দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের সময় চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতি এলাকায় একাধিক পাহাড় কেটে পরিবেশের ক্ষতি করায় দুটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে প্রতিষ্ঠান দুটির একটিকে জরিমানা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অন্য প্রতিষ্ঠানটির ক্ষতিপূরণের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করার আদেশ দিয়ে পরবর্তী শুনানিতে বিষয়টি নিষ্পত্তির কথা বলা হয়। তবে বিষয়টি পরে ধামাচাপা দেওয়া হয়।

প্রতিষ্ঠান দুটি হলো তমা কনস্ট্রাকশন ও মেসার্স হাসান ইন্টারন্যাশনাল। তৎকালীন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান দুটিকে ওই ছাড় দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এটা ক্ষমতার ভয়াবহ অপব্যবহার। পরিষ্কারভাবে বোধগম্য যে দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সচিবের যোগসাজশ ও সম্পৃক্ততায় এটি (জরিমানা মওকুফ) হয়েছে।ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি

যদিও পাহাড় কাটা ও খাল ভরাট করার মাধ্যমে অপরাধ সংগঠনের অভিযোগে করা মামলায় মেসার্স হাসান ইন্টারন্যাশনাল চট্টগ্রামের পরিবেশ আদালতের কাছে দায় স্বীকার করেছে। প্রতিষ্ঠানটিকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত। তমা কনস্ট্রাকশনকেও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

অথচ সাবেক সচিব মোস্তফা কামাল জরিমানা মওকুফের কারণ হিসেবে বলেছিলেন, মেসার্স হাসান ইন্টারন্যাশনাল পাহাড় কাটায় জড়িত নয়। আর তমা কনস্ট্রাকশনের আপিল আবেদনের শুনানিতে তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরকে ক্ষতিপূরণের প্রকৃত মূল্যায়ন ও কারিগরি মূল্যায়ন উপস্থাপন করার কথা বলেছিলেন। পরবর্তী শুনানির দিন আপিল নিষ্পত্তি করা হবে বলে আদেশ দেওয়া হয়েছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তমা কনস্ট্রাকশনের পরিবেশের ক্ষতির প্রকৃত মূল্যায়নে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকার মতো আসে। ফলে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়।

তমা কনস্ট্রাকশন ও মেসার্স হাসান ইন্টারন্যাশনালকে ছাড় দেওয়ার ঘটনাটি ২০২২ সালের জুন মাসের। সে সময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আপিল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ছিলেন মোস্তফা কামাল। তিনি প্রতিষ্ঠান দুটিকে ছাড় দেন।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ক্ষতিপূরণসংক্রান্ত বিধি অনুযায়ী, ১ বর্গফুট থেকে ১ একর পর্যন্ত পাহাড় কাটায় প্রতি বর্গফুটের জন্য ১০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা যায়। এক একরের বেশি হলে প্রতি বর্গফুটের জন্য জরিমানার অঙ্ক দাঁড়াবে ১ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। আর কারিগরি মূল্যায়ন (টেকনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট) হলো অনুমোদিত সীমার (অ্যালাইনমেন্ট) বাইরে গিয়ে কতটুকু পাহাড় কাটা হয়েছে, তার বিবরণ। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। ওই ১০১ কিলোমিটারের মধ্যে ১১ দশমিক ৯২ কিলোমিটার এলাকায় পাহাড় কাটার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, সেটিই অ্যালাইনমেন্ট।

তমা কনস্ট্রাকশন ও মেসার্স হাসান ইন্টারন্যাশনালকে ছাড় দেওয়ার ঘটনাটি ২০২২ সালের জুন মাসের। সে সময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আপিল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ছিলেন মোস্তফা কামাল। তিনি প্রতিষ্ঠান দুটিকে ছাড় দেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে তাঁকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। তিনি তখন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের দায়িত্বে ছিলেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তমা কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী আতাউর রহমান ভূঁইয়া দেশ ছেড়ে গেছেন। এ জন্য তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তমা কনস্ট্রাকশনের ওয়েবসাইটে থাকা টেলিফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে ওই নম্বরে কল ঢোকেনি।

