মেয়াদোত্তীর্ণ আমদানি দায়ের ৮২ শতাংশই ১০ ব্যাংকে
Published: 20th, May 2025 GMT
নিয়ম শিথিলের পরও আমদানি দায় পরিশোধ করতে পারছে না অনেক ব্যাংক। এরই মধ্যে অনেক বিলে জালিয়াতি প্রমাণিত হওয়ায় অপরিশোধিত স্বীকৃত আমদানি বিল আবার বাড়ছে। গত এপ্রিল শেষে মেয়াদোত্তীর্ণ স্বীকৃত বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। আগের মাস মার্চ শেষে যা ১০ কোটি ৫৪ লাখ ডলারে নেমেছিল। এপ্রিলের মেয়াদোত্তীর্ণ স্বীকৃত বিলের ৮২ শতাংশের বেশি রয়েছে ১০ ব্যাংকে। এর মধ্যে শুধু প্রিমিয়ার ব্যাংকের বকেয়া প্রায় ১৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, আমদানি না করেও অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া আমদানি দেখিয়ে বিদেশে অর্থ পাঠানো হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাংকের মালিকানায় যুক্ত প্রভাবশালীরা এই জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত। এখন আর এসব বিল পরিশোধ করতে পারছে না ব্যাংক। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে পণ্য দেশে আসার পরও নানা ত্রুটি দেখিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কোনো ব্যাংক বিল পরিশোধে দেরি করে। অথচ প্রতিটি এলসি হলো দায় পরিশোধের নিশ্চয়তাপত্র। বেশ আগে থেকে অপরিশোধিত বিল থাকলেও গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তা ব্যাপক বেড়ে যায়। বকেয়া বাড়লে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। বিদেশি ব্যাংকে এলসি কনফারমেশন চার্জ বেড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে বিদেশি সরবরাহকারী পণ্য বিক্রি করতে রাজি হয় না। এ রকম অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করে কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়। কারণ ছাড়া বিল বকেয়া থাকলে এডি লাইসেন্স বাতিলের সতর্কতা দেয়। এ ছাড়া গত ২০ এপ্রিল এক নির্দেশনার মাধ্যমে ক্রটিপূর্ণ বিল পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়। প্রকৃত কারণে বিল পরিশোধ করতে না পারলে বিদেশি ব্যাংককে লিখিতভাবে জানানোর নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সমকালকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো অপরিশোধিত বিল দেখতে চায় না। তবে এর অর্থ এই নয়, জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট বিল পরিশোধ করতে হবে। বরং সব বিল নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করার জন্যই বলা হয়েছে।
কোন ব্যাংকে কত বকেয়া
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিল পর্যন্ত আমদানিতে মোট বকেয়ার মধ্যে ১০ কোটি ৯১ লাখ ডলার বা ৮২ দশমিক ৩৯ শতাংশ রয়েছে ১০ ব্যাংকে। এর মধ্যে এককভাবে সবচেয়ে বেশি ২ কোটি ৪৯ লাখ ডলার বকেয়া প্রিমিয়ার ব্যাংকে। মূলত ব্যাংকটির নারায়ণগঞ্জ শাখার জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট বিলে বিপুল অঙ্কের এই বকেয়া তৈরি হয়েছে। ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে রপ্তানির তুলনায় কয়েক গুণ বেশি কাঁচামাল আমদানি দেখিয়ে বিপুল অর্থ পাচার হয়েছে। এর আগে এভাবে সৃষ্ট বিলের বিপরীতে দেশের বাইরে অর্থ পাঠাচ্ছিল ব্যাংক। তবে বিএফআইইউর তদন্তে ভুয়া বিলের বিষয়টি ধরা পড়ার পর তা সমন্বয় করা যাচ্ছে না বলে ব্যাংকটির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, আমদানি দায় বকেয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এক্সিম ব্যাংক। গত এপ্রিল শেষে ব্যাংকটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের বকেয়া ১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের বকেয়া এখন ১ কোটি ১০ লাখ ডলার। এসব বিলের বেশির ভাগ আগের মালিকানায় যুক্তদের ভুয়া এলসি। পঞ্চম অবস্থানে থাকা মার্কেন্টাইল ব্যাংকের বকেয়া রয়েছে ৯৩ লাখ ডলার। এ ছাড়া বকেয়া রয়েছে এনসিসি ব্যাংকের ৮২ লাখ, ন্যাশনাল ব্যাংকে ৫৮ লাখ, রূপালী ব্যাংক ৫৭ লাখ, সাউথইস্ট ব্যাংক ৫৬ লাখ এবং আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ৪০ লাখ ডলার। অনেক ক্ষেত্রে এসব ব্যাংকের অনেক ভুয়া বিল চিহ্নিত হয়েছে, যা পরিশোধ করছে না তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সরকার পতনের পর আতঙ্কের কারণে অনেক ব্যাংক বিল পরিশোধ করছিল না। যে কারণে মেয়াদোত্তীর্ণ বিল বাড়তে বাড়তে গত নভেম্বর শেষে ৪৪ কোটি ৫৩ লাখ ডলারে উঠেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর হুঁশিয়ারির পর তা কমে গত ডিসেম্বর শেষে ২০ কোটি ডলারে নেমেছিল। জানুয়ারিতে আরও কমে ৮ কোটি ৮৯ লাখ ডলারে আসে। এরপর ফেব্রুয়ারিতে সামান্য বেড়ে হয় ১০ কোটি ৫৮ লাখ ডলার এবং মার্চ শেষে ১০ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। এপ্রিল শেষে আরও বেড়েছে। আমদানি বিলের বকেয়া কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত ২০ এপ্রিল এক নির্দেশনার মাধ্যমে ত্রুটিপূর্ণ আমদানি বিলের দায় পরিশোধে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অন ক ক ষ ত র পর শ ধ করত ব ল পর শ ধ র বক য় ১০ ক ট অবস থ আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।