ঈদ উপলক্ষে গ্রাহকদের চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে আমরা যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা বেশ কিছু নতুন ডিজাইন ও মডেলের ফ্রিজ এই সময়ে বাজারে সরবরাহ করছি

সমকাল : আপনাদের ফ্রিজের বৈশিষ্ট্যগুলো জানতে চাই।
নুরুল আফছার : আমরা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড কনকা রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার দেশে উৎপাদন করছি। আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি নিত্যনতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তির সমন্বয়ে দেশীয়ভাবে ফ্রিজ তৈরি করে এ দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করতে। কনকা ফ্রিজ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে করে তুলেছে আরও সহজ এবং স্বাচ্ছন্দ্যময়। আমাদের ফ্রিজে রয়েছে সবচেয়ে ওয়াইড এরিয়া। এর ‘অ্যাকটিভ কার্বন ডিওডোরাইজার’ ব্যাকটেরিয়াকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। ফলে এক খাবারের গন্ধ আরেক খাবারে সংমিশ্রণ হয় না। খাবার থাকে সতেজ এবং স্বাস্থ্যসম্মত। কনকা ফ্রিজে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয়, তা শতভাগ ফুড গ্রেড এবং আমেরিকান এফডিআই সার্টিফায়েড। এ ছাড়া ভিটামিন এবং গার্ডেন ফ্রেশ টেকনোলজির মাধ্যমে ফ্রিজের ভেতরে রাখা সবজি এবং ফলমূল দীর্ঘদিন পর্যন্ত সতেজ থাকে। সূর্যের আলোর মাধ্যমে বাগানে সবজি বা ফলমূল যেমন সতেজ থাকে, আমাদের ফ্রিজে তেমনই পাবেন। ভেজিটেবল বক্সের মধ্যে ‘হিউমিডিটি কন্ট্রোল সিস্টেম’ আছে, যাতে খাবারের মান নিয়ন্ত্রণ করা যায়। দরজা খুলে অনেক সময় মানুষ চলে যায় বা ভুলে যায়। সে জন্য আমাদের ফ্রিজে ৬০ সেকেন্ড পরে অ্যালার্ম বাজবে। বাংলাদেশে আমরাই এ প্রযুক্তি প্রথমে নিয়ে এসেছি।
সমকাল : বর্তমানে আপনাদের কত মডেলের ফ্রিজ বাজারে আছে? কোনগুলোর চাহিদা বেশি?
নুরুল আফছার : আমাদের ৭০টিরও বেশি মডেলের ফ্রিজ রয়েছে। এগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য গ্রাহকদের হাতের নাগালে এবং সাধ্যের মধ্যে। কনকা ও হাইকো ব্র্যান্ডের ফ্রিজের দাম ক্যাপাসিটি, মডেল, ডিজাইন ইত্যাদি ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। সর্বনিম্ন ২৪ হাজার ৯০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দামের ফ্রিজ রয়েছে। সাধারণত গ্রাহকদের কাছে ১৫০ থেকে ২২০ লিটার পর্যন্ত ফ্রিজের চাহিদা খুব বেশি।
সমকাল : ঈদুল আজহা উপলক্ষে কেমন বিক্রি আশা করেন?
নুরুল আফছার :  বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিটি পরিবারে ফ্রিজ একটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। দেশে একক পরিবারের সংখ্যা এবং কর্মব্যস্ত জীবনের পরিসর বেড়ে যাওয়ায় মানুষ অনেক বেশি ব্যস্ত এবং সময় সচেতন হয়ে পড়েছে। এ কারণে অনেকে একসঙ্গে সাপ্তাহিক, পাক্ষিক এবং মাসের বাজার করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া দেশে প্রতিটি অঞ্চলের শতভাগ বিদ্যুতায়নের ফলে ফ্রিজের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। ঈদ উপলক্ষে গ্রাহকদের চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে আমরা যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা বেশ কিছু নতুন ডিজাইন ও মডেলের ফ্রিজ এই সময়ে বাজারে সরবরাহ করছি। গ্রাহদের নিরবচ্ছিন্ন পণ্য পাওয়ার জন্য দেশব্যাপী আমাদের নিজস্ব শোরুম এবং দুই হাজারেরও বেশি পার্টনার ও ডিলার শোরুমে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করছি। এ ছাড়া গ্রাহকরা আমাদের ওয়েব পেজের মাধ্যমে ফ্রিজ পছন্দ করে অর্ডার করতে পারবেন। আমরা একটি অফার চালু করেছি, যার নাম ঘষা দিলেই গোল্ড অফার। এ অফারে একজন কাস্টমার কনকা এবং হাইকো ব্র্যান্ডের ফ্রিজ কিনলেই একটি স্ক্র্যাচ কার্ড পাবেন, যা ঘষে পেতে পারেন বিভিন্ন গোল্ডের জুয়েলারিসহ কনকা এবং হাইকো ব্র্যান্ডের নিশ্চিত উপহার। এ ছাড়া ৩৫টি ব্যাংকের ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডসহ নগদ এবং 