পাহাড় কাটা ও খাল ভরাটের ঘটনায় তমা কনস্ট্রাকশন ও মেসার্স হাসান ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের নভেম্বরে মামলা করে চট্টগ্রামের পরিবেশ অধিদপ্তর।যেভাবে জরিমানা মওকুফ

পরিবেশ অধিদপ্তরের নথি বলছে, লোহাগাড়ার চুনতি ইউনিয়নে প্রায় ২০টি পাহাড় কেটে ২ কোটি ২০ লাখ ঘনফুট মাটি সংগ্রহ করে মেসার্স হাসান ইন্টারন্যাশনাল। এ ক্ষেত্রে রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য অনুমোদিত পাহাড় কাটার সীমা লঙ্ঘন করা হয়। এ ছাড়া রাঙ্গাখাল নামের একটি খাল ভরাট করা হয়।

নথি অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য, ছবি এবং প্রতিষ্ঠানের চুক্তি ও অন্যান্য কাগজপত্র পর্যালোচনা করে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতির বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ জন্য বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর ৭ ধারায় মেসার্স হাসান ইন্টারন্যাশনাল ও তমা কনস্ট্রাকশনকে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা করা হলো। জরিমানার টাকা পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

একই বছরের ১৮ জানুয়ারি অধিদপ্তরের ওই রায়ের বিরুদ্ধে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আপিল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালের কাছে আপিল করে মেসার্স হাসান ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ। আপিলে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, তিনি সামান্য ব্যবসায়ী। তমা কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এক লাখ ঘনফুট বালু সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েছেন। আপিলে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকের বিরুদ্ধে তাঁর বক্তব্য না নিয়ে জরিমানা করার অভিযোগও করেন ইলিয়াছ।

২০২২ সালের ১৬ জুন ওই আপিলের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে ইলিয়াছের বক্তব্য এবং পাহাড় কাটায় আরেক অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের দেওয়া সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আপিল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল জরিমানা মওকুফের সিদ্ধান্ত দেন। ওই সিদ্ধান্তে বলা হয়, মেসার্স হাসান ইন্টারন্যাশনাল পাহাড় কাটায় ও খাল ভরাটে জড়িত নয়।

মেসার্স হাসান ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইলিয়াছ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাহাড় কাটার বিষয়টি রেলওয়ে ও তমার বিষয়। আমি কিছুতে ছিলাম না। আপিল করেছি। নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। আমাকে খালাস করে দিয়েছে।’

মামলা দায়েরে দেরি

পাহাড় কাটা ও খাল ভরাটের ঘটনায় তমা কনস্ট্রাকশন ও মেসার্স হাসান ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের নভেম্বরে মামলা করে চট্টগ্রামের পরিবেশ অধিদপ্তর।

পরিবেশের ক্ষতির আর্থিক মূল্য হিসেবে ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি তমা কনস্ট্রাকশন ও মেসার্স হাসান ইন্টারন্যাশনালকে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা করেছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের (চট্টগ্রাম) তৎকালীন পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জম হোসাইন। অথচ মামলা করা হয় এর ৯ মাস পর, নভেম্বরে। এ মামলায় গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন চট্টগ্রামের পরিবেশ আদালত।

বক্তব্য জানতে সাবেক সচিব মোস্তফা কামালের মুঠোফোনে কল দেওয়া হয়। খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠানো হয়। তবে তাৎক্ষণিক সাড়া পাওয়া যায়নি। দুদিন পর ২০ মে খুদে বার্তার জবাব দেন মোস্তফা কামাল। সেখানে তিনি বলেন, বিষয়টি ঠিক মনে করতে পারছেন না। সংশ্লিষ্ট অফিসে এটার ফাইল আছে। সেখানে যোগাযোগ করে তথ্য নিতে পারেন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা ক্ষমতার ভয়াবহ অপব্যবহার। পরিষ্কারভাবে বোধগম্য যে দুটি প্রতিষ্ঠানের (তমা কনস্ট্রাকশন ও মেসার্স হাসান ইন্টারন্যাশনাল) সঙ্গে সচিবের যোগসাজশ ও সম্পৃক্ততায় এটি হয়েছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হিসেবে সচিবকে বিবেচনা করা উচিত।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কনস ট র কশন র ২০২১ স ল র ও খ ল ভর ট ৫০ ক ট ন পর ব র আপ ল মওক ফ র ঘটন ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোম্পানির নিবন্ধন বাতিল

