নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় গত জানুয়ারিতে পাশাপাশি দুটি গ্রামের দুটি বাড়িতে চার দিনের ব্যবধানে ডাকাতি হয়। ওই ঘটনায় করা মামলায় ডাকাত দলের প্রধানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল রোববার ভোরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ও র‍্যাবের যৌথ দল।

গ্রেপ্তার তুষার শেখ নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয়ভাবে তিনি ‘গোল্ড তুষার’ নামে পরিচিত। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর গ্রামের বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার উদ্ধার এবং তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া তুষার জানিয়েছেন, তাঁর প্রতিবেশী এক ভাবি ওই দুই বাড়ির তথ্য এনে দিয়েছিলেন। পরে তিনি দলের সদস্যদের নিয়ে সেখানে ডাকাতি করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ জানুয়ারি মধ্যরাতে লোহাগড়া উপজেলার ঘাঘা গ্রামের শেফালি বেগমের বাড়িতে ডাকাতি হয়। ওই বাড়ি থেকে সাড়ে ৪ ভরি স্বর্ণ ও ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায় ডাকাত দল। এর চার দিন পর ডাকাতি হয় পাশের নোয়াগ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আবুল হোসেনের বাড়িতে। ডাকাত দল ওই বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার, মুঠোফোন ও টাকা লুট করে। ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন ডাকাত দলের সদস্যদের চিনে ফেলেন। তাঁরা লোহাগড়া থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন। তবে কোনোভাবেই গ্রেপ্তার হচ্ছিলেন না ডাকাত দলের সদস্যরা; বরং মামলার বাদীদের বিভিন্নভাবে হুমকিধমকি দিতে থাকেন তাঁরা। এর প্রতিবাদে ১৮ মার্চ মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী।

ঢাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল তুষার শেখকে লোহাগড়া থানায় আনা হয়। এ বিষয়ে জানাতে রাত সাড়ে আটটার দিকে থানার হলরুমে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘তুষার আন্তজেলা ডাকাত দলের নেতা। তাঁর বিরুদ্ধে আমাদের থানায় ডাকাতি, চুরি ও ছিনতাইয়ের সাতটি মামলা রয়েছে। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে স্বর্ণালংকারসহ তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীকে গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তুষারের কাছ থেকেও ডাকাতির স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই তা বলা যাচ্ছে না।’

থানা–পুলিশ জানায় ডাকাতি করা সোনা বিক্রি করার জন্য নানা জায়গায় গিয়ে তুষার নিজেকে ‘সোনা ব্যবসায়ী’ হিসেবে পরিচয় দিতেন। এলাকায় তিনি গোল্ড তুষার নামে পরিচিত। কিন্তু বাস্তবে তাঁর সোনার কোনো ব্যবসা নেই।

ওসি শরিফুল ইসলাম আরও বলেন, তাঁর (তুষার শেখ) একটি ডাকাত দল আছে। দলটি নড়াইল, বাগেরহাট, ফরিদপুর, খুলনা, গোপালগঞ্জ ও যশোরে ডাকাতি করে। লোহাগড়া থানায় যে ডাকাতির মামলা হয়েছে, ওই ডাকাতিতে তথ্য এনে দিয়েছিলেন এক নারী। তাঁর তথ্যের ভিত্তিতে ওই দুই বাড়িতে ডাকাতি করা হয়েছিল। ওই নারীকে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এখন তিনি জামিনে আছেন।

তুষারকে গ্রেপ্তারের সংবাদ পেয়ে থানায় এসেছিলেন ভুক্তভোগী ওই দুই পরিবারের সদস্যরা। সেখানে তাঁরা আসামি তুষারকে শনাক্ত করেন। এ সময় তুষারও ওই দুই বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা স্বীকার করে বলেন, তাঁর প্রতিবেশী এক ভাবি ওই দুই বাড়ির তথ্য এনে দিয়েছিলেন। পরে তিনি তাঁর দল নিয়ে ডাকাতি করেছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বর ণ ল ক র গ র প ত র কর ড ক ত দল র ওই দ ই ব ড় ল হ গড় সদস য র সদস

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