ঢাকায় ফিরেই চমকপ্রদ সংবর্ধনা পেলো ইতিহাসগড়া নারী ফুটবল দল
Published: 7th, July 2025 GMT
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়ার পর দেশে ফিরতেই লাল-সবুজের সাহসিনী কন্যাদের জন্য অপেক্ষা করছিল এক অভিনব সম্মাননা। মধ্যরাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই রাজধানীর হৃদয়স্থল হাতিরঝিলে আয়োজন করা হয় এই ব্যতিক্রমী সংবর্ধনার।
শনিবার দিবাগত রাত প্রায় সোয়া ৩টার সময়, ঘুম ভেঙে যাওয়া শহরের নিস্তব্ধতা ভেঙে চিৎকারে মুখর হয়ে ওঠে হাতিরঝিল। সেখানে হাজির ছিলেন ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তারা, কোচিং স্টাফ, ক্রীড়া সাংবাদিক এবং স্বতঃস্ফূর্ত কিছু সমর্থক। মঞ্চে একে একে উঠলেন ঋতুপর্ণা, আফিদা, মনিকারা। হাতে ছিল দেশের পতাকা, চোখেমুখে ছিল বিজয়ের গর্ব।
তাড়াহুড়ার এই আয়োজন নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুললেও এর পেছনে ছিল যুক্তিসঙ্গত কারণ। দলের তারকা খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমা ও মনিকা চাকমা পরদিনই ভুটানে লিগ খেলতে রওনা দেবেন। কয়েকদিনের মধ্যে রুপনা চাকমা, মারিয়া মান্দা ও শামসুন্নাহার সিনিয়রও যোগ দেবেন বিদেশি লিগে। তাই দলের সবাইকে একসঙ্গে সম্মান জানানোর এই ক্ষণিক সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি বাফুফে।
আরো পড়ুন:
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের নতুন চমকে সাজানো দল ঘোষণা
কোচ কাবরেরার পদত্যাগ দাবি, অনিশ্চয়তায় ভবিষ্যৎ
এর ঠিক দু’ঘণ্টা আগে, রাত দেড়টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে মেয়েরা। সেখানে ছিল ফুলেল শুভেচ্ছা আর অভ্যর্থনার উষ্ণতা। তবে প্রকৃত উদযাপন শুরু হয় হাতিরঝিলে।
এই সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে বাছাইপর্বে মাঠে উপহার দেওয়া নজরকাড়া পারফরম্যান্স। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১২৮ নম্বরে থাকা বাংলাদেশ পড়েছিল কঠিন ‘সি’ গ্রুপে, যেখানে প্রতিপক্ষ ছিল বাহরাইন (র্যাঙ্কিং ৯২), তুর্কমেনিস্তান এবং স্বাগতিক মিয়ানমার (র্যাঙ্কিং ৫৫)। র্যাঙ্কিংয়ের বিচারে পিছিয়ে থাকলেও মাঠে তারা ছিল দুর্বার।
প্রথম ম্যাচেই বাহরাইনকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে ঋতুপর্ণার জোড়া গোলের নৈপুণ্যে ২-১ ব্যবধানে হারায় মিয়ানমারকে। শেষ ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানকেও ছাড়েনি মেয়েরা। আরও একবার ৭-০ গোলের দাপুটে জয় তুলে নেয় তারা।
এই জয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথমবারের মতো এএফসি নারী এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ।
আগামী বছর মার্চে বসবে টুর্নামেন্টের ২১তম আসর, যেখানে খেলবে ১২টি দেশ। ইতোমধ্যে নিশ্চিত হয়েছে ১১টি দলের অংশগ্রহণ— অস্ট্রেলিয়া (স্বাগতিক), চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, বাংলাদেশ, ফিলিপাইনস, ভিয়েতনাম, চাইনিজ তাইপে, উত্তর কোরিয়া ও উজবেকিস্তান। এখন কেবল বাকি ‘এ’ গ্রুপের একটি দল।
