গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে দালালদের দৌরাত্ম্যে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পাসপোর্ট করতে আসা লোকজন। সেবাগ্রহীতাদের দাবি, নিজেরা পাসপোর্টের আবেদন করলে বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানি করা হয়; কিন্তু দালালের মাধ্যমে করলে সবকিছু চোখের পলকে হয়ে যায়। এর জন্য দালালদের দিতে হয় এক থেকে দেড় হাজার টাকা।

জয়দেবপুর-ঢাকা সড়কের পালের মাঠ এলাকায় জেলা পাসপোর্ট কার্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের পর ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে উদ্বোধন করা হয়। এখন এখানেই চলছে কার্যক্রম। আগে শহরের উত্তর ছায়াবীথি এলাকায় ছোট একটি ভবনে কার্যক্রম চলত।

ওই পাসপোর্ট কার্যালয়ে গত বুধবার আসেন কাপাসিয়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের রাওনাথ গ্রামের আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সকাল নয়টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি আঙুলের ছাপ আর ছবি তোলার জন্য। সেই লাইন যেন আর শেষ হয় না। বেলা দেড়টার সময় কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছি। অথচ যাঁরা দালালকে টাকা দিয়েছেন, তাঁরা এসেই ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে কাজ শেষ করে চলে যান।’

টঙ্গীর পাগার এলাকার বাসিন্দা রিয়াদ মিয়ার পাসপোর্ট আছে আগে থেকেই। তাঁর স্ত্রী নিপা আক্তারের পাসপোর্টে করতে বুধবার তাঁকে এই কার্যালয়ে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ফাইলও জমা দিতে পারেননি, ছবিও তুলতে পারেননি। পরদিন মুঠোফোনে কথা হয় রিয়াদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বুধবার সকালে গিয়ে বেলা দেড়টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ফাইল জমা দিতে পারিনি, তাই চলে গিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবার সকালে এসে দুই ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করে কাজ শেষ করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘একজন এক হাজার টাকা চেয়েছিল দ্রুত কাজ শেষ করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমি টাকা দিইনি। কষ্ট হলেও টাকা ছাড়াই কাজ শেষ করেছি।’

সকাল নয়টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি আঙুলের ছাপ আর ছবি তোলার জন্য। সেই লাইন যেন আর শেষ হয় না। বেলা দেড়টার সময় কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছি। আরিফুল ইসলাম, ভুক্তভোগী সেবাগ্রহীতা

সরেজমিনে দেখা যায়, কার্যালয়ের ভেতরে একটি লাইনে লোকজন দাঁড়িয়ে আছেন। সেই লাইন থেকে একজন আনসার সদস্য সিরিয়াল দিয়ে ভেতরে পাঠাচ্ছেন। সেখানে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর কাগজপত্র যাচাই–বাছাই করে পাঠানো হচ্ছে আঙুলের ছাপ ও ছবি তোলার জন্য। আঙুলের ছাপ ও ছবি তুলতে সময় লাগছে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। অথচ যাঁরা দালালের মাধ্যমে এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেশি খরচ করছেন তাঁরা ঠিকই সরাসরি আঙুলের ছাপ ও ছবি তোলার কক্ষে চলে যাচ্ছেন।

ওই অফিসের সামনের সড়কের দুই পাশে ছোট ছোট ২৫ থেকে ৩০টি দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকানে কম্পিউটার নিয়ে বসেছেন দালাল ও তাঁদের সহযোগীরা। এসব দোকানে দালালদের মাধ্যমে সেবাপ্রার্থীরা পাসপোর্টের ফরম পূরণ করে নিচ্ছেন। দালালেরাই ব্যাংকের টাকা জমা দেন।

কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকার ফজলে হাসান নামের এক যুবক পাসপোর্ট করতে বয়স বাড়াতে চান। এ জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনসহ কিছু কাজ করতে হবে। এতে কয়েক মাস সময় প্রয়োজন। তবে পাসপোর্ট অফিসের পাশে গড়ে ওঠা কম্পিউটারের দোকান ও দালালদের মাধ্যমে সেটি সাত দিনেও করা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত টাকা। এটি যাচাই করতে পরিচয় লুকিয়ে ওই কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করলেই মেলে সত্যতা। ওই কার্যালয়ের আশপাশে অর্ধশতাধিক কম্পিউটারের দোকান রয়েছে। এসব দোকানের সঙ্গে সখ্য রেখে পাসপোর্ট কার্যালয়ে প্রতিদিন অবস্থান করেন দালালেরা। সেবা নিতে আসা মানুষদের বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নেন অতিরিক্ত অর্থ। সেখানে অবস্থান করতেই মাসুম নামের এক দালালের সঙ্গে দেখা হয়। তাঁকে পাসপোর্টে বয়স বাড়ানোর কথা বলতেই জানিয়ে দিলেন এটা কোনো বিষয় না।

