ট্রাম্প–নেতানিয়াহু বৈঠকে কি গাজা যুদ্ধবিরতির অগ্রগতি হতে পারে
Published: 7th, July 2025 GMT
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বৈঠক গাজায় জিম্মি মুক্তি ও যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে তিনি বিশ্বাস করেন। ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর মধ্যে আজ সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছেন, এ সপ্তাহের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হতে পারে।
কাতারের দোহায় গতকাল রোববার শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অংশ নিয়েছেন ইসরায়েলি আলোচকেরা। এরই মধ্যে ইসরায়েল যেসব শর্ত মেনে নিয়েছে, সেগুলোর আলোকে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার বিষয়ে আলোচকদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গতকাল ওয়াশিংটনের উদ্দেশে উড়াল দেওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে নেতানিয়াহু এ কথা জানান।
আরও পড়ুনহামাস গাজার ৮০% নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে: শীর্ষ কর্মকর্তা৬ ঘণ্টা আগেনেতানিয়াহু বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা এসব ফলাফলকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।’ সেই সঙ্গে গাজায় থাকা জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা নিশ্চিত করা এবং ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের পক্ষ থেকে আসা ঝুঁকি মোকাবিলায় তাঁর সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী।
ট্রাম্প গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে আসেন। এর পর থেকে গত প্রায় ছয় মাসের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন নেতানিয়াহু।
ট্রাম্পের প্রত্যাশা, এ সপ্তাহে একটি জিম্মি প্রত্যাবর্তন ও যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই করা সম্ভব হবে। এ চুক্তির আলোকে গাজায় জিম্মি থাকা ‘অল্প কয়েকজনকে’ মুক্ত করে আনা সম্ভব হবে।
নিউ জার্সিতে সপ্তাহান্তে গলফ খেলা শেষে ওয়াশিংটনে ফেরার আগে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার মনে হয়, এ সপ্তাহে হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার ভালো সুযোগ রয়েছে।’
আরও পড়ুন হামাসের শর্তকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছেন নেতানিয়াহু ০৫ জুলাই ২০২৫যদিও গাজায় যুদ্ধের লাগাম টানতে ও একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে নেতানিয়াহুর ওপর শক্ত চাপ রয়েছে। তবে ঠিক উল্টো অবস্থান নিয়েছেন দেশের ডানপন্থী জোটের বেশ কিছু কট্টরপন্থী নেতা। অন্যদিকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সারের মতো কয়েকজন রাজনীতিক যুদ্ধবিরতির পক্ষে মত দিয়েছেন।
হামাসের পক্ষ থেকে গত শুক্রবার বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্ততায় গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির আলোচনায় ‘ইতিবাচক মনোভাব’ দেখিয়েছে সংগঠনটি। এর কয়েক দিন আগে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর করার জন্য ‘প্রয়োজনীয় শর্তাবলি’ মেনে নিতে রাজি আছে ইসরায়েল।
নেতানিয়াহু বারবার বলে এসেছেন, হামাসকে অবশ্যই নিরস্ত্র করা হবে। ইসরায়েলের এ দাবি নিয়ে আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন হামাসের আলোচকেরা।
নেতানিয়াহু আরও আশা প্রকাশ করেছেন, গত মাসে ১২ দিন ধরে চলা ইরানের সঙ্গে আকাশ যুদ্ধের পরিণতি নিয়ে কাজ করবেন তিনি ও ট্রাম্প। সেই সঙ্গে তেহরান যাতে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে না পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবেন তিনি। মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ‘শান্তির বৃত্তকে’ আরও বিস্তৃত করার সুযোগ তৈরি করেছে বলেও মন্তব্য করেন নেতানিয়াহু।
আরও পড়ুনআগামী সপ্তাহেই গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে: ট্রাম্প০৫ জুলাই ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘দিলীপ সাহেব আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দের কারণ ছিলেন’
ভারতীয় সিনেমার বরেণ্য অভিনেতা দিলীপ কুমার। ২০২১ সালের ৭ জুলাই মারা যান তিনি। সোমবার (৭ জুলাই) তার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। বিশেষ এই দিনে স্বামীকে নিয়ে আবেগঘন একটি পোস্ট দিয়েছেন স্ত্রী সায়রা বানু।
সায়রা বানু তার ইনস্টাগ্রামে দিলীপ কুমারে স্থিরচিত্র ও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। আর এতে নিজের অনুভূতির নানা ছায়া বর্ণনা করেছেন। সায়রা বানু বলেন, “দিলীপ সাহেবের অভাব কখনো পূরণ হবে না। আমি তার সঙ্গেই আছি; চিন্তায়, মনে, জীবনে, এক হয়ে। এই জীবনে, পরজন্মেও, আমার আত্মা তার অনুপস্থিতিতেও তার পাশে হাঁটতে শিখেছে।”
ভক্ত-অনুরাগীদের ভালোবাসা স্মরণ করে সায়রা বানু বলেন, “প্রতি বছর এই দিনে আমি তার স্মৃতিগুলো কোমল ফুলের মতো আলিঙ্গন করি। তার ভক্ত, শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধুবান্ধব এবং পরিবার—তারা কখনো ভুলতে পারেন না। তাদের ভালোবাসা ভরা বার্তা, স্মৃতিচিহ্ন প্রার্থনার মতো আসে। আর আমি কৃতজ্ঞতাচিত্তে পাঠ করি।”
আরো পড়ুন:
এয়ারপোর্টে কেন কাঁদছেন নোরা ফাতেহি?
