দেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি বদিউর রহমান ও সহসভাপতি মাহমুদ রহমান সেলিমের অব্যাহতির ঘোষণা দিয়েছে একপক্ষ। তবে আরেক পক্ষ বলছে, সম্পাদকমণ্ডলীর নামে সভা ডেকে এ অব্যাহতির ঘোষণা অবৈধ। আগামী ২০ জুন অনুষ্ঠিতব্য ২৩তম অসমাপ্ত জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
গতকাল বুধবার উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর বিবদমান একপক্ষের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপনের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিপক্ষের দুই নেতাকে অব্যাহতির কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, ২৩তম জাতীয় সম্মেলনের পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগঠনের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, অসাংগঠনিক তৎপরতা, গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন, বিভ্রান্তি ও অনৈক্য সৃষ্টির অভিযোগে উদীচীর সভাপতি বদিউর রহমান ও সহসভাপতি মাহমুদ সেলিমকে সংগঠনের সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ২৩তম জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে সংবাদ সম্মেলন করেন অধ্যাপক বদিউর রহমান। তিনি আগামী ২০ জুন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর জাতীয় সম্মেলনের অসমাপ্ত ও অসম্পূর্ণ কাউন্সিল (নির্বাচনী) অধিবেশন আহ্বান করেন। তিনি বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে একপক্ষের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দের নেতৃত্বাধীন অংশের সমর্থন করেন।
অব্যাহতির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বদিউর রহমান ও মাহমুদ সেলিমসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগের তদন্ত চলমান। তদন্ত কমিটির সুপারিশে তদন্ত কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংগঠনের ভেতরে ও বাইরে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী এ প্রধান দুই ব্যক্তিকে সংগঠনের সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠন। এতে বলা হয়, আগামী ২৩ মে উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্তদের বিষয়ে ওই সভায় বিস্তারিত আলোচনা ও তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় কমিটির সভা শেষে বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের বক্তব্য ও অবস্থান জানানো হবে।
বদিউর রহমানের সমর্থক অংশের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে সমকালকে বলেন, কোরামবিহীন সম্পাদকমণ্ডলীর সভা ডেকে এভাবে কাউকে অব্যাহতি দেওয়া যায় না। উদীচীর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় পরিষদের সভায় সবার উপস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। কাজেই এটা সম্পূর্ণ অবৈধ ও অগঠনতান্ত্রিক।
অন্য অংশের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন বলেন, উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের অনুমোদন সাপেক্ষে সম্পাদকমণ্ডলী যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটা গঠনতন্ত্রেই আছে। কাজেই এ ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রের কোনো বরখেলাপ হয়নি। তিনি বলেন, সংবাদ সম্মেলন ডেকে বদিউর রহমান অসমাপ্ত জাতীয় সম্মেলন আয়োজনের যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেটা তার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। তিনি এটা করতে পারেন না। আসলে বদিউর রহমান ও তাঁর সমর্থকরা উদীচী কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও অনৈক্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন। এ কারণেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২৩ মে কেন্দ্রীয় সংসদের সভায় যে সিদ্ধান্ত আসবে, সেটাই কার্যকর হবে।
এর আগে উদীচীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিন গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার শিশু একাডেমি মিলনায়তনে কাউন্সিল অধিবেশনে দু’পক্ষের মধ্যে হৈহট্টগোল ও মারামারি ঘটে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গঠনতন ত র স গঠন র অসম প
এছাড়াও পড়ুন:
চুন্নু বৈধ মহাসচিব, শামীম পাটোয়ারি নিয়োগ গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন
দ্রুত দিন//কাদের, আনিস হাওলাদার চুন্নু ছবি যাবে
বর্তমান মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে দলের বৈধ মহাসচিব দাবি করে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারির মহাসচিব নিয়োগ দলীয় চেয়ারম্যান জিএম কাদের কর্তৃক চরম অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এবং গঠনতন্ত্রের সরাসরি লঙ্ঘন।
সোমবার (৭ জুলাই) বিকেলে চুন্নুকে বাদ দিয়ে পাটোয়ারিকে নতুন মহাসচিব নিয়োগের এক প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এসব কথা বলেন দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।
তারা বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নুই জাতীয় পার্টির বৈধ ও সম্মানিত মহাসচিব। ঘোষিত কাউন্সিলের আগে চেয়ারম্যানের একক সিদ্ধান্তে কোনো নিয়োগ বা বহিষ্কার কার্যকর নয়। জাতীয় পার্টির বর্তমান মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নুকে কোনো কারণ ছাড়াই অব্যাহতি দিয়ে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে একক সিদ্ধান্তে মহাসচিব নিয়োগ চরম অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এবং গঠনতন্ত্রের সরাসরি লঙ্ঘন। এটি একটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বেচ্ছাচারিতার বহিঃপ্রকাশ, যা পার্টির অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
আরো পড়ুন:
জাপার নতুন মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী
পবিত্র আশুরা: জাতীয় পার্টির আলোচনা ও দোয়া
তারা আরো বলেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইতোমধ্যে জাতীয় কাউন্সিল ঘোষিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো প্রকার নিয়োগ, অব্যাহতি বা বহিষ্কার সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধ। এ ধরনের সিদ্ধান্ত দলের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ভেঙে ফেলছে।
বিবৃতিতে এ দুই শীর্ষনেতা বলেন, আমরা বিস্মিত যে, দায়িত্বশীল প্রেসিডিয়াম সদস্যদের নিয়মিত চাঁদা প্রদান সত্ত্বেও মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে যেভাবে অব্যাহতির চিঠি প্রদান করা হয়েছে, তা শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, বরং নীতিহীন ও সম্মানহানিকর আচরণ। আমরা মনে করি, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নুই জাতীয় পার্টির বৈধ ও সম্মানিত মহাসচিব। ঘোষিত কাউন্সিলের আগে চেয়ারম্যানের একক সিদ্ধান্তে কোনো নিয়োগ বা বহিষ্কার কার্যকর নয়। জাতীয় পার্টিকে ব্যক্তি নয়, গঠনতন্ত্র ও আদর্শে পরিচালিত হতে হবে। দলে গণতন্ত্র, শৃঙ্খলা ও সম্মিলিত নেতৃত্ব ফিরিয়ে আনাই এখন সময়ের দাবি।
এ দুই শীর্ষনেতা অন্যায় ও একনায়কতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য জাতীয় পার্টির ত্যাগী, আদর্শবান নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
এর আগে, পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দিয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারিকে জাতীয় পার্টির নতুন মহাসচিব নিযুক্ত করা হয়েছে। সোমবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নিয়োগ দেন বলে দলের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে চেয়ারম্যান পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি প্রদান করেছেন। সেই শুন্য পদে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারিকে মহাসচিব নিয়োগ প্রদান করেছেন। এ আদেশ ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী