এপ্রিল মাসে ‘ইনমা’র প্রধান কার্যালয় থেকে আমার কাছে ফোনকল আসে। ইনমা—ইন্টারন্যাশনাল নিউজ মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশন। বিশ্বের বৃহত্তম মিডিয়া সংগঠন। ১০০টির বেশি দেশের আট শতাধিক সেরা সংবাদমাধ্যম এর সদস্য। তাঁরা আমাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেন, আমি যেন নিউইয়র্কে আন্তর্জাতিক মিডিয়া কংগ্রেসে যোগ দিই। তা থেকে আমাদের একটা ধারণা হয় যে প্রথম আলো হয়তো এবার ভালো একটা পুরস্কার পেতে পারে।
সংবাদমাধ্যমের বিশ্বমঞ্চে
২১ মে তিন দিনের সম্মেলন শুরু হয় বিশ্বখ্যাত নিউইয়র্ক টাইমস–এর সম্মেলন কেন্দ্রে। আর ২২ মে, ২০২৫ নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে এডিসন হোটেলের বলরুমে গণমাধ্যমের বিশ্ব কংগ্রেসে হাজির হয়েছি। আমার সঙ্গে আছেন প্রথম আলোর মহাব্যবস্থাপক ও হেড অব মার্কেটিং মো.
মঞ্চ থেকে ঘোষণা দেওয়া হলো, তৃতীয় পুরস্কার পাচ্ছে নরওয়ের বিখ্যাত শিবস্ট্যাড মিডিয়া। পেরুর বড় পত্রিকা এল কমার্সিও গ্রুপ দ্বিতীয়। এবার প্রথম পুরস্কার।
মঞ্চ থেকে ঘোষণা করা হলো, এটি পাচ্ছে প্রথম আলো, বাংলাদেশ থেকে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সাহসী সাংবাদিকতা, তরুণ পাঠকদের যুক্ততা ও পরবর্তী নানামুখী উদ্যোগের জন্য এই পুরস্কার পাচ্ছে প্রথম আলো। মঞ্চে উঠে পুরস্কার গ্রহণ করলাম। সাহসী উদ্যোগে প্রাপ্য পুরস্কার প্রাপ্তি প্রথম আলোর জন্য সত্যিই অনেক আনন্দের। আরও পুরস্কার ঘোষণা করা হচ্ছে। মঞ্চের দিকে আর বড় পর্দায় চোখ রাখছি; কারণ, সারা পৃথিবীর সেরা গণমাধ্যমগুলো কী কী নতুন কাজ করে পুরস্কার জিতে নিচ্ছে, তা থেকে নতুন নতুন ভাবনা পাওয়া যায়। আমরা কোথায় ভালো করছি, কোথায় পিছিয়ে আছি, তা–ও জানতে পারি। নিউজ ব্র্যান্ডের আরেকটি পুরস্কারের ঘোষণা করা হলো ‘বেস্ট ইউজ অব অ্যান ইভেন্ট টু বিল্ড এ নিউজ ব্র্যান্ড’ ক্যাটাগরিতে। আমাদের ‘জাতীয় স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াড’ উদ্যোগের জন্য তৃতীয় পুরস্কার পেল প্রথম আলো। এই উদ্যোগে আমাদের সঙ্গে ছিল আইসিডিডিআরবি। এই শ্রেণিতে প্রথম হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং দ্বিতীয় হয়েছে ভারতের হিন্দুস্তান টাইমস। এভাবে মোট ২০টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হলো। বিশ্বের প্রধান পত্রিকাগুলোর যারা এবার পুরস্কার পেয়েছে, তারা হলো যুক্তরাষ্ট্রের দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, ডেইলি মেইল, যুক্তরাজ্যের ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস, ভারতের দি টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু, কানাডার টরেন্টো স্টার, চীনের সাইথ মর্নিং পোস্ট প্রভৃতি।
প্রথম আলো বৈশ্বিক এই প্রতিযোগিতায় আগেও সাফল্য পেয়েছে। ৫ বছর ধরে প্রথম আলো এই সম্মানজনক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আসছে এবং এর আগে একবার প্রথম আলো প্রথম পুরস্কার অর্জনসহ মোট ১১টি পুরস্কার পেয়েছে। তবে সব পুরস্কার ছাপিয়ে গেছে এবারের এই স্বীকৃতি—যেখানে প্রথম পুরস্কারের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো অর্জন করেছে ‘দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা’র স্বীকৃতি।
আকর্ষণীয় ছয় পুরস্কার
সবশেষে আরও আকর্ষণীয় ছয়টি পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বের ছয়টি অঞ্চলের ছয়টি সেরা সংবাদমাধ্যমের উদ্যোগকে সেরার স্বীকৃতি ও সম্মান দেওয়ার পালা। যার মধ্যে ইউরোপ, আফ্রিকা, লাটিন আমেরিকা, উত্তর আমেরিকা, এশিয়া প্যাসিফিকও সেরার স্বীকৃতি ও সম্মান পেল। আমি টেবিলে বসে ভাবছি, দক্ষিণ এশিয়ার এই ক্যাটাগরিতে যদি আমরা সেরার পুরস্কারটা জিতে নিতে পারতাম, কেমন হতো! কিন্তু সে রকম কোনো আভাস তো আগে পাইনি। কাজেই কে হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা, তা শোনার জন্যই তাকিয়ে রইলাম মঞ্চের দিকে। আমাদের জন্য এল এক আনন্দদায়ক ও বিস্ময়কর মুহূর্ত। ঘোষণা হলো, দক্ষিণ এশিয়ার সেরা প্রথম আলো। চারদিকে তুমুল করতালি। আলোকিত মঞ্চে উঠে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা পুরস্কার গ্রহণ করলাম।
ইন্টারন্যাশনাল নিউজ মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের (ইনমা) ‘ইনমা গ্লোবাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’–এ বিশ্বের ছয়টি অঞ্চল থেকে ছয়টি উদ্যোগকে সেরা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। দক্ষিণ এশিয়া থেকে সেরা নির্বাচিত হয় প্রথম আলো। পুরস্কারজয়ী অন্য পাঁচটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি ও আয়োজকদের সঙ্গে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ক র প ন উইয়র ক প রথম আল আম দ র র জন য ট ইমস