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসইর) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোং লিমিটেডের (ট্রেক নম্বর-১৭১) স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলার নিবন্ধন সনদ বাতিল করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

প্রতিষ্ঠানটির মালিকদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সমন্বিত গ্রাহক হিসাব থেকে বিনিয়োগকারীদের অর্থ লোপাটসহ বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় সার্বিক দিক বিবেচনা করে ব্রোকারেজ হাউজটির স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলার নিবন্ধন সনদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

মিউচুয়াল ফান্ড-পাবলিক ইস্যু রুলসের চূড়ান্ত সুপারিশ জমা

ডিএসইতে সূচকের উত্থান, সিএসইতে পতন

সম্প্রতি ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বিএসইসির মার্কেট অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিজ অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন থেকে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

এছাড়া নিবন্ধন সনদ বাতিলের বিষয়টি শাহ মোহাম্মদ সগিরের অ্যান্ড কোং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও অবহিত করা হয়েছে।

এর আগেও ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর ৭০০তম কমিশন সভায় শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোম্পানির ডিপি সনদ স্থগিত করা হয়। ডিপি সনদ স্থগিত করা হয়। সে সময় প্রতিষ্ঠানটির সমন্বিত গ্রহক হিসাবে ঘাটতি পাওয়া যায়। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় বিএসইসি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুর কালাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “ডিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোং লিমিটেডের স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলার নিবন্ধন সনদ বাতিল করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

অভিযোগ
২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে ডিএসইর সদস্যভুক্ত ১৮৬টি ব্রোকারেজ হাউজের দাখিল করা নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিএসইসি। এতে ১৮টি ব্রোকারেজ হাউজ তাদের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের অর্থ আইন বহির্ভূতভাবে ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এর মধ্যে শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোম্পানির সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ঘাটতি পাওয়া গেছে।

পরবর্তীতে ২০২০ সালের পর থেকে মশিহর সিকিউরিটিজ, তামহা সিকিউরিটিজ, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ, বানকো সিকিউরিটিজ, ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস, সাবভ্যালি সিকিউরিটিজ, ডন সিকিউরিটিজ, ইনডিকেট সিকিউরিটিজ, সাদ সিকিউরিটিজ ও শাহ মোহাম্মদ সগির থেকে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম এবং জালিয়াতি ঘটে।

ওই সময়ই সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে রক্ষিত বিনিয়োগকারীদের প্রায় ১৩ কোটি টাকা ঘাটতির জন্য শাহ মোহাম্মদ সগীরের তৎকালীন পরিচালকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর না করা পর্যন্ত ডিএসইর শেয়ারে তাদের ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অর্জিত ও স্থগিত মুনাফা সংরক্ষণ করে রাখে দেওয়া হয়।

এরপর ২০২২ সালে ২২ মার্চ বিএসইসির জারিকৃত নির্দেশনায়ে ডিএসই ও সিএসই সব ব্রোকারেজ হাউজ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় তদন্ত সাপেক্ষে ১০৮টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে বড় অঙ্কের ঘাটতি পাওয়া যায়। এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৮৫ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।পরবর্তীতে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে দ্রুত ঘাটতি সমন্বয় করতে বলা হয়। এরপর থেকে অধিকাংশ ব্রোকারেজ হাউজ টাকা সমন্বয় করে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের ঘাটতি এখনো সমন্বয় করেনি। এর মধ্যে শাহ মোহাম্মদ সগির অন্যতম।

