সরে গেলেন পররাষ্ট্র সচিব জসীম, রুটিন দায়িত্বে রুহুল আলম
Published: 22nd, May 2025 GMT
পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনের জায়গায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকীকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে অফিস আদেশ জারি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে শুক্রবার থেকেই এ আদেশ কার্যকর হবে।
আদেশে বলা হয়, ‘মো. জসীম উদ্দিন, পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব ত্যাগের প্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তনের হাওয়ায় এক মাসের মাথায় পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্বে আসেন জসীম উদ্দিন।
বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের ত্রয়োদশ ব্যাচের এই কর্মকর্তা পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে যোগ দেন ৮ সেপ্টেম্বর। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে তার অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার কথা রয়েছে।
চীন, কাতার ও গ্রিসে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা জসীম উদ্দিনকে আবারও রাষ্ট্রদূত করে দেশের বাইরে পাঠানোর চিন্তাভাবনা চলার কথাও বলেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
তার জায়গায় রুটিন দায়িত্বে পালনে আসা সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী বিসিএস একাদশ ব্যাচের পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তা। এর আগে তিনি পাকিস্তানে বাংলাদেশের হাই কমিশনার এবং পর্তুগালে রাষ্ট্রদূত হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দায়িত্বের পাশাপাশি সিঙ্গাপুর, বার্লিন, নয়াদিল্লি এবং করাচি মিশনে বিভিন্ন পদে ছিলেন তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র হ ল আলম
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণ, মুনাফা হাজার কোটি টাকা ছাড়ালে আসতে হবে শেয়ারবাজারে
বছরে অন্তত হাজার কোটি টাকার মুনাফা হয় এমন ভালো কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারমুখী করতে নতুন মূলধন সংগ্রহের পরিবর্তে এগুলোর মালিকদের নিজের শেয়ার বিক্রি করে তাদের ভালো মুনাফার সুযোগ করে দেওয়ার সুপারিশ করেছে শেয়ারবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স। একই সঙ্গে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে এ সুযোগ অবারিত করার প্রস্তাব করেছে তারা। বর্তমানে এভাবে শেয়ার বিক্রির সুযোগ কেবল সরকারি কোম্পানিগুলোর জন্য সীমিত করে রাখা আছে।
শেয়ারবাজার সংস্কারে গত বছরের ৭ অক্টোবর পাঁচ সদস্যের করা টাস্কফোর্স গঠন করেছিল শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। গত ২০ মে এই টাস্কফোর্স বিএসইসির কাছে আইপিও বিষয়ে তাদের চূড়ান্ত সুপারিশমালায় এমন প্রস্তাব করেছে। ১৭টি ইস্যুতে সংস্কার সুপারিশ চাইলেও আইপিওসহ এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি ইস্যুতে সুপারিশমালা জমা দিয়েছে টাস্কফোর্স। এই সুপারিশগুলোর আলোকে আইন সংশোধনের খসড়া তৈরি হবে। অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে সেটি চূড়ান্ত করা হবে।
সংস্কারের সুপারিশ প্রণয়নে গঠিত টাস্কফোর্স আরও প্রস্তাব করেছে– ব্যক্তি খাতের কোনো কোম্পানির মোট ব্যাংক ঋণ হাজার কোটি টাকা ছাড়ালে এবং ঋণ ও মূলধন ৩০ অনুপাত ৭০ শতাংশ বা তার বেশি হলে, ওই কোম্পানিকে বাধ্যতামূলকভাবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করার প্রয়োজনীয় আইনি বিধান করা যেতে পারে।
শেখ হাসিনা সরকারের ১৬ বছরের শেয়ারবাজারে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে, তার মধ্যে আইপিওকেন্দ্রিক অভিযোগই বেশি। আবার আইপিওতে আসা কোম্পানির শেয়ারের দাম বহুগুণ বাড়িয়ে মুনাফা লুটতে সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারেও কারসাজি হয়েছিল। এমন প্রেক্ষাপটে আইপিও দুর্নীতির লাগাম টানা এবং মূলধন সংগ্রহের এ বাজারে ব্যক্তি খাতের কোম্পানিকে আকৃষ্ট করার জন্য ব্যাপক সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।
