পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিন যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন। গতকাল শুক্রবার ভোরে ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের বনগ্রাম পূর্বপাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। 
নিহতরা হলেন– সাঁথিয়ার আতাইকুলার কারিগরপাড়ার মনসুর আলী, সুজানগর উপজেলার শান্তিপুর গ্রামের আবেদ আলী ও বরগুনার বেতাগী উপজেলার বেতমোড় গ্রামের আরিফ হোসেন। আহত ১০ বাসযাত্রীকে পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা পাবনাগামী পাবনা এক্সপ্রেস নামের একটি বাস ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সাঁথিয়ার বনগ্রাম পূর্বপাড়ায় পৌঁছায়। এ সময় পাবনা থেকে ছেড়ে আসা একটি পণ্যবাহী ট্রাকের সঙ্গে বাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বাস ও ট্রাকের সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই বাসের তিন যাত্রী প্রাণ হারান। ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। দুর্ঘটনার কারণে কিছু সময়ের জন্য মহাসড়কের ওই অংশে যান চলাচল বন্ধ ছিল। 
মাধপুর হাইওয়ে থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান বলেন, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে। দুমড়েমুচড়ে যাওয়া ট্রাকে কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার জন্য বাসের চালককেই বেশি দায়ী মনে হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
ট্রাকচাপায় ইজিবাইকের চালকসহ নিহত ৩
চুয়াডাঙ্গা সদরের জাফরপুরে তেলবাহী ট্রাকের চাপায় ইজিবাইকের চালকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শিশুসহ ইজিবাইকের চার যাত্রী। আহতদের চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যার আগে জাফরপুরে বিজিবি-৬ ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পের অদূরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। হতাহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শহিদুর রহমান এসব তথ্য জানিয়েছেন।

সদর হাসপাতালের চিকিৎসক আল ইমরান জুয়েল বলেন, দু’জনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আহত চারজন ভর্তি আছেন। এর মধ্যে একজনের আবস্থা আশঙ্কাজনক।

বাস খাদে পড়ে দু’জন নিহত
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় বাস খাদে পড়ে চালকের সহকারী ও এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ যাত্রী। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের গয়ালমারা এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন– বাসের যাত্রী নোয়াখালী সদর উপজেলার শেখ এনায়েত এনাম এবং বাসচালকের সহকারী কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার মো.

ফারুক। ঘটনার পর চালক পালিয়ে গেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা হানিফ পরিবহনের একটি বাস কক্সবাজারের দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে গয়ালমারা এলাকায় পৌঁছালে চালক বাসের নিয়ন্ত্রণ হারান। এতে বাসটির অনেকাংশ খাদে পড়ে পাশের পুকুরে ডুবে যায়। খবর পেয়ে উদ্ধার কাজে অংশ নেয় চিরিংগা হাইওয়ে থানা পুলিশ, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও চকরিয়া থানা পুলিশ। রাত ৩টার দিকে বাসটি ক্রেন দিয়ে খাদ থেকে তোলা হয়। এ সময় এক যুবকের মরদেহ বাসের জানালায় ঝুলে থাকতে দেখা যায়। আরেক যাত্রীর মরদেহ বাসটির নিচে চাপা পড়ে ছিল। যাত্রীদের দাবি, বৃষ্টির কারণে পিচ্ছিল হয়ে পড়া সড়কে দ্রুতগতির কারণে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়।

বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল দু’জনের
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় থেমে থাকা ট্রাকে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় দু’জন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। গতকাল ভোরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ডুমদিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন– পিকআপ ভ্যানের চালক আফরান ফকির ও ট্রাকচালকের সহকারী ইয়াসিন মোল্লা।
কাশিয়ানী হাইওয়ে থানার এসআই রোমান মোল্লা জানান, যশোরের কেশবপুর থেকে ড্রাগন ও পেয়ারা বোঝাই করে ফেরার পথে ডুমদিয়া এলাকায় একটি ট্রাক বিকল হয়ে পড়ে। সেখানে খুলনাগামী একটি পিকআপ ভ্যানও বিকল হয়। এ সময় দুই গাড়ির চালকসহ অন্যরা মেরামতের চেষ্টা করছিলেন। এ সময় হঠাৎ দ্রুতগামী যাত্রীবাহী একটি বাস ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দিয়ে সটকে পড়ে। এতে ট্রাকের নিচে চাপা পড়েন আফরান ও ইয়াসিন। ট্রাকের চালকও আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে ইয়াসিনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। সকালে উল্টে পড়া ট্রাক সরালে নিচ থেকে আফরানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পিকআপের চাপায় ভ্যানচালক নিহত
সাতক্ষীরায় দ্রুতগামী পিকআপ ভ্যানের চাপায় সুলতান আলী নামের এক ভ্যানচালক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কের দহরকুলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সুলতান আলীর বাড়ি আশাশুনি উপজেলার পুরোহিত গ্রামে। 
একই দুর্ঘটনায় আহত উদয় ঢালী নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, তিনি সুলতান আলীর ভ্যানে কচুয়া চেয়ারম্যান মোড় থেকে সাতক্ষীরার দিকে যাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে দহাকুলা ভাটারমোড়ে পৌঁছালে পেছন থেকে আসা দ্রুতগামী পিকআপ ভ্যান তাদের ভ্যানে ধাক্কা দেয়। এ সময় দু’জন সড়কে ছিটকে পড়লে পিকআপটি সুলতানের শরীরের ওপর দিয়ে চলে যায়। 
(সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধির পাঠানো তথ্য)

