বার্মিংহামের এজবাস্টনে কাল আরেকটি টেস্ট শেষ হলো। আরেকবার মাঠের আম্পায়ার হিসেবে দেখা গেল বাংলাদেশের শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকতকে এবং অনেকটা প্রত্যাশিতভাবেই তিনি আবার আলোচনায়। কারণ, ম্যাচটা যে ছিল ভারতের!

শরফুদ্দৌলা এর আগে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে ভারতের দুটি ম্যাচ (একটিতে টিভি আম্পায়ার) পরিচালনা করে আলোচিত হয়েছিলেন। এবার আম্পায়ারিং করলেন এজবাস্টনে অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফির দ্বিতীয় টেস্টে।

বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে জায়গা করে নেওয়া শরফুদ্দৌলা মূলত তাঁর দৃঢ় মানসিকতা ও সাহসী সিদ্ধান্তের কারণেই বারবার খবরের শিরোনাম হন।

তা এজবাস্টন টেস্টে কেমন আম্পায়ারিং করলেন শরফুদ্দৌলা? হার্শা ভোগলের মতো জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার যখন ‘সার্টিফিকেট’ দেন, তখন সেটিকে ভালো বলতেই হবে।

এজবাস্টনে কাল ইংল্যান্ডকে ৩৩৬ রানে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা ফিরিয়েছে ভারত। শুবমান গিলের দলকে হার্শা যেমন প্রশংসায় ভাসিয়েছেন, তেমনি আম্পায়ার শরফুদ্দৌলারও বন্দনা করেছেন।

এজবাস্টন টেস্টে আম্পায়ারিং নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হার্শা লিখেছেন, ‘এই ম্যাচে অসাধারণ আম্পায়ারিং হয়েছে। ক্রিস গ্যাফানির কাছ থেকে আপনি এই মানের আম্পায়ারিং আশা করতে পারেন। তবে শরফুদ্দৌলা সৈকত সত্যিই দুর্দান্ত ছিলেন।’

পরিসংখ্যান বলছে, ৪৮ বছর বয়সী শরফুদ্দৌলা এজবাস্টন টেস্টে ১০টি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর ৮টিতেই তিনি সঠিক ছিলেন, ২টি সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়েছে। সাফল্যের হার ৮০%। মানে, লেটার মার্কস বা এ‍+।  

শরফুদ্দৌলা এলিট প্যানেলে জায়গা করে নেন গত বছরের মার্চে। এরপর থেকে মাঠের আম্পায়ার হিসেবে সাতটি টেস্ট পরিচালনা করেছেন। শুরুটা হয়েছিল গত বছরের জুলাইয়ে বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে টেস্ট দিয়ে। সেই ম্যাচে ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস) ছিল না।

পরের ছয় টেস্টে তাঁর নেওয়া ৪১ সিদ্ধান্তের মধ্যে মাত্র ১০টিতে ব্যাটসম্যান অথবা ফিল্ডিং করা দল সফল হতে পেরেছে। ৩১টি সিদ্ধান্ত তাঁর পক্ষে গেছে। অর্থাৎ, সাফল্যের হার ৭৫.

৬১%। আম্পায়ার্স কলে মাত্র ৫টি সিদ্ধান্তে আউট অথবা নট আউট হয়েছে।

১০০% সাফল্য পেয়েছেন—এমন রেকর্ডও আছে শরফুদ্দৌলার। তাও আবার একটি নয়; দুটি টেস্টে। গত বছরের অক্টোবরে মুলতানে পাকিস্তান-ইংল্যান্ড টেস্টে তাঁর নেওয়া তিনটি সিদ্ধান্তই ছিল সঠিক। এরপর নভেম্বরে ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা টেস্টে আট সিদ্ধান্তের সবকটি নির্ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

শরফুদ্দৌলা সবচেয়ে কম সাফল্য পেয়েছেন পাকিস্তান-ইংল্যান্ডের আরেক টেস্টে। অক্টোবরে রাওয়ালপিন্ডিতে হওয়া সেই টেস্টে তাঁর সাতটি সিদ্ধান্তের মধ্যে শুধু দুটি সঠিক ছিল (সাফল্যের হার ২৮.৫৭%)। অবশ্য রাওয়ালপিন্ডির পুরোদস্তুর স্পিন সহায়ক সেই উইকেটে আরেক আম্পায়ার ক্রিস গ্যাফানিকেও বড় পরীক্ষা দিতে হয়েছিল।

এলিট আম্পায়ার হওয়ার পর শরফুদ্দৌলা যে সাত টেস্টে মাঠের আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, এর সাতটিই আলাদা ভেন্যুতে। দেশের হিসেবে সংখ্যাটা ছয়।  

ক্রিকেটারদের যেমন ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসে খেলার ও সেখানকার অনার্স বোর্ডে নাম তোলার স্বপ্ন থাকে, আম্পায়ারদেরও নিশ্চয় সেখানে আম্পায়ারিং করার ইচ্ছা থাকে!

শরফুদ্দৌলারও সেই ইচ্ছা পূরণ হবে পরের ম্যাচেই। বৃহস্পতিবার লর্ডসে শুরু ইংল্যান্ড-ভারত তৃতীয় টেস্ট। এই ম্যাচেও মাঠের আম্পায়ার হিসেবে দেখা যাবে ‘বাংলাদেশের গর্ব’ শরফুদ্দৌলাকে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ঠ র আম প য় র হ স ব র শরফ দ দ ল স ফল য

এছাড়াও পড়ুন:

রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন

অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।

এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।

আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।

অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’

ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’

অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’

এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।

আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার 
  • আমার স্বামীর উপরে কু-নজর পড়েছে: অঙ্কিতা
  • সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
  • ‘আমি থানার ওসি, আপনার মোবাইল হ্যাকড হয়েছে’
  • অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
  • কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার 
  • বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
  • রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
  • ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
  • ভাড়া বাসায় একা থাকতেন বৃদ্ধা, তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার