Prothomalo:
2025-11-17@08:46:10 GMT

এক গোয়েন্দা সাহাবির গল্প

Published: 16th, May 2025 GMT

হজরত বারাআ (রা.)-এর বরাতে বর্ণিত একটি হাদিসে এ ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আতিক (রা.)-কে দলনেতা নিযুক্ত করে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিশনে প্রেরণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে কয়েকজন আনসার সাহাবিকে ইহুদি নেতা আবু রাফির বিরুদ্ধে পাঠানো হয়। আবু রাফি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে কষ্ট দিতেন এবং এ কাজে অন্যদের সহযোগিতা করতেন। তিনি হিজাজ অঞ্চলে (বর্তমান সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনা অঞ্চল) একটি দুর্গে বসবাস করতেন।

মিশনের শুরু

আবদুল্লাহ ইবনে আতিক (রা.

) ও তাঁর সঙ্গীরা সূর্যাস্তের সময় আবু রাফির দুর্গের কাছে পৌঁছান। তখন দুর্গের আশপাশের লোকজন তাদের পশুপাল নিয়ে ঘরে ফিরছিল। আবদুল্লাহ ইবনে আতিক (রা.) তাঁর সঙ্গীদের অপেক্ষা করতে বলে একাই দুর্গের প্রবেশদ্বারের দিকে এগিয়ে যান। তিনি কৌশলে নিজেকে এমনভাবে ঢেকে নেন, যেন তিনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিচ্ছেন।

দুর্গের দারোয়ান তাঁকে দেখে বলে, ‘ও আবদুল্লাহ, ভেতরে ঢুকতে চাইলে এখনই ঢুকে পড়, আমি দরজা বন্ধ করতে যাচ্ছি।’ আবদুল্লাহ তখন ভেতরে প্রবেশ করে আত্মগোপন করেন। সবাই ভেতরে ঢোকার পর দারোয়ান দরজা বন্ধ করে চাবি একটি পেরেকে ঝুলিয়ে রাখে।

দুর্গে অনুপ্রবেশ

আবদুল্লাহ ইবনে আতিক (রা.) চাবির দিকে এগিয়ে যান, তা নিয়ে দরজা খুলে ফেলেন। তিনি জানতেন, আবু রাফি রাতে গল্পের আসর বসান এবং তখন তিনি দুর্গের ওপরতলার একটি কক্ষে থাকেন। গল্পের আসর শেষে লোকজন চলে গেলে, আবদুল্লাহ সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠেন। তিনি প্রতিটি দরজা খুলে ভেতর থেকে বন্ধ করে দিতে থাকেন, যাতে কেউ তাঁর কাছে সহজে পৌঁছাতে না পারে।

আরও পড়ুনমদিনার হজ কার্যালয় যেন 'বাংলাদেশ'২২ জুন ২০২৪

আবু রাফির সঙ্গে সাক্ষাৎ

অবশেষে তিনি আবু রাফির কক্ষে পৌঁছান। ঘরটি অন্ধকার ছিল, আর আবু রাফি তাঁর পরিবারের সঙ্গে শুয়ে ছিলেন। আবদুল্লাহ ঘরের কোন অংশে তিনি আছেন, তা বুঝতে না পেরে ডাক দেন, ‘আবু রাফি!’ আবু রাফি সাড়া দিলে, তিনি কণ্ঠস্বরের দিকে এগিয়ে গিয়ে তরবারি দিয়ে আঘাত করেন। কিন্তু প্রথম আঘাতে তিনি সফল হননি। আবু রাফি চিৎকার করে উঠলে আবদুল্লাহ কিছুক্ষণের জন্য বাইরে চলে যান।

কিছুক্ষণ পর তিনি কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করে আবু রাফির আপনজনের মতো প্রশ্ন করেন, ‘আবু রাফি, এই আওয়াজ কিসের?’ আবু রাফি বলেন, ‘কেউ আমাকে তরবারি দিয়ে আঘাত করেছে।’ তখন আবদুল্লাহ আবারও তাকে প্রচণ্ড আঘাত করেন, কিন্তু তিনি তখনো বেঁচে ছিলেন। অবশেষে তিনি তরবারির ধারালো অংশ আবু রাফির পেটে চেপে ধরে পিঠ পর্যন্ত বিদ্ধ করেন। এবার তিনি নিশ্চিত হন যে আবু রাফি নিহত হয়েছেন।

