দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। যদি ঠিকভাবে কাজ করতে না পারেন, তাহলে প্রধান উপদেষ্টার পদে থেকে কী লাভ, সে কথাও বলেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠক শেষে অনির্ধারিত আলোচনায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে ক্ষোভ ও হতাশার কথা তুলে ধরেন তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় যান। সেখান থেকে বেরিয়ে নাহিদ ইসলাম রাতে বিবিসি বাংলাকে বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন।’

এর আগে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে দীর্ঘক্ষণ উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে বলে, ঢাকায় প্রতিদিন সড়ক আটকে আন্দোলন, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোদের মধ্যে ঐকমত্য না হওয়া, রাষ্ট্রীয় কাজে নানা পক্ষের অসহযোগিতার বিষয়টি আলোচনায় আসে। আলোচনার এক পর্যায়ে কাজ করতে না পারার বিষয়টি তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি আরও বলেন, সংস্কারের বিষয়েও এখনো তেমন কিছু হলো না। তাহলে তিনি কেন থাকবেন—এমন প্রশ্নও আলোচনায় আনেন তিনি।

উপদেষ্টা পরিষদের ওই আলোচনায় উপস্থিত থাকা সূত্রগুলো আরও জানায়, একপর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের বলেন, তাঁরা যেন আরেকটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন। কারণ, তিনি চলে যেতে চান। বর্তমানে যে পরিস্থিতি আছে তাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে ব্যালট ছিনতাইয়ে মতো ঘটনা ঘটলে পুলিশ–প্রশাসন তা ঠেকাতে পারবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। অন্যদিকে ভালো নির্বাচন করতে না পারলে মানুষ তাঁকে দায়ী করবে বলেও আলোচনায় উল্লেখ করেন তিনি।

বৈঠক সূত্র জানায়, বিভিন্ন পক্ষের অসহযোগিতার বিষয়টি জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে তুলে ধরার কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। একপর্যায়ে তাঁর ভাষণের একটি খসড়াও তৈরি করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত ভাষণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে পরে আবার আলোচনা হতে পারে।

আরও পড়ুনঅধ্যাপক ইউনূস ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন’: নাহিদ ইসলাম২ ঘণ্টা আগেবিবিসি বাংলাকে যা বললেন নাহিদ

সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। পরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলম যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন।

এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে বলে, সন্ধ্যা সাতটার দিকে যমুনায় প্রবেশ করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বেশ কিছুক্ষণ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একান্তে আলাপ করেন।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন নাহিদ ইসলাম।

এদিকে রাতে বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করতে পারেন, এমন খবর পেয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘দেশের চলমান পরিস্থিতি, স্যারের তো পদত্যাগের একটা খবর আমরা আজ সকাল থেকে শুনছি। তো ওই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে স্যারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম।’

আরও পড়ুনপ্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম৫ ঘণ্টা আগে

প্রধান উপদেষ্টা দেশের চলমান পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারবেন না, এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বলেও বিবিসি বাংলাকে বলেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘স্যার বলছেন, আমি যদি কাজ করতে না পারি.

.. যে জায়গা থেকে তোমরা আমাকে আনছিলে একটা গণ–অভ্যুত্থানের পর। দেশের পরিবর্তন, সংস্কার...। কিন্তু যেই পরিস্থিতি যেভাবে আন্দোলন বা যেভাবে আমাকে জিম্মি করা হচ্ছে। আমি তো এভাবে কাজ করতে পারব না।’

প্রধান উপদেষ্টা ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন’ এমনটি উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘উনি বলেছেন তিনি এ বিষয়ে ভাবছেন। ওনার কাছে মনে হয়েছে পরিস্থিতি এ রকম যে তিনি কাজ করতে পারবেন না।’

তবে পদত্যাগের মতো সিদ্ধান্ত না নিতে প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও দেশের ভবিষ্যৎ—সবকিছু মিলিয়ে উনি যাতে শক্ত থাকেন এবং সব কটি দলকে নিয়ে যাতে ঐক্যের জায়গায় থাকেন। সবাই তাঁর সঙ্গে আশা করি কো-অপারেট করবেন।’

আরও পড়ুনফেসবুকে উপদেষ্টা ও এনসিপিসহ বিভিন্ন দলের নেতাদের পোস্ট২ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পদত য গ র পর স থ ত ক জ করত র ব ষয়ট পর য য় কর ছ ন এনস প সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

৩ লাখ মানুষ নিয়ে শুটিং, গিনেস বুকে রেকর্ড

বলিউড ও দক্ষিণী সিনেমার অধিকাংশ গল্পে যৌথ পরিবারের আবহ দেখা যায়। যার ফলে পাত্র-পাত্রীর সংখ্যাও থাকে অধিক। আবার ঐতিহাসিক সিনেমার জন্য এলাহি আয়োজন করে থাকেন নির্মাতারা। গল্পের প্রয়োজনে দৃশ্যে দেখা মেলে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি। এসব দৃশ্য কখনো কখনো গ্রাফিক্সের মাধ্যমেও সম্পন্ন করে থাকেন। তবে একটি সিনেমায় সত্যি সত্যি ৩ লাখ মানুষের উপস্থিতি ছিল; যা গিনেস বুকে রেকর্ড গড়ে।

সিয়াসাত ডটকমের তথ্য অনুসারে, ‘গান্ধী’ সিনেমায় একটি দৃশ্য ইতিহাস তৈরি করেছে। এটি অন্য কোনো দৃশ্য নয়, মহাত্মা গান্ধীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের দৃশ্য। যে দৃশ্যে ৩ লাখ মানুষ সত্যি সত্যি অংশ নেন। মানুষের উপস্থিতি বোঝাতে এতে কোনো প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়নি।

গিনেস ওয়ার্ল্ডের ওয়েব সাইটের তথ্য অনুসারে, ১৯৮১ সালের ৩১ জানুয়ারি দিল্লিতে ‘গান্ধী’ সিনেমার এই দৃশ্যের শুটিং করেন পরিচালক রিচার্ড। মহাত্মা গান্ধীর সত্যিকারের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের ৩৩ বছর পর। শুটিং টিম দৃশ্যটির জন্য টাকার বিনিময়ে ৯৪ হাজার এবং ২ লাখ স্বেচ্ছাসেবীকে একত্রিত করেছিলেন।

আরো পড়ুন:

জন্মদিনে বিশালের বিয়ে: ১২ বছরের ছোট কনেকে নিয়ে চর্চা

হাঁটুর বয়সি নায়িকাকে চুমু, সমালোচনার মুখে কমল হাসান

সিনেমাটিতে গান্ধী চরিত্রে অভিনয় করেন বেন কিংসলে। এ অভিনেতা যখন চুপচাপ শুয়ে ছিলেন, তখন তার চারপাশে হাজার হাজার মানুষ হাঁটছিলেন। যা সত্যিকার অর্থে খুবই আবেগঘন পরিবেশ তৈরি করেছিল। আর এই দৃশ্যের জন্য কোনো গ্রিন স্ক্রিন বা কোনো কৌশলই ব্যবহার করেননি নির্মাতারা।    

 

‘গান্ধী’ সিনেমায় দৃশ্যটির দৈর্ঘ্য মাত্র ২ মিনিট ৫ সেকেন্ড। এজন্য এলাহি আয়োজন করতে হয়েছিল। শুটিংয়ের জন্য করা হয়েছিল সুপরিকল্পনা। এতে ভারতীয় সেনাবাহিনী, স্থানীয় কিছু গ্রুপ সহযোগিতা করেছিলেন। এই দৃশ্যটি গিনেস ওয়ার্ল্ড বুকে রেকর্ড গড়েছে। সিনেমায় অত্যাধিক এক্সট্রা ব্যবহারের দিক থেকে এই রেকর্ড গড়ে সিনেমাটি। এখনো এই রেকর্ড কোনো সিনেমা ভাঙতে পারেনি।

ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামের অন্যতম অগ্রনায়ক মহাত্মা গান্ধী। শান্তি, মুক্তি ও মানবতার প্রতীক তিনি। ভারতের স্বাধীনতার ৬ মাসের কম সময়ের ব্যবধানে অর্থাৎ ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারান তিনি।

১৯৮২ সালে মহাত্মা গান্ধীর বায়োপিক নির্মিত হয়। এটি নির্মাণ করেন ব্রিটিশ অভিনেতা-নির্মাতা রিচার্ড অ্যাটেনবরো। ‘গান্ধী’ সিনেমা নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ২২ মিলিয়ন ডলার। ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় মুক্তি পায় এটি। মুক্তির পর সিনেমাটি আয় করে ১২৭.৮ মিলিয়ন ডলার।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