আমি শুধু হৃদয়ভাঙা নই, ক্ষুব্ধ, লজ্জিত: বাঁধন
Published: 22nd, May 2025 GMT
লাক্স তারকা থেকে রুপালি পর্দা, তারপর বিশ্ব মঞ্চ ও বলিউডে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। গত বছরের গণঅভ্যত্থানে সক্রিয়া ভূমিকা পালন করেন ‘রেহানা মরিয়ম নূর’খ্যাত এই তারকা। তার স্বপ্ন ছিল— “সুন্দর একটি বাংলাদেশের।”
পরিবর্তন ও সংস্কারের মাধ্যমে সুন্দর দেশের স্বপ্ন ভেঙে গেছে বাঁধনের। একটি গণমাধ্যমকে এই অভিনেত্রী বলেন, “আমরা যখন জুলাই আন্দোলনে অংশ নিই, তখন মনে একটা আশা ছিল, একটা উত্তেজনা ছিল, একটা পরিবর্তনের ইচ্ছা ছিল। এখন সেই আশা চূর্ণবিচূর্ণ। আমি বিশ্বাস করেছিলাম, পরিবর্তন সম্ভব। আমি খুবই ইতিবাচক একজন মানুষ। আমার মনে হয়েছিল পরিবর্তনটা বুঝি শুরু হবে! কিন্তু শুরুটাও হলো না।
আশাহত বাঁধন খানিকটা ব্যাখ্যা করে বলেন, “আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম একটি ভালো দেশের; ন্যায়বিচার, সততা ও আশার ওপর গড়ে ওঠা জাতির। কিন্তু সে স্বপ্ন এখন চূর্ণবিচূর্ণ। একই দুর্নীতিগ্রস্ত, পচে যাওয়া ব্যবস্থা এখনো রয়ে গেছে, যা প্রকৃত পরিবর্তনের সব আশা দমন করে ফেলছে। আমি শুধু হৃদয়ভাঙা নই, আমি ক্ষুব্ধ, লজ্জিত। আমার জন্য এটা খুবই সমস্যার।”
আরো পড়ুন:
ঈদে নিরবের ‘শিরোনাম’
ঢাকার রাস্তাঘাটই এখন আমার র্যাম্প, বললেন ক্ষুব্ধ পিয়া
দেশ নিয়ে স্বপ্ন ভঙ্গের প্রভাব বাঁধনের ব্যক্তিগত জীবনে পড়েছে। তা ব্যাখ্যা করে এই অভিনেত্রী বলেন, “আমার মানসিক অসুস্থতাও আছে। এটা নিয়ে অনেকবার কথা বলেছি। আমার তীব্র বিষণ্নতা আছে। আমি আসলেই বিষণ্ন। শেষ কয়েক মাসে আমার ওজনও বেড়েছে। হতাশা থেকেই এমনটা হয়েছে। আসলে অনেক আশা ছিল। সব আশা চোখের সামনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্বপ্নগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।”
ঈদুল আজহায় মুক্তি পেতে যাচ্ছে আজমেরী হক বাঁধন অভিনীত সিনেমা ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’। এটি নির্মাণ করেছেন সানী সানোয়ার। ২০০৯ সালে ঢাকার আজিমপুরে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা ঘটে। রহস্যে ঘেরা এই বিরল সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’ সিনেমা নির্মিত হয়েছে। সিনেমাটিতে একজন পুলিশের তদন্ত অফিসার চরিত্রে অভিনয় করেছেন আজমেরী হক বাঁধন।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই আন্দোলনকারীদের দেশ ছাড়তে বলা শিক্ষকদের পদোন্নতি, ক্ষুব্ধ শ
জুলাই গণহত্যায় সমর্থনকারী ও আন্দোলনকারীদের রাজাকার আখ্যা দিয়ে দেশ ছাড়া করার হুমকি দেওয়া শিক্ষকদের চলতি জুলাই মাসে পদোন্নতি দিয়েছে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (গোবিপ্রবি) প্রশাসন। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সিলেকশন বোর্ডের সুপারিশে রিজেন্ট বোর্ডের ৪০তম সভায় শিক্ষকদের পদোন্নতি বিষয়টি জানানো হয়। এর মধ্যে দুইজন বিতর্কিত শিক্ষক বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা মুক্তাকে সহযোগী অধ্যাপক ও বিজিই বিভাগের প্রভাষক ইমদাদুল হক সোহাগকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলন চলাকালে সরাসরি বিরোধিতার অভিযোগ রয়েছে। জুলাই মাসে তাদের পদোন্নতি দেওয়ায় জুলাই শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি হিসেবে দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
আশুরা: শোক, শিক্ষা ও আত্মত্যাগের চিরন্তন প্রতীক
সিকৃবির প্রধান ফটকের নাম ‘জুলাই ৩৬’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ কোটাবিরোধী আন্দোলনে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা যখন একীভূত, তখন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে কঠোর দমন-পীড়ন শুরু করে। সেখানে বৈষম্যহীন দেশ গড়ার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের নায্য অধিকারের পক্ষে থাকার কথা থাকলেও কিছু শিক্ষক স্বৈরাচারের দালালিতে ব্যস্ত ছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম ভূমিকা পালন করে বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা মুক্তা, যিনি শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলে দেশ ছাড়ার হুমকিসহ বিভিন্ন ধরনের কটুক্তি করেন।
