যুদ্ধবিরতি নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠক যে সম্ভব নয়, তা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে ক্রেমলিন। যুদ্ধবিরতি নিয়ে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠকের পরদিনই রাশিয়ার পক্ষ থেকে এমন কথা জানানো হলো।

আজ শনিবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘আমরা মনে করছি, এটি (পুতিন ও জেলেনস্কির বৈঠক) সম্ভব। তবে তা হবে দুই পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তির মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট কিছু ফলাফল অর্জনের পর। আপাতত গতকাল (শুক্রবার) তুরস্কে দুই দেশের প্রতিনিধিরা যে বিষয়ে একমত হয়েছেন, তা সম্পন্ন করা প্রয়োজন। অর্থাৎ, এক হাজার করে বন্দিবিনিময়।’

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর তিন বছরের মধ্যে গতকাল শুক্রবার তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে প্রথম সরাসরি আলোচনায় বসে মস্কো ও কিয়েভ। ওই আলোচনায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো ঐকমত্য হয়নি। তবে এক হাজার করে বন্দিবিনিময়ে রাজি হয় দুই পক্ষ। বৈঠকের পর ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের প্রধান রুস্তেম উমেরভ বলেন, পরবর্তী ধাপে পুতিন ও জেলেনস্কির বৈঠকের বিষয়ে আশাবাদী তিনি।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে বৈঠকের পর আজ ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বে সুমি অঞ্চলে বেসামরিক একটি বাসে রাশিয়ার ড্রোন হামলায় অন্তত নয়জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও চারজন। বার্তা আদান–প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে ইউক্রেনের ন্যাশনাল পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়, ‘এটি শুধুই আরেকটি গোলাবর্ষণ নয়, এটি একটি ঠান্ডা মাথার যুদ্ধাপরাধ।’

হামলার পর টেলিগ্রামে একটি নীল রঙের যাত্রীবাহী গাড়ির ছবি প্রকাশ করে ন্যাশনাল পুলিশ। দেখা যায়, গাড়িটি প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এর ছাদ উড়ে গেছে এবং জানালাগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাতে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস বলেছে, সুমি অঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সামরিক সরঞ্জাম জড়ো করার একটি স্থানে ড্রোন হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী।

এদিকে শুক্রবারের বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফোন করেন জেলেনস্কিসহ ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ডের নেতারা। এদিন আলবেনিয়ায় ইউরোপীয় নেতাদের এক বৈঠক শেষে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক শেষে আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ফোন করেছি। তাঁর সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে কথা হয়েছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