Samakal:
2025-07-05@01:46:47 GMT

নারীশিক্ষা বনাম বাল্যবিয়ে

Published: 4th, July 2025 GMT

নারীশিক্ষা বনাম বাল্যবিয়ে

চলতি বছর ঢাকা বোর্ডের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪১ শতাংশ বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করেছে। গত ১৯ জুন সমকালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ‘বিয়ে হয়ে গেছে অনুপস্থিত ৪১ শতাংশ শিক্ষার্থীর’– এমন উদ্বেগজনক তথ্যটি উঠে আসে। ঢাকা বোর্ড পরিচালিত এই জরিপে দেখা যায়, ঝরে পড়া এসব স্কুলশিক্ষার্থীর ৯৭ শতাংশ নারী এবং তারা আর কখনও লেখাপড়ায় ফিরবে না বলে মতামত দেয়। 

বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। আমরা যখন খুব গর্বের সঙ্গে চিন্তা করি যে দেশে নারীশিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান কদমে এগিয়ে চলছে, তখন সাম্প্রতিককালে পরিচালিত ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জরিপটি যথেষ্ট চিন্তার উদ্রেক করে। এ দেশে জনসংখ্যায় ১৮ বছরের নিচে অর্থাৎ বাল্যবিয়ের হার ২০২২ সালে ছিল ৫০ শতাংশ।
২০২৪ সালের মার্চ মাসে পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, বাল্যবিয়ের হার ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। বর্তমানে ৫১.

৪০ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে এই হার যথাক্রমে ২৭ ও ২৯ শতাংশ। তাহলে নারীশিক্ষায় আমরা সত্যিই প্রগতির পথে হাঁটছি? 

এ কথা অবশ্যই ঠিক যে, বর্তমানে নারীরা সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ভেঙে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এমনকি কর্মক্ষেত্রে কোনো কোনো জায়গায় মেধা ও দক্ষতায় তারা পুরুষের সমকক্ষ হয়ে উঠেছে। কোথাও কোথাও নারীরা পুরুষদের ছাড়িয়েও যাচ্ছে। পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কর্মক্ষেত্রে নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণ, সমাজ ও রাজনীতিতে তাদের ক্ষমতায়ন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু নারীর অগ্রযাত্রায় প্রধান প্রতিবন্ধক বাল্যবিয়ের প্রবণতা কিছুতেই হ্রাস করা যাচ্ছে না। পুরুষের সমকক্ষ হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য দরকার সর্বপ্রথম অর্থনৈতিক মুক্তি। আর অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সর্বত্র দরকার নারীশিক্ষার প্রসারে যত বাধা আছে তা দূর করা। 

একজন কিশোরীর স্বল্পশিক্ষিত বাবা-মা যখন দেখেন তাদের মেয়েটি সমাজে নানা ক্ষেত্রে হেনস্তার শিকার হচ্ছে, তখন তাকে নিয়ে পদে পদে বিড়ম্বনায় ভোগেন। পরিবারপ্রধানরা তখন ভাবেন, বিয়েই হবে মেয়েটির নিরাপদ আশ্রয়। এতে মেয়েটির সম্মান রক্ষা হবে। অর্থাৎ পড়াশোনা শিখিয়ে মেয়েটিকে স্বাবলম্বী করার স্বাভাবিক সাহস তারা পান না। বাল্যবিয়ের শিকার হওয়া অসহায় মেয়েটি অদৃষ্টের নির্মম পরিহাসে যদি কখনও স্বামী পরিত্যক্ত অথবা বিধবা হয়ে বাবার বাড়ি ফিরে আসে, তখন সমাজ তাকে বোঝা মনে করে। লোকের করুণার পাত্রে পরিণত হয়। কিন্তু একজন শিক্ষিত স্বাবলম্বী নারী স্বামী পরিত্যক্ত হলেও সে নিজের দায়িত্ব ও সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারে। 