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ র ঘটন প কআপ ভ য ন আহত হয় ছ ন এ দ র ঘটন উপজ ল র র চ লক এল ক য় ন র পর মরদ হ এ সময় ঘটন র সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনে পরিবর্তনের প্রস্তুতি

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনে পরিবর্তনের প্রস্তুতি শুরু করেছে সরকার। এর মধ্যে মাঠ প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ হিসেবে বিবেচিত জেলা প্রশাসক (ডিসি) পর্যায়ে আগামী কিছুদিনের মধ্যে কিছু রদবদল করা হতে পারে। আর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় এ পদে ব্যাপক রদবদল হবে। এ লক্ষ্যে এখন যোগ্য কর্মকর্তা বাছাই (ফিট লিস্ট) করা হচ্ছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া ২১ জন ডিসিকে প্রত্যাহার করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। যোগ্য কর্মকর্তা বাছাইয়ের কাজটি শেষ হলেই তাঁদের পরিবর্তন করা হতে পারে। বাছাইয়ের কাজটি শেষ হতে পারে এই মাসের মধ্যে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু সামনে জাতীয় নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন রয়েছে, তাই মাঠ প্রশাসনের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে ‘যোগ্য’ কর্মকর্তাদের পদে আনার চেষ্টা চলছে। এবার নতুন করে ২৮তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কিছুসংখ্যক কর্মকর্তাকে ডিসি পদে নিয়োগের চিন্তাভাবনা চলছে। বাছাই তালিকা তৈরির জন্য ২১ জুন ২৮তম ব্যাচের বেশ কিছুসংখ্যক কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।

হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার, ঝিনাইদহ, পঞ্চগড়, মাগুরা, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, চাঁদপুর, পিরোজপুর, চুয়াডাঙ্গা, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, ঢাকা, মাদারীপুর, গাইবান্ধা, কিশোরগঞ্জ ও জয়পুরহাট জেলার ডিসিরা ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা। ডিসি পদে এই ব্যাচের ২৬ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজনের পদোন্নতি হয়নি।

বর্তমানে ২৪তম, ২৫তম এবং ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তারা ডিসি পদে দায়িত্বে আছেন। এর মধ্যে ২৪ ও ২৫তম বিসিএসের কর্মকর্তারা বিগত বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের (২০০১-০৬) আমলে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। এক–এগারোর পটপরিবর্তনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের (২০০৭–০৮) আমলে ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন।

সরকারি ভাষ্য—বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতি একটি নিয়মিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার অংশ। যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বদলির সময় ও প্রেক্ষাপট স্পষ্টভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতিরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত যে আলোচনা আছে তাতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে, এমনটি ধরে নিয়েই এ প্রস্তুতির কাজ চলছে।

বিগত সরকারও নির্বাচনের কয়েক মাস আগে অনেক জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন এনেছিল। অবশ্য গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আগের ডিসিদের প্রত্যাহার করে পর্যায়ক্রমে সব জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেয় সরকার। তবে এ নিয়োগ নিয়ে সচিবালয়ের ভেতরে কর্মকর্তারা হাতাহাতি, হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটিয়েছেন। তখন ৯ জন ডিসির পদায়ন বাতিল করা হয়েছিল। রদবদল করা হয়েছিল চার জেলার ডিসিকে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে সেখানে নতুন ডিসি নিয়োগের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। একই সঙ্গে আরও কিছু জেলায়ও পরিবর্তন আসতে পারে।যেসব জেলায় পরিবর্তন হতে পারে

২১ জেলায় বর্তমানে যাঁরা ডিসির দায়িত্বে আছেন, তাঁরা গত মার্চে উপসচিব থেকে পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সচিব হয়েছেন। তবে ডিসির পদটি উপসচিব পদমর্যাদার। ফলে এই জেলাগুলোতে বদলির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

