অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় এ সাক্ষাৎ হয়। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সমকালকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ নিয়ে আজ বিকেল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে, যা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলতে আজ সন্ধ্যায় যমুনায় যান তারা।

একটি সূত্র জানিয়েছে, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। এ সময় তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে একটি গুঞ্জন জনমনে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এতে দাবি করা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করেছেন। এই দাবি ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভুয়া চিঠির এবং ২০১১ সালের একটি পুরনো সংবাদ আবার ছড়িয়ে পড়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এই দুটিই সঠিক নয়; জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।

এর মধ্যে ২০১১ সালের ১৩ মে দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ছিল ‘Prof Yunus resigns’। এতে বলা হয়, ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সেই পুরনো প্রতিবেদনটি বর্তমান প্রেক্ষাপটে— তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন— এমন ইঙ্গিতসহ আবার শেয়ার করা হচ্ছে।

তবে ডেইলি স্টার স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, এটি একটি বিভ্রান্তিকর প্রচার—একটি পুরনো প্রতিবেদনকে পুনরায় পোস্ট করে তা মিথ্যা প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করা হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড ইউন স ন হ দ ইসল ম ন স র দ দ ন প টওয় র কর ছ ন সরক র ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু কাজ জনমনে প্রশ্ন তুলেছে: নজরুল ইসলাম খান

অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু কিছু কাজ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, যা কোনোভাবেই ভালো লক্ষণ নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের পতনের পর যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ঐক্যবদ্ধভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাদের প্রায় সাড়ে ৯ মাসের দায়িত্বে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রশ্ন না তুললেও কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে জনগণের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। সরকারে থেকে বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করার অভিযোগও উঠেছে, যা তাদের ভালো লাগছে না।

আজ বুধবার দুপুর দুইটায় ময়মনসিংহ নগরীর তারেক স্মৃতি অডিটরিয়ামে বিভাগীয় বিএনপির প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রতিটি জেলা, মহানগর এবং গ্রামে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম চালাতে হবে। তবে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। তাদের বিএনপির নীতি-আদর্শে বিশ্বাসী কিনা, বিপদে দল আঁকড়ে এসেছেন নাকি ক্ষমতার লোভে এসেছেন—এসব বিবেচনা করতে হবে। 

নতুন সদস্য করার আগে পুরনো ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মতামত নিতে হবে। যারা দীর্ঘদিন দলে সক্রিয় থেকে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তারাই সামনে থাকবেন। নেতা হবেন তিনিই, দলে যার অবদান বেশি।

নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ও নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা বিএনপি নেতা ইশরাকের প্রসঙ্গ টেনে নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল রায় দেওয়ার পরও প্রশাসনিক ক্ষমতার বলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে যিনি মেয়র পদে দায়িত্ব পেয়েছেন, তাকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না। 

তিনি আরও বলেন, যে নির্বাচন কমিশনকে এই সরকার নিয়োগ দিয়েছে, সেই নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে তাদের মতামত ব্যক্ত করলেও তাদের হুমকি দেওয়ার জন্য ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হচ্ছে, যা ভালো লক্ষণ নয়।

সংস্কার ও নির্বাচন প্রসঙ্গ সংস্কার ও নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ জেল-জুলুম সহ্য করে যে ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিবাদী সরকার পালিয়ে গেলেও এখনো আন্দোলনের মূল লক্ষ্য পূরণ হয়নি, আংশিক দাবি আদায় হয়েছে। এখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রয়োজন, যেখানে আইন প্রণয়ন করে সংস্কার করা যায়। 

এ সময় তিনি ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানান। নির্বাচন কমিশন জুনের মধ্যে প্রস্তুত বলে জানালেও সংস্কারও চায়। বিএনপির ৩১ দফায় রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের কথা বলা হয়েছে।

ক্ষমতার ভারসাম্য ও বিএনপির অবদান
ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে আসার কথা জানিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, বিএনপি যখন সংস্কারের কথা বলেছে, তখন বাংলাদেশের কোনো দল সংস্কারের প্রস্তাব করেনি। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যতগুলো সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, তার সবই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফায় রয়েছে, বরং অনেক বিষয় বাদও পড়েছে। আগামী দিনে বিএনপি জনগণের ভোটে রাষ্ট্র ক্ষমতার দায়িত্ব পেলে এসব সংস্কার করবে এবং জনগণের ভালো কোনো প্রস্তাব থাকলে তা সাদরে গ্রহণ করবে।

বিএনপির কর্মী হিসেবে গর্ববোধ করার অনেক কিছু আছে উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি বিচার বিভাগকে স্বাধীন করেছে, মিডিয়ার স্বাধীনতা অবাধ করেছে, রুদ্ধ অর্থনীতিকে মুক্ত অর্থনীতিতে পরিণত করেছে। খাদ্য উৎপাদন, পোশাক শিল্প, রেমিটেন্স, পল্লী বিদ্যুৎ, সমুদ্রে মাছ আহরণ, নারী শিক্ষা, উপবৃত্তি, শিক্ষার জন্য খাদ্য, সমবায় প্রতিষ্ঠা, গ্রাম সরকার গঠন—সবই বিএনপির হাত ধরে হয়েছে। তিনি নেতাকর্মীদের পড়াশোনা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিএনপির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অনেক জানার আছে, তাহলে বিএনপি নিয়ে কারো কথা বলার সাহস হবে না।

শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন চেয়ে তিনি বলেন, যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন চাই। কিন্তু কেউ কেউ সরকারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার দিকে তাকিয়ে তাদের বুঝতে আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেস আলী মামুন এবং আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদের যৌথ সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ মো. রাশিদুজ্জামান মিল্লাত।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরীফুল আলম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব জাকির হোসেন বাবলু, উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক একেএম এনায়েত উল্লাহ কালাম, সদস্য সচিব মোতাহার হোসেন তালুকদার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সরকার রোকন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলমসহ নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর ও শেরপুর জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু কাজ জনমনে প্রশ্ন তুলেছে: নজরুল ইসলাম খান