পুকুর ইজারাকে কেন্দ্র করে পুঠিয়ায় বিএনপির কার্যালয়ে আগুন, থমথমে এলাকা
Published: 15th, May 2025 GMT
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় ছয়টি খাসপুকুর ইজারাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। গতকাল বুধবার রাতে দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করে সামনে রাখা দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সারা দিন পোড়ানো মোটরসাইকেল দুটি কার্যালয়ের সামনে ওভাবেই পড়ে রয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করায় দুই দিন ধরে উপজেলা সদরে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মন্ডল এবং সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল মামুন খানের সমর্থকদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন ধরে অস্থিরতা চলছে। এর আগেও তাঁদের মধ্যে একাধিক বিবাদের ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার পুঠিয়া মডেল স্কুলের ছয়টি পুকুরের খোলা ডাক ছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সম্মেলনকক্ষে এই আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে আল মামুন খান ও নজরুল ইসলাম মন্ডলের অনুসারীরা ডাকে অংশ নেন। যাঁরা পুকুরের উন্মুক্ত ডাকে অংশ নিয়েছিলেন নজরুল ইসলাম মন্ডলের অনুসারী ও রাজশাহী জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক রায়হান তাঁদের নিয়ে একটা সমঝোতা করার চেষ্টা করেন। আল মামুনের অনুসারীরা একমত না হওয়ার কারণে সমঝোতা হয়নি।
ফারুক রায়হান দাবি করেন, মাত্র ৬৫ হাজার টাকার একটি পুকুরে জেদের কারণে তাঁদের পক্ষের একজন ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত ডাক দেন। আল মামুনের চাচাতো ভাই ১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ডাক দেন। এখন পুকুরটা তাঁর নামেই বিট হওয়ার কথা। কিন্তু জেদের বশে ডাক দেওয়ার পর তাঁরা নিজেদের লোকজন নিয়ে নিচে নেমে যান। তাঁরা দেশি অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে বাইরে অপেক্ষা করতে থাকেন। তিনি বলেন, নিচে নামার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা হামলা করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে মহড়া দিতে থাকেন। একপর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেনাবাহিনীকে ফোন করেন। সেনাবাহিনী এসে লাঠিপেটা করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ফারুক রায়হান বলেন, সন্ধ্যার পরে মামুনের অনুসারীরা রাজবাড়ি বাজারে অবস্থিত পুঠিয়া পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি ও ছাত্রদলের কার্যালয় ভাঙচুর করেন। কার্যালয়ের সামনে রাখা দুটি মোটরসাইকেলে আগুন লাগিয়ে দেন। তাঁরা কার্যালয়ে রাখা শহীদ জিয়া, বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি, ব্যানার ও চেয়ার–টেবিল ভাঙচুর করেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পোড়া মোটরসাইকেল দুটি কার্যালয়ের সামনেই পড়ে রয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। রাজবাড়ি সড়কের মাথায় সাদা গাড়ি নিয়ে পুলিশ পাহারায় রয়েছে।
এ বিষয়ে মামুন খান বলেন, পুকুর ইজারা দেওয়া নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়েছে। এক পক্ষকে সেনাবাহিনী এসে পিটিয়েছে। তিনি দাবি করেন, ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। একটি পক্ষ তাঁর নামে বদনাম ছড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে।’
আল মামুন বলেন, ‘তাঁরা ৫ আগস্টের আগে কোথায় ছিলেন? কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হলো অথচ তারেক রহমানের ছবি পুড়ল না, কেমন সাজানো নাটক এটা বুঝতে হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম নূর হোসেন বলেন, উন্মুক্ত ডাক ছিল। দুই পক্ষই মরিয়া ছিল তারা পুকুর নেবেই। এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর দিয়ে ডেকেই যাচ্ছিল। পরে ক্ষোভে এক পক্ষ নিচে গিয়ে অবস্থান নেয় যেন অন্য পক্ষ ওপর থেকে নামলেই তাদের ওপরে হামলা করবে। পরে সেনাবাহিনীকে খবর দিয়ে ওপরে যারা ছিল তাদের নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। নিচে যারা উপজেলা পরিষদের গেটের বাইরে অপেক্ষা করছিল তাদের সরাতে গিয়ে হয়তো কয়েকজন লাঠিপেটার শিকার হতে পারে। আর রাজবাড়ি বাজারের ঘটনা পরে রাতে ঘটেছে।
পুঠিয়া থানার ওসি কবীর হোসেন বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। তবু পুলিশ টহল রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। পোড়া মোটরসাইকেল তাঁদের কার্যালয়ের সামনেই পড়ে রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ম ম ন র অন স র ন বল ন অবস থ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ভাঙ্গায় অবরোধের তৃতীয় দিনেও থমথমে পরিস্থিতি, সতর্ক প্রশাসন
ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা এলাকায় পূর্বঘোষিত অবরোধ কর্মসূচির তৃতীয় দিনেও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গতকাল সোমবার দিনভর ব্যাপক সহিংস ঘটনার পর মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
এদিকে, যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
আরো পড়ুন:
ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ ও থানায় হামলা, ভাঙচুর-আগুন
ফরিদপুরে সড়ক অবরোধ করলেন আন্দোলনকারীরা
আজ সকালে ভাঙ্গা ইন্টারসেকশন এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, অবরোধের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে। আজ পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত থাকায় মানুষজন ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন এবং জরুরি কাজ সারছেন।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান মোল্লা সাংবাদিকদের জানান, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “পরিস্থিতি এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। আমরা আশা করছি, আজকের দিনের শেষে পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।”
জাতীয় সংসদের আসন পুনর্বিন্যাসের গেজেটে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে ভাঙ্গার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত পাঁচদিন ধরে স্থানীয়রা মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে আন্দোলন করছিলেন। গতকাল সোমবার দুপুরে ভাঙ্গায় উপজেলা পরিষদ ও থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা।
বিক্ষোভকারীরা উপজেলা পরিষদের ভেতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন সরকারি অফিস ভাঙচুর করতে শুরু করেন এবং আগুন ধরিয়ে দেন সেখানে। আন্দোলনকারীরা পরে থানায় হামলা চালিয়ে পুলিশের অন্তত তিনটি গাড়ি এবং কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। পরে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঢাকা/তামিম/মাসুদ