হঠাৎ বদলে যাওয়া রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিন দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচনের কথা আবার তুলে ধরেছেন বলে জানিয়েছেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গতকাল শনিবার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার পৃথক বৈঠকের পর রাত সোয়া ১০টার দিকে সাংবাদিকদের এ কথা জানান প্রেস সচিব।

তিনি বলেন, বৈঠকগুলো খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে। আলোচনার  মূল বিষয় ছিল নির্বাচন, সংস্কার ও জুলাই হত্যাযজ্ঞের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে। সব রাজনৈতিক দল নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরেছে। পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টাকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে। কোনো কোনো দল বলেছে, পুরো বাংলাদেশ প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে আস্থা রেখেছে। তাঁর নেতৃত্বেই যেন বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়।

শফিকুল আলম বলেন, বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে। জামায়াত মনে করছে, সংস্কার প্রক্রিয়া শেষ করতে ডিসেম্বর লেগে যেতে পারে। ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে অধ্যাপক ইউনূস যে টাইমলাইন দিয়েছেন, জামায়াত সেটাকে সমর্থন দিয়েছে। এনসিপিও সমর্থন জানিয়েছে। এনসিপি ও জামায়াত মনে করছে, অবাধ নির্বাচনের জন্য যে পরিবেশ দরকার, সেটা নির্বাচন কমিশনে নেই। তারা জোর দিয়েছে, কমিশনের সংস্কারের মাধ্যমে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড যেন নিশ্চিত করা হয়।

বিচার প্রক্রিয়ার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এ মাসেই জুলাই হত্যাযজ্ঞের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। আইন মেনে দ্রুত সময়ে বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার বিষয়ে তিনি সবাইকে আশ্বস্ত করেছেন। চলমান রাজনৈতিক সংকট প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রেস সচিব বলেন, সংকটের কী হলো, তা আমরা জানি না। খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

প্রেস সচিব বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বৈঠকে জানিয়েছেন, সংস্কার প্রক্রিয়া ২০ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করে জুলাই সনদ গ্রহণ করা হবে। জুলাই ঘোষণার বিষয়ে কাজ হচ্ছে এবং খুব দ্রুত এ কাজ শেষ হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব চ র প রক র য় ড স ম বর র জন ত ক

এছাড়াও পড়ুন:

কর্মবিরতিতে কর্মীরা, অচল এনবিআর

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্থাটি বিলুপ্ত করে অধ্যাদেশ জারির প্রতিবাদে আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে কর্মবিরতি কর্মসূচি চলছে। আজ রোববার সকাল ৯টা থেকে বেশির ভাগ শুল্ক-কর কর্মকর্তা-কর্মচারী এনবিআরের নিচতলায় প্রধান ফটকের পাশেই অবস্থান নিয়েছেন। বন্ধ রয়েছে প্রবেশের প্রধান দুই ফটক। সকাল থেকেই এ পরিস্থিতি চলছে। এ কারণে সংস্থাটি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।

আজ সকাল থেকে সরেজমিনে এ চিত্র দেখা গেছে। কয়েক দিন ধরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলন চলছে। এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি আলাদা বিভাগ করে যে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, তা বাতিলসহ চার দাবিতে অনড় রয়েছেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা কলমবিরতি থেকে এখন পুরোপুরি কর্মবিরতিতে রয়েছেন। 

এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর পর থেকে এর প্রতিবাদ করে আসছেন রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এদিকে আজ শনিবার পূর্বঘোষিত কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে। বিকেলে ঐক্য পরিষদ  ভবনের ভেতরে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ভবনের সামনে আয়োজনের অনুরোধ জানান। সংবাদ সম্মেলনে কর্মবিরতি চালিয়ে ঘোষণা দেয় ঐক্য পরিষদ। পরিষদের দাবি ও কর্মসূচি নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অতিরিক্ত কমিশনার এদিপ বিল্লাহ, উপ-কর কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও সহকারী কর কমিশনার মো. ইশতিয়াক হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আজ রোববার কাস্টম হাউস ও এলসি স্টেশন বাদে আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি পালন করা হবে। তবে রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। কিন্তু সোমবার থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি পালিত হবে। 

পরিষদের চারটি দাবি হলো– নতুন অধ্যাদেশ বাতিল, চেয়ারম্যানকে অপসারণ, রাজস্ব সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং অংশীজনের মতামত নিয়ে উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব  সংস্কার নিশ্চিত করা। গত ১২ অধ্যাদেশ জারির পর থেকে এনবিআরে আন্দোলন চলছে। 

কর্মকর্তাদের দাবি, রাজস্বনীতি এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে আলাদা দুটি বিভাগ গঠনের যে প্রক্রিয়া এবং কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে তাতে কর কর্মকর্তারা বঞ্চিত হবেন। অধ্যাদেশে প্রশাসন ক্যাডারকে রাজস্ব কার্যক্রমে বেশি মাত্রায় সম্পৃক্ত করার প্রয়াস রয়েছে। 

পরিষদের নেতারা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিক রাখা এবং অর্থবছরের শেষ প্রান্তে রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম সচল রাখতে তাদের মূল চারটি দাবি পূরণের বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছেন তারা। সরকার ঘোষণা দিলেই সঙ্গে সঙ্গে কাজে ফিরবেন তারা। 

গত বৃহস্পতিবার রাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হবে। সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান কাঠামোতেই এনবিআরের সব কাজ চলবে। 
এ বিষয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যাদেশ বাতিলসহ তাদের চার দাবির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস মেলেনি। তাই তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। 

এনবিআরের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই বিজ্ঞপ্তির পর অনেকেরই ধারণা ছিল, শনিবার হয়তো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা আসবে। কিন্তু সে রকম কিছু দেখা যায়নি। এতে  কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