চীনের পরই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ভারতের অবস্থান। ২০১১ সালে ভারত প্রদত্ত শূন্য শুল্ক বাজার–সুবিধার সুবাদে দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আবার ভারত থেকে নিত্যপণ্য, কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য ও যন্ত্রপাতি আমদানি হচ্ছে, যেগুলো উৎপাদনমুখী শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গত অর্থবছরে ভারতের বাজারে ১৫৭ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। তার বিপরীতে ভারত থেকে আমদানি হয়েছিল প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বাংলাদেশের ঘাটতি প্রায় ৭৫২ কোটি ডলার, যা আগে আরও বেশি ছিল।

রপ্তানি বাড়িয়ে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য–ঘাটতি হ্রাস করার যখন চেষ্টা হচ্ছে, সে সময় পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের ওপর তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতার ওপর ঋণাত্মক প্রভাব পড়বে। এর আগে কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশকে যে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, তা ভারত বাতিল করেছে। এতে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে রপ্তানিতে যে বিকল্প পথ ছিল, সেটি বন্ধ হয়ে গেছে।

আরও পড়ুনভারতে বাংলাদেশের রপ্তানির সহজ পথ বন্ধ, বাজার হাতছাড়ার শঙ্কা ১ ঘণ্টা আগে

ভারতের সর্বশেষ সিদ্ধান্তের কারণে উত্তর–পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর সম্ভাবনাময় বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হলো। প্রাণ গ্রুপসহ আমাদের কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান এখানে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছিল। এখন সেই সুযোগ তারা হারাবে।

ভারতের শূন্য শুল্কের সুবিধা নিয়ে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক ভারতের বাজারে গত কয়েক বছরে কিছুটা জায়গা করে নিতে শুরু করেছিল। এখন বেশির ভাগ তৈরি পোশাকই স্থলবন্দর দিয়ে যায়। সমুদ্রপথে যদি যেতে হয়, তাহলে পোশাক রপ্তানিতে সময় ও ব্যয় দুই–ই বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে দেশটিতে আমাদের পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট এখনো চালু আছে। নেপাল থেকে ভারতের গ্রিড ব্যবহার করে বাংলাদেশ ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে। ঝাড়খন্ডে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের এক–দশমাংশ বিদ্যুৎ আমদানি হচ্ছে। নির্মাণের অপেক্ষায় থাকা মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরের মতো বাংলাদেশের বড় বিনিয়োগ থেকে প্রয়োজনমাফিক রিটার্ন পাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের উত্তর–পূর্ব অঞ্চলের বাণিজ্য একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। পারস্পরিক পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের কারণে এগুলো যদি ব্যাহত হয়, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশ যেভাবে ভারত থেকে পণ্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল, ভারতও রপ্তানির বড় বাজার হিসেবে বাংলাদেশের ওপর কম নির্ভরশীল নয়। এ জন্য আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ নিষ্পত্তি করে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটি হবে উভয় দেশের জন্যই ইতিবাচক।

মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডি

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আমদ ন র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

একাধিক এনআইডি থাকলে প্রথমটি রেখে বাকিগুলো বাতিল: নির্বাচন কমিশন

যেসব নাগরিকের একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) রয়েছে, তাঁদের প্রথমটি রেখে বাকিগুলো বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ সোমবার নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

এ এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘দুটি এনআইডি থাকার যে বিষয়টি, তা ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। আমরা কমিশনের সিদ্ধান্তক্রমে ও সচিবালয়ের নির্দেশনায় প্রথমটি রেখে দ্বিতীয়টি বাতিল করেছি। এ মুহূর্তে আমাদের জানা মতে, দুটি এনআইডি কারও নেই।’

এখন পর্যন্ত কতজন দ্বৈত ভোটারের পরিচয়পত্র স্থগিত করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে এ এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘৫৮৬ জনকে শনাক্ত করা গিয়েছিল। উনাদের এনআইডি লক ছিল। উনারা কোনোভাবেই নাগরিক সেবা নিতে পারছিলেন না। যেহেতু এখন প্রথমটা রেখে দ্বিতীয়টা বাতিল করা হয়েছে, তাই এখন তাঁদের প্রথম এনআইডি ওপেন হয়ে গেছে। উনারা এখন সেবা পাবেন।’

আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ভোটার রেজিস্ট্রেশনের কাজ চলমান রেখেছে ইসি। এর পাশাপাশি দেশের বাইরের ভোটারদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিও চলমান রাখা হয়েছে, জানান এ এস এম হুমায়ুন কবীর।

ইসির ডেটা সেন্টারের নিরাপত্তা প্রসঙ্গ টেনে এ এস এম হুমায়ুন কবীর আরও বলেন, ‘এটা যেহেতু ২৪ ঘণ্টা চলে, তাই মাঝে মাঝে আমরা কিন্তু একটু বন্ধ করি। আবার চালু করি। গত পরশু দিন আমরা করেছিলাম। আপনারা নিশ্চয়ই খবর পেয়েছেন। তারপরে আমরা চার ঘণ্টা পরে ওটা আবার চালু করতে পেরেছি। রেগুলার (নিয়মিত) মেইনটেন্যান্স (রক্ষণাবেক্ষণ) হিসেবে আমরা কিন্তু কাজটা করি। এর ধারাবাহিকতায় আমাদের ডেটা সেন্টারটা আমাদেরই লোকদের দ্বারা আমরা একটু পরীক্ষা করিয়েছি যে এখানে কোনো সুবিধা-অসুবিধা আছে কি না। এটা আপডেটেড আছে কি না।’

ডেটা সেন্টার এখন পুরোপুরি নিরাপদ বলে জানান এ এস এম হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত বলা যায়, ডেটা সেন্টার পুরোপুরি নিরাপদ এবং এ নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে না। কিন্তু যাতে কোনোভাবেই কোনো ডেটা লিক না হয় বা অন্য কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য দৈনন্দিন যে কার্যক্রম, এটা চলমান রয়েছে এবং থাকবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুনসাড়ে ৮ ঘণ্টা পর সচল হলো এনআইডি কার্যক্রম, সেবা মিলবে বুধবার সকাল থেকে১৩ মে ২০২৫

এর আগে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ব্যাংকিং সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান জটিলতা নিরসনের বিষয়ে ইসির সঙ্গে আলোচনায় বসেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। বৈঠকের বিষয়ে এ এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘তাঁদের কী কী অসুবিধা হতে পারে অথবা আমাদের পক্ষ থেকে তাঁরা কী কী সেবা পেতে পারেন, এটা একটু ক্লিয়ার হতে এসেছিলেন তাঁরা।’

ইসির নতুন সিদ্ধান্তের ফলে গ্রাহকদের টাকা উত্তোলনে কোনো সমস্যা হবে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত হয়নি, হওয়ার কথাও নাই।’

আরও পড়ুনওটিপি না আসায় এনআইডি সেবায় বিঘ্ন১৩ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