এই জেলাগুলো হলো—হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার, ঝিনাইদহ, পঞ্চগড়, মাগুরা, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, চাঁদপুর, পিরোজপুর, চুয়াডাঙ্গা, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, ঢাকা, মাদারীপুর, গাইবান্ধা, কিশোরগঞ্জ ও জয়পুরহাট। এসব জেলার ডিসিরা ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা। ডিসি পদে এই ব্যাচের ২৬ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজনের পদোন্নতি হয়নি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে সেখানে নতুন ডিসি নিয়োগের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। একই সঙ্গে আরও কিছু জেলায়ও পরিবর্তন আসতে পারে।

এ ছাড়া আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় শরীয়তপুরের ডিসিকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে। ফলে এই জেলায় নিয়মিত ডিসি নেই। স্বাভাবিকভাবে এই জেলাতেও পরিবর্তন আসবে।

জেলা প্রশাসক পর্যায়ে পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চলছে। যখন যে জেলায় প্রয়োজন হবে, সেখানে ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে।মো. মোখলেস উর রহমান, সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, জেলা প্রশাসক পর্যায়ে পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চলছে। যখন যে জেলায় প্রয়োজন হবে সেখানে ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে। সামনে হয়তো ৪-৫ জন ডিসি বদল হতে পারে। এর মধ্যে শরীয়তপুরে অবিলম্বে একজন ডিসি নিয়োগ করা হবে। এ ছাড়া বাছাই তালিকা হয়ে গেলে যাঁরা যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন তাঁদের জায়গায় নতুন ডিসি দেওয়া হবে।

জনপ্রশাসন সচিব বলেন, যাতে বিতর্কের সুযোগ না থাকে সে জন্য খুব নিবিড়ভাবে বাছাই করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যাঁদের বিরুদ্ধে অতীতে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পেশাদার ও সর্বোচ্চ যোগ্য লোককে বাছাই করা হচ্ছে। যোগ্য কর্মকর্তা বাছাই করাও একটি কঠিন কাজ। এ জন্য একটু সময় লাগছে। তবে জুলাইয়ের মধ্যেই বাছাই কাজ শেষ করা হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এখন নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই জেলা প্রশাসকদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। নির্বাচন ছাড়াও জেলায় ডিসিদের অনেক ধরনের দায়িত্ব রয়েছে।ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তা থাকবেন কি না, স্পষ্ট নয়

জাতীয় নির্বাচনে জেলা প্রশাসকেরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। তবে আগামী নির্বাচনে ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকবেন কি না, সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি।

এরই মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র স্থাপনে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রধান করে কমিটি করার বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে। এই সংশোধনী এনে সম্প্রতি ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫’ গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নীতিমালায় বলা হয়েছে, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারাই ভোটকেন্দ্র স্থাপন করবেন।

আগে ইসির কর্মকর্তারাই এ কাজটি করতেন। কিন্তু গত নির্বাচনে ইসি প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের এই কাজে যুক্ত করেছিল, যা নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছিল। এবার সেই ক্ষমতা ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে ইসির কর্মকর্তাদের হাতে।

অবশ্য বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতিতে প্রশাসন ক্যাডারের অনেক কর্মকর্তাই নির্বাচনী দায়িত্বে থাকতে অনিচ্ছুক। তাঁরা মনে করেন, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের পর অনেক সময় বিশেষ করে সরকার পরিবর্তন হলেই ঢালাওভাবে ওএসডি বা বাধ্যতামূলক অবসরের মতো সিদ্ধান্তের মুখে পড়তে হয়। অথবা কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি করা হয়। পদোন্নতিতেও অসুবিধায় পড়তে হয়। ফলে অনেকেই নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে চান। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত হলে দায়িত্ব পালন ছাড়া উপায়ও থাকে না।

আগে বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করত, ক্ষমতাসীন সরকার নির্বাচনের সময় পছন্দের কর্মকর্তাদের ডিসি পদে বসিয়ে প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। যদিও এবার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন যারা মাঠে আছে তার মধ্যে প্রায় সবগুলো রাজনৈতিক দল গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি। গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম (জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত) নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধনও স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর ফলে আগামী নির্বাচনে দলটিকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

বিশ্লেষকদের মতে, এখন নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই জেলা প্রশাসকদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। নির্বাচন ছাড়াও জেলায় ডিসিদের অনেক ধরনের দায়িত্ব রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয়সহ জেলার প্রায় সব সরকারি কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন ডিসিরা। এসব পদের দায়িত্বে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের ওপরই জেলার অনেক কিছু নির্ভর করবে। ফলে কেবল নির্বাচন নয়, সব সময়ের জন্যই ডিসি ও এসপির মতো পদগুলোতে নিরপেক্ষ ও দক্ষ কর্মকর্তা থাকা জরুরি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