রক্ত নয়, আমার শিরায় সিঁদুর ফুটছে: মোদি
Published: 22nd, May 2025 GMT
ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিল হামলার ঘটনায় মাত্র ২২ মিনিটে পাল্টা জবাব দিয়েছে ভারত এমন দাবি করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, ২২ এপ্রিলের হামলার জবাবে ভারতীয় বাহিনী ২২ মিনিটে সন্ত্রাসীদের ৯টি বড় আস্তানা ধ্বংস করে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজস্থানের বিকানেরে এক জনসভায় এ কথা বলেন মোদি।
‘অপারেশন সিঁদুর’ এর উল্লেখ করে মোদি বলেন, বিশ্ব ও দেশের শত্রুরা এবার দেখতে পেয়েছে, যখন সিঁদুর বারুদের রূপ নেয়, তখন কী ঘটে। আমার শরীরে রক্ত নয়, শিরায় সিঁদুর ফুটছে। খবর- ইন্ডিয়া টুডে
তিনি বলেন, পেহেলগামে গুলির আঘাত ১৪০ কোটি ভারতীয়কে ক্ষতবিক্ষত করেছে। তাই আমরা সরাসরি সন্ত্রাসবাদের মূল কেন্দ্রেই আঘাত করেছি। সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, আর তারাই পাকিস্তানকে নতজানু করতে বাধ্য করেছে।
এদিকে ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের এক কর্মকর্তাকে ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ (অবাঞ্ছিত ব্যক্তি) ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই কর্মকর্তা কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে দায়িত্বের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভারতের পক্ষ থেকে একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই ঘোষণা দিলো পাকিস্তান। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার দিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তান হাইকমিশনের এক কর্মকর্তাকে ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করে এবং তাকেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয়।
পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়। গত ৬ ও ৭ মে পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালায় ভারত। জবাবে গত ১০ মে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ‘অপারেশন বুনইয়ান উম মারসুস’ নামে পাল্টা সামরিক অভিযানে নামে। চার দিন ধরে পাল্টাপাল্টি হামলার পর গত ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে এই সংঘাতের অবসান ঘটে।
তবে দুই প্রতিবেশী দেশের সাম্প্রতিক যুদ্ধপরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি আবারও স্পষ্ট করেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমে হয়েছে। কোনো আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার কারণে নয়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো হস্তক্ষেপ এতে ছিল না। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সম্প্রচার সংস্থা এনওএস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি করেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে হামলার নিন্দা ব্রিকসের, কাদের ওপর অতিরিক্ত ১০% শুল্ক বসানোর হুমকি দিলেন ট্রাম্প
ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে নেতারা ‘ভবিষ্যৎ না ভেবে দেওয়া’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা আমদানি শুল্ক আরোপ এবং সম্প্রতি ইরানে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলার কড়া সমালোচনা করেছেন। গতকাল রোববার ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল রাতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এই সমালোচনার জবাবে হুমকি দিয়ে লিখেছেন, ‘যেকোনো দেশ, যারা ব্রিকসের যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী নীতির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করবে, তাদের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এ নীতির কোনো ব্যতিক্রম হবে না।’
ব্রিকসের ১১টি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশ। এই সংস্থা বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে এবং বৈশ্বিক উৎপাদনের ৪০ শতাংশের বেশি অবদান রাখে।
এই জোট অনেক বিষয়ে বিভক্ত হলেও যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা শুল্কনীতি ও আচরণের বিষয়ে তারা একমত। অবশ্য সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি।
সম্মেলনের যৌথ বিবৃতিতে ব্রিকস নেতারা বলেন, ‘একতরফাভাবে বৃদ্ধি করা শুল্ক নিয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। কারণ, এই শুল্ক বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি করতে পারে।’
ইরানের পাশে ব্রিকস
ব্রিকস সম্মেলনে ইরানের প্রতি প্রতীকী সমর্থন জানিয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সামরিক হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে। এই দুই দেশ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ নিশানায় এসব হামলা চালায়।
চলতি বছরের এপ্রিলে ট্রাম্প তাঁর মিত্র ও প্রতিপক্ষ দেশগুলোকে একের পর এক শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। তবে বাজারে ভয়াবহ দরপতনের মুখে পড়ে কিছু সময়ের জন্য তা স্থগিত করেন।
ট্রাম্প হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, আগামী ১ আগস্টের মধ্যে চুক্তি না হলে তিনি একতরফা শুল্ক আরোপ করবেন। তবে সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র যেমন ব্রাজিল, ভারত ও সৌদি আরবের প্রতি সম্মান রেখে যুক্তরাষ্ট্র বা ট্রাম্পের নাম কোনো জায়গায় সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি।
সম্মেলনের প্রেক্ষাপট ও অনুপস্থিতির বিষয়
প্রায় ২০ বছর আগে গঠিত ব্রিকস এখন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তির বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে চীনের নেতৃত্বাধীন একটি শক্তিশালী মঞ্চ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তবে সদস্যসংখ্যা বাড়িয়ে ইরান, সৌদি আরবসহ নতুন নতুন দেশ যুক্ত হওয়ায় গাজা যুদ্ধ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য নিয়ে জোটের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে পড়েছে।
যেমন ব্রিকস সম্মিলিতভাবে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বে শান্তিপূর্ণ দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে অবস্থান নেয়। অথচ ইরান বহুদিন ধরে বলে আসছে, ইসরায়েলের ধ্বংস হওয়া উচিত।
একজন ইরানি কূটনীতিক বলেন, তাঁদের সরকারের পক্ষ থেকে ‘কিছু আপত্তি’ ব্রাজিলের আয়োজকদের জানিয়েছে। তবুও ইরান পুরো বিবৃতিকে প্রত্যাখ্যান করেনি।
ব্রাজিল সরকারের একটি সূত্র জানায়, এই স্পর্শকাতর অবস্থান থেকে বোঝা যায়, কেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকালের আলোচনায় অংশই নেননি।
সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপ্রযুক্তির অস্ত্রের সবচেয়ে বড় গ্রাহকদের একজন এবং বহুদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র।
গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা অনুপস্থিত
চলতি বছরের সম্মেলনের রাজনৈতিক গুরুত্ব কিছুটা কমে গেছে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়েরঅনুপস্থিতির কারণে। তিনি ১২ বছরের মধ্যে এবার প্রথম ব্রিকস সম্মেলনে উপস্থিত হননি।
এ ছাড়া রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সরাসরি সম্মেলনে আসেননি। তিনি ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে সম্মেলনে অংশ নেন। তাঁর বিরুদ্ধে ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।
সম্মেলনে পুতিন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ব্রিকস এখন বৈশ্বিক নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ এক শক্তি হয়ে উঠেছে।
এআই নিয়ে উদ্বেগ
সম্মেলনে নেতারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারে আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন গঠনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই প্রযুক্তি শুধু ধনী দেশগুলোর একচেটিয়া অধিকার হতে পারে না।
বর্তমানে এই খাতে যুক্তরাষ্ট্রের টেক জায়ান্টরা এগিয়ে থাকলেও চীন ও অন্যান্য দেশও দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে।