রাজধানীতে ২৩ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি, স্বস্তি
Published: 14th, May 2025 GMT
রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে কর্মস্থল কারওয়ান বাজারে আসতে লিপি সরকার বের হয়েছিলেন বেলা তিনটার একটু আগেই। তিনি কারওয়ান বাজারে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তাঁর কাজ বিকেলের শিফটে। বাসা থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আকাশ কালো করে মেঘ আসে। শুরু হয় মেঘের গর্জন। সঙ্গে বৃষ্টি আসে ঝমঝমিয়ে। লিপি দ্রুত একটি দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেন। প্রায় ২০ মিনিট পর বৃষ্টি একটু কমলে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে গন্তব্যের দিকে রওনা দেন তিনি। মাঝের বিরতিতে যা হলো, অফিসে নির্ধারিত সময়ে আসতে পারলেন না। তাতে তাঁর আক্ষেপ থাকলেও স্বস্তি ছিল।
লিপি বলছিলেন, ‘অফিসে দেরি হয়েছে বৃষ্টির জন্য। কিন্তু কিছুটা স্বস্তি তো মিলল। তাতেই খুশি আমি।’
রাজধানীবাসী অনেকে হয়তো এমন স্বস্তি পেয়েছেন আজ। কারণ, দুই দিন হলো তীব্র তাপে নাকাল নগরবাসী। গতকাল মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে আর্দ্রতা ছিল প্রচুর। তাতে অসহনীয় হয়ে উঠেছিল অবস্থা। এরই মধ্যে বৃষ্টির সুবাতাস। এতে রাজধানীর তাপ কমেছে অনেকটাই।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, আজ রাজধানীতে ২৩ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পরিমাণ নেহাত কম নয়। এই বৃষ্টিতে তাপমাত্রা অনেকটাই কমেছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির। তিনি প্রথম আলোকে বলছিলেন, ‘আজ দুপুর পর্যন্ত যথেষ্ট গরম ছিল। বৃষ্টির পর তা কমে গেছে অনেকটাই। আগামীকালও নগরীর তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকতে পারে।’
গতকাল রাজধানীর তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ তাপমাত্রা ৩৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বৃষ্টির পর তা আরও কমেছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের পোস্টের পর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো গৃহহীনদের তাঁবু
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে গৃহহীনদের একটি বড় তাঁবু উচ্ছেদ করেছে শহর কর্তৃপক্ষ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত রোববার তাঁর গলফ ক্লাবে যাওয়ার সময় গৃহহীনদের ওই শিবিরের ছবি তুলে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করে লেখেন, ‘এই গৃহহীনদের অবিলম্বে এখান থেকে সরে যেতে হবে।’
ট্রাম্পের এ পোস্টের চার দিন পরই বুলডোজার দিয়ে গৃহহীনদের ওই তাঁবু উচ্ছেদ করেছে শহর কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় এক দিনেই অন্তত ১১ জন গৃহহীন তাঁদের আশ্রয় হারিয়েছেন।
ট্রাম্পের পোস্ট করা একটি ছবিতে দেখা গেছে, এক ব্যক্তি নিজের তাঁবুর পাশে একটি ভাঁজ করা চেয়ারে বসে আছেন। পরে জানা যায়, তাঁর নাম বিল থিওডি। থিওডির তাঁবুও উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখন তিনি আশ্রয়হীন।
নিজের ছবি দেখে বিল থিওডি বলেন, ‘ওটা আমি। তিনি (ট্রাম্প) গাড়ির জানালা দিয়ে আমার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করেছেন। এটিকে তাঁর রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। এটা তাঁর কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ।’
হোয়াইট হাউসের প্রেস কনফারেন্স কক্ষে গত সোমবার ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন সব পার্ক থেকে গৃহহীনদের শিবিরগুলো সরিয়ে ফেলবে।
এ ঘোষণার পর বিবিসি ভেরিফাই ট্রাম্পের পোস্ট করা ছবিগুলো যাচাই করে। তাঁবুগুলোর ছবিতে দৃশ্যমান সূত্র, যেমন বাঁকানো রাস্তার ধারে ঘাসের জায়গা ব্যবহার করে বিবিসি গুগল স্ট্রিটভিউতে একটি স্থানের সঙ্গে মিলিয়েছে।
গৃহহীনদের শিবিরটি হোয়াইট হাউস থেকে গাড়িতে প্রায় ১০ মিনিটের দূরত্বে আর বিবিসি কার্যালয় থেকেও খুব কাছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, স্থানীয় কর্মকর্তারা গৃহহীনদের সতর্ক করছেন যে তাঁদের শিগগির সরে যেতে হতে পারে।
মিজৌরি অঙ্গরাজ্য থেকে আসা ৬৬ বছর বয়সী বিল থিওডি এখানে অনেক বছর ধরে থাকেন। নির্মাণশিল্পে কাজ করতেন। ২০১৮ সাল থেকে তাঁর স্থায়ী কোনো চাকরি নেই। বর্তমানে মাসে কিছুদিনের কাজ জোটে। গত বৃহস্পতিবার থিওডিসহ অন্য বাসিন্দাদের জানানো হয় অবিলম্বে তাঁবু গুঁটিয়ে চলে যেতে হবে।
বিল থিওডি বলেন, ‘আমি বুঝি, উনি (ট্রাম্প) এলোমেলো কিছু দেখতে চান না। তাই আমরা জায়গাটা যতটা সম্ভব পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করি। আমরা প্রেসিডেন্ট বা অন্য কাউকে অসম্মান করতে চাই না।’
ওয়াশিংটন ডিসির স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগের ডেপুটি মেয়র ওয়েন টারনেজ বলেন, শহর কর্তৃপক্ষ আগেও এভাবে গৃহহীনদের শিবির উচ্ছেদ করেছে। সাধারণত অন্তত এক সপ্তাহ আগে নোটিশ দেওয়া হয়, তবে ট্রাম্পের ঘোষণার পর এবার প্রক্রিয়াটি দ্রুত করা হয়েছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হিসাবে, ওয়াশিংটন ডিসি থেকে বের হওয়ার প্রধান একটি সড়কের পাশে উচ্ছেদ করা শিবিরটি শহরের সবচেয়ে বড় গৃহহীন শিবির ছিল। সেখানে ১১ জন থাকতেন।
তথ্য বলছে, চলতি বছরের শুরুতে রাজধানীর গৃহহীন শিবিরে ৯৭ জন ছিলেন। ২০২৩ সালে এখানে ২৯৪ জন ছিলেন।
শহরের বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছর বাস্তুচ্যুতির শিকার মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার ১৩৮। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৬১৩। এর মধ্যে প্রায় ৮০০ জন সম্পূর্ণ খোলা আকাশের নিচে আর বাকি ৪ হাজার ৩০০ জন কোনো না কোনো অস্থায়ী আশ্রয়ে আছেন।
বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে গৃহহীনদের তাঁবু