জব্দ রিকশা দুমড়েমুচড়ে পাঠানো হলো ডাম্পিংয়ে
Published: 14th, May 2025 GMT
রাজধানীর ধানমন্ডি-২৭ নম্বর মোড় থেকে আসাদগেট বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এলাকায় প্রধান সড়কে (মিরপুর রোড) অভিযান চালিয়ে শতাধিক ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা জব্দ করা হয়েছে। পরে এসব রিকশার অধিকাংশই দুমড়েমুচড়ে গাবতলী এলাকায় ঢাকা উত্তর সিটির আমিনবাজার কাঁচাবাজারের জায়গায় ডাম্পিং করা হয়েছে।
প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল নিয়ন্ত্রণে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে যৌথভাবে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
ঢাকা উত্তর সিটির কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অভিযানের শুরুতে শুধু প্রধান সড়কে আসা অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা আটক ও জব্দ করে সেগুলো ডাম্প ট্রাকে তোলা হয়। শুরুতে কোনো রিকশা ভাঙা হয়নি। পরবর্তী সময়ে জব্দ করা বেশ কিছু রিকশা পে-লোডার দিয়ে চাপ দিয়ে দুমড়েমুচড়ে দেওয়া হয়। যা পে-লোডারের সাহায্যেই ডাম্প ট্রাকে তুলে ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়।
অভিযানে রিকশা জব্দ করায় অনেক চালককে রিকশা ছাড়িয়ে নিতে আকুতি জানাতে দেখা গেছে। এক রিকশাচালককে রিকশা ছাড়িয়ে নিতে ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম বদরুদ্দোজাকে নানাভাবে অনুরোধ জানান। জব্দ করার পর ডাম্প ট্রাকে তোলার আগে রিকশা দুমড়েমুচড়ে দেওয়ায় অনেক রিকশা চালককে কাঁদতে দেখা যায়।
জব্দ করা ব্যাটারিচালিত একটি রিকশার চালক বলেন, ‘এটা আমার ভাড়া গাড়ি। নিজের গাড়ি হইলেও কাউরে কৈফিয়ত দিতে হইত না। মনেরে বুজ দিতাম যে লিয়ে গেছে লিয়ে যাকগা।’ রিকশার মালিক তাঁকে ছাড় দেবেন না বলেও জানান তিনি।
সিটি করপোরেশনের কর্মীরা যখন রিকশা আটক করছিলেন, তখন দুই হাত দিয়ে রিকশার হাতল আঁকড়ে ধরে রিকশা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন আরেকজন চালক। কান্না করে ওই চালক বলছিলেন, ‘আমি কী করুম? আমি ভাড়ায় গাড়ি চালাই। আমি মেইন রোডে উডি না। আমারে ভিতরে থেকে ধইরা নিয়ে আসছে।’
অভিযানে আটক করা আরেকটি রিকশার চালককে ‘ও ভাই ছাড়েন ভাই, ও ভাই ছাইড়া দেন ভাই। ছাইড়া দেন। আপনাগো পায়ে পড়ি, ছাইড়া দেন।’ বলে অনুরোধ করতে দেখা যায়।
জব্দ করা রিকশা দুমড়েমুচড়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম বদরুদ্দোজা প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ‘অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বার্তা দিতেই প্রতীকী হিসেবে কিছু রিকশা এভাবে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তবে ওই সব রিকশার চালকদের নাম-ঠিকানা রাখা হয়েছে। তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া ডাম্পিংয়ে পাঠানো রিকশাগুলো শর্ত সাপেক্ষে দুই মাস পরে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।’
গত ২৯ এপ্রিল রাজধানী ঢাকার মূল সড়কে কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে পারবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। তবে এটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছিল না। কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে প্রধান সড়কেও অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা যাত্রী পরিবহন করছিল।
ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ব্যাটারিচালিত রিকশা এখন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলোর কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের ‘ব্রেকিং সিস্টেম’ স্থানীয় মিস্ত্রিদের তৈরি, যা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয় না। চালকদের প্রশিক্ষণ নেই। ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা ব্যাপক।
গতকালের অভিযানে উপস্থিত থেকে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ঢাকার মূল সড়কে কোনো রিকশা চলাচল করতে পারবে না। রিকশা চলবে অলিগলি রাস্তায়। ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। রিকশা যেখানে চার্জ দেওয়া হয় এবং যেখানে রিকশা তৈরি করা হয়, সেসব ওয়ার্কশপগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হবে।
প্রশাসক আরও বলেন, একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে সড়কে ২০ শতাংশ দুর্ঘটনা এই ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শহরের নারী ও শিশুরা। এগুলো কোনো নীতিমালা বা যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়নি। প্রায়ই দেখা যায় রিকশা পথচারীদের ওপর উঠে যাচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত গতির কারণে প্রায়ই এমন দুর্ঘটনা ঘটছে।
প্রশাসক জানান, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ও সড়কে গণপরিবহন চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে বুয়েটের (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) সহায়তায় নিরাপদ ব্যাটারিচালিত রিকশার প্রস্তুত করে কিছু কোম্পানিকে প্রস্তুতের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণরাই কেবল বৈধ লাইসেন্স পাবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিবিসির বিশ্লেষণ: শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় কেন ভারতকে বিব্রত করবে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায় ভারতকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিবিসির গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স রিপোর্টার অ্যানবারাসান ইথিরাজান।
তিনি লিখেছেন, এখন আশা করা হচ্ছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হাসিনাকে ফেরানোর জন্য প্রত্যর্পণের অনুরোধ পাঠাবে। ২০২৪ সালের আগস্টে দেশ ছাড়ার পর থেকে তিনি ভারতে বসবাস করছেন।
আরো পড়ুন:
শেখ হাসিনার রায় নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া
বিচার স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিকমানের, প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই: জামায়াত
ঢাকার আগের দাবিগুলোর জবাব ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়নি। দুই দেশের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তিও রয়েছে।
তবে আইনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি মনে হয় হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা সৎউদ্দেশ্যে করা হয়নি, তাহলে ভারত সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে।
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়ে তিনি ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। ভারতে তাকে ফেরত না পাঠানোর ব্যাপারে দেশটির সর্বদলীয় রাজনৈতিক পর্যায়েও এক ধরনের ঐকমত্য রয়েছে।
দিল্লির কাছে বাংলাদেশ শুধু প্রতিবেশী নয়, এটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য।
অ্যানবারাসান ইথিরাজান লিখেছেন, ভারত যেন টানটান করে বাঁধা দড়ির ওপর হাঁটছে; কারণ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে অস্বীকার করলে তা কূটনৈতিক অবজ্ঞা হিসেবে দেখা যেতে পারে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরো খারাপ করতে পারে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে মামলায় সোমবার (১৭ নভেম্বর) ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এর আগে গত ১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণার জন্য আজকের তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত।
ঢাকা/রাসেল