কত কোটি টাকার মালিক রণবীর কাপুর?
দিলীপ কুমারের কর্মের প্রভাব ব্যাখ্যা করে সায়রা বানু বলেন, “দিলীপ সাহেব আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দের কারণ ছিলেন না। তিনি সম্পূর্ণ একটি যুগ ছিলেন। ছয় প্রজন্মের অভিনেতাদের জন্য এক অনুপ্রেরণা এবং আগামী প্রজন্মের দিশারী।”
ভালোবেসে সায়রা বানুর সঙ্গে ঘর বাঁধেন দিলীপ কুমার। তবে এ জুটির ভালোবাসার শুরুটা বলিউড সিনেমার গল্পের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তারা যখন প্রথম প্রেমে পড়েন তখন দিলীপ কুমারের বয়স ৪৪ বছর এবং সায়রা বানুর ছিল ২২ বছর। কিন্তু বয়স তাদের প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
দিলীপ-সায়রা বানুর বিয়ের বিষয়ে সায়রা বানুর মা নাসিম বানু বিশেষ অবদান রেখেছিলেন। মুম্বাইয়ের বান্দ্রার বাংলোতে বিয়ে হয়েছিল তাদের। বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব। ১৯৬৬ সালে দিলীপ কুমারকে বিয়ে করেছিলেন সায়রা বানু। বিয়ের চার বছর পর অর্থাৎ ১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘গোপী’ সিনেমায় প্রথম রিল লাইফে তাদের রোমান্স করতে দেখা যায়। এ জুটি ‘ছোটি বহু’ (১৯৭১), ‘সাগিনা’ (১৯৭৪), ‘বৈরাগ’ (১৯৭৬), ‘দুনিয়া’ (১৯৮৪)-এর মতো সিনেমায় একসঙ্গে অভিনয় করেছেন।
দিলীপ কুমারের আসল নাম ইউসুফ খান। তার বাবার নাম ছিল মোহাম্মদ সারোয়ার খান। তিনি পেশায় ফল ব্যবসায়ী ছিলেন। কৈশোরে মুম্বাই থেকে পুনে গিয়ে ব্রিটিশ সৈন্যদের জন্য পরিচালিত একটি ক্যান্টিনে কাজ নেন ইউসুফ খান। কিছুদিন পর আবারো মুম্বাইয়ে (তৎকালীন বোম্বে) ফিরে বাবার সঙ্গে ব্যবসায় যোগ দেন তিনি। সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় সেই সময়ের প্রখ্যাত সাইকোলজিস্ট ডা. মাসানির। মূলত, তিনি তাকে ‘বোম্বে টকিজ’ এর মালিকের সঙ্গে ইউসুফ খানের পরিচয় করিয়ে দেন।
১৯৪৩ সালে ‘বোম্বে টকিজ’-এ চাকরির জন্য যান ইউসুফ খান। কিন্তু সেখানকার স্বত্বাধিকারী দেবিকা রানী তাকে অভিনেতা হওয়ার প্রস্তাব দেন। নাম বদলে দিলীপ কুমার রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৪৪ সালে মুক্তি পায় দিলীপ কুমারের প্রথম সিনেমা ‘জোয়ার ভাটা’। প্রথম দিকে দিলীপ কুমারের কয়েকটি সিনেমা বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। ১৯৬০ সালে ভারতের ইতিহাসের অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমা ‘মুঘল এ আজম’ দিলীপ কুমারের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
দীর্ঘ ছয় দশকের বলিউড জীবনে ৬৩টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন দিলীপ কুমার। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমা হলো— ‘নয়া দৌড়’, ‘মধুমতি’, ‘গঙ্গা যমুনা’, ‘রাম আউর শ্যাম’, ‘দাগ’, ‘আজাদ’, ‘দেবদাস’, ‘মুঘল-ই-আজম’, ‘কোহিনূর’, ‘পয়গাম’, ‘আদমি’, ‘শক্তি’, ‘লিডার’ প্রভৃতি। ১৯৯৮ সালে ‘কিলা’ সিনেমায় তাকে শেষবার রুপালি পর্দায় দেখা গেছে।
ঢাকা/শান্ত