ইসরায়েল গতকাল সোমবার ঘোষণা দিয়েছে তারা গাজার পুরো নিয়ন্ত্রণ নেবে। গাজাজুড়ে হামলা আরও জোরদার করে এমন ঘোষণা দিয়েছে তারা। এদিকে দুই মাসের বেশি সময় পর অবরোধ কিছুটা শিথিল হওয়ায় গতকাল গাজা উপত্যকায় সীমিত আকারে ত্রাণ ঢুকতে শুরু করেছে।

গত ২ মার্চ থেকে গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছিল ইসরায়েল। এতে উপত্যকার ‘২০ লাখ মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে’ বলে সতর্ক করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

মানবিক সংকট নিয়ে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরায়েল সীমিত পরিসরে গাজায় ত্রাণ ঢুকতে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। গতকাল প্রথম পাঁচটি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করে। এসব ত্রাণের মধ্যে ছিল শিশুদের খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্য।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ৯টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে.

..তবে যে পরিমাণ ত্রাণের প্রয়োজন, সে তুলনায় এটা বিশাল সমুদ্রে এক ফোঁটা পানি ছিটানোর মতো মাত্র।

তবে গাজার ভেতরে ঠিক কতগুলো ট্রাক ঢুকেছে, তা জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক নিশ্চিত করতে পারেননি। তিনি বলেন, নির্ধারিত এলাকায় কোনো ত্রাণসামগ্রীই বিতরণ করা হয়নি। কারণ, তখন রাত হয়ে যাওয়ায় নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে তাঁরা সেই পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারেননি।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘ব্যাপক রকমের অনাহারের ছবিগুলো’ ইসরায়েলের যুদ্ধ তৎপরতার বৈধতা ক্ষুণ্ন করতে পারে।

এদিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে খান ইউনিস শহরের আশপাশে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের নিরাপদে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইসরায়েল ‘নজিরবিহীন হামলা’ শুরু করতে করতে যাচ্ছে জানিয়ে এমন সতর্কতা দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনগাজায় সীমিত পরিমাণে খাদ্য প্রবেশের অনুমতি দেবে ইসরায়েল২২ ঘণ্টা আগে

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার তথ্য অনুসারে, সোমবার গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় ৯১ জন নিহত হয়েছে।

নেতানিয়াহু টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘তীব্র লড়াই চলছে এবং আমাদের অগ্রগতি হচ্ছে।’

নেতানিয়াহু আরও বলেন, ‘আমরা উপত্যকাটির পুরো ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নেব।’

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সোমবার বলেছে, তারা ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ১৬০টি সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।

ইসরায়েলের এসব কর্মকাণ্ডকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং জাতিগত নিধনের সমতুল্য’ বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর (ওএইচসিএইচআর)।

নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘ইসরায়েল হাল ছাড়বে না। কিন্তু সফল হতে হলে আমাদের এমনভাবে কাজ করতে হবে, যা থামানো যাবে না।’

আরও পড়ুনগাজায় হাসপাতালে থাকা রোগীর ওপর ইসরায়েলি হামলা, আইসিইউতে গুলি১৯ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল প রব শ

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