এছাড়াও পড়ুন:
অনলাইন জুয়া ও পর্নোগ্রাফির বিজ্ঞাপন বন্ধে সরকারের ৪ নির্দেশনা
অনলাইন জুয়া ও পর্নোগ্রাফির বিজ্ঞাপন বন্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার। এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধে চারটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার দেশের সাইবার স্পেসকে নিরাপদ, নৈতিক ও প্রজন্মবান্ধব রাখতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং কিছু ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় জুয়া, বেটিং ও পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন ও প্রোমোশনাল কনটেন্ট প্রচার করা হচ্ছে। এই ধরনের কার্যক্রম বাংলাদেশের সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২-এর পরিপন্থি।
এতে বলা হয়, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর ধারা ২০(১) অনুযায়ী, সাইবার স্পেসে জুয়া বা বেটিং সম্পর্কিত পোর্টাল, অ্যাপস বা কনটেন্ট তৈরি, পরিচালনা, প্রচার, বিজ্ঞাপন প্রকাশ বা উৎসাহ প্রদান করা দণ্ডনীয় অপরাধ। একইভাবে, ধারা ২৫(১) অনুযায়ী, পর্নোগ্রাফি বা অনৈতিক কনটেন্ট প্রচার, প্রচারে সহায়তা বা প্রচারের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপন প্রকাশও অধ্যাদেশ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অনলাইন জুয়া, পর্নোগ্রাফি ও অনৈতিক বিজ্ঞাপন প্রচার প্রতিরোধে রকার ও জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি (এনসিএসএ) জরুরি ৪টি নির্দেশনা দিয়েছে-
মিডিয়া ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম: দেশের সব পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ডিজিটাল বিজ্ঞাপন সংস্থাকে কোনোভাবেই জুয়া, বেটিং বা পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন প্রচার না করতে বলা হয়েছে। ডিফল্ট অ্যাডসেন্স বা কাস্টমাইজড বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এমন কনটেন্ট দেখানো হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেলিব্রিটি ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর: দেশি মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ইনফ্লুয়েন্সার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা কোনোভাবে জুয়া, পর্নোগ্রাফি বা অনৈতিক পণ্য-সেবার প্রোমোশনাল কার্যক্রমে অংশ নেবেন না। এ ধরনের কার্যক্রমে অংশ নেওয়া সাইবার সুরক্ষা আইন অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
দেশি ও বিদেশি ওয়েবসাইট/অ্যাপ: বাংলাদেশে পরিচালিত বা ব্যবহারকারীর জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য কোনো দেশি বা আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট, অ্যাপ বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে জুয়া, বেটিং বা পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত কনটেন্ট, বিজ্ঞাপন বা লিংক প্রচার করা যাবে না। জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি এসব কনটেন্ট মনিটরিং করবে এবং প্রয়োজনে ব্লকিং, জরিমানা বা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্ম: মোবাইল কোম্পানি, আইএসপি, গুগল অ্যাডসেন্স, মেটা অ্যাডসহ আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্মগুলোকে স্থানীয় আইন ও নৈতিকতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে পপ-আপ ব্লকিং ও ফিল্টারিং নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
সরকার বলেছে, নৈতিক, নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে সরকারি সংস্থা, মিডিয়া, প্রযুক্তি কোম্পানি ও নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে জুয়া, বেটিং বা পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত কনটেন্ট দেখতে পান, তারা [email protected] ঠিকানায় তা রিপোর্ট করতে পারবেন।
এতে আরো বলা হয়েছে, শুধু আইনি পদক্ষেপ নয়, সরকারের এই উদ্যোগ তরুণ সমাজের নৈতিক বিকাশ, সামাজিক মূল্যবোধ ও পারিবারিক বন্ধন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সাইবার নিরাপত্তা, নৈতিকতা এবং দায়িত্বশীল ডিজিটাল আচরণ নিশ্চিত করতে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি (এনসিএসএ), জাতীয় টেলিযোগাযোগ পযবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) এবং বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) যৌথভাবে কাজ করছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ফিরোজ