গাজীপুর মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ঢাকা-জয়দেবপুর রোডের পাশে অবস্থিত চান্দনা ডাকঘরের জায়গা দখল করে বানানো হয়েছিল স্বেচ্ছাসেবক ও যুবদলের কার্যালয়। সেই জায়গা দখলমুক্ত করেছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন। 

দেশের শীর্ষ স্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডিতে ‘চান্দনা ডাকঘরে এখন স্বেচ্ছাসেবক ও যুবদলের কার্যালয়’ শিরোনামে মঙ্গলবার (১৩ মে) সকালে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি নজরে আসলে বিকেলে স্থানটি দখল মুক্ত করে সিটি করপোরেশন।

আরো পড়ুন: চান্দনা ডাকঘরে এখন স্বেচ্ছাসেবক ও যুবদলের কার্যালয়

আরো পড়ুন:

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো সংস্কার নয়: খসরু

দাকোপ ও চালনা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত

গতকাল সোমবার (১২ মে) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চান্দনা ডাকঘর যেখানে ছিল সেখানে এখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের বাসন থানা কার্যালয়ের নাম লেখা। রয়েছে একাধিক ব্যানার ও পোস্টার। মূল ভবনের বাইরে পাশের একটি ছোট কক্ষ ডাকঘরের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ডানপাশে একটি কক্ষে সাঁটার লাগানো। সেখানে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কার্যালয়। 

স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৪-৫ দিন আগে থেকেই বিএনপির অঙ্গসংগঠনের কার্যালয়ের জন্য ভবনটিতে লেখালেখি ও ফেস্টুন টানানো হয়েছে। কিন্তু এটি সাবেক পৌরসভার ভবন তবে এখন এটির দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। সরকারি সম্পত্তিতে দলীয় কার্যালয় হয় এটি তাদের জানা ছিল না। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের লোকজনও এটি করার সাহস করেনি। 

দখল ও কার্যলয়ের বিষয়ে বাসন থানা যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে, আগে গাজীপুর বাসন থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মুনসুর বলেছিলেন, “ওখানে স্বেচ্ছাসেবক দলের কার্যালয় হয়েছে আমি জানি না। আমি আহ্বায়ক কিন্তু আমারও জানা নেই। কেউ করেছে কিনা সেটিও বলতে পারব না।”

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, “রাতের আধারে কার্যালয়টি দখল করে সাইনবোর্ড দিয়েছে কে বা কারা। আমরা সাইনবোর্ড ও লেখা মুছে ফেলে সব রুমে তালা দিয়েছি। কাল থেকে এখানে একজন নিরাপত্তা কর্মী পাহারায় থাকবেন।” 

ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ য বদল র ক র য ড কঘর

এছাড়াও পড়ুন:

