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলন চলছে ছয় দফা ঘিরে। তাদের যৌক্তিক দাবির জন্যও দেখা গেল ঢাকা শহরের সড়ক ব্লক করে মানুষকে জিম্মি করা হয়েছে। যৌক্তিক দাবিতেও কেন এমনটা করা লাগে?

নাজমুল হক: আমরা ছাত্রজীবন থেকেই দেখেছি, রাস্তায় নেমে গাড়ি না ভাঙা পর্যন্ত দাবি আদায় হয় না। সরকারও যখন দেখে, আর উপায় নেই তখন দাবি মানতে বাধ্য হয়। অর্থাৎ সোজা আঙুলে ঘি ওঠে না। শিক্ষার্থীরাও বিষয়টি জেনে গেছে। সে জন্য তারা দাবি আদায়ে রাস্তা ব্লক ও মানুষকে জিম্মি করে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের এসব দাবি তো এ-ই প্রথম নয়। তারা অনেক দিন ধরেই বলে আসছে। পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছে। আগেই এর সমাধান হওয়া উচিত ছিল। কেবল এই ক্ষেত্রেই নয়, অন্যান্য বিষয়েও যখন শিক্ষার্থীরা দাবির জন্য আন্দোলনে নামে, প্রথম দিনেই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এর সমাধান খোঁজা দরকার। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসে বলা উচিত– এই দাবিটা মানা সম্ভব, আর এটা এ কারণে এখন সম্ভব নয়। এভাবে করলে আর আন্দোলন বাড়ার কথা না। অর্থাৎ মানুষকে জিম্মি করা কিংবা মানুষ মারা যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে না।

সমকাল: কলেজ পর্যায়ে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এসব আন্দোলনে একাডেমিক কিংবা রাজনৈতিক উপাদানের বাইরেও বয়সোচিত কিছু বিষয় কি আছে? যেমন ঢাকা কলেজ কিংবা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার আন্দোলন…।

নাজমুল হক: প্রতিবেশী দুটি প্রতিষ্ঠান থাকলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্ব হয়। এটা সিরিয়াস বিষয় নয়। তবে একে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়া ভালো বিষয় নয়। এসব দ্বন্দ্বের নানা কারণ থাকে। একটি হলো অস্থিরতা। তাদের অস্থিরতা দেশ নিয়ে, ভবিষ্যৎ নিয়ে। তারা কোথায় যাচ্ছে– জানে না। বয়সেরও ব্যাপার আছে নিঃসন্দেহে। একেবারে স্কুলে এমনটা হবে না। নবম শ্রেণিতে উঠলে হতে পারে। তবে কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা দ্রুত সংগঠিত হয়। তাদের মধ্যে তারুণ্যের কারণে হয়। অবশ্য কেউ তাদেরকে নেতৃত্ব দিতে হয়। তবে চব্বিশের যে গণঅভ্যুত্থান, সেটা স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। সারাদেশেই শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে এসেছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এই স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা গেছে। 

সমকাল: চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের কথা বলছেন। শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলনের কোনো প্রভাব কি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিস্থিতির মধ্যে দেখেছেন?

নাজমুল হক: চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে যেভাবে একটি সরকারের পতন হলো, তা অবিশ্বাস্য ছিল। এতে শিক্ষার্থীদের নিশ্চয়ই এ বোধ জাগ্রত হয়েছে– আমরা একত্র হলে অনেক কিছু করতে পারব। এর ইতিবাচক দিক যেমন আছে, তেমনি কেউ কেউ এর নেতিবাচক ব্যবহারও করেছে। যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করেছে। বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এমনটা দেখা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তো দেখা গেছে, উপাচার্য অনেকেই নিজ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

সমকাল: তার মানে, শুরুতে যে লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির কথা বলেছেন, সেখানে শিক্ষকরাও যুক্ত ছিলেন। শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ কারও কারও ক্ষেত্রে কি যথার্থ ছিল না?

নাজমুল হক: আমরা দেখেছি, অনেক শিক্ষকের ওপর বাস্তব কারণেই শিক্ষার্থীরা সংক্ষুব্ধ ছিল। অনেক শিক্ষক দুর্নীতিসহ অনৈতিকতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এগুলোর বিচার হওয়া দরকার। সরকার যদি এমন কারও বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পায়, আমি বলব, সঙ্গে সঙ্গে তার তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যখনই উপাচার্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠবে; শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করবে, তখনই প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। একে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছতে দেওয়া অনুচিত, যেখানে শিক্ষার্থীদের কাছে উপাচার্যের পদত্যাগ চাওয়া ব্যতীত আর পথ থাকে না।

সমকাল: শিক্ষার্থীদেরও তো বোঝানো দরকার– পড়াশোনাই মূল দায়িত্ব।

নাজমুল হক: শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা যেতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-প্রধানের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় তাদের বোঝাতে হবে– শিক্ষার্থীদের প্রধান কাজ পড়াশোনা; সেখানেই তাদের মনোযোগ দিতে হবে। তাদের দাবিদাওয়া থাকলে সেগুলো নিশ্চয় তুলবে। কিন্তু দিন শেষে পড়াশোনাই যেন মূল কাজ হয়। তাদের বোঝাতে হবে, যখনই শিক্ষাঙ্গনে সমস্যা সৃষ্টি হয়, তাতে শিক্ষার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেলে তারাই সেশনজটে পড়বে। 

সমকাল: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমস্যা হলে স্থানীয় কমিউনিটি তাতে কোনো ভূমিকা পালন করতে পারে?

