হজরত বারাআ (রা.)-এর বরাতে বর্ণিত একটি হাদিসে এ ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আতিক (রা.)-কে দলনেতা নিযুক্ত করে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিশনে প্রেরণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে কয়েকজন আনসার সাহাবিকে ইহুদি নেতা আবু রাফির বিরুদ্ধে পাঠানো হয়। আবু রাফি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে কষ্ট দিতেন এবং এ কাজে অন্যদের সহযোগিতা করতেন। তিনি হিজাজ অঞ্চলে (বর্তমান সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনা অঞ্চল) একটি দুর্গে বসবাস করতেন।
মিশনের শুরু
আবদুল্লাহ ইবনে আতিক (রা.
দুর্গের দারোয়ান তাঁকে দেখে বলে, ‘ও আবদুল্লাহ, ভেতরে ঢুকতে চাইলে এখনই ঢুকে পড়, আমি দরজা বন্ধ করতে যাচ্ছি।’ আবদুল্লাহ তখন ভেতরে প্রবেশ করে আত্মগোপন করেন। সবাই ভেতরে ঢোকার পর দারোয়ান দরজা বন্ধ করে চাবি একটি পেরেকে ঝুলিয়ে রাখে।
দুর্গে অনুপ্রবেশ
আবদুল্লাহ ইবনে আতিক (রা.) চাবির দিকে এগিয়ে যান, তা নিয়ে দরজা খুলে ফেলেন। তিনি জানতেন, আবু রাফি রাতে গল্পের আসর বসান এবং তখন তিনি দুর্গের ওপরতলার একটি কক্ষে থাকেন। গল্পের আসর শেষে লোকজন চলে গেলে, আবদুল্লাহ সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠেন। তিনি প্রতিটি দরজা খুলে ভেতর থেকে বন্ধ করে দিতে থাকেন, যাতে কেউ তাঁর কাছে সহজে পৌঁছাতে না পারে।
আরও পড়ুনমদিনার হজ কার্যালয় যেন 'বাংলাদেশ'২২ জুন ২০২৪আবু রাফির সঙ্গে সাক্ষাৎ
অবশেষে তিনি আবু রাফির কক্ষে পৌঁছান। ঘরটি অন্ধকার ছিল, আর আবু রাফি তাঁর পরিবারের সঙ্গে শুয়ে ছিলেন। আবদুল্লাহ ঘরের কোন অংশে তিনি আছেন, তা বুঝতে না পেরে ডাক দেন, ‘আবু রাফি!’ আবু রাফি সাড়া দিলে, তিনি কণ্ঠস্বরের দিকে এগিয়ে গিয়ে তরবারি দিয়ে আঘাত করেন। কিন্তু প্রথম আঘাতে তিনি সফল হননি। আবু রাফি চিৎকার করে উঠলে আবদুল্লাহ কিছুক্ষণের জন্য বাইরে চলে যান।
কিছুক্ষণ পর তিনি কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করে আবু রাফির আপনজনের মতো প্রশ্ন করেন, ‘আবু রাফি, এই আওয়াজ কিসের?’ আবু রাফি বলেন, ‘কেউ আমাকে তরবারি দিয়ে আঘাত করেছে।’ তখন আবদুল্লাহ আবারও তাকে প্রচণ্ড আঘাত করেন, কিন্তু তিনি তখনো বেঁচে ছিলেন। অবশেষে তিনি তরবারির ধারালো অংশ আবু রাফির পেটে চেপে ধরে পিঠ পর্যন্ত বিদ্ধ করেন। এবার তিনি নিশ্চিত হন যে আবু রাফি নিহত হয়েছেন।
পালানো ও আঘাত
আবদুল্লাহ একে একে দরজা খুলে নিচে নামতে থাকেন। পূর্ণিমার রাতে চাঁদের আলোতে তিনি ভুলবশত মনে করেন যে তিনি সিঁড়ির শেষ ধাপে পৌঁছে গেছেন। কিন্তু একটি ধাপ বাকি থাকায় তিনি পড়ে যান এবং পায়ের হাড় ভেঙে যায়। তিনি তৎক্ষণাৎ পাগড়ি খুলে পা বেঁধে নেন এবং দরজার কাছে বসে অপেক্ষা করেন। তিনি ঠিক করেন, আবু রাফির মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি সেখান থেকে যাবেন না।
ভোরে মোরগের ডাকের সঙ্গে একজন ঘোষক দুর্গের প্রাচীরে উঠে আবু রাফির মৃত্যুর ঘোষণা দেয়। তখন আবদুল্লাহ তাঁর সঙ্গীদের কাছে ফিরে বলেন, ‘তাড়াতাড়ি চলো, আবু রাফি আর বেঁচে নেই।’
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ফিরে যাওয়া
আবদুল্লাহ ইবনে আতিক (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ফিরে গিয়ে সমস্ত ঘটনা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বলেন, ‘তোমার পা লম্বা করে দাও।’ তিনি পা লম্বা করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর পায়ে হাত বুলিয়ে দেন। অলৌকিকভাবে তাঁর পা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়, যেন কোনো আঘাতই পাননি।
সূত্র: সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪,০৩৯
আরও পড়ুনসাহাবিরা যেভাবে মহানবী (সা.)-কে মানতেন২৯ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ ল ল হ ইবন
এছাড়াও পড়ুন:
বিমানবন্দরে সাংবাদিক লাঞ্ছনায় সংবাদ সম্মেলন বয়কট, এনসিপির দুঃখ প্রকাশ
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশগ্রহণ শেষে দেশে ফেরা প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীদের সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া গণমাধ্যমকর্মীদের ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি গেটে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সকাল ১০টায় এ ঘটনা ঘটে। এনসিপি নেতাকর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন বয়কট করেছেন উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে এনসিপি।
আরো পড়ুন:
সাংবাদিকদের দেশকে ভালোবাসার অনুরোধ প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যানের
গণমাধ্যমের সঙ্গে ইসির সংলাপ ৬ অক্টোবর
গণমাধ্যমকর্মীরা জানিয়েছেন, বিমানবন্দরের ভিআইপি গেটে বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির প্রেস ব্রিফিং করছিলেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত এনসিপি নেতাকর্মীরা উচ্চস্বরে স্লোগান দিচ্ছিলেন। তখন এক গণমাধ্যমকর্মী তাদের থামতে অনুরোধ করলে এনসিপির নেতাকর্মীরা গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর চড়াও হন এবং তাদের লাঞ্ছিত করেন।
সাংবাদিক লাঞ্ছনার বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (মিডিয়া) মুশফিক উস সালেহীন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, আজ সকালে আমাদের সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারাকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাতে ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আমাদের এক কর্মী খারাপ ব্যবহার করেছেন। আমরা তাকে চিহ্নিত করে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেবো। আমাদের সদস্য সচিব আখতার হোসেন নিজে সাংবাদিকদের ফোন দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
ঢাকা/রায়হান/রফিক