এর আগে সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি পূরণ, শেয়ার হস্তান্তর বা বিক্রির প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন করা, সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের ওপর প্রচলিত ব্যাংক রেটে চার বছরের সুদ আদায় করে গ্রাহকদের হিসেবে যথাযথভাবে জমাকরণ সাপেক্ষে শাহ মোহাম্মদ সগীরের কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেয় বিএসইসি। আর এ কাজটি তদারকির জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় ডিএসইকে। তখন ডিএসই বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক অর্থিক অবস্থাসহ সমন্বিত গ্রাহকদের হিসাবে আরো সিকিউরিটিজ (শেয়ার) ঘাটতি যাচাই-বাছাই করে সম্প্রতি স্ট্যাটাস রিপোর্ট দাখিল করে। ওই রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে দ্রুত ব্রোকারেজ হাউজটির কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দিয়েছিল বিএসইসি।

বিএসইসির সিদ্ধান্ত
শাহ মোহাম্মদ সগিরের অ্যান্ড কোং লিমিটেড সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০ এর রুলস ৬(১), ৬(২) ও ৭(৩), সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক-ডিলার, স্টক-ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা, ২০০০ এর বিধি ১১, সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক-ডিলার, স্টক-ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা, ২০০০ এর দ্বিতীয় তফসিলের আচরণ বিধি ১, ডিপজিটরি (ব্যাবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩ এর প্রবিধান ৩৪ (১) ও (২) লঙ্ঘন করেছে। তাই ওই বিষয়ে ওপর আলোচনা ও সার্বিক বিবেচনাপূর্বক শাহ মোহাম্মদ সগিরের অ্যান্ড কোং লিমিটেডের স্টক ডিলার নিবন্ধন সনদ এবং স্টক ব্রোকার নিবন্ধন সনদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। উপযুক্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই স্টক ডিলার ও স্টক ব্রোকার নিবন্ধন সনদসমূহ (সনদ নম্বর নিবন্ধন-৩.১/ডিএসই-১৭১/২০০৯/৩৪৭: ২১.০৬.২০০৯ এবং নিবন্ধন-৩.১/ডিএসই-১৭১/২০০২/৬৪: ০৫.০৫.২০০২) বাতিল করা হলো। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ডিএসইকে অনুরোধ করা হলো।

২০২২ সালের জানুযারি থেকে শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোম্পানির সব দায়-দেনাসহ শতভাগ মালিকানা কিনে নিয়েছে সাদ মুসা গ্রুপ। ওই সময় ব্রোকারেজ হাউজটির কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিল এ শিল্পগোষ্ঠী। সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে বিনিয়োগকারীদের অর্থ সমন্বয়সহ আরো বেশ কিছু শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে বোকারেজ হাউজটি প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর সে সময় চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সাদ মুসা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহম্মদ মহসিনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও চেক প্রত্যাখ্যানের অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি অর্থ আত্মসাৎ ও চেক প্রত্যাখ্যানসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাদ মুসা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহম্মদ মহসিনকে কারাগারে পাঠান চট্টগ্রামের দ্বিতীয় যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ। তার বিরুদ্ধে ন্যাশনাল ব্যাংকের (এনবিএল) আগ্রাবাদ শাখার পক্ষ থেকে পাঁচটি চেক প্রত্যাখ্যান মামলা ছিল ২০২০ ও ২০২২ সাল থেকে। ৫ মামলায় মোট টাকার পাওনা দাবির পরিমাণ ছিল ৫৫ কোটি ৯৪ লাখ ৭৫ হাজার ৮০০ টাকা। এই ৫ মামলার প্রতিটিতে এক বছর করে মোট ৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে।

এদিকে, গত ১৫ মে করোনাকালীন সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ৪০৪ কোটি টাকা উত্তোলন করে অর্থ আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে সাদ মুসা গ্রুপের কর্ণধার মুহম্মদ মোহসিনসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ঢাকা/এনটি/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফের শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপল গ্রিস, সুনামি সতর্কতা জারি
  • বাংলাদেশকে উড়িয়ে আমিরাতের অধিনায়ক বললেন, ‘আমার কাছে কোন ভাষা নেই’
  • উপবৃত্তি পেতে অনার্সের শিক্ষার্থীদের আবেদনের সময় বাড়ল
  • অটোপাসের দাবিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ওপর হামলাচেষ্ট
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ, এমএসএস, এমবিএ, এমএসসি, এম মিউজ পরীক্ষা, আবেদন শুরু
  • শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোম্পানির নিবন্ধন বাতিল
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তর শুরু