নাজমুল হক: বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন একটি সংকট হয়, তা দেখা যায় সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পর্যন্ত চলে যায়। এখানে সমাজের ভূমিকা গৌণ হয়ে পড়ে। প্রারম্ভিক ও স্বল্পমাত্রায় সমস্যায় হয়তো সমাজের গণ্যমান্য লোকজন ভূমিকা রাখতে পারেন। কিন্তু তাদের হাতে সব ক্ষমতা নেই। অনেক জায়গায় সমাজই দুর্নীতিগ্রস্ত। সেখানে শিক্ষা প্রশাসনই ভরসা। পক্ষপাতদুষ্ট প্রশাসনেও সংকট আছে।

সমকাল: যেমন–

নাজমুল হক: যেমন কোনো প্রতিষ্ঠানপ্রধান নিয়ে অভিযোগ বা কোনো শিক্ষককে কেন্দ্র করে আন্দোলন হলে সরকার যদি তাঁকে রক্ষা করতে চায়, লোক দেখানো তদন্ত কমিটি গঠন করে তাঁকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারে। এভাবে তাদের সুরক্ষাও দেয়। আগে যেমন দেখতাম, উপাচার্যরা আক্রান্ত হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এই প্রটেকশনটা নিশ্চয়ই তাঁর জীবনের জন্য দরকার। কিন্তু উপাচার্য সেই পর্যায়ে কেন পৌঁছবেন? সেই ধারা যদি এখনও চলতে থাকে, তা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। 

সমকাল: আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের  রাজত্ব ছিল; হলগুলো নিয়ন্ত্রণ করত। চব্বিশের অভ্যুত্থানের পর আমরা দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলোতে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ এসেছে। তারপরও শিক্ষাঙ্গনে শান্তি সেভাবে আসছে না কেন?

নাজমুল হক: শিক্ষাঙ্গন শান্ত থাকুক– এটি সবাইকে চাইতে হবে। লেজুড়বৃত্তি সেখানে বন্ধ করতে হবে। কিন্তু এটা সবাই কি আন্তরিকতার সঙ্গে চাইছে? আমার মনে হয় না। রাজনীতিবিদদের যেমন চাইতে হবে, তেমনি শিক্ষার্থীদেরও চাইতে হবে। শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কার্যক্রমে মনোযোগ দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খেলাধুলা, বিতর্কসহ অনেক সহশিক্ষামূলক কাজ আছে। যারা সেগুলোতে  সময় দেয়, তারা পড়াশোনার মধ্যেই থাকে। এ নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। সংবাদমাধ্যমকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকেও চাইতে হবে– শিক্ষাঙ্গন শান্ত থাকুক। অর্থাৎ তারা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করবে না। বর্তমান সরকারের সেই রাজনৈতিক ইচ্ছা নেই বলেই মনে হয়। কিন্তু রাজনৈতিক সরকার এলে সংকট আরও বাড়বে বলে মনে হয়। 

সমকাল: সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে যদি আরেকটু বলেন–

নাজমুল হক: যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ বজায় রাখতে হলে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যিনি একাডেমিক ও গবেষণায় মনোযোগ দেবেন, তাঁকে নিয়োগ দিতে হবে। সাধারণত যেটা দেখা যায়, এমন লোকদের সরকার নিয়োগ দিতে চায়, যারা তাদের কথা শুনবেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও দেখা যায়, যিনি মালিকের কথা শুনবেন, তাঁকেই নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ধরনের প্রবণতা শিক্ষার জন্য ভালো লক্ষণ নয়। 

সমকাল: শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতে সামগ্রিকভাবে আপনার পরামর্শ কী?

নাজমুল হক: শিক্ষার পূর্ণাঙ্গ পরিবেশ আনতে হলে পরিকল্পিতভাবে কাজ করা দরকার। এ জন্য অব্যাহতভাবে কাজ করতে হবে। এখানে রাজনীতিবিদদের অঙ্গীকার জরুরি। সরকারি আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেও এর সহায়ক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষাকে অগ্রাধিকার বাস্তব অর্থেই রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়কে সত্যিকার অর্থে জ্ঞানচর্চার জায়গা করে তুলতে হবে। যোগ্য ব্যক্তিদের উপাচার্য ও অন্যান্য পদে নিয়োগ দেওয়ার কথাও বলেছি। শিক্ষার্থীদের গবেষণামুখী করতে হবে। এগুলোর যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই কেবল পরিবেশ ফিরে আসতে পারে। 