এই অর্জন শুধু ক্রীড়াঙ্গনের নয়, এটা জাতির জন্যও এক গৌরবময় মুহূর্ত। মধ্যরাতের ওই সংবর্ধনায় বাজছিল ঢোল, উড়ছিল পতাকা, আর মেয়েদের চোখে ছিল আত্মবিশ্বাসের আলো, যা আগামী দিনের নারী ফুটবলের অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে থাকবে।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
শতকোটি বছর আগের ছত্রাক কেমন ছিল
জাপানের ওকিনাওয়া ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা উন্নত জেনেটিক কৌশল ব্যবহার করে ছত্রাকের বিবর্তনের নতুন তথ্য জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, প্রাচীন ছত্রাক কেবল নিষ্ক্রিয় জীব ছিল না, বরং তারা সক্রিয়ভাবে প্রাচীনতম স্থলজ বাস্তুতন্ত্রের গঠনে প্রভাব ফেলেছিল। উদ্ভিদ নয়, ছত্রাকই ছিল পৃথিবীর প্রথম স্থল উপনিবেশ স্থাপনকারী।
অনেক বছর ধরেই উদ্ভিদকে পৃথিবীর স্থলভাগের প্রথম উপনিবেশ স্থাপনকারী হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তবে নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, ভূপৃষ্ঠে উদ্ভিদের শিকড় হওয়ার বহু আগে থেকেই ছত্রাক স্থলজ বাস্তুতন্ত্র শাসন করত। এর ফলে ছত্রাক প্রাথমিক পরিবেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। প্রাচীন পৃথিবীর মূল বাস্তুতন্ত্রের প্রাকৃতিক প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে ছত্রাক প্রাণ বিকাশের ভিত্তি তৈরি করেছিল।
গবেষণার তথ্যমতে, বন ও স্থলজ উদ্ভিদের উত্থান কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না। ছত্রাক যুগ যুগ ধরে বাস্তুতন্ত্রের বিকাশ ঘটায়। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন উদ্ভিদের বিকাশ ঘটে। বিভিন্ন ছত্রাক জলবায়ু, মাটির উর্বরতা ও অগণিত জীবের বিবর্তনকে এমনভাবে প্রভাবিত করেছিল, যা এত দিন কল্পনাও করা হয়নি। অন্য প্রাণী বা উদ্ভিদের তুলনায় ছত্রাকের আদি তারিখ বা সময় নির্ধারণ করা বেশ কঠিন।
গবেষণার তথ্যমতে, ছত্রাকের পূর্বপুরুষ প্রায় ৯০ লাখ বছর থেকে ১৪০ কোটি বছর আগে বিদ্যমান ছিল। আর প্রথম স্থলজ উদ্ভিদ প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ বছর আগে আবির্ভূত হয়। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে ছত্রাক সম্ভবত জলজ পরিবেশে ও স্যাঁতসেঁতে উপকূলরেখা বরাবর বৈচিত্র্য তৈরি করেছিল। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী লেনার্ড সানথো বলেন, ছত্রাক বাস্তুতন্ত্র চালায়। পুষ্টি পুনর্ব্যবহার করে, মিথজীবী সম্পর্ক তৈরি করে এবং কখনো কখনো রোগ সৃষ্টি করে। ছত্রাক উদ্ভিদ জন্মানোর বহু আগে থেকেই পরিবেশগত ভূমিকা রাখছে। ছত্রাক হলো প্রকৃতির রাসায়নিক জাদুকর। ছত্রাক শিলা ক্ষয় করে, ফসফরাস মুক্ত করে এবং পুষ্টি স্থানান্তর করে। এই প্রক্রিয়া কঠিন স্থলজ পরিবেশকে নরম করেছিল।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
আরও পড়ুনজার্মানির হ্রদে প্লাস্টিকখেকো ছত্রাকের সন্ধান২২ জুলাই ২০২৫