দালালদের দৌরাত্ম্য আগে থাকতে পারে। তবে আমি এখানে আসার পর কোনো অবস্থাতেই দালালদের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না।নাসরিন পারভিন, উপপরিচালক, গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়

দালাল মাসুম বলেন, ‘সামনের বিসমিল্লাহ কম্পিউটারে গিয়ে আমার কথা বলেন, কাজ হয়ে যাবে।’ তাঁর কথার সূত্র ধরে ওই কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে মাসুমের পরিচয় দিতেই চেয়ারে বসতে দিলেন। ওই কম্পিউটারের দোকানে থাকা মো.

জনি বলেন, ‘মাসুম আমাদেরই লোক।’ পরে এক বছর বয়স বাড়ানো যাবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই যাবে। তবে টাকা খরচ করতে হবে। ভোটার আইডি কার্ডের বয়স ও পাসপোর্টে বয়স বাড়িয়ে দিতে ৩২ হাজার টাকা লাগবে। অর্ধেক টাকা অগ্রিম দেবেন, এক মাসের মধ্যে পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন।’ জনি আরও বলেন, ‘আরও ২ হাজার বাড়িয়ে দিলে ১৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পাবেন।’

গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের উপপরিচালক নাসরিন পারভিন প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন ধরে সেবাগ্রহীতাদের চাপ অনেক বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে দুই-তিন ঘণ্টা সময় লাগার কথা নয়। দালালদের দৌরাত্ম্য আগে থাকতে পারে। তবে আমি এখানে আসার পর কোনো অবস্থাতেই দালালদের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক জ শ ষ কর বয়স ব ড় র জন য সময় ল অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর-সংলগ্ন মিরপুর সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

আজ সোমবার বিকেলে সাড়ে তিনটার দিকে এই চিত্র দেখা যায়। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

দুপুরের দিকে দুটি এক্সকাভেটর নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙতে গিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। পরে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এরপর বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে দফায় দফায় ৩২ নম্বর সড়কে যাওয়ার চেষ্টা করে আসছেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে আছেন র‍্যাব ও বিজিবির সদস্যরা। তাঁরা শক্ত অবস্থানে আছেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আজ দুপুরের দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সামনের মিরপুর সড়কে দুটি এক্সকাভেটর দেখা যায়।

পরে বিক্ষোভকারীরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে এক্সকাভেটর ঢোকানোর চেষ্টা করেন। তাঁদের বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিপেটা করে।

কিছুটা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিক্ষোভকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশের অন্তত এক সদস্য আহত হন।

আরও পড়ুনএক্সকাভেটর নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যাওয়া বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ৪ ঘণ্টা আগে

পরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড মেরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে। এ সময় দফায় দফায় সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট শব্দ শোনা যায়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

বেলা পৌনে ২টার দিকে দুই ভাগে ভাগ হয়ে বিক্ষোভকারীরা আবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে তাঁদের আবার ছত্রভঙ্গ করে দেয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ।

বিক্ষোভকারীদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে যাওয়ার জন্য দফায় দফায় চেষ্টা এবং তাঁদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। নিউমার্কেট থেকে মিরপুরমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আরও পড়ুনরায়কে কেন্দ্র করে ঢাকায় নিরাপত্তা জোরদার, ১৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন৫ ঘণ্টা আগে

বিক্ষোভকারীরা পুরোপুরি সরে না যাওয়ায়, বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে দফায় দফায় ৩২ নম্বর সড়কে আসার চেষ্টা করায় এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হয়। এখন এলাকায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবির বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার জিসানুল হক দুপুরে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমরা কোনোমতে কাউকে আইন হাতে তুলে নিতে দেব না।’

গত ফেব্রুয়ারিতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটির অর্ধেকের বেশি অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ৩২ নম্বরের বাড়িটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

আরও পড়ুনআড়াই ঘণ্টা ধরে পড়া হলো রায়, এরপর এল মৃত্যুদণ্ডের আদেশ২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