মাসিক তিন থেকে ১৮ মাসের কিস্তিতে আমাদের বিভিন্ন শোরুম, ডিসপ্লে সেন্টার ও ডিলারদের মাধ্যমে পণ্য কেনা যায়। আমাদের নিজেদেরও একটি কিস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের কাছ থেকে নিলে ১২ মাস পর্যন্ত কিস্তি সুবিধা দিয়ে থাকি। আশা করছি, গত বছরের তুলনায় এই ঈদে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বিক্রয় প্রবৃদ্ধি হবে। 
সমকাল : আপনাদের ফ্রিজ কতটুকু বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব?
নুরুল আফছার : কনকা ফ্রিজে রয়েছে ডিজিটাল ডিসপ্লে এবং ইনভার্টার টেকনোলজি, যা বাইরে থেকেও ফ্রিজকে কন্ট্রোল করা যাবে। টেম্পারেচার এবং অন্যান্য ফাংশন বাইরে থেকে হাতের স্পর্শের মাধ্যমে কন্ট্রোল করা সম্ভব। দুই-চার দিন বা এর চেয়ে বেশি সময়ের জন্য ঘরের বাইরে থাকলে কনকা ফ্রিজ ইকোনমি মোডের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। এতে বিদ্যুৎ বিল কম হয় এবং খাবারও সতেজ থাকে। কনকার সব ফ্রিজ বিএসটিআইর ফাইভ স্টার এনার্জি রেটিং সমৃদ্ধ, যা ৭১ শতাংশ বিদ্যুৎ খরচ কমাতে সহায়ক। কনকা ও হাইকো ফ্রিজ তৈরিতে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয়, তা শতভাগ ফুড গ্রেড এবং যুক্তরাষ্ট্রের এফডিআই সার্টিফায়েড। এ ছাড়া পরিবেশবান্ধব গ্যাস  ব্যবহার করা হয়। ফলে কনকা ও হাইকো ফ্রিজ সর্বাধিক পরিবেশবান্ধব।
সমকাল : উদ্ভাবনী ও আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজনে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন?
নুরুল আফছার : দেশের আবহাওয়া এবং গ্রাহকদের কাঙ্ক্ষিত প্রয়োজন বিবেচনায় কনকা ও হাইকো ফ্রিজে সর্বাধুনিক উদ্ভাবনী প্রযুক্তি সংযোজন করা হয়। আমরা কনকা চায়নার সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারে প্রযুক্তি শেয়ার করছি। বিদেশের মতোই আমাদের দেশে উৎপাদিত ফ্রিজগুলো সর্বাধুনিক উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এবং একই রকম যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে। ফ্রিজের জন্য নিত্যনতুন প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত আমরা নিজেদের পণ্যে সম্পৃক্ত করছি।
সমকাল :  বিক্রয়োত্তর সেবার ব্যাপারে আপনারা কতটুকু যত্নশীল?
নুরুল আফছার : আমাদের ব্যবসার প্রথম এবং একমাত্র মূলমন্ত্র হচ্ছে গ্রাহকদের সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করা। এ জন্য বাংলাদেশে আমাদের প্রায় সাড়ে চার হাজার দক্ষ টেকনিশিয়ান কাজ করছে। এ ছাড়া আমাদের প্রতিনিয়ত ভাবনা থাকে কীভাবে সর্বনিম্ন ব্যয়ের মাধ্যমে সর্বোত্তম বিক্রয় পরবর্তী সেবা নিশ্চিত করা যায়। ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে কনকা, হাইকো ও গ্রি ব্র্যান্ডের ফ্রিজে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ বিক্রয়োত্তর সুবিধা, যাতে প্রতিটি ফ্রিজ স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করা যায়। কনকা, হাইকো ও গ্রি ব্র্যান্ড ফ্রিজের কম্প্রেসারের ১০ বছরের রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি রয়েছে, অন্যান্য যন্ত্রাংশের রয়েছে দুই বছরের ওয়ারেন্টি। তা ছাড়া পাঁচ বছরের ফ্রি বিক্রয়োত্তর সেবাও দেওয়া হচ্ছে। ফলে নিয়মিত সার্ভিসিং অনেক সহজ হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে আমাদের রয়েছে হান্টিং নাম্বার ১৬৬৪৯ কল সেন্টার সেবা। যে কোনো সেবার জন্য গ্রাহকরা ওই নম্বরে কল করলে আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।
সমকাল : নতুন বাজেট নিয়ে সরকারের কাছে প্রত্যাশা কী?
নুরুল আফছার : যারা দেশে কারখানা করেছে তাদের জন্য সরকার বছরভিত্তিক কর অব্যাহতি দিয়ে থাকে। এটি এক বছর মেয়াদি। পরবর্তী বছর আবার বাড়ানো হয়। প্রতিবছরই নতুন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। নানা সংযোজন-বিয়োজন থাকে। প্রতিবছর সরকারি নানা শর্ত মানার জন্য আমাদের বাড়তি সময় ও নতুন অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। একই সঙ্গে সেসব শর্তের সঙ্গে মিল রেখে কার্যক্রমেও পরিবর্তন আনতে হয়, যা ব্যবসার ঝুঁকি বাড়ায়; ঝামেলা তৈরি করে। আমরা চাই, প্রতিবছর নীতি পরিবর্তন না করে দীর্ঘ সময়ের জন্য যেন বহাল রাখা হয়। তাহলে আমরাও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে পারি। বিডাও বলেছে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হবে। এখন যদি সরকার জানিয়ে দেয়, আগামী ১০ বছর করহার এই হবে, কাস্টমস এই নীতিতে চলবে, আমদানি-রপ্তানি এই নীতিতে এতটুকু ছাড় দেওয়া হবে, তাহলে আমাদের জন্য খুব সুবিধা হয়। নতুন-পুরোনো সব বিনিয়াগকারীর জন্য সুবিধাজনক হবে। ঝামেলামুক্ত ব্যবসায়ের পরিবেশ তৈরি হবে। আমরাও ১০ বছরের বিনিয়োগ এবং ব্যবসায়ের পরিকল্পনা করতে পারব। বাড়তি অর্থ বিনিয়োগ ও সময় অপচয় হবে না। হয়রানিও থাকবে না, ঝুঁকিও কমবে।

শব্দ: ৯৫০/ সম্পাদনা: জাকির হোসেন 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর গ র হকদ র আম দ র র জন য পর ব শ ব যবস ত বছর বছর র সরক র সমক ল

এছাড়াও পড়ুন:

১৫ হাজার কোটি রুপির সম্পত্তি কি হারাচ্ছেন সাইফ

ভারতের মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালে সাইফ আলী খানের পৈতৃক সম্পত্তি হাতছাড়া হওয়ার মুখে। ভারতে আজকের বাজারদর অনুযায়ী যার মূল্য অন্তত ১৫ হাজার কোটি রুপি। পতৌদি পরিবারের ১৫ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সাইফের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট। খবর ইন্ডিয়া টুডের

সাইফ আলী ও তাঁর পরিবার ভোপালের শেষ নবাব হামিদুল্লাহ খানের বংশধর। হামিদুল্লাহ ১৯২৬ থেকে ১৯৪৯ পর্যন্ত ভোপালের শাসক ছিলেন। ১৯৪৯ সালে চুক্তির মাধ্যমে তিনি ভোপালকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করেন।

সাইফ আলী খান। এএনআই

সম্পর্কিত নিবন্ধ