টাস্কফোর্স তাদের এ-সংক্রান্ত চূড়ান্ত সুপারিশমালায় প্রস্তাব করেছে, কোনো কোম্পানির আইপিও প্রসপেক্টাস বা তথ্য বিবরণীর তথ্য বা আর্থিক প্রতিবেদনে বড় ধরনের গরমিল পাওয়া গেলে বা অসত্য প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ইস্যু ম্যানেজার ও ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি দায়িত্বশীলদের জেল বা জরিমানা বা উভয় প্রকার শাস্তি আরোপের বিধান করা যেতে পারে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করারও প্রস্তাব করেছে টাস্কফোর্স। এ ছাড়া কোনো অডিটর প্রতিষ্ঠানের কোনো অংশীদার একসঙ্গে দুটি কোম্পানির আইপিও-সংক্রান্ত আর্থিক প্রতিবেদনের অডিট করতে পারবেন না– এমন বিধানও করতে হবে।
খসড়া সুপারিশে আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় স্টক এক্সচেঞ্জের মতকে চূড়ান্ত করে অনুমোদন করার যে সুপারিশ করা হয়, চূড়ান্ত সুপারিশেও তা বহাল রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়, স্টক এক্সচেঞ্জ কোনো আইপিও আবেদনে সায় না দিলে বিএসইসি তা অনুমোদন করবে না। আবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর আপিল করলে সে ক্ষেত্রেও স্টক এক্সচেঞ্জের নিরপেক্ষ দল সন্তুষ্ট না হলে, সে ক্ষেত্রেও অনুমোদন দেবে না বিএসইসি। আবার স্টক এক্সচেঞ্জের অমত সত্ত্বেও যে আইনি ক্ষমতাবলে কোনো কোম্পানিকে বাধ্যতামূলক তালিকাভুক্ত করার আদেশ প্রদানে বিএসইসির যে ক্ষমতা রয়েছে, তা তুলে নেওয়ারও সুপারিশ করেছে সংস্কার টাস্কফোর্স।
সুপারিশে বলা হয়, আইপিও আবেদন মূল্যায়নে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের একাধিক আইপিও এক্সপার্ট প্যানেল গড়তে হবে। এ প্যানেল যে বিষয়গুলো দেখবে তা হলো– সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ব্যবসা পরিস্থিতি, ব্যবসায় নিজের বাজার অংশ, সংশ্লিষ্ট খাতের প্রবৃদ্ধির ধারা, কোম্পানির মালিকানা, ব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক প্রতিবেদনের মান, ঋণ ও দায় শোধের ইতিহাস, কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা ও পারিবারিক বিরোধ, লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা, আইপিও অর্থ ব্যবহার বাস্তবসম্মত কিনা, স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন ইতিহাস ইত্যাদি।
সংস্কার টাস্কফোর্স আইপিওতে স্বচ্ছতা বাড়াতে স্টক এক্সচেঞ্জকে আবশ্যিকভাবে সংশ্লিষ্ট আবেদনকারী কোম্পানির অফিস ও কারখানা সরেজমিন পরিদর্শন প্রতিবেদন দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ারে লক-ইন বিদ্যমান তিন বছর বহাল রাখার পাশাপাশি কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শেয়ারে এক বছরের এবং আইপিও আসার আগের দুই বছরের মধ্যে প্রাইভেট প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি হলে ওই প্লেসমেন্ট শেয়ারধারীদের ক্ষেত্রেও তিন বছরের লক-ইন রাখার প্রস্তাব করেছে।
আইপিওতে যোগ্য বিনিয়োগকারী এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সমান ৫০ শতাংশ হারে কোটা বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৫০ শতাংশ কোটার ৫ শতাংশ প্রবাসী বাংলাদেশি, ১৫ শতাংশ উচ্চবিত্ত এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা রাখতেও বলা হয়েছে। তবে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওর ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ ছাড়ে শেয়ার বিক্রির ধারা তুলে নেওয়ার কথা বলেছে টাস্কফোর্স।
বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় যৌক্তিক শেয়ারদর নির্ধারণের স্বার্থে যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ২ শতাংশের বদলে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ শেয়ারের আবেদন করার বিধানের কথা বলেছে। এ প্রক্রিয়ায় দর নির্ধারণের কারণে আইপিওতে শেয়ার বিক্রির পরিমাণ মূলধনের ১০ শতাংশের কম হতে পারবে না। এমনটি হলে কোটার বাইরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করতে হবে।