সোল্ড ট্রাফোর্ড!

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে নিয়ে একটি খবরের শিরোনাম এভাবেই করেছে দ্য সান। খবরটি হচ্ছে, ইউরোপা লিগের ফাইনালে হারের জেরে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের আর্থিক অবস্থা এতটাই বাজে হতে চলেছে যে মালিকপক্ষ সব খেলোয়াড়কেই বিক্রির চিন্তা করছে।

ইউনাইটেডের সমর্থক হোন বা না হোন, সবার জন্যই খবরটা বেশ চমকপ্রদ। ক্লাবের মালিকানা বিক্রি হয়, ক্লাব এক লিগ থেকে আরেক লিগে অবনমিত হয়। কিন্তু শীর্ষ স্তরের ফুটবলে নতুন মৌসুম শুরুর আগে দলের সব খেলোয়াড়কে বিক্রি করার ঘটনা কেউ কখনো শুনেছে কি না সন্দেহ। আর প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে সফল ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এখন নজিরবিহীন সেই পথেই হাঁটতে পারে বলে জানাচ্ছে দ্য সান।

খবরটা প্রথম যারা দিয়েছে, সেই দ্য মিরর অবশ্য একটু রয়েসয়েই লিখেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউনাইটেড স্কোয়াডে থাকা প্রত্যেক খেলোয়াড়ের বিক্রির বিষয়ে ক্লাব কর্তৃপক্ষ উন্মুক্ত থাকবে। অন্যভাবে বললে, দলের মধ্যে এমন কোনো ফুটবলার নেই—যাঁকে সামনের মৌসুমে ধরে রাখতে চায় কর্তৃপক্ষ। ভালো প্রস্তাব পাওয়া গেলে কোনো খেলোয়াড়কেই আটকাবে না ইউনাইটেড।

১৯৯৩ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ১৩ বার প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এক দশকের বেশি সময় ধরে লিগে ভুগছে। সেটা এবার এমনই জায়গায় পৌঁছেছে, ৩৭তম রাউন্ড শেষে রুবেন আমোরিমের দলের অবস্থান ১৬ নম্বরে। এফএ কাপে বিদায় ঘটেছে পঞ্চম রাউন্ডে। আর লিগ কাপে দৌড় থেমে গেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। সামনের বছর মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে জায়গা করার জন্য শেষ ভরসা ছিল ইউরোপা লিগ। বুধবার সান মেমসে টটেনহাম হটস্পারের কাছে ১–০ গোলে হেরে সেই আশায়ও গুড়েবালি।

দ্য মিরর বলছে, চ্যাম্পিয়নস লিগের পরবর্তী আসরে জায়গা করতে পারলে ১০ কোটি পাউন্ডের আশপাশে আয়ের একটা আশা ছিল। যার ওপর ভর করে দলবদল মৌসুম থেকেও কেনাকাটা করা যেত। কিন্তু ইউরোপা লিগ জিততে না পারায় ৩৫ বছর পর উয়েফার কোনো প্রতিযোগিতায় থাকছে না ইউনাইটেড। এদিকে স্যার জিম র‍্যাটক্লিপ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পুঁজিবাজারে ইউনাইটেডের শেয়ারের দাম কমে গেছে ৬০ শতাংশের মতো। সব মিলিয়ে ক্লাবের আর্থিক পরিস্থিতি আগামী দিনে আরও বাজে অবস্থার দিকে যাওয়ার পথে।

এমন অবস্থায় কোনো খেলোয়াড়কেই ধরে রাখার কথা ভাবছে না ওল্ড ট্রাফোর্ডের দলটি। মিররের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামনের দলবদল মৌসুমে ব্রুনো ফার্নান্দেজ, কাসেমিরো, কোবি মাইনু, লুক শ, হ্যারি ম্যাগুয়ার, আন্দ্রে ওনানা এবং আলেহান্দ্রো গারনাচোদের বিক্রির জন্য উন্মুক্ত রাখবে ইউনাইটেড। এ ছাড়া বর্তমানে ধারে থাকা মার্কাস রাশফোর্ড, অ্যান্টনি ও জাডন সানচোকেও পাকাপাকিভাবে ছেড়ে দিতে চায় দলটি। শেষ পর্যন্ত কতজনকে বিক্রি করা সম্ভব হবে, নির্ভর করছে অন্যদের প্রস্তাবের ওপর।

সামনের মৌসুমের জন্য বেশ কয়েকজন ফুটবলারকে কেনার কথা ভেবেছিল ইউনাইটেড। এর মধ্যে আছেন স্পোর্তিং লিসবনের ভিক্টর ইওকেরেস, লাইপজিগের বেঞ্জামিন সেসকো, গ্যালাতাসারাইয়ের ভিক্টর ওশিমেন, উল্ভসের ম্যাথিয়াস কুনহা এবং ইপস্উইচ টাউনের লিয়াম দেলাপ। তবে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় খেলা না থাকায় কেউ কেউ এ যাত্রায় আসতে অনাগ্রহী হতে পারেন।

সামনের মৌসুম থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে কী রূপে মাঠে নামানো যায়, এ নিয়ে কাজ করছেন সহ–মালিক জিম র‍্যাটক্লিপ, প্রধান নির্বাহী ওমর বেরাদা ও টেকনিক্যাল ডিরেক্টর জেসন উইলকক্স। রোববার ওল্ড ট্রাফোর্ডে অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে মৌসুমের শেষ ম্যাচ খেলে এশিয়া সফরে বের হবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। দুটি ম্যাচ খেলবে মালয়েশিয়া ও হংকংয়ে। এরপরই দল পুনর্গঠন নিয়ে পুরোদমে কাজ করবেন সংশ্লিষ্টরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য স মন র ইউর প অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী

আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।

রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।

মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’

বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