সমকাল: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

নাজমুল হক: আপনাকেও ধন্যবাদ। সমকালের জন্য শুভকামনা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ ত র র জন ত র জন ত ব দ শ ক ষকদ র উপ চ র য র জন ত ক ব যবস থ পদত য গ র জন য ন র পর পর ব শ পর য য় অর থ ৎ দরক র ধরন র সমক ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পুরোনো খেলায় নতুন প্লেয়ার হতে আসিনি, খেলার নিয়ম বদলাতে এসেছি: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা বলেছি—নতুন বাংলাদেশ লাগবে, নতুন সিস্টেম লাগবে। পুরোনো খেলায় আমরা অংশগ্রহণ করব না। চাঁদাবাজির ও সন্ত্রাসের রাজনীতিতে আমরা নেই। আমরা পুরোনো খেলায় নতুন প্লেয়ার হতে আসিনি, আমরা খেলার নিয়ম বদলাতে এসেছি। রাজনীতির নিয়ম বদলাতে হবে। দেশের হাল ধরতে ভালো, গ্রহণযোগ্য ও তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতিতে নিয়ে আসতে হবে।’

আজ শনিবার দুপুর দেড়টায় বগুড়া শহরের সাতমাথার মুক্তমঞ্চে জুলাই পদযাত্রা শেষে এক পথসভায় এ কথাগুলো বলেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে টালবাহানা হচ্ছে। জুলাই ঘোষণাপত্র অবশ্যই সংবিধানে যুক্ত হবে। জুলাই কোনো আবেগের বিষয় নয়, জুলাইয়ের পথেই আগামীর বাংলাদেশ পরিচালিত হবে।’

আওয়ামী লীগের প্রতি ইঙ্গিত করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘মুজিববাদীরা পলাতক। তারা ভারতে পালিয়েছে, কারণ এটা কোনো বাংলাদেশি দল ছিল না, এটা ছিল ভারতীয় পার্টি। গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ আর কোনো বিদেশি ইশারায় চলবে না। নির্বাচন, রাজনীতি—সবকিছু নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের জনগণ। আগামী ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নতুন বাংলাদেশের শপথ হবে, ঘোষণা করা হবে জুলাই ঘোষণাপত্র।’

আওয়ামী লীগ শাসনামলের ১৬ বছরে বগুড়ার প্রতি বৈষম্যের অভিযোগ তুলে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বগুড়ার নাম শুনলেই চাকরি দেওয়া হতো না, সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হতো না, বরং মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হতো। অথচ এই বগুড়া একসময় বাংলার রাজধানী ছিল। পুণ্ড্র সভ্যতার সূচনা হয়েছিল এখান থেকেই। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য আর জ্ঞানবিজ্ঞানের আঁতুড়ঘর ছিল বগুড়া। আমরা সেই পুরোনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাই, বগুড়ার উন্নয়নে কাজ করতে চাই। এনসিপি কোনো বৈষম্য চায় না। বগুড়াবাসীর ন্যায্য অধিকার আদায়ে লড়াই করবে। আমরা চাই, যার যা প্রাপ্য তা নিশ্চিত হোক। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।’

বগুড়ার প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, বগুড়ার প্রশাসন নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। এ জেলায় দলবাজ প্রশাসন ও পুলিশের কোনো স্থান হবে না। প্রশাসন, পুলিশ ও আদালতকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। যদি কেউ পুরোনো কায়দায় দলবাজ প্রশাসন চালাতে চায়, তাহলে তার পরিণতিও হবে ২০১৮ সালের ভোট ডাকাতির দায়ে অভিযুক্ত ডিসিদের মতো।

সভায় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসাইন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, নাহিদা সারওয়ার ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাকিব মাহদী।

এর আগে শনিবার বেলা ১১টায় বগুড়ার পর্যটন মোটেলে শহীদ পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে এনসিপি। সেখানে নাহিদ ইসলাম বলেন, বিচার, সংস্কার; তারপর নির্বাচন।

পথসভায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতি

পথসভায় কেউ এসেছেন কৌতূহলে, কেউ বক্তব্য শুনতে। শহরের নিউমার্কেট এলাকার বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব জোবেদুর রহমান বলেন, তিনি এনসিপির সমর্থক নন, তবে নেতারা বগুড়াবাসীর জন্য কী বলেন তা শোনার আগ্রহেই এসেছেন।

বগুড়া থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরের কাহালু উপজেলার বীরকেদার গ্রামের কৃষক ইউনুস আলী বলেন, নাহিদের বক্তব্য মোবাইলে শুনেছেন। এবার সরাসরি শুনতেই এসেছেন। শ্যামবাড়িয়া এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যবসার কাজে শহরে এসে পথসভায় নেতাদের বক্তব্য শুনছি।’

মালগ্রাম এলাকার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাই আন্দোলন থেকেই তরুণদের কার্যক্রমে মুগ্ধ হয়ে পড়েছি। দল গঠনের পর এনসিপির সমর্থক হিসেবে কর্মসূচিতে এসেছি। তবে অন্য দলের মতো নতুনদের এই দলের কেউ যাতে স্রোতে গা না ভাসায় এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। গতানুগতিক রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডের মতো বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ালে মানুষ এনসিপিকেও প্রত্যাখ্যান করবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