পদোন্নতি পাওয়া অপরজন বিজিই বিভাগের প্রভাষক ইমদাদুল হক সোহাগের বিরুদ্ধে শেখ রাসেল হলের প্রাধ্যক্ষ থাকা অবস্থায় দাঁড়ি রাখলে হল থেকে বের করে দেওয়া ও সাতক্ষীরা জামায়াতের এলাকা বলে শিক্ষার্থীদের মার্ক শূন্য দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননারও অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়াও ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ সংগঠন) সহ-সভাপতি থাকা অবস্থায় বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ছাত্রীদের ধর্ষণের হুমকি দেওয়ায় সংবাদের শিরোনামও হতে হয়। এমনকি জুলাই গণহত্যা চলার সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নাম, পরিচয়, ঠিকানা দিয়ে সহায়তার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী ওবাইদুল ইসলাম বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সরাসরি বিরোধিতা করার পরেও দুইজন শিক্ষক কীভাবে পদোন্নতি পেতে পারে! এটা আমাদের সঙ্গে তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়। স্বৈরাচারমুক্ত ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও আমরা তাদের ন্যূনতম অনুশোচনার লেশমাত্র দেখতে পাইনি।”
তিনি বলেন, “আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির দুইটি গ্রুপ ছিল। এ দুই গ্রুপই ‘চেতনার বীজ’ বপন করে ফ্যাসিবাদের বৈধতা দিয়ে চলেছে দীর্ঘদিন ধরে। এখনো সেই ধারাবাহিকতা চলমান। যে শিক্ষক সরাসরি ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে, ‘চেতনার ব্যবসা’ করতে পারে, তার পদোন্নতি এই পবিত্র জুলাই আন্দোলনকে অপমান করেছে।”
তিনি আরো বলেন, “ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি থেকে আজ তিনি সহযোগী অধ্যাপক! নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে যার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিসহ একাধিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, সে কখনোই শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করার ন্যূনতম যোগ্যতাও রাখে না। ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে যখন কোটা আন্দোলনে একের পর এক লাশ পড়ছিল, তখন এই শিক্ষকরাই ছাত্রদের কটাক্ষ করে পোস্ট করেছে, হুমকি দিয়েছে।”
এ শিক্ষার্থী আরো বলেন, “আমরা জুলাই আন্দোলনে যারা সরাসরি বিরোধিতা করেছে, তাদের তালিকা কয়েক মাস আগেই জমা দিয়েছি। তারপরও কীভাবে তারা পদোন্নতি পায়? আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই অবিলম্বে এই পদোন্নতি বাতিল করে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে, এই ক্যাম্পাসে আবারো ‘জুলাই’ নেমে আসবে।”
গোবিপ্রবি ছাত্রদলের সভাপতি দুর্জয় শুভ বলেন, “২৪ পরবর্তী সময়ে এমনটা দুঃখজনক। এটা ২৪ এর শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানী ছাড়া আর কিছুই নয়। উনারও হয়তো ভুলে গেছেন, উনারা ২৪ এর রক্তের উপর দাঁড়িয়ে দায়িত্বে এসেছেন।”
জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসান বলেন, “আমার অজান্তেই এটা হয়েছে। কারণ হায়ার বোর্ডে আমাকে রাখা হয়নি। ফলে মৌখিক পরীক্ষার সময় আমি ছিলাম না। আর দুই একজন চালাকি করে তাদের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা হয়েছে আমরা ব্যবস্থা নেব। তবে সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”
তবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, “বাংলা বিভাগের একজন শিক্ষিকাকে নিয়ে অভিযোগ হচ্ছে, তাকে প্রমোশন দেওয়া হয়েছে আরো এক বছর আগে। যেহেতু গত ১ বছর রিজেন্ট বোর্ড হয়নি। তাই বর্তমানের রিজেন্টবোর্ডে আগের রিকমেন্ডেশন কার্যকর করা হয়েছে। আর তার বিরুদ্ধে কোনো বডির মাধ্যমে আমরা লিখিত পাইনি যে, তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। আর তারা এখানে প্রতিদিন আসে, ক্লাস নেয়, ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করছে। সে ক্ষেত্রে তারা তো কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আমরা তো বাধা দিতে পারি না। তাহলে আমাদের নামে কেস হয়ে যাবে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা ঢালাও যে লিখিত অভিযোগ দিছে, তাতে তো আর প্রমাণ হয় না সে অপরাধী। প্রমাণ হবে, তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/রিশাদ/মেহেদী