মাধ্যমিক শিক্ষা নিয়ে উদ্বেগ এবং করণীয়

মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কার্যক্রম এখনই গ্রহণ করা প্রয়োজন। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত সরকারের পতনের পাশাপাশি তাদের একমুখী শিক্ষা চালুর পরিকল্পনাও ভেস্তে যায়। অন্তর্বর্তী সরকার ২০১২ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রণীত বইগুলো চালু করে বহুমুখী শিক্ষায় ফিরে যায়। ইতোমধ্যে সরকার ২০২৭ সাল থেকে পুরো শিক্ষাক্রমকে (কারিকুলাম) আরও যুগোপযোগী করে বড় পরিসরে পরিমার্জনের পরিকল্পনা করেছে বলে সংবাদমাধ্যমে এসেছে। আমরা জানি, ২০০৭ সালে বিএনপি সরকারও একটি যুগোপযোগী একমুখী শিক্ষা চালুর প্রচেষ্টা গ্রহণ করে। তাই আমি মনে করি, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সেই একমুখী সিলেবাসে কিছুটা সংযোজন-বিয়োজন করে ২০২৭ সাল থেকে চালুর বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকার বিবেচনা করতে পারে। সারা বিশ্বই যখন এ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থায় এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আমরা পিছিয়ে থাকব কেন? বর্তমানে বহুমুখী শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্রছাত্রীরা বিজ্ঞানবিমুখ হয়ে যাচ্ছে। মফস্বল শহরের ৯-১০টি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের তথ্য খুঁজলেই দেখা যাবে, বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্রছাত্রী কত কম! এসব স্কুলে বিজ্ঞানের যন্ত্রপাতি, এমনকি কম্পিউটারও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বিগত সরকারের আমলে এনসিটিবি বা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী এক ব্যক্তি ও তার অনুসারীদের দাপটে ১০ বছর পরিচালিত হয়েছে; অনিয়মে এ প্রতিষ্ঠান হাবুডুবু খাচ্ছিল। তাই এনসিটিবিতে বিদেশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মেধাবী, দক্ষ, যোগ্য ব্যক্তিকে দেওয়া উচিত। শিক্ষাক্রমকে যথাযথভাবে ঢেলে সাজিয়ে যোগ্য লেখকদের নির্বাচিত করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে মানসম্মত বই চালু করা প্রয়োজন। দুর্নীতিবাজ অধ্যাপকদের সরিয়ে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হোক।

বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল ম্যানেজিং কমিটি গঠনে বিভিন্ন সময়ে বর্তমান সরকার নানা ধরনের সার্কুলার জারি করেছে। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর ডিসি, এডিসি ও ইউএনওকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় ব্যক্তিরাও দায়িত্ব পেলেন। এর পর আরেকটি সার্কুলারের মাধ্যমে স্কুলগুলোতে চার সদস্যবিশিষ্ট অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। এখানেও ডিসি, এডিসি ও ইউএনওরা দায়িত্ব নেন। সদ্য সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের নির্দেশ অনুযায়ী বিভিন্ন জেলায় সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অথবা দলনিরপেক্ষ বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের সভাপতির দায়িত্ব দিতে বলা হয়েছিল, কিন্তু তা হয়নি। একজন ডিসি, এডিসি, এডিএম কীভাবে ৮-১০টি বেসরকারি হাই স্কুলের সভাপতির দায়িত্ব নেন? তিনি সময়ের অভাবে সব স্কুলে যেতেও পারেন না। প্রধান শিক্ষককে ডেকে এনে ফাইলপত্র সই করে দেন। এডিসি সাহেব কখন বিচারকার্য পরিচালনা করবেন; মানুষের সেবা কীভাবে দেবেন?

কথা ছিল, এ কমিটি ছয় মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে বোর্ডে জানাবে। তা না হলে সার্কুলার অনুযায়ী ওই অ্যাডহক কমিটি বাতিল হয়ে যাবে। সম্প্রতি পত্রিকার খবরে জানা গেল, নিয়মিত কমিটি গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়েছে। বহু দিন থেকেই বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বলে আসছিল, ভবিষ্যতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ তাদের মাধ্যমে হবে। খুব ভালো কথা। এতে যেন যোগ্য, মেধাবী, অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমে দ্রুত নিয়োগে  ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কারণ, নিয়মিত কমিটির অভাবে দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষক, অফিস সহকারী ও কর্মচারীদের পদ খালি থাকার পরও নিয়মিত কমিটির অভাবে নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। জরুরি এর অবসান হওয়া উচিত। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একাধিক সমস্যা রয়েছে। সেখানেও অনেক স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদ খালি। ২০-২৫ বছরের চাকরিতে অভিজ্ঞতা নিয়ে যারা স্কুলে প্রধান শিক্ষক হতে আগ্রহী, তাদের যথাযথ পরীক্ষা গ্রহণে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। তা না করে কেন সরকার প্রধান শিক্ষক নিয়োগে জুনিয়র, অভিজ্ঞতাহীন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়? বিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ সিনিয়র শিক্ষকদের এতে আপত্তি দেখা গেছে।

সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ সময়ের এক অস্বাভাবিক ছুটি চালু রয়েছে। সরকারি কর্মচারীরা এ সুযোগ পেলেও তাদের কর্মস্থলে সার্বক্ষণিক থেকেও বছরে ২০ দিন ছুটি পান। অথচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বছরে ৭৬ দিন ছুটি বরাদ্দ। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় তারা দেড় মাস ছুটি কাটান। এ সময়ে ডিউটি না থাকলে শিক্ষকরা ছুটি কাটান। তাই আমরা অভিভাবক মনে করি, আগের মতোই সাপ্তাহিক ছুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একদিন করা হোক। অবিলম্বে রমজান ও পূজায় অন্যান্য ছুটি যথাসম্ভব কমিয়ে স্কুলগুলোতে ক্লাস চালু রাখার ব্যবস্থা করা হোক। সম্প্রতি পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক তাঁর জেলার বিভিন্ন হাই স্কুলের প্রধানের সঙ্গে আলাপ করে এসএসসি পরীক্ষার দিন বাদে অন্যান্য দিন স্কুল খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এটা ভালো উদ্যোগ।

স্কুল-কলেজে বছরে কতদিন ক্লাস হয়? বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত এক তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল– এ চার মাসে মোট ৪৬ দিন ক্লাস খোলা ছিল। জুনের আগে হয়তো আর ১৫ দিন স্কুল খোলা পাবে। এর পর পরীক্ষা শুরু। সরকারি স্কুলে এ সংখ্যা আরও কম। তাই স্বল্প সময়ে বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত সিলেবাস ছাত্রছাত্রীরা কি স্কুলে পড়ার সুযোগ পায়? সে জন্য বাধ্য হয়েই দেশের গরিব অসহায় ব্যক্তিবর্গের সন্তান প্রাইভেট বা কোচিংয়ে ঝুঁকে পড়ে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।
মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হলে স্কুলে পাঠদান সময় ও দিন অবশ্যই বাড়াতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হলে মাধ্যমিক স্কুলেও সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে। ছাত্রছাত্রীরা এ পদ্ধতিতে লেখাপড়ার মধ্যে প্রবেশ করতে পারলে তারা লেখাপড়ায় আরও মনোযোগী হবে। শিক্ষকরা আরও দায়িত্বশীল হবেন।

স্কুল-কলেজে এখন আর আগের মতো কো-কারিকুলাম কার্যক্রম দেখা যায় না। এতে ছাত্রছাত্রীর মনোজগতে ক্রমেই চিন্তার অবনতি ঘটছে। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বাড়ানো প্রয়োজন। নানাবিধ খেলাধুলার বিভিন্ন কার্যক্রম ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অবশ্য থাকা উচিত। তা না হলে ছাত্রছাত্রীকে জোর করে পড়ার টেবিলে নেওয়া সম্ভব নয়।
শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো অবশ্যই থাকতে হবে। অনেক দেশেই তা চালু আছে। সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে তাদের বেতন সাধারণ চাকরিজীবীদের চেয়ে বেশি থাকতে হবে। আমরা তাই এ অবস্থার পরিবর্তন চাই। তা না হলে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য কোনোদিন বাস্তবায়িত হবে না। শিক্ষায় বিনিয়োগই দেশের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হওয়া উচিত। তাই আগামী বাজেটে শিক্ষাক্ষেত্রে অতিরিক্ত বরাদ্দ রেখে শিক্ষক সমাজের সমস্যা কিছুটা হলেও দূর করা যেতে পারে। মানসম্পন্ন বেতন কাঠামো চালু করে ও সামাজিক মর্যাদা দিতে পারলে মেধাবী তরুণরা শিক্ষকতা পেশায় এগিয়ে আসবে।

অধ্যাপক ম. হালিম: সরকারি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