সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা না থাকলে ভোট বর্জনের হুঁশিয়ারি হিন্দু মহাজোটের
Published: 5th, July 2025 GMT
জাতীয় সংসদে সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা না হলে হিন্দু সম্প্রদায় ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, এসব দাবি বাস্তবায়ন না হলে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাবে না, ভোটে অংশও নেবে না।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে হিন্দু মহাজোটের নেতারা এ হুঁশিয়ারি দেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রতিটি জাতীয় নির্বাচন হিন্দুদের কাছে নির্যাতনের শামিল হয়ে ওঠে। সংরক্ষিত আসন ও পৃথক ভোটব্যবস্থা না থাকায় সংসদে হিন্দুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকে না। ফলে বছরের পর বছর ধরে তাঁরা নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।
সমাবেশে বক্তারা সম্প্রতি লালমনিরহাটে ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগে পরেশ চন্দ্র শীল ও বিষ্ণুপদ শীলের ওপর হামলা এবং মিথ্যা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তারের ঘটনার নিন্দা জানান। তাঁরা দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ও মন্দির ভাঙচুর, হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, জমি দখল, নারী নির্যাতন ও অপহরণের ঘটনারও প্রতিবাদ জানান।
বক্তারা অভিযোগ করেন, শত্রু সম্পত্তি আইনের মাধ্যমে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় ২৬ লাখ একর সম্পত্তি হাতছাড়া হয়েছে। ঢাকার বহু মন্দির ও দেবোত্তর সম্পত্তিও বেদখল হয়ে গেছে।
স্বাধীনতার পর থেকে হিন্দুরা বৈষম্যের শিকার দাবি করে বক্তারা বলেন, স্বৈরাচার পতনের পর প্রত্যাশা ছিল—সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার পাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, প্রশাসনের উচ্চপর্যায় থেকে সংস্কার কমিটি বা উপদেষ্টা পরিষদ পর্যন্ত কোথাও হিন্দু সম্প্রদায়ের উপস্থিতি নেই। এমনকি সংবিধান সংস্কারেও তাঁদের মতামত নেওয়া হয়নি।
মানববন্ধনে হিন্দু মহাজোটের সভাপতি দীনবন্ধু রায়, নির্বাহী সভাপতি প্রদীপ কুমার পাল, মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিকসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
আরও পড়ুনসংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচনব্যবস্থার দাবি জাতীয় হিন্দু মহাজোটের৩১ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে শিবচর থানায় মামলাটি করেন।
এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।
মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