দালালদের টাকা দিলে কাজ দ্রুত হয়, অন্যথায় ভোগান্তি
Published: 13th, May 2025 GMT
গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে দালালদের দৌরাত্ম্যে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পাসপোর্ট করতে আসা লোকজন। সেবাগ্রহীতাদের দাবি, নিজেরা পাসপোর্টের আবেদন করলে বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানি করা হয়; কিন্তু দালালের মাধ্যমে করলে সবকিছু চোখের পলকে হয়ে যায়। এর জন্য দালালদের দিতে হয় এক থেকে দেড় হাজার টাকা।
জয়দেবপুর-ঢাকা সড়কের পালের মাঠ এলাকায় জেলা পাসপোর্ট কার্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের পর ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে উদ্বোধন করা হয়। এখন এখানেই চলছে কার্যক্রম। আগে শহরের উত্তর ছায়াবীথি এলাকায় ছোট একটি ভবনে কার্যক্রম চলত।
ওই পাসপোর্ট কার্যালয়ে গত বুধবার আসেন কাপাসিয়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের রাওনাথ গ্রামের আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সকাল নয়টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি আঙুলের ছাপ আর ছবি তোলার জন্য। সেই লাইন যেন আর শেষ হয় না। বেলা দেড়টার সময় কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছি। অথচ যাঁরা দালালকে টাকা দিয়েছেন, তাঁরা এসেই ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে কাজ শেষ করে চলে যান।’
টঙ্গীর পাগার এলাকার বাসিন্দা রিয়াদ মিয়ার পাসপোর্ট আছে আগে থেকেই। তাঁর স্ত্রী নিপা আক্তারের পাসপোর্টে করতে বুধবার তাঁকে এই কার্যালয়ে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ফাইলও জমা দিতে পারেননি, ছবিও তুলতে পারেননি। পরদিন মুঠোফোনে কথা হয় রিয়াদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বুধবার সকালে গিয়ে বেলা দেড়টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ফাইল জমা দিতে পারিনি, তাই চলে গিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবার সকালে এসে দুই ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করে কাজ শেষ করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘একজন এক হাজার টাকা চেয়েছিল দ্রুত কাজ শেষ করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমি টাকা দিইনি। কষ্ট হলেও টাকা ছাড়াই কাজ শেষ করেছি।’
সকাল নয়টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি আঙুলের ছাপ আর ছবি তোলার জন্য। সেই লাইন যেন আর শেষ হয় না। বেলা দেড়টার সময় কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছি। আরিফুল ইসলাম, ভুক্তভোগী সেবাগ্রহীতাসরেজমিনে দেখা যায়, কার্যালয়ের ভেতরে একটি লাইনে লোকজন দাঁড়িয়ে আছেন। সেই লাইন থেকে একজন আনসার সদস্য সিরিয়াল দিয়ে ভেতরে পাঠাচ্ছেন। সেখানে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর কাগজপত্র যাচাই–বাছাই করে পাঠানো হচ্ছে আঙুলের ছাপ ও ছবি তোলার জন্য। আঙুলের ছাপ ও ছবি তুলতে সময় লাগছে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। অথচ যাঁরা দালালের মাধ্যমে এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেশি খরচ করছেন তাঁরা ঠিকই সরাসরি আঙুলের ছাপ ও ছবি তোলার কক্ষে চলে যাচ্ছেন।
ওই অফিসের সামনের সড়কের দুই পাশে ছোট ছোট ২৫ থেকে ৩০টি দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকানে কম্পিউটার নিয়ে বসেছেন দালাল ও তাঁদের সহযোগীরা। এসব দোকানে দালালদের মাধ্যমে সেবাপ্রার্থীরা পাসপোর্টের ফরম পূরণ করে নিচ্ছেন। দালালেরাই ব্যাংকের টাকা জমা দেন।
কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকার ফজলে হাসান নামের এক যুবক পাসপোর্ট করতে বয়স বাড়াতে চান। এ জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনসহ কিছু কাজ করতে হবে। এতে কয়েক মাস সময় প্রয়োজন। তবে পাসপোর্ট অফিসের পাশে গড়ে ওঠা কম্পিউটারের দোকান ও দালালদের মাধ্যমে সেটি সাত দিনেও করা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত টাকা। এটি যাচাই করতে পরিচয় লুকিয়ে ওই কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করলেই মেলে সত্যতা। ওই কার্যালয়ের আশপাশে অর্ধশতাধিক কম্পিউটারের দোকান রয়েছে। এসব দোকানের সঙ্গে সখ্য রেখে পাসপোর্ট কার্যালয়ে প্রতিদিন অবস্থান করেন দালালেরা। সেবা নিতে আসা মানুষদের বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নেন অতিরিক্ত অর্থ। সেখানে অবস্থান করতেই মাসুম নামের এক দালালের সঙ্গে দেখা হয়। তাঁকে পাসপোর্টে বয়স বাড়ানোর কথা বলতেই জানিয়ে দিলেন এটা কোনো বিষয় না।
দালালদের দৌরাত্ম্য আগে থাকতে পারে। তবে আমি এখানে আসার পর কোনো অবস্থাতেই দালালদের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না।নাসরিন পারভিন, উপপরিচালক, গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়দালাল মাসুম বলেন, ‘সামনের বিসমিল্লাহ কম্পিউটারে গিয়ে আমার কথা বলেন, কাজ হয়ে যাবে।’ তাঁর কথার সূত্র ধরে ওই কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে মাসুমের পরিচয় দিতেই চেয়ারে বসতে দিলেন। ওই কম্পিউটারের দোকানে থাকা মো.
গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের উপপরিচালক নাসরিন পারভিন প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন ধরে সেবাগ্রহীতাদের চাপ অনেক বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে দুই-তিন ঘণ্টা সময় লাগার কথা নয়। দালালদের দৌরাত্ম্য আগে থাকতে পারে। তবে আমি এখানে আসার পর কোনো অবস্থাতেই দালালদের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক জ শ ষ কর বয়স ব ড় র জন য সময় ল অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
বাবার সিআরসেভেন বুটের সঙ্গে এমবাপ্পের বুট পরেও অনুশীলনে রোনালদোর ছেলে
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো জুনিয়রের সামনে পাঁচটি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ ছিল। তবে ১৪ বছর বয়সী রোনালদো জুনিয়র পিতৃভূমি পর্তুগালকেই বেছে নিয়েছেন। সম্প্রতি তাঁকে প্রথমবারের মতো ডাকা হয়েছে পর্তুগাল অনূর্ধ্ব–১৫ দলে।
সব ঠিক থাকলে ক্রোয়েশিয়ায় আজ শুরু হতে যাওয়া ভ্লাতকো মারকোভিচ টুর্নামেন্টে জাপান অনূর্ধ্ব–১৫ দলের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে অভিষেক হতে পারে রোনালদো জুনিয়রের। তবে পর্তুগালের বয়সভিত্তিক দলে প্রথমবারের মতো খেলতে নামার আগেই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো জুনিয়র।
সংবাদ সম্মেলনে রোনালদো জুনিয়র কথা বলেছেন একদম সাবলীলভাবে। অনুশীলন করেছেন বাবার সিআরসেভেন ব্র্যান্ডের মার্কুরিয়াল (তেজস্বী) বুট ও কিলিয়ান এমবাপ্পের জন্য নাইকির বানানো বিশেষ বুট পরে, যা সবার নজর কেড়েছে।
পর্তুগালের সিদাদে দো ফুটবল কমপ্লেক্সে গত রোববার অনূর্ধ্ব-১৫ দলের সঙ্গে প্রথমবারের মতো অনুশীলন করেন রোনালদো জুনিয়র। বল নিয়ে লম্বা সময় ধরে কারিকুরি করতে দেখা যায় তাঁকে। সেই সময়ই একবার বাবা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এবং আরেকবার রিয়াল মাদ্রিদের ফরাসি ফরোয়ার্ড এমবাপ্পের বুট পরেছিলেন।
ক্রোয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর স্থানীয় মাঠে আজ সকালেও সেসব বুট পরে অনুশীলন করেছেন রোনালদো জুনিয়র। পরে অবশ্য পর্তুগাল দলের বর্তমান কিট স্পনসর পিউমার বুট পরে সতীর্থদের সঙ্গে বল দেওয়া–নেওয়া করেন। তাঁর সফরসঙ্গী হিসেবে ক্রোয়েশিয়ায় গেছেন দাদি মারিয়া দোলোরেস আভেইরো।
এমবাপ্পে নাইকির সুপারফ্লাই বুট পরে খেলেন, যেগুলো বেগুনি ও সবুজ রঙের। রোনালদোকে তাঁর ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময় মার্কুরিয়াল সিরিজের বুট পরে খেলতে দেখা গেছে।
রোনালদো জুনিয়রের অনুশীলন দেখতে গিয়েছিলেন দাদি মারিয়া দোলোরেস আভেইরো