সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের সংস্কার করতে চাচ্ছে। বন্দর কাউকে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

রোববার ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর পল্টনে নিজস্ব কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

শফিকুল আলম বলেন, সরকার চাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলো যেন চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দর কাউকে দেওয়া হচ্ছে না। সরকার চায় টার্মিনালে যেন এসব বড় কোম্পানি বিনিয়োগ করে এবং ব্যবহার করে। সরকার ইতোমধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছে, তারা তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।

প্রেস সচিব বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার, বিচার কার্যক্রম এবং নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। অর্থনৈতিক সংস্কার চলছে। সংস্কার শেষে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নতি হবে। আমরা চেষ্টা করছি একটা ব্রডার ইকোনমিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে, যেখানে আমাদের বাংলাদেশের ইকোনমি টেক-অফ করবে। ইকোনমির গ্রোথ যদি টেক-অফ করলে এর প্রভাব শেয়ার মার্কেটেও পড়বে। যদি সার্বিক অর্থনীতির অবস্থা খুব ভালো হয় তাহলে আশা করা যায়, বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেট খুব দ্রুত একটা নতুন উচ্চতায় উঠবে।

তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা কেটে গেছে, আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হবে।

শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ডাকাতদের আড্ডা হয়ে গেছে। এখানে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা কেবল প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন, পুঁজি হারিয়েছেন। অতীতে যারাই পুঁজিবাজারের সংস্কারে দায়িত্ব নিয়েছেন, তারাই বিভিন্ন গোষ্ঠীর তাঁবেদারি করেছে। 

তিনি বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেটের সংস্কার যারা করেছেন, তারা সবাই গোষ্ঠী স্বার্থের দিকে তাকিয়েছিলেন। এই গোষ্ঠী একটা পারপাস সার্ভ করছে, ওই গোষ্ঠীর প্রতিপক্ষ এসে আরেকটা পারপাস সার্ভ করেছে। ফলে দেখা গেছে যে যারা বড় বড় প্লেয়ার, তারা সবসময় সুবিধা পেয়েছেন। সাধারণত যারা খুব ছোট ট্রেডার তারা বেশিরভাগ সময় সুবিধা পাননি বা প্রতারিত হয়েছেন। ম্যানিপুলেশনের শিকার হয়েছেন।

পুঁজিবাজার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ জন্য অধ্যাপক ইউনূস বিদেশি বিশেষজ্ঞ, বিশেষ করে যারা শেয়ার মার্কেট কীভাবে গ্লোবালি রিফর্ম করা যায়, গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডে আনা যায়, তাদের নিয়ে আসার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়েছেন। এটার জন্য একটা তিন মাসের টাইমলাইন দেওয়া হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে তারা এসে শেয়ার মার্কেটের কী কী করণীয়, সেটা তারা বলবেন এবং সে অনুযায়ী খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এর ফলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার কোনো গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি থাকবে না উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, কোনো গোষ্ঠী যেন মনে না করে যে এখান থেকে আমি আমার মতো করে টাকা বানাবো। বছরের পর বছর আমরা দেখেছি, আমাদের আশেপাশে যারাই একটু শেয়ার মার্কেটে প্রভাবশালীদের আশেপাশে ছিলেন, তারা সবাই কোটিপতি হয়ে গেছেন। এমনটা যাতে আর না ঘটে সে ব্যাপারে প্রফেসর ইউনূস বারবার গুরুত্ব দিয়েছেন।

ব্যাংকিং খাতকে গহ্বর থেকে টেনে তোলা হচ্ছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা একদম দুর্বল ছিল। সবকিছু লণ্ডভণ্ড অবস্থা। সেখান থেকে আমরা ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে তুলে এনে পাহাড়ে ওঠানোর চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, দুই সপ্তাহ হলো কারেন্সি ফ্লোট করা হয়েছে। কিন্তু টাকার অবমূল্যায়ন হয়নি। এর মাধ্যমে এটা নির্দেশ করে যে সংস্কার ভালো সংকেত দিচ্ছে।

বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে পারলে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, যদি প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ আমরা আনতে পারি, আর সামষ্টিক অর্থনীতি যদি ঠিক থাকে, তাহলে আমরা মনে করছি যে এটার প্রভাব ক্যাপিটাল মার্কেটে পড়বে। ক্যাপিটাল মার্কেটে ভালো প্রবৃদ্ধি হবে।

তিনি বলেন, আরেকটা বিষয় হচ্ছে যে মুল্যস্ফীতি কমানো। এটা আমাদের একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা সুদহারকে বাড়িয়েছি। এটা করার পরে আমরা দেখছি যে মূল্যস্ফীতি কমা শুরু হয়েছে। আমাদের আশা, এই বছরের শেষে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।

তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আসা শুরু হয়েছে। জুনে  চীন থেকে আসছেন একজন কমার্স মিনিস্টারের নেতৃত্ব ১৫০ জনের মতো চাইনিজ ইনভেস্টর। চাইনিজরা যদি বাংলাদেশে আসেন, তাহলে আমরা যে ধরনের জব গ্রোথ চাচ্ছি, তা খুব দ্রুত হবে।

এনবিআর দুই ভাগ করাটা সরকারের অগ্রাধিকার ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ট্যাক্স কালেকশনটা সবসময় কম ছিল। এটার কারণ আমরা প্রচুর ট্যাক্স এক্সেমশন দিয়েছি এবং ট্যাক্স কালেকশনের যে সিস্টেমটা, খুব ইনিফিশিয়েন্ট ছিল। সরকার এই জায়গাটায় খুব ফোকাস দিয়েছে। সেই আলোকেই কিন্তু এনবিআরকে দু’ভাগ করা হয়েছে। এর ফলে আমরা মনে করি  ট্যাক্স কালেকশন বাড়বে।

সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবু আলী। সূত্র-বাসস 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ আম দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পাকিস্তানে আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১০৪

পাকিস্তানে আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১০৪ জনে দাঁড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ)।

শনিবার রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, পাঞ্জাব প্রদেশে মৃত্যু হয়েছে আরও ২ জনের। গত ২৬ জুন থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৩৯ জন মারা গেছেন এবং ১০৩ জন আহত হয়েছেন। খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১ জন। মোট মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের এবং আহত হয়েছেন ৫১ জন।

বেলুচিস্তানে শনিবার মারা গেছেন ৩ জন। সেখানে এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের, আহত আরও ৪ জন। সিন্ধু প্রদেশে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের, আহত আরও ৩৭। আজাদ জম্মু ও কাশ্মির এলাকায় মৃত্যু হয়েছে ১ জনের, আহত হয়েছেন আরও ৫ জন।

পাকিস্তানে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে নিয়মিত বজ্রসহ ভারী বৃষ্টিপাত এবং আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। এই সময়ে পাহাড়ি ও উত্তরের এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

জাতীয় ও স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, রাস্তা-ঘাট ও ফসলি জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক জায়গায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