বহু মেধাবী শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের কারণে প্রতিনিয়ত ঝরে পড়ছে শিক্ষাজীবন থেকে। তাদের অস্ফুট কান্না হয়তো কেবল বাতাসই শুনতে পায়। অধিকাংশ বিয়ে হয় মেয়েটির মতামত না নিয়েই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিবাদ করার মতো মানসিকতা তখন গড়ে ওঠে না। 
অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিয়ে হলে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পারস্পরিক বোঝাপড়ায় সমস্যা দেখা যায়। বাল্যবিয়ে নারীদের স্বাস্থ্যের জন্যও হুমকিস্বরূপ। অকালে গর্ভধারণ, প্রসবকালীন জটিলতা, মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি, অপুষ্ট ও রুগ্‌ণ সন্তান প্রসব তো আছেই; পাশাপাশি বাল্যবিয়ে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলে। যতদিন পর্যন্ত আমরা সমাজকে বাল্যবিয়ের কলঙ্ক থেকে মুক্ত করতে না পারব ততদিন নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন নিয়ে যা কিছু বলি না কেন, তা পুরোপুরি ফলপ্রসূ হবে না। 
এ জন্য সমাজে কন্যাবান্ধব পরিবেশ তৈরি হওয়া দরকার, যেখানে নারী মাত্রই শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী হওয়ার পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা তার পরিবার থেকেই পাবে। তখন একজন নারী মানুষ হিসেবে তার ব্যক্তিসত্তার সর্বোচ্চ বিকাশের পথে এগিয়ে যেতে পারবে। প্রত্যেক কন্যাসন্তানের শিক্ষা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তাকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। 

মাহজাবিন আলমগীর: শিক্ষিকা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব বলম ব দরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ঠাকুরগাঁওয়ে এনসিপির গাড়িবহরে হামলা

জুলাই পদযাত্রায় অংশ নেওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গাড়িবহরে হামলার হয়েছে। 

শুক্রবার (৪ জুলাই) দুপরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় কর্মসূচি শেষে পীরগঞ্জে যাওয়ার পথে টাঙ্গন ব্রিজ এলাকায় এ হামলা হয়।

এনসিপি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও আর্ট গ্যালারি মসজিদে নামাজ শেষে পীরগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয় এনসিপির গাড়িবহর। টাঙ্গন ব্রিজ অতিক্রম করার সময় একটি আন্তঃজেলা বাস এনসিপির বহরের গাড়িকে চাপা দেয়। এতে গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এনসিপির নেতাকর্মীরা গাড়ি থামিয়ে এর কৈফিয়ত চান। তখন এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে ৫ থেকে ৬ জন অচেনা মানুষ। এতে গাড়িচালকসহ একজন এনসিপি কর্মী আহত হন।

এনসিপি অভিযোগ করেছে, এ হামলা পূর্বপরিকল্পিত। প্রথমে বাস চাপা দিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। তবে, তারা সঠিক গাড়ি চিহ্নিত করতে পারেনি। পরে গাড়িতে থাকা কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপরে হামলা করে। 

ঠাকুরগাঁও এনসিপির মুখপাত্র অপু বলেছেন, হামলাকারীরা মূলত নাহিদ বা সারজিসদের টার্গেট করেছিল। প্রথমে যেহেতু বাসচাপা দেওয়া হয়েছে, ধারণা করা যায়, তাদের উদ্দেশ্য ছিল সরাসরি হত্যা। এর সঠিক তদন্ত দাবি করছি।

ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সারওয়ার হোসেন বলেছেন, বিষয়টি জানামাত্র ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছি। এনসিপি অভিযোগ করছে, এটি হামলা। প্রাথমিকভাবে একজন হামলাকারীর ভিডিও তারা দেখিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা/হিমেল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মামদানির জয়ে ইসলামবিদ্বেষের জ্বালা
  • তারা কখনও সরকারি কর্মকর্তা, কখনও শীর্ষ সন্ত্রাসী
  • ঠাকুরগাঁওয়ে এনসিপির গাড়িবহরে হামলা
  • বাংলাদেশে ‘ইংলিশ মাস্টারক্লাস’
  • বাংলাদেশে ইংলিশ মাস্টারক্লাস
  • হিন্দু ব্রাহ্মণ হয়েও কেন ইমাম হোসাইনকে ভালোবাসেন তারা
  • বৃষ্টিযাপন
  • চীন থেকে এলো ১৯ হাজার ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কম্বো কিট
  • অভয়াশ্রমেই নিধনযজ্ঞ মাছের প্রজননে ঝুঁকি