পালানো ও আঘাত

আবদুল্লাহ একে একে দরজা খুলে নিচে নামতে থাকেন। পূর্ণিমার রাতে চাঁদের আলোতে তিনি ভুলবশত মনে করেন যে তিনি সিঁড়ির শেষ ধাপে পৌঁছে গেছেন। কিন্তু একটি ধাপ বাকি থাকায় তিনি পড়ে যান এবং পায়ের হাড় ভেঙে যায়। তিনি তৎক্ষণাৎ পাগড়ি খুলে পা বেঁধে নেন এবং দরজার কাছে বসে অপেক্ষা করেন। তিনি ঠিক করেন, আবু রাফির মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি সেখান থেকে যাবেন না।

ভোরে মোরগের ডাকের সঙ্গে একজন ঘোষক দুর্গের প্রাচীরে উঠে আবু রাফির মৃত্যুর ঘোষণা দেয়। তখন আবদুল্লাহ তাঁর সঙ্গীদের কাছে ফিরে বলেন, ‘তাড়াতাড়ি চলো, আবু রাফি আর বেঁচে নেই।’

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ফিরে যাওয়া

 আবদুল্লাহ ইবনে আতিক (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ফিরে গিয়ে সমস্ত ঘটনা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বলেন, ‘তোমার পা লম্বা করে দাও।’ তিনি পা লম্বা করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর পায়ে হাত বুলিয়ে দেন। অলৌকিকভাবে তাঁর পা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়, যেন কোনো আঘাতই পাননি।

সূত্র: সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪,০৩৯

আরও পড়ুনসাহাবিরা যেভাবে মহানবী (সা.)-কে মানতেন২৯ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল ল হ ইবন

এছাড়াও পড়ুন:

শাহ আরেফিন টিলা থেকে আবার পাথর লুট, ব্যবসায়ীর কারাদণ্ড

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলা থেকে পাথর লুট থামছে না। গতকাল শনিবার রাতে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের অভিযানে কোম্পানীগঞ্জের টুকেরবাজার এলাকা থেকে ট্রাকভর্তি পাথরসহ এক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে।

পরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রবিন মিয়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ওই ব্যবসায়ীকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন।

পুলিশ জানিয়েছে, দণ্ডপ্রাপ্ত ওই পাথর ব্যবসায়ীর নাম মনির হোসেন (৩৫)। তিনি কোম্পানীগঞ্জের পূর্ব ইসলামপুরের খায়ের গাঁও এলাকার বাসিন্দা। টুকেরবাজার এলাকায় তাঁর স্টোন ক্রাশার মিল (পাথর ভাঙার) আছে। শাহ আরেফিন টিলা থেকে লুট হওয়া পাথর মজুত রাখেন তিনি। পরে পাথরগুলো বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেন। গতকাল রাতে বিক্রির জন্য ট্রাকে থাকা পাথরসহ তাঁকে আটক করা হয়। আজ রোববার দুপুরে তাঁকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সরকারি খাস খতিয়ানে ১৩৭ দশমিক ৫০ একর জায়গায় শাহ আরেফিন টিলার অবস্থান। কথিত আছে, প্রায় ৭০০ বছর আগে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর অন্যতম সফরসঙ্গী হজরত শাহ আরেফিন (রহ.) খাসিয়া পাহাড় এলাকা পরিভ্রমণকালে পাহাড়-টিলার চূড়ায় বিশ্রাম নিতেন। শাহ আরেফিনের একটি ‘আসন’ (বিশ্রামের স্থান) হিসেবে পরিচিতি থেকে ওই টিলার নামকরণ হয় শাহ আরেফিন টিলা।

লালচে, বাদামি ও আঠালো মাটির এ টিলার নিচে আছে বড় বড় পাথর। এসব পাথর উত্তোলন করতেই চলছে ধ্বংসযজ্ঞ। এর মধ্যে টিলার প্রায় ৮৫ শতাংশ পাথর লুট হয়ে গেছে।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রতন শেখ এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাহ আরেফিন টিলা থেকে আবার পাথর লুট, ব্যবসায়ীর কারাদণ্ড
  • আবিসিনিয়ায় নারী সাহাবিদের দ্বিতীয় হিজরত